:- কি করো? :- সাদিয়া কে লাইন দেওয়ার চেস্টা করছি ।
:- মানে কি ?
:- সাদিয়ার সিট আমার সামনে যদি পরীক্ষায় আমাকে দেখায় তাহলে পাশ হয়ে যাবে আমার ।
:- তুমি কি সিরিয়াস হবেনা কোনদিন?
:- আমি সিরিয়াস ভাবেই সাদিয়াকে পটানোর চেস্টা করছি । ওর বাবা সরকারি কর্মকর্তা । সাদিয়াকে পটাতে পারলে ওর বাবার ক্ষমতায় আমার চাকরি ও হয়ে যেতে পারে । সেই আশায় চেস্টা আরো বেশি করছি ।
:- ঐসব বাদ দাও ।রাতে খেয়েছো বাবু?
:- বুয়া তো সুজি রান্না করেনি । তিনদিন আগের ডাল ছিলো রান্না করা তাই দিয়ে ভাত খেয়েছি । বোটকা গন্ধ ছিলো ডালে তাতে সমস্যা হয়নি । টক টক লেগেছে খুব তাতে ভালোলাগেনি । :- টক ডাল খেতে বারন করেছিলাম মনে আছে? আর সুজি রান্না করবে কেন বুয়া ?
:- বুয়া তিন দিন পর রান্না করে টক কেন নানান কিছু খেতে হয় । বাবুরা তো সুজি খায় । তুমি যে আমাকে বাবু বললে । তাহলে আমার কি খাওয়া উচিত সুজি না?
:- তোর সাথে কথা বলাই বেকার । কাল সকালেই তুই আমার বাবার সাথে দেখা করে আমাদের বিয়ের কথা বলবি । রাগে ফেঁাস ফেঁাস করতে করতে ফোন রেখে দিয়েছে আশফিয়া । কেন যে আরফানের মতো গাধার সাথে রিলেশন করেছিলো আল্লাহ্ জানে । আরফানের মাঝে সিরিয়াস বলতে কোনকিছুই নেই । ” পরের দিন সকালে আরফান আশফিয়া দের বাসায় বসে আছে । সামনে বসে আছে আশফিয়ার বাবা নুরুল সাহেব । দেখতে আরেকটু ফর্সা হলে নুরুল টাকলার জেরক্স কপি হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যেত । মাথায় নুরুল ইসলামের মতোই ইয়া বড় টাক । টাক টা মীরপুরের স্টেডিয়ামের মতো চারপাশে চুল মাঝখানে টাক । যেন চারধারে গ্যালারি মাঝে মাঠ ।
:- নাম তো আরফান ।তা পড়ালেখা কতদূর ?
:- বি,এস,সি শেষ বর্ষ ।
:- হুম । নিউটনের তৃতীয় সূত্র কি?
:- প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরিত প্রতিক্রিয়া আছে ।
:- হুম ! উদাহরন ?
:- আপনার মাথায় টাক দেখে মনেহয় মীরপুর স্টেডিয়াম ।
:- কি বললি তুই ? বেয়াদব ছেলে । বের হয়ে যা বাড়ি থেকে ।
:- আমি আপনার উপর কথার ক্রিয়া করলাম আপনি বিপরিত প্রতিক্রিয়া দেখালেন বকা দিয়ে তার মানে ৩নং সূত্র প্রমানিত (Proved) ।
:- সালা বেল্লিক ! আমার টাক নিয়ে মশকরা করিস । আবার সূত্রের প্রমান দেখাস বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে । ব্লা ব্লা ব্লা ।
:- উহুঁ ! হবু জামাই কে কেউ সালা বলে ড্যাডি ?
:- ড্যাডি ! দাড়া তোর ড্যাডি গিরি দেখাচ্ছি । বের হ তুই । আশফিয়া আশফিয়া । অবস্থা বেগতিক দেখে সটকে পড়লাম । আশফিয়া কে চিৎকার করে ডাকছে । কি না কি বলে কে জানে । আসলে সত্যর দাম নেই দুনিয়াতে । সে টাকলা সেটা বললাম । এবং সূত্র দ্বারা ও প্রমানিত করে দিলাম তাতে ও মানতে নারাজ । ” একটু পরেই আশফিয়ার ফোন ।
:- বাবা কে কি বলেছো ?
:- তুমি যা শুনেছো ঠিক সেটাই বলেছি । সত্য বললেই দোষ । উল্টা তোমার বাবা আমাকে সালা বলেছে। আমি এর বিচার চাই । প্রয়োজনে আমরন অনশনে যাবো তবু ও বিচার চাই কেন হবু জামাইকে সালা বললো?
:- তোকে নিয়ে আর পারলাম না আমি । তুই অনশন কর বসে বসে । ৫ তারিখে আমার বিয়ে দাওয়াত রইলো খেয়ে যাস । ” যেমন বাবা তেমন মেয়ে । আমাকে কেউ বুঝলো না ? আর যাই হোক বিয়ের একটা দাওয়াত তো পেলাম । বুয়ার হাতের পচা ডাল খেতে খেতে মুখ তেতে গেছে । এবার পেটপুরে রোস্ট আর বিরিয়ানি খাবো । আচ্ছা মিস্টি কি দিবে ? দই দিবে ? দই আমার প্রিয় । মিস্টি বলতেই আমার কাছে প্রিয় । টাকলাকে নিয়ে আমার সন্দেহ সালা দেখা গেছে মিস্টিই দিলো না । ” ৫ তারিখ আজ । “কি মিস্টির ব্যাবস্থা আছে “? লিখে একটা টেক্সট করলাম আশফিয়া কে । কিন্তু রিপ্লে করেনি । আমি এখন বিয়ে বাড়িতে । খেতে বসেছি । ব্যাটা টাকলা আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে । মনেহয় চিড়িয়া খানার জন্তু দেখছে । প্লেট ভরে বিরিয়ানি দিয়েছে । এক লোকমা মুখে দিলাম ভালোই লাগছে । দ্বিতিয়বার মুখে দিয়ে দেখি খুব নোনতা । খাওয়া বাদ দিয়ে গেটে এসে দাড়িয়েছি । আশফিয়া কে এখন নিয়ে যাবে । শেষ বারের জন্য দেখি আশফিয়া কে । এটাই হয়তো শেষ দেখা । ” ঐ যে আশফিয়া আসছে । লাল রংয়ের শাড়িতে চমৎকার লাগছে আশফিয়া কে । একটু এগিয়ে গিয়ে আশফিয়ার সামনে দাড়ালাম । প্রায় ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো আশফিয়া । হয়তো ভাবেনি আমি বিয়েতে আসবো । আমি আস্তে করে বললাম ” বিরিয়ানি টা ভালো হয়নি খুব নোনতা লেগেছে ” । বুয়ার রান্না ও ভালো এর থেকে । আশফিয়া চলে গেলো গাড়িতে চড়ে । আমি ও পিচঢালা পথ ধরে মেসে ফিরলাম । ” রাস্তায় হাটছি হঠাৎ দেখি আশফিয়া সামনে । দীর্ঘ ৬ বছর কেটে গেছে আশফিয়ার বিয়ে হয়েছে । আশফিয়া দেখতে আগের মতোই আছে । :- কেমন আছো আরফান ?
:- খুব ভালো আছি । সাথে এটা কে ? তোমার মেয়ে বুঝি ? নাম কি তোমার মামনি ? :- আমাল নাম লাত্লি (আমার নাম রাত্রি) :- আমার ঠিক করা নামটাই দেখি রেখেছো ?
:- হ্যঁা ! আরফান ভালোবাসতাম যে তোমাকে তাই তোমার পছন্দের নাম টা রেখেছি । :- ভালোবাসা ! তুমি বোঝো ভালোবাসা কি? জানো কিভাবে ভালোবাসতে হয় ? জানোনা আশফিয়া । আমি তোমার সাথে ইচ্ছা করেই কেয়ারলেসের অভিনয় করতাম । তোমাকে রাগালে খুব ভালো লাগতো আমার কাছে তাই রাগাতাম । আমি ভাবিনি তুমি এভাবে বিয়ে করে নিবে । সেদিন আমি তোমার বিয়ে খাওয়া জন্য তোমার বাসায় যাইনি । আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে দেখে বলবে “আরফান আমাকে নিয়ে যাও ।
কিন্তু না আমি তোমার চোখে সেদিন ভালোবাসা দেখিনি । দেখেছি ভয় বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ভয় । বলতে চেয়েছিলাম আশফিয়া আমাকে রেখে যেও না । কিন্তু পারিনি বলতে । বলেছি বিরিয়ানিটা নোনতা হয়েছে । আসলেই নোনতা হয়েছে । সেটা রান্নার ভুলে না । নোনতা হয়েছে আমার চোখের জলে । প্রত্যেক প্রানি তার উত্তম সঙ্গী বেছে নেয় তুমি ও নিলে ঠিক পশুর মতো । আমার বিশ্বাস ভালোবাসা ভেঙে চুরমার হয়েছে । স্বার্থলোভি মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে তোমাকে দেখে বুঝেছি ।
৬টা বছরের প্রতিটা রাত কিভাবে কেটেছে শুধু আমি জানি । তুমি জানবে কি করে ? যে রাতে তুমি তোমার স্বামির বুকে মাথা রেখে স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়েছ । সে রাতে আমি নেশা করে পার্কের পাশে পড়ে থেকেছি । তুমি ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে গিয়েছো । আমি না খেয়ে ফুটপাতে ঘুমিয়েছি । কেমনে তুমি আজ বললে ভালো বাসতে ? ভালোবাসাকে অপমান করেছো তুমি । শেষ করে দিয়েছো আমার সব কিছু । ” আশফিয়া কাঁদছে । বলতে চাচ্ছে হয়তো কিছু । আমি কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হেটে চলেছি ফুটপাত ধরে ।আশফিয়া কাঁদুক আজ কাঁদলে নাকি মানুষের মন হালকা হয় । আরে আমি কাঁদছি কেন ? আমার মনে আবার কিসের কস্ট যার কারনে আমি কাঁদবো ।