এক মুঠো স্বপ্ন ২

এক মুঠো স্বপ্ন ২

—মিম অভ্র তোকে ডাকছে (দিয়া)

— কোথায় অভ্র (মিম)

–ক্যাম্পাসের মাঠে (দিয়া)

— আচ্ছা চল (মিম)

— হ্যা চল,,,, (দিয়া)

মিম দিয়ার সাথে মাঠের মাঝে এসে দেখে অভ্র দাড়িয়ে আছে

–কি রে শয়তান কি জন্য ডেকেছিস বল (মিম)

— বলবো??? (অভ্র)

–ন্যাকামো করবিনা একদম তারাতারি বলে দে (মিম)

— মিম তুই তো জানিসই আমি কেমন আর এই দুটো বছর তোর সাথে পথ চলতে চলতে তোকেই একমাত্র পথচলার সঙ্গী বানিয়ে ফেলেছি রে
আমি তোকে ভালোবেসে ফেলছি রে
তোর একমুঠো স্বপ্ন আমাকে দিবি কি??
কথা দিচ্ছি খুব যত্ন করে রেখে দেবো (অভ্র হাসিমুখে)

— অভ্র আমিওনা তোকে খুব পছন্দ করি রে (মিম)

— সত্যিইইই (অভ্র খুশি হয়ে)

— হ্যা রে কিন্তু সেটা শুধু বন্ধু হিসেবে
আমি তোকে ভালোবাসতে পারবোনা রে অভ্র

কথাটা শুনেই অভ্রর হাসিখুশি মুখটা মলিন হয়ে যায় তবুও মুখে মলিন হাসি টেনে বলে

— আরে এটা কোন ব্যাপার না আমরা আমরাই তো

–আমাকে মাফ করিস অভ্র (মিম)

— আরে ধুরর এসব কেমন কথা? (অভ্র)

–আসলে অভ্র আমি না ইংলিষ ডিপার্টমেন্ট এর রাফিকে পছন্দ করি
বলতে পারিস ওকে অনেক ভালোবাসি
তবে মেয়ে বলে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছি না (মিম)

— এইইই ব্যাপার
আরে গাধী আমি আছিনা তুই যাস্ট একটু এখানে দাড়া আমি আসতেছি

বলেই অভ্র চলে যায়

ক্যাম্পাসের পিছনে গিয়ে দেখে রাফি ওর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে

— রাফি তোমার সাথে কিছু কথা ছিল (অভ্র)

–হ্যা বলো কি কথা (রাফি)

— একটু উঠে এসো (অভ্র)

রাফি উঠে এলো

–হ্যা এবার বলো (রাফি)

— আসলে রাফি আমার এক ফ্রেন্ড মিম দেখতে খুব মায়াবি খুব ভালো মেয়ে ও তোমাকে খুব পছন্দ করে তবে মেয়ে তো
তাই মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না
(অভ্র নিজে প্রোপজ করার জন্য যে গোলাপটি এনেছিল সেটাই রাফির হাতে দিয়ে বলল)
মিম খুব ভালো মেয়ে ওর সাথে তুমি অনেক হ্যাপি হবে চলো প্রপোজ করবে বলেই অভ্র রাফিকে নিয়ে মিমের কাছে চলে আসে

মিম রাফিকে দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে যায়

— কি রে এবার তো সাহস করে মনের কথাটা খুলে বল (অভ্র)

– আসলে রা ফি আমার তোমাকে অনেক ভালোলাগে (লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে মিম)

অভ্রর ইশারায় রাফি ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলে
–আমিও তোমাকে ভালোবাসি মিম

রাফির মুখে ভালোবাসি শুনে মিম খুশিতে বোবা হয়ে যায়

–কি রে এবার খুশি তো? (অভ্র)

— তোকে যে কি বলে ধন্য*******

— এই চুপ কর
আমরা আমরাই তো কিছুই দিতে হবেনা
আর মিম বাসায় যাওয়া লাগবে আমার তোরা ভালো থাকিস কেমন
আর রাফি ভাই মিমকে একটু দেখে রেখো কেমন বড্ড পাগলামি করে কিন্তু বলেই পিছু ফিরে হাঁটা শুরু করে অভ্র
টুপ করে চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে

ঘরে এসে বসে বসে ভাবে অভ্র পুরোনো সেই দিনের কথা

দুই বছর আগে অভ্র তখন এডওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির রসায়নের ১ম বর্ষের ছাত্র

অভ্র খুব ফাজিল আর চঞ্চল টাইপের ছেলে তবে মনটা খুব ভালো
তাই খুব তারাতারি ওর ফ্রেন্ড হয়ে যায় অনেকে
এমনি একদিন ক্যাম্পাসে বসে ছিল অভ্র

চোখ পড়ে গাছের নিচে একটা মেয়ে বসে আছে
মেয়েটা অভ্রর সাথেই সেম ক্লাস তবে মেয়েটা কেমন যেন চুপচাপ থাকে
এটা অভ্রর মোটেও ভালো লাগেনা তাই ফ্রেন্ড বানানোর জন্য কাছে গিয়ে বলে

— বউটা দেও তো!!! 😉
(অভ্র)

— বউ মানে? (মেয়েটা)

— ইইই না মানে বইটা দেওতো (অভ্র)

মেয়েটা বই এগিয়ে দেয়

–এমন চুপচাপ থাকো কিভাবে?
আমি তো পারিনা (অভ্র)

— আমার এমনই ভালো লাগে (মেয়েটা)

— আজ থেকে যে আর এটা হবে না ফ্রেন্ড হতে এসেছি (অভ্র)

— স্যরি আমার ফ্রেন্ড লাগবে না (মেয়েটা)

— ওকে থাক লাগবে না
তোমার বউ থুক্কু বইয়ের পাতায় এখন লিখে দেব

I love Avvro
হেহেহে (রেডমেইল)

— কিইই
এই না না আমি ফ্রেন্ড হবো ফ্রেন্ড হবো (মেয়েটা)

–এইতো এবার লাইনে আইছো

এইযে এভাবে ফ্রেন্ড হতে হয় বুঝলে

বলেই অভ্র ওর হাতের একটা আঙুল মেয়েটার আঙুলের সাথে চেপে ধরল

— আপনি খুব ফাজিল (মেয়েটা)

–না আমি অভ্র
আর তুই? (অভ্র)

— আমি মিম (মেয়েটা)

–হেহেহে মিম না ডিম সেটা বড় কথা না হেহেহে

— কি বল্লেন আপনি! (মিম রেগে)

— তুই করে বল বুঝলি ডিম কোথাকার (অভ্র)

এভাবেই খুনসুটির মাঝেই অভ্র চুপচাপ মিমকে চঞ্চল মেয়েতে পরিণত করে দেয়
যে মেয়েটা খুব একা একা থাকত সে তারপর থেকেই অভ্র আর ক্লাসের সবার সাথেই আড্ডা দেয়

এভাবেই রাগ, অভিমান, মারামারি, ঝগড়া আর হাসি কান্নার মাঝেই চলে যায় দুটো বছর

আর এই দুটো বছরের মাঝেই একটু একটু করে অভ্র মিমকে অনেকটাই আপন করে ফেলে

আর তাইতো আজকে সকালে মিমকে মনের জমানো কথাটা বলেই দেয় অভ্র

অভ্র ভাবতো মিমও হয়ত তাকে ভালোবাসে কারণ মিম অভ্রর খুব বেশিই খেয়াল করতো
তবে আজ বুঝলো এটা শুধু বন্ধু ভেবেই

চোখটা মুছে উঠে বসে অভ্র
তারপর ভাবে
মিমতো শুধু বন্ধুই ভাবে তাতে কি?
থাকি না ওর পাশে বন্ধু হয়েই
ভালোবাসাটা না হয় আড়ালেই পড়ে থাক

মনটা শক্ত করে ঘুমানোর চেষ্টা করে অভ্র তবে কিছুতেই আর চোখের পাতা দুটো এক হয়না

সারাটা রাত এপাশ ওপাশ করতে করতেই কেটে যায়

প্রতিদিনের মতোই ভার্সিটিতে এসেছে অভ্র এসেই মিমকে খুঁজছে

–দিয়া মিমকে দেখেছিস? (অভ্র)

– একটু আগেই তো দেখলাম আশেপাশেই আছে (দিয়া)

— এই আরাফ মিমকে দেখেছিস?( অভ্র)

— মিমতো দেখলাম রাফির সাথে বসে আছে পুকুড় পাড়ে (আরাফ)

–ওহহ্
বুকটা কেমন যেন করে ওঠে অভ্রর

তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে
একটু পরই ক্লাস শুরু হয়ে যায় তবুও মিম আসছেই না অভ্র খুব মিস করছে মিমকে
তবুও মিমের দেখা নেই

ক্লাসে মন বসেনা অভ্রর তাই ব্যাগটা নিয়ে বাইরে চলে আসে

হঠাৎই ভোঁ করে একটা বাইক অভ্রর পাশ দিয়ে চলে যায়
হ্যা এটাই রাফি
বাইকের পিছনেই মিম রাফিকে ধরে বসে আছে

বুকটা কেমন যেন করে ওঠে অভ্রর
তবুও মুখে হাসি টেনে বাসায় চলে যায়

এই প্রথম একটা দিন অভ্রর সাথে মিমের কথা হয়নি খুব খারাপ লাগছে অভ্রর এটা ভেবে
যে মিম অভ্রকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা সেই মিম কি করে পারছে এটা
আবার ভাবে এখন তো রাফিই আছে আমার দরকটা হয়ত ফুরিয়ে গেছে

পরের ৩টা দিন ভার্সিটিতে যায় অভ্র তবে মিমকে আর পায়না ফোন দিলেও হয়ত বিজি না হয় ধরেনা

খুব খারাপ লাগছে অভ্রর তাই পরদিন অভ্র মিমের সাথে দেখা করে ওকে সাথে নিয়ে ভার্সিটি যাবে বলে ওর বাসার সামনে আসে তারপর ফোন দেয়

–হ্যা অভ্র বল (মিম)

— ভার্সিটি যাবিনা? (অভ্র)

— হ্যা যাবো রেডি হচ্ছি (মিম)

–আমি তোর বাসার গেটে দাড়িয়ে আছি (অভ্র)

— ওকে ৫মিনিট দাড়া আমি আসতেছি (মিম)

–আচ্ছা আয় (অভ্র)

অভ্রর এখন মনটা ভালো লাগছে এই ভেবে যে আজকে আর মিমকে ছাড়বো না একসাথেই থাকবো

নানান কথা ভাবছে অভ্র ঠিক তখনই বাইক নিয়ে রাফির আগমন

–আরে অভ্র তুমি এখানে? (রাফি)

— এইতো মিমের*********

–আরে রাফি তুমি কখন আসলে? (মিম)

— এইতো এইমাত্র
চলো চলো একটু বেড়াতে যাবো আজকে (রাফি)

— কিন্তু রাফি অভ্রকে যে বলছি দাড়াতে ভার্সিটি যাবো

অভ্র এখন কি করবো? ((মিম)

— হিহিহি এটা কিছু না
আমিতো যাস্ট তোকে দেখতে এসেছিলাম
তুই রাফির সাথেই যা (অভ্র)

— কিছু মনে করিসনা কেমন (মিম)

— আরে কি মনে করবো
এই রাফি ওকে নিয়ে যাওতো
এই মিম যা বাইকে ওঠ

মিম বাইকে উঠে বসতেই রাফি একটানে চলে গেল

আর অশ্রুভেজা চোখে অভ্র তাকিয়ে আছে পথের দিকে

কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে অভ্রর

মিমতো এমন ছিলোনা?

না না মিম ঠিকই আছে আমিই জেলাস ফিল করছি

নিজের মনকে নিজেই বুঝিয়ে চোখটা মুছে ভার্সিটিতে আসে অভ্র

কিছুতেই মন বসেনা নিজেকে বড্ড একা একা লাগে অভ্রর
এভাবেই কয়েকটা দিন কেটে যায়

এর মাঝে অভ্রও খুব চেন্জ হয়ে যায়

যে ছেলটা সারাটা দিন হাসিখুশি থাকতো সে এখন খুব কমই কথা বলে
যে ছেলেটা স্যারদের সাথেই মজা নিত ক্লাসটা মাতিয়ে রাখতে যে একাই একশ ছিল সে এখন একদম নিশ্চুপ

ক্লাসে আনমনে বসে আছে অভ্র,,,,, মিমও আজকে এসেছে তবে মিমটা কেমন যেন হয়ে গেছে যেন অভ্রকে চিনেই না
এসবই ভাবছে অভ্র

–অভ্র এই,,,,,, অভ্র (গায়ে হাত দিয়ে স্যার)

— জ্বি স্যার বলেন (অভ্র চমকিয়ে)

— কোন কারণে কি তোমার মনটা খারাপ? (স্যার)

— কোক কই না তো স্যার (অভ্র)

— নাহ্ আমি লক্ষ্য করেছি কয়েকটা দিন ধরে তুমি একদম চুপচাপ আগে তো এমন ছিলেনা
ক্লাসটা এখন কেমন যেন লাগে কি হয়েছে তোমার?

অভ্র মিমের দিকে তাকায় যেন মিম কিছুই বুঝছে না

–স্যার কিছু হয়নি
এমনি শরীরটা একটু খারাপ তো হয়ত তাই
ঠিক হয়ে যাবে (অভ্র)

— ঠিক হলেই ভালো তোমাকে এভাবে একদম মানায় না (স্যার)

ক্লাস শেষে অভ্র বের হয়ে আসে তবে ভেবে খুব অবাক হয় যে
যে মেয়েটা একটু অসুখের কথা শুনলে কি না কি করত আর সেই মেয়েটা আজ আমার বদলে যাওয়াতেও কিছুই মনে করছে না

আসলেই ভালোবাসা মানুষকে খুব সহজেই পাল্টে দেয়

পরদিন ভার্সিটিতে এসে বসে আছে অভ্র

— অভ্র স্যার তোকে ডাকছে (আরাফ)

–কেন? (অভ্র)

— আরে কাল ব্যাডমিন্টন খেলা হবে
তুই ছাড়া কি এসব চলে তাই স্যার ডাকছে (আরাফ)

— চল (অভ্র)

–কেমন আছো অভ্র? (স্যার)

— জি স্যার ভালো (অভ্র)
আর আপনি কেমন আছেন?

— আমিও ভালো
তা অভ্র গত দু বছর তুমিই টানা বিজয়ী
তাই এবারেও তোমাকেই দেখতে চাই
হ্যাট্রিক করবে কেমন (স্যার)

— কিন্তু স্যার আমি এবার খেলবো না (অভ্র)

অভ্রর কথাশুনে স্যার অবাক না হয়ে পারেনা যে ছেলেটা খেলা ছাড়া কিছু বুঝেনা সে এই কি কথা বলছে!

–তোমার কি হয়েছে অভ্র? (স্যার)

অভ্র ভাবল বেশি কথা বললে খারাপ হবে তাই বলল

–আমি খেলবো স্যার

–এইতো গুড বয়
তাহলে কালকে যেন তোমাকেই বিজয়ী হিসেবে মঞ্চে পাই কেমন (স্যার)

অভ্র কথা বলেই চলে আসে

অভ্র ভালো খেলে এটা সবাই জানে
ওকে টপকানোর মতো কেউই নেই

পরদিন পুরো ভার্সিটির ক্যাম্পাস নতুন সাজে সেজে ওঠে

সকাল ৯ টায় খেলা শুরু হয়

অভ্র দেখে রাফিও খেলছে আর রাফিও ভালোই খেলে

অভ্র ৩টা গেমের ৩টা তেই জিতে জায় আর একবারে ফাইনালে উঠে যায়

সবাই খুব খুব খুশি

পরের ম্যাচে সেমিতে রাফি অন্য একটা ছেলের সাথে জিতে ফাইনালে উঠে যায়

ফাইনাল খেলা আর এক ঘন্টা পর

অভ্র VS রাফি

পুরো ক্যাম্পাসে অভ্রর নাম তবে রাফিও কমনা

কিন্তু অভ্রর কাছে রাফি কিছুইনা

অভ্র সবার সাথে বসে ছিল ঠিক তখনই

–অভ্র,,,,,,( মিম)

কন্ঠটা শুনে অভ্র চমকে যায় এতোদিন পর

–অভ্র তোর সাথে কিছু কথা ছিল (মিম)

অভ্র খুশিতে আত্বহারা হয়ে বলে

–কি কথা বল

–একটু উঠে আয়

অভ্র উঠে যায়
–এবার বল (অভ্র)

–অভ্র আমি জানি তুই অনেক ভালো খেলিস আর রাফি তোর সাথে পারবেই না
কিন্তু আমি যে সবার সামনে রাফির পরাজয়টা মেনে নিতে পারবো না রে
তুই প্লিইইইইজ এবারের মতো রাফিকে জিতিয়ে দে প্লিইইইজ অভ্র

–আরে পাগলি কান্না কেন করিস?
চিন্তা করিসনা আমি তোর জন্য এটুকু অবশ্যই করবো (অভ্র)

–অনেক অনেক ধন্যবাদ তোকে অভ্র

–এই অভ্র তারাতারি আয় স্যার ডাকছে (আরাফ)

আসতেছি বলেই অভ্র চলে আসে

–অভ্র তুমি কিন্তু আমার কথা রেখো কেমন ( স্যার)

— চেষ্টা করবো স্যার (অভ্র)

মাঠে নামে অভ্র অপরদিকে রাফি

সারা ক্যাম্পাস অভ্র,,,, ,অভ্র ধ্বনিতে মুখোরিত

তিন গেমের সিরিজ
প্রথম গেমটা অভ্র জিতে যায়
সবাই তো খুব খুব খুশি

তবে পরেরটা অভ্র একটু খারাপ খেলে হেরে যায় যেন কেউ কিছু না বুঝে

খেলার মাঝে এখন টানটান উত্তেজনা যে জিতবে সেই হবে এবারের বিজয়ী

খেলা শুরু হয় অভ্র প্রথম থেকেই খারাপ খেলতে থাকে যার ফলে রাফির পয়েন্ট অনেক হয়ে যায়
পরে অভ্র একটু ভালো খেলে তবে ইচ্ছা করেই গেমটা হেরে যায়

সারা ক্যাম্পাস তখন রাফি রাফি বলে উল্লাসে ফেটে পড়ছে
আর অভ্র চোখের পানি মুছে খুব তারাতারি নিজেকে আড়াল করে চলে আসে

অনেকেই বলাবলি করছে অভ্র খেলতেই পারেনা নানান লোকের নানা কথা শুনে অভ্রর ফ্রেন্ডদের মনটা খারাপ হয়ে যায়

বিজয়ীর উপহার হাতে নিয়ে রাফির সাথে মিম আনন্দে মেতে ওঠে

তবে যার জন্য এই আনন্দ সেই মানুষটার কথাটাই আর মনে থাকেনা মিমের

অভ্র বাসায় এসে খুব কান্না করে কারণ সে একজনের ইচ্ছাকে পুরণো করতে সবার ইচ্ছাকে ফেলে দিয়েছে অভ্র নিজের এভাবে হেরে যাওয়াতে কষ্ট পায় খুব

তবে এটা ভেবে ভালো লাগে যে মিম তো হাসি খুশি আছে
ভালোবাসার মানুষটার জন্য সব কিছু করা যায়

পরেরদিন লজ্জায় আর ভার্সিটিতে যায়না অভ্র

মনটা খারাপ থাকায় নদীর পাড়ে ঘুড়তে যায়

অনেক্ষণ বসে থেকে উঠে আসবে ঠিক তখনই দেখে রাফির মতো কেউই একটা মেয়েকে নিয়ে বাইকে চলে গেল
তবে অভ্র শিওর না যে ওটাই রাফি তাই মিমকে ফোন দেয়

— হ্যা অভ্র বল (মিম)

— রাফি কোথায় জানিস কি? ( অভ্র)

–ও তো বাসাতেই কেন? (মিম)

— না মানে ওর মতোই কাকে যেন দেখলাম( অভ্র)

— আরে রাফি না( মিম)

— তবুও মিম একটু দেখিস রাফি কোন মেয়ের সাথে প্রেম করে কি না (অভ্র)

— অভ্র চুপ কর
তোকে ভালোবাসিনি বলে রাফিকে নিয়ে খারাপ কথা বলবি এটা কিন্তু ঠিক না (মিম)

-স্যরি রে মাফ করিস বলেই অভ্র ফোনটা কেটে দেয়

তবে মিমের মনে একটু সন্দেহ লাগে কারণ ইদানিং রাফি মিমকে বেশি সময় দেয়না

পরদিন ভার্সিটি এসে মিম রাফিকে বলে
–আচ্ছা রাফি কালকে বিকেলে তুমি কই ছিলা?

–কেন বাবু আমিতো বাসাতেই ছিলাম কেন কিছু হয়েছে? (রাফি)

— না মানে অভ্র বলল তোমার সাথে কোন মেয়েকে যেন ও কালকে দেখেছে (মিম)

— কিহ্
তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনা হ্যা
অভ্রর কথামতো আমাকে দোষারোপ করো তুমি( রাফি)

— স্যরি রাফি আর কখনো এমনটা হবেনা (মিম)

আরো নানান রকমের কথা কাটাকাটি করে রাফি তারপর রাগ করেই চলে যায়
মিমেরও খুব রাগ উঠে যায় ক্লাসে এসে দেখে অভ্র বসে আছে মিমকে দেখেই অভ্র দাড়িয়ে বলে
— আরে মিম তুই আজ হঠাৎ ক্লাসে

ঠাসসসসসস
খুব জোরেই মিম অভ্রকে থাপ্পরটা দেয়
— তুই বন্ধু নামে মিথ্যুক
তোকে ভালোবাসিনি বলে আমাদের ভালোবাসাটা নষ্ট করতে চাস
তুই রাফিকে খারাপ বানাতে চাস আমার কাছে (মিম)

অভ্র গালে হাত দিয়ে শুধু মিমের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে

–তোর মতো মিথ্যুকের সাথে কোন বন্ধুত্ব থাকতে পারেনা আজ থেকে তোর আর আমার মাঝের সব কিছু এখানেই শেষ
বলেই মিম ওর আঙুলটা অভ্রর আঙুলে চেপে ধরে বলে

–এভাবেই বন্ধুত্ব করেছিলি না তাই ঠিক এভাবেই শেষ করে দিলাম
আর কোনদিন যেন তোর মুখনা দেখতে হয়
বলেই মিম চলে যায়

আর অভ্র পুরো পাথর হয়ে গেছে
চোখটা মুছে ব্যাগটা নিয়ে চলে যায় অভ্র

বাড়িতে এসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করে অভ্র আর ভাবে
আসলেই আমি খারাপ খুব খারাপ আর যাবোনা মিমের সামনে যাবোনা ওদের মাঝে কাটা হতে

ভালো থাকুক মিম

এরপর থেকে আর অভ্র ভার্সিটি যায়না
সারাটা দিন ঘরে শুয়ে থাকে আর ফোনে মিমের ছবির দিকে অপলক চেয়ে থাকে আর চোখের জল মোছে

অপরদিকে মিম অনেক কষ্টে রাফির রাগটা ভাঙায় রাফির থেকে স্যরি বলে মাফ চেয়ে নেয়
সকালে রাফির ফোন

–বাবু তুমি কি ভার্সিটি আসবা না? (রাফি)

— আজকে যাবোনা (মিম)

— আচ্ছা ঠিক আছে
বলেই রাফি ফোন কেটে দিয়ে ক্যাম্পাসে চলে আসে সাথে অন্য একটি মেয়ে

আসলে অভ্র ঠিকই দেখেছিল সেদিন ছেলেটা রাফিই ছিল
বড়লোক বাবার বখে যাওয়া ছেলে রাফি
আগে থেকেই অনেক প্রেম করে আর সেদিন অভ্র বলল মিমের কথা এতে তো রাফি আরো খুশি

ওর মনে কু চিন্তা এটাই যে মিমের সাথে এটাসেটা করেই ছেড়ে দেবে
কয়েকটা দিন মিমের মনটা খারাপ তাই বাড়ি থেকে বের হয়না
অভ্রর কথা একটু মনে পড়ে তবে রাফিকে যে ও খুব ভালোবাসে
কয়েকটা দিন রাফির সাথে দেখা হয়না তাই মিম দেখা করতে ভার্সিটি আসে এসে দেখে একটু সামনেই বসে রাফি ওর ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে
রাফিকে চমকে দিতে মিম পিছন দিয়ে যায় তবে রাফির কথা শুনে মিম নিজেই চমকে যায়

— কি রে মামা এই মালটার সাথে আর কয়দিন প্রেম করবি ছেড়ে দে (রাফির এক ফ্রেন্ড)

— আরে সবুর বাগে যখন পেয়েছি একটু টেস্ট না করে ছাড়ছি না হাহাহা (রাফি)

— ওয়াও মামা ভালোই বলেছিস

রাফির কথোপকথোন শুনে বুকটা ফেটে যায় মিমের যাকে মনে প্রাণে ভালোবাসে আর সে এতটা নিচু আর নোংরা মনের মানুষ!

রাগ উঠে যায় মিমের
হনহন করতে করতে রাফির সামনে গিয়ে দাড়ায়

–আরে বাবু তুমি এখন এখানে? (রাফি)

রাগের চোটে ঠাসসস ঠাসসস করে কয়েকটা চড় বসিয়ে দেয় রাফিকে

–কুত্তা এই তোর ভালোমানুষী!
আমি তোকে এতটা ভালোবাসি আর তুই কিনা আমাকে টেস্ট করতে ভালোবাসিস!
তুই মানুষ নামের জানোয়ার (মিম)

— এই বাবু এটা কি বলো তুমি (রাফি)

— চুপ কর
তোর ঐ নোংরা মুখে এসব বলবি না
তুই একটা খারাপ ছেলে

বলেই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায় মিম

ঘরে এসে অনেক কান্না করে আর ভাবে সত্যিকারের ভালোবাসা কি এমনটা হয়

প্রায় ৫টা দিন অনেক কান্না করে মিম
তারপর মনটা একটু হাল্কা হয় তাই ভার্সিটিতে আসে

ক্লাসে বসে আছে মিম তবে কিছুতেই মন বসছে না ক্লাসটা কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছে

অভ্র,,,,,,,,,,, অভ্র,,,,,,,,,, কই?
ওর জন্যই তো ফাঁকা লাগছে

— আরাফ, অভ্র আসেনি? (মিম)

— হাহাহা তুই ই তো বলেছিলি তোর সামনে যেন না আসে এখন কেন ওকে খুজছিস
এমনটাই চেয়েছিলি তাই না রে? (আরাফ)

মিম আর কিছু বলতে পারেনা চুপচাপ ক্লাস করে
তবে কিছুতেই মন আর বসে না মনে পড়ছে শুধু অভ্রর কথা
ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তের কথা

কতইনা ভালো ছিলো সেদিন গুলো আর মিথ্যে ভালোবাসার জন্য আজ অভ্রকে এতটা দূরে রেখেছি

কয়েকটা দিন ধরে মিমের শুধু অভ্রর কথাই মনে পড়ছে প্রথম দিন থেকে যা যা ঘটেছে সব শুধু মনে পড়ছে মিম

ভাবছে
অভ্র আমাকে ভালোবাসে আর আমি ওর এই পবিত্র ভালোবাসাকে না বুঝে একটা খারাপ মানুষকে ভালোবেসেছি
অভ্র আমাকে খুশি করতে গিয়ে কত কিছুই না করেছে আর আমি ওর সব হাসি কেড়ে নিয়েছি

মিমের নিজেকেই নিজের কাছে বড্ড অপরাধি লাগছে এখন বুঝতে পারছে অভ্রই আসলে মিমের কাছের মানুষ
মিম আর কিছু ভাবতে পারেনা আরাফকে ফোন দেয়

–আরাফ তুই কই এখন? (মিম)

–আমাকে কি দরকার তোর? (আরাফ রেগে)

— দেখ আরাফ এমন করিসনা একটু মাঠে আয় না খুব জরুরি কথা আছে (মিম)

— আচ্ছা আসতেছি

বিকেলে আরাফ মাঠে চলে আসে এসেই দেখে মিম দাড়িয়ে আছে

–কি বলবি বল (আরাফ)

— আমাকে অভ্রর কাছে নিয়ে চল প্লিইইইজ
ওকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারছি না রে (মিম কান্না করে দিয়ে)

— কেন রাফির কাছে যা (আরাফ)

— প্লিইইজ আরাফ আমার ভুল হয়ে গেছে একটা সুযোক দে অভ্রর কাছে নিয়ে যা প্লিইইজ (মিম)

–আচ্ছা চল

আরাফ মিমকে সাথে নিয়ে অভ্রদের বাসাতে চলে আসে

–আন্টি অভ্র কি বাসাতে আছে? (আরাফ)

— না বাবা
কি হয়েছে ছেলেটার সারাটা দিন শুধু শুয়ে থাকে আর বিকেলে ঐ নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকে (অভ্রর মা)

–আন্টি এখন ওকে কোথায় পাবো? (মিম)

— নদীর পাড়েই হয়ত গেছে (অভ্রর মা)

— কোনদিকে নদীটা? (আরাফ)

— এই আবির ওদেরকে অভ্রর কাছে নিয়ে যা তো (অভ্রর মাঅভ্রর চাচাত ভাইকে বলল)

আবির আরাফ আর মিমকে নিয়ে নদীর পাড়ে চলে আসলো

–ঐ যে ভাইয়া
ঐ দেখেন গাছের নিচে বসে আছে (আবির)

— আচ্ছা ঠিক আছে এখন তুমি যাও (আরাফ)

আবির চলে গেল

আরাফ আর মিম একপা একপা করে এগিয়ে গেল

–আরাফ তুই চলে যা বাকিটুকু আমি একাই পারবো ভুলটা যেহেতু করেছি মাফটাও নিজেই চেয়ে নেব তুই চলে যা (মিম)

–ঠিক বলছিস তো?( আরাফ)

— হ্যা তুই যা( মিম)

— ওকে
কালকে যেন গুড নিউজ পাই কেমন
বলেই আরাফ চলে যায়

আর মিমও একপা একপা করে অভ্রর দিকে এগিয়ে যায় অভ্রর একদম পিছনে গিয়ে দেখে
অভ্র অপলক ভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে

মিম উকি দিয়ে দেখেই চোখটা জ্বলে ভিজে যায়
দেখে অভ্রর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে জল পরছে আর ঝাপসা চোখে ফোনে মিমের ছবির দিকে তাকিয়ে আছে

–এতো ভালোবাসিস কেন আমাকে? (মিম কান্না করতে করতে)

-মিমের কথা শুনে উঠে দাড়ায় অভ্র
তারাতারি চোখটা মুছে বলে

–আরে মিম তুই এখানে
কিছু হয়েছে?

মিম অভ্রকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে
–আমার বড্ড ভুল হয়ে গেছে রে অভ্র
আমি তোকে একটুও বুঝতেই চেষ্টা করিনি
তোকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি রে
প্লিইইইজ আমাকে মাফ করে দে

তোকে ছাড়া আমি যে খুব একা রে খুব একা

অভ্র মিমকে ছেড়ে দিয়ে বলে

–আরে তোর কোন ভুল নেই
আর মাফ কেন চাইছিস?
ঠিক আছে সব
আর আমিও ঠিক আছি

–প্লিইইইজ অভ্র আমাকে তোর করে নে
ভুলতো মানুষই করে তাইনা?
আমিও ভুল করেছি
এবার ভুলটা শুধরে নিতে দে নারে অভ্র

তোর জন্য এক মুঠো স্বপ্ন এনেছি নিবিনা? (মিম)

— কেন?
আমাকে কেন দিবি? তোর রাফির কাছে জা না (অভ্র অভিমানে কান্না করে দেয়)

— মিম আবার অভ্রকে জরিয়ে ধরে বলে
–যে আমাকে হাঁসতে শিখিয়েছে
সবার সাথে মিশতে শিখিয়েছে তাকে ছেড়ে কি করে যাই বল?

আমার এক মুঠো স্বপ্ন তো শুধু তোকে ঘিরেই রে ভালোবাসি রে তোকে বড্ড ভালোবাসি

–আমিও এই পাগলিটাকে খুব ভালোবাসি রে খুব ভালোবাসি

মিম কান্না করছে সাথে অভ্রও

তবে এটা কষ্টের না এই কান্না ফিরে পাওয়ার কান্না এই কান্না ভুলটা ভেঙে এক হওয়ার কান্না

–এই পাগল আমার কান্না কেন করছো? (মিম অভ্রর বুকে মাথা রেখে)

— আমার কি দোষ আর পাগলিটাও তো কান্না করছে (অভ্র)

–আর কখনোই কাদতে দেবনা এই পাগলটাকে
খুব ভালোবাসি যে এই পাগলটাকে

করুক না দুজনেই এভাবে কান্না

এটা তো সুখের কান্না

অতঃপর
পরদিন থেকেই ভার্সিটির ক্যাম্পাস আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে
অভ্র আর মিমের সাথে ফিরে পেয়েছে সবাই সেই আগের দিনগুলো

চলুক না সবার এভাবেই প্রতিটা দিন হাসি খুশির মাঝে

কিছু কথা : মানুষ মাত্রই ভুল করে
ভুল করবেই এটাই স্বাভাবিক
তবে সেই ভুলটা বুঝে যদি কেউ নিজেকে শুধরে নেয় তো তাকে অবহেলা করতে নেই

শত ভুলের মাঝেও যেন এমন করেই সবার ভালোবাসা অটুট থাকে সেই দোয়া করি

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত