কাফনে মোড়া লাশের পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছেন ওয়ালীউল্লাহ। কেতাদুরস্ত এই মানুষটি কখনো এভাবে মাটিতে বসেন না। নাকি বসেছেন, কবে? মনে করা হয় না। সকল চিন্তা মিলিয়ে যায় কোনো এক কৃষ্ণগহবরে। এমন বারবার হচ্ছে।…

‘বাবা,আমার বিস্কুট এনো।’ মায়ের এক পাশে শোয়া ছোট্ট মেয়েটি মাথা তুলে বলে। অপর পাশ থেকে বড় ছেলেটা চোখ কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞেস করে,বাবা, পরীক্ষার ফি দিতে হবে, টাকা আছে? স্ত্রীও ক্ষীণস্বরে কাছে ডেকে বলে, ওষুধ তো…

আমি পঙ্কজ এবং ওর বিছানার কথা বলতে বসেছি। কিন্তু একটা ঘটনা বলতে গেলে আরেকটা চলে আসে, এর পেছনে মানুষের ইতিহাস, তার মস্তিষ্কের গঠন অথবা আমার ব্যক্তিগত স্বভাব দায়ী হতে পারে। মানুষের জীবনের ঘটনাগুলো পরস্পরের সঙ্গে…

এই গল্পটা আমার মায়ের। এটাকে গল্প বলা যাবে কিনা বুঝতে পারছি না; কিন্তু গল্পের মতোই। এখনো ভাবলেই সব দৃশ্য হয়ে যায়।আমাদের ছিল ঘুমগাছের বন। সেই বনের ভেতর আমাদের কাঠের দোতলা বাড়ি, টিনের ছাউনি। ওখানে থাকতো…

আমি যখন বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ালাম, সূর্য তখন মধ্যগগন থেকে অল্প একটু হেলে পড়েছে পশ্চিমে। চারদিকে ঝাঁঝাঁ সোনা গলানো রোদ। আমিও এসেছি বহু পথ অতিক্রম করে। কত হবে? হাজার লাখ ক্রোশ। মাপজোখ নেই। আমি কিছুটা…

যদিও সায়েন্স ল্যাবের ভিড়মগ্ন রাস্তাঘাট মানুষ এবং নানা কিসিমের (বাস, জিপ, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পো, মোটরসাইকেল, রিকশা ইত্যাদি …) যানবাহনে বিপর্যস্ত, যদিও এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলো শাড়ি, বস্নাউজ, ব্রা, পাঞ্জাবি, বাহারি জুতা, চশমা, ঘড়ি, শোপিসে ঠাসা…

শেওড়াপাড়ায় ধসে যাওয়া রহমান টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষের ফাঁকে পড়ে থাকা হাজারখানেক গার্মেন্ট শ্রমিকের লাশ এবং আহত বা জীবিতদের ভিড়ে সোমা আখতারকে (২১) আর খুঁজেই পাওয়া গেল না! কয়েক দফায় জুরাইন কবরস্থানে যেসব নাম-না-জানা গার্মেন্ট শ্রমিকের গলিত-অর্ধগলিত…

হঠাৎ আমাদের কথাগুলো খইয়ের দানার মতো ফুটতে লাগলো। উৎসাহের আতিশয্যে সেগুলো দুজনের উষ্ণ মুখগহবরের ভেতর থেকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়তে থাকলো টেবিলের দুপাশে। অনেকটা ফটফট ফটাশ আওয়াজ তুলে। আমাদের মনের ওপর কথাগুলোর প্রভাব ছিল এমনই সশব্দ, দারুণ…

বহু পুরনো জংধরা টিনের বাক্সে বাঁশ কিংবা গজারি কাঠের চেলা দিয়ে বাড়ি মারলে যেরকম পুরনো আমলের মতো একটা আওয়াজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, ফইজুলের গলার স্বরটাও অবিকল সেরকম। ফইজুল যখন অপরিচিত জায়গায় গিয়ে কথা বলে তখন…

এরকম হয়। হঠাৎ কোনো একটা পূর্বপরিচিত জায়গা খুব আপন হয়ে ওঠে। রোগশয্যায় শুয়ে কারো কারো যেমন প্রিয় একটা খাবার খাওয়ার জন্যে মন অহেতুক আইঢাই করতে থাকে, আলতাফের বেলাতেও তাই ঘটল। নইলে সব ফেলে সে এখানে…