নিষ্ঠুর দারিদ্র

নিষ্ঠুর দারিদ্র

নন্দীগ্রাম।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অন্ঞ্চলের একটি গ্রাম।প্রযুক্তির খুব বেশি ব্যাবহার সেখানে নেই।গ্রামের মানুষগুলো সহজ সরল জীবন-যাপন করে।কেউবা কৃষক,কেউবা জেলে ইত্যাদি। এভাবেই ছোট ছোট রোজগারে চলত তাদের দিন।

এই গ্রামেরই একটি ছেলে শোভন।পড়ালেখায় খুবই ভালো।সবসময় সে প্রথম স্থানে থাকে।শুধু পড়ালেখা নয়, খেলাধুলাতেও শোভন খুব ভালো।তার আচার-আচরণ,নম্রতা-ভদ্রতার কারণে গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসত।সবার প্রিয় ছিল সে।

শোভন এবার উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।খুব ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে সে। তাই একদিকে সে যেমন অনেক খুশি আবার অন্যদিকে তার মন দুঃখে ভারাক্রান্ত।কারন, সে হয়ত আর পড়ালেখা করতে পারবে না।

শোভনের বাবা সামান্য একজন কৃষক।তাদের নিজের কোন জমি নেই।অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালায় তার বাবা।শোভনও মাঝে মাঝে
তার বাবার সাথে মাঠে কাজ করত। এভাবেই অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করত সে।

কলেজ জীবন শেষ তার।এতদিন গ্রামের ভেতর থেকেই পড়ালেখা করেছে সে।কিন্তু এখন তাকে বাইরে যেতে হবে পড়ালেখা করতে হলে।শোভন ছাত্র হিসেবে খুব ভালো।সে ভালো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।কিন্তু সেখানে পড়ার মত আর্থীক সামর্থ্য তার নেই।তাই সে মনের দুঃখে একা একা ধানের ক্ষেতে এসে বসে আছে।

“সবার জীবনে সব ইচ্ছাগুলো পূরন হয়না।ভাগ্য থাকা লাগে।আচ্ছা গরিবদের ভাগ্য কি খুব খারাপ?
গরিবরা কি স্বপ্ন দেখতে পারেনা?
নাকি তাদের স্বপ্ন দেখা উচিত নয়?”

এমন অনেক কথাই ঘুরছে শোভনের মাথায়।
তাহলে এখন কি করবে সে?
টাকা ছাড়া আর পড়ালেখা করা সম্ভব নয়।

আচ্ছা, শিক্ষা কি শুধু টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ?
টাকার জন্য কি লেখাপড়া করতে পারবে না শোভন?

এর উওর কারো কাছে নেই।নেই শোভনের কাছে।নেই তার সেই নিষ্ঠুর দারিদ্রতার কাছে।

অনেক কথা ভাবতে ভাবতে একসময় হুশ ফিরল তার।
এরপর সে বাড়ির দিকে রওনা হল।
এভাবেই কেটে গেছে কিছু দিন।
আর মাত্র ২ দিন বাকি ভর্তি হওয়ার।২ দিনের ভিতরে ভর্তি হতে না পারলে আর পড়ালেখা করতে পারবে না সে।তাই শোভনের মনটা আজ ভীষণ খারাপ।
তার বাবা মা সবই বুঝতে পারেন।কিন্তু বুঝতে পারলেও স্বান্তনা দেবার ভাষা তাদের নেই।কারন, তারা কি বলে স্বান্তনা দেবে?
তারা যে গরিব।
নুন আন্তে তাদের পান্তা ফুরোয়।

শোভন বাড়ি থাকে না।কারন, তার মনের অবস্থা ভালোনা।সকাল বেলা সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল।দুপুরে ফিরে এসে সে দেখে তার বাবা মা দুজনেই কাঁদছে।
সে কিছুই বুঝতে পারল না।
অনেক জিজ্ঞেস করেও সে জানতে পারল না তার বাবা মা কেন কাঁদছিল।
রাতেও সে অনেক চিন্তা করল। কিন্তু কিছুতেই সে বুঝতে পারল না তার বাবা মায়ের কান্নার কারন।

পরেরদিন সকালে তার বাবা প্রতিদিনের মত কাজে বেরিয়ে গেল।আজ শোভন বাইরে গেল না।কিছুক্ষণ পর সে তার মাকে গিয়ে জোরালোভাবে ধরল,
শোভন : মা আপনারা কাল কেন কাঁদছিলেন?
মা : না বাবা কিছুনা।এমনিতেই।
শোভন : মা, আমার কাছে কিছু লুকাবেন না।বলেন কি হইছে।
মা : তুই যা বাবা।ঘুরে আয়।কিছু হয়নি।
শোভন : মা, আপনি যদি আমাকে সত্য কথা না বলেন আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।
মা : বাবা, তুই জিদ করিস না।আমি তোকে বলতে পারব না।( কাঁদতে কাঁদতে)
শোভন : কি হইছে বলেন মা।আমাকে বলেন।কান্না করেন কেন?
মা : বাবা অনেক কঠিন কথা রে।
শোভন : যত কঠিন কথাই হোক আপনি বলেন।আমি শুনব।
মা : তোর বাবার অনেক কঠিন অসুখ হইছে।কাল তুই সকালে চলে যাইবার পর একটা চিঠি আসছিল।
স্কুলের মাস্টার মশাইরে দেখাইছে আর সে বলল তোর বাবার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। (বলেই আবার কাঁদতে শুরু করল)

কথাটা শুনেই শোভনের মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়ল।কিছুক্ষণের জন্য তার সব বুদ্ধিজ্ঞান লোপ পেল।সে যেন বুঝতেই পারল না সে কোথায় আছে।
এরপর সে এক দৌড়ে চলে গেল মাস্টার মশায়ের বাড়ি।

শোভন : স্যার, ও স্যার।বাড়ি আছেন?
মাস্টার : আরে শোভন।তুই?
এই সময়ে হঠাৎ?
শোভন : স্যার, আমার বাবার নাকি ১ টা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।আপনি নাকি বলছেন?
মাস্টার : শোভন, তুই শান্ত হ।আল্লাহ চাইলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই শান্ত হ বাবা।
শোভন : স্যার, আপনি সত্যি করে বলেন।এটা কি সত্যি? (হাঁপাতে হাঁপাতে)
মাস্টার : মাথা নিচু করে রইল।
শোভন আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে এল।সে কিছুই বুঝতে পারছে না কি করবে।শুনেছে এসব রোগের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা লাগে।কিন্তু তারা যে গরিব।এত টাকা তারা কোথায় পাবে?
তাহলে কি আবারও দারিদ্রের কাছে হেরে যাবে শোভনরা?

এদিকে কাল শোভনের ভর্তির লাস্ট ডেট।আর এখন শুনল সে এ কথা।
কি করবে সে।কিছুই জানে না।
নদীর ধারে বসে বসে শুধু চোখের জল ফেলছে সে।এছাড়া যে তার আর কিছুই করার নেই।
নিষ্ঠুর দারিদ্র তাদের পঙ্গু করে দিয়েছে।
হঠাৎ সে দেখল……..
চলবে………..
[বি:দ্র:] ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত