ভুতুড়ে ট্যাক্সি

ভুতুড়ে ট্যাক্সি

ভাইফোঁটা শেষ হবে পাঁচটার মধ্যে। পপনের চার দিদি, আর তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে তার আগেই গিয়ে পৌঁছতে হবে। দিদি বেশ গিন্নি-বান্নি লোক, পপনকে ভীষণ ভালবাসেন। থাকেন বেলঘড়িয়ায়। পপনের বাবা পপনকে চিরকাল শিখিয়েছেন, সব কাজ প্রোটোকল মেনে করবে। এই প্রোটোকল ব্যাপারটা কী, পপন অনেকদিন পর্যন্ত বুঝত না, তবে ধারণা ছিল যার যা ন্যায্য সম্মান, তা-ই দিতে হবে। সুতরাং প্রোটোকল বলে, দিদির বাড়ি সব্বার প্রথম যেতে হবে। দিদির যখন বিয়ে হয়, তখন পপন খুব ছোট। তবু দিদির ধারণা, তিনি জানেন, পপন কী ভালবাসে। তাই সিমায়ের পায়েস করেছিলেন।

আসলে পপন এখন আর সিমাই দেখতে পারে না। অথচ দিদিকে তো আর তা বলা যায় না। একটু মুখে তুলতেই হল। কিন্তু তাতে দিদি খুশি হলেন না; বললেন, অন্য দিদিদের বাড়ি খাবার জন্য বুঝি জায়গা রাখছিস? আচ্ছা বড়রা এত বোকা হয় কেন? যদি ও সিমাই ভালবাসত তা হলেই কি ওর বেশী খাওয়া উচিত হত? দিদির ছেলেটাকে পপন খুব ভালবাসে। বাবলু ফুটবল-খেলা দেখতে ভালবাসে, আর পপন মাঝে-মাঝে ওকে খেলা দেখাতে নিয়ে যায়। কিন্তু এবার ও খুব মনমরা, ওর সাধের টিম মোহনবাগান পাঁচ গোলে হেরেছে। পপনেরও খুব খারাপ লেগেছিল, কিন্তু বাবলুর মুখ একদম শুকনো। ওর সঙ্গে দু’-চারটে কথা বলে পপন উঠল। জামাইবাবু অফিসে, দেখা হল না। বগলে একটা প্যাকেটে খুব সুন্দর শার্টের কাপড় দিয়েছে দিদি।

মেজদির বাড়ি বেশী দূর নয়, ডানলপ ব্রিজের কাছেই। মেজদি বোধহয় দিদিদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী। ভারী মিষ্টি হাসি। অত্যন্ত নরম কোমল ব্যবহার। মেজজামাইবাবুও খুব ভাল। দারুণ হৈহৈ করেন। ওদের বাচ্চা-টাচ্চা নেই। তাই ওরা যখন-তখন বেরিয়ে পড়েন। মেজ-জামাইবাবুর কী একটা কারখানা আছে। সেখান থেকে ফাঁক পেলেই এক পাক ঘুরে আসেন। একবার পপনও গিয়েছিল। সেবার জামাইবাবু গেলেন বীরসিংহ গ্রামে। বোম্বে রোড ধরে গিয়ে পাঁশকুড়ার আগে একটা ডানহাতি রাস্তা; বেশ সরু। সেই রাস্তা ধরে গাড়ি চলতে লাগল।

একসময় বীরসিংহ পৌঁছল গাড়ি। একটা ঘুমন্ত গ্রাম। বিদ্যাসাগরকে পপন খুব ভক্তি করে। যখন তাঁর জন্মস্থানে গিয়ে পৌঁছল, ওর কীরকম লাগতে লাগল। ওঁর জন্মস্থানে একটামাত্র বাঁধানো ফলক আছে। দেখল মেজদির চোখেও মুগ্ধ দৃ্ষ্টি। মেজ-জামাইবাবু অবশ্যি পাশের তেঁতুল গাছে ক্যায়সা তেঁতুল হয়েছে সেটাতেই বেশী উত্‌সাহিত বোধ করলেন। ফেরবার পথে ঘাটাল বলে একটা জায়গায় একটু নোংরা ধরনের হোটেলে দারুণ একটা খ্যাঁট হল।

ভাইফোঁটায় মেজদি ওকে একটা কলম দিলেন। সত্যি মেজদির বোধহয় মনের খবর জানবার যন্ত্র আছে। তা না-হলে দুদিন আগে যে ওর কলমটা খারাপ হয়ে গেছে, কী করে তা জানবেন? দুটি সন্দেশ খাওয়ালেন। আর দশটা টাকা দিলেন। বললেন, “আমাদের চার বোনের একটা মাত্র ভাই। আমার তোকে এইদিন অনেক খাওয়াতে ইচ্ছে করে। কিন্তু অন্যদেরও তো একই ইচ্ছা করে, তাই তোর ওপর জোর করব না। অন্য একদিন তোর মনের মতো দোকানে খেয়ে নিস।” সত্যি মেজদিটা বড্ড ভাল। কিন্তু কেমন যেন দুঃখী-দুঃখী ভাব। পপন এটা কিছুতেই বোঝে না।

এবার সেজদির বাড়ি। বি-টি রোডের ওপর একটা হাউসিং এস্টেটে ওদের বাড়ি। সেজদির বাড়িতে আসতেই সেজ-জামাইবাবু একগাল হেসে বললেন, “এসো বড় কুটুম।” বিয়ের দিন থেকেই উনি ওকে বড়কুটুম বলে ডেকে আসছেন। সেজ-জামাইবাবু একটা বড় কারখানায় কাজ করেন। ওঁর এখন সকালের শিফ্ট চলছে, তাই বাড়ি ছিলেন। সেজদি খুব ভাল রবীন্দ্রসংগীত গায়। সেজদি ষোড়শোপচারে বন্দোবস্ত করেছে। দিদিদের মধ্যে এই দিদিই ফোঁটা দেবার সময় নানারকম অদ্ভুত কাজ করে। কখনো হাতে ফল ধরায়। নানারকম জিনিস দিয়ে ফোঁটা দেয়।

তার মধ্যে কাজলটা বড্ড বেশী দেয়। ওর ধারণা, কাজল দেখলে যম কিছুতেই কাছে ঘেঁষবে না। সেজদি ওকে একটা প্যান্টের কাপড় দিল। আর জোর করে খাইয়ে দিল লুচি আর মুরগীর মাংস। সেজদিটা ওইরকমই। এদিকে ফোঁটা দেবার সময় সব শাস্তর মানবে, কিন্তু খাওয়াবার বেলা মুরগী আর মাংসের বড়া। আসলে সেজদিই সত্যি জানে, পপন কী ভালবাসে। পপনের যখন দশ বছর বয়স, তখন সেজদির বিয়ে হয়েছে। হাতে দুটো প্যাকেট। সেজ-জামাইবাবু হাতে একটা কাঁধে-ঝোলানো ব্যাগ ধরিয়ে দিলেন। বললেন, “রাখো বড়কুটুম কাজ দেবে।”

বি টি রোডের ওপর এসে দাঁড়াল পপন। হাতঘড়িতে দেখল প্রায় সোয়া চারটে। ছোড়দির বাড়ি সেই বালিগঞ্জ। ছোড়দিকে নিয়েই পপনের যত মুশকিল। ছোড়দির বিয়ে হয়েছে সবে গত বছর। সুতরাং এতদিন ওরা একসঙ্গেই ছিল। পিঠোপিঠি ভাইবোন। চার বছরের তফাত। ছোড়দি এবার পার্টওয়ান দিয়েছে। কোন এক নাচের অনুষ্ঠানের শেষে ছোড়দির হবু শ্বশুর বাবার কাছে সমীরদার সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব করে। বাবর খুব মত ছিল না, কিন্তু মা-ই উদ্যোগী হয়ে বিয়ে দিয়ে দিলেন। যতদিন একসঙ্গে ছিল, ততদিন ছোড়দির সঙ্গে পপনের নিত্য ঝগড়া লেগে ছিল। কোথাও কিছু নেই, মার কাছে গিয়ে লাগাত পপনের নামে। গৌতমের সঙ্গে একদিন স্ট্যাম্প কিনতে গিয়েছিল পপন। গৌতম ওদের স্কুলের নামকরা ছেলে। ছোড়দি বোধহয় দেখতে পেয়েছিল। বাড়ি এসেই লাগাল মার কাছে। “মা, তোমার ছেলেটা গোল্লায় যাচ্ছে। আজ দেখলাম একটা বিশ্ববকাটে ছেলের সঙ্গে রাস্তায় ঘুরছে।”

পপনের প্রচণ্ড রাগ ধরে যায়। কোন কথা ভাববার আগেই ছোড়দির বিনুনিটা কেমন করে জানি ওর হাতে চলে এল। আসলে কিন্তু বিনুনি টানতে ও চায়নি। কিন্তু একবার যখন এসেই পড়ল, তখন দিল এক টান। ছোড়দি যা একখানা চেঁচাল, বোধহয় যে বাবাও অফিস থেকে শুনতে পেয়েছিলেন। মার কাছে বকুনিও খেল খুব পপন। অথচ ছোড়দির দোষটা কেউ দেখল না। পৃথিবীটা সত্যিই অদ্ভুত। সত্যিই তাই, তা না হলে ওই পাজী রাক্ষুসী (এ সব ভাষা পপন মাঝে-মাঝেই ব্যবহার করেছে ছোড়দি সম্বন্ধে) মেয়েটা বিয়ে হয়ে চলে যাবার পর কেন এত কষ্ট হবে পপনের? বাড়িটা কেন এত ফাঁকা লাগবে? আর আজ সকালবেলা উঠে প্রথমেই কেন মনে হয়েছিল, ছোড়দি থাকলে সকালেই তার ফোঁটা বাড়িতে হত? মনে হতেই ওর মনে হল, ছোড়দির বাড়ি তাড়াতাড়ি পৌঁছতে হবে। মা ওকে ট্যাক্সির টাকা দিয়েছেন ওই রাস্তাটুকু যাওয়ার জন্য। বাড়ি ফিরে খানিকটা পড়াশোনাও তো করতে হবে। পপন ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

কিন্তু কলকাতায় ট্যাক্সি পাওয়া অত সোজা নয়। কেউই দাঁড়াতে চায় না। কেউ গ্যারেজ যাচ্ছে, কারুর সারাদিন খাওয়া হয়নি। আরেকজন তো অতি খারাপ। সে বলল, “খোকা, তোমার কাছে অত টাকা আছে তো?” পপন কোন উত্তর দিল না। ক্লাস টেনে উঠতে চলেছে। তাকে খোকা বলবে? শেষে একটা ট্যাকসি থামল। ড্রাইভার পপনকে জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাবেন?” শুনে নিতেও রাজি হলেন। তারপর একটা অদ্ভুত কথা শোনালেন। “আমার ট্যাক্সিটা কিন্তু একটু ভুতুড়ে, আপনি যেতে চাইছেন নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কী হয় বলতে পারি না।” চারিদিকে আলো, বাস চলছে, গাড়ি চলছে তার মধ্যে ভূতের কথার মানে কী? পপন বলল, “সে আবার কী?” ট্যাক্সিওয়ালা বললেন, “উঠে পড়ুন, হয়ত কিছু হবে না।” পপনের মনে হল, লোকটা একটু পাগল।

গাড়ি চলল সারকুলার রোড ধরে। এখন নাম হয়েছে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোড। কত বড় নাম। হঠাত্‌ পপনের মনে হল, ইদানীং কালে নাম হলে বিদ্যাসাগর স্ট্রীটের নাম হত দয়ার সাগর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সরণি। ভাবতেই পপনের হাসি পেল। সত্যি কারা এমন নামকরণ করে। পপন বোধহয় একটু অন্যমনস্ক ছিল। তাই কখন ব্যাপারটা হল টের পায়নি। যখন টের পেল, তখন দেখল গাড়িটা চলেছে একটা ফাঁকা রাস্তা দিয়ে। দুধারে ধানক্ষেত। ধান ফলে রয়েছে। কালো ধান। ও কখনো কালো ধান এর আগে দেখেনি। কিছুক্ষণ বাদে দেখল, শহর শুরু হয়েছে। একটা জায়গায় লেখা রয়েছে, শিবসাগর গড়কাপ্তানি অফিস। যাঃ বাবা, এ কোন জায়গা। বিরাট বিরাট দিঘি। সামনে মন্দির। মন্দিরের চুড়োয় হলুদ কলসী বসানো। ও দেখল, ট্যাক্সিড্রাইভারের চোখ প্রায় বোঁজা। পপনের ভীষণ ভয় হল। চেঁচিয়ে উঠল, এ আমায় কোথায় এনে ফেললেন।” ট্যাক্সি ড্রাইভারের চটকা ভেঙে গেল যেন, আর সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সি আবার ফিরে এল এ পি সি রায় রোডে। পপন দারুণ অবাক হয়ে গেল। বলল, “কী ব্যাপার হল?”

ট্যাক্সি-ড্রাইভার বললেন, “বলেছিলাম না আমার ট্যাক্সিটা ভুতুড়ে? ওই হয়। আমার মনে যদি কখনো কোনো জায়গার কথা উদয় হয়, ট্যাক্সি অমনি সে-জায়গায় চলে যায়। আমার এক মাসতুতো বোনের কথা মনে পড়ছিল আপনার কপালে ফোঁটা দেখে। ভাইফোঁটা আমি প্রথম পেয়েছিলাম ওই বোনের কাছে। সে এখন শিবসাগরে থাকে। আমরা তাই শিবসাগরে চলে গিয়েছিলাম।”

পপন বলল, “ভারী মজার তো। আপনি গাড়ি থামালেন না কেন? আমি নেমে দেখতাম। কালো ধান দেখলাম। এর আগে কখনো দেখিনি।”

ট্যাক্সি-ড্রাইভার বললেন, “আমার তো কোনো হুঁশ থাকে না, আমি দেখতে পাই না। তবে শিবসাগর আমি গেছি। ওই অঞ্চলে একরকম কালো ধান হয়। তার নাম জোহা ধান। খুব ভাল চাল হয়।”

পপন জিজ্ঞেস করল, “তাহলে আপনি জানেন গড়কাপ্তানী মানে কী?”

“হ্যাঁ জানি। গড়কপ্তানী হল পি-ডবলু-ডির ওইখানকার স্থানীয় নাম। আমরা পি-ডবলু-ডির কাছ অবধি গিয়েছিলাম কি?”

পপন উত্তর দিল, “আমরা একটা মন্দিরের কাছে গিয়েছিলাম।”

ট্যাক্সি ড্রাইভার বললেন, “হ্যাঁ ওই হচ্ছে বিখ্যাত শিবসাগরের মন্দির। ওপরে সোনার কলসী বসানো আছে। ওই মন্দিরের কাছেই আমার বোনের বাড়ি।”

পপনের বিশ্বাস করতেই ইচ্ছা করছিল না যে, ও এইমাত্র শিবসাগর ঘুরে এসেছে। অথচ ও তো সত্যিই দেখেছে শিবমন্দির ঘুরে এসেছে। অথচ ও তো সত্যিই দেখেছে শিবমন্দির আর কালো ধান। ও ওইরকম কলসবসানো মন্দির কখনো দেখেনি। ও ওইরকম কালো ধানও কখনো দেখেনি। কী করে হল? পপনের তখন ছোড়দির কাছে যাওয়ার তাড়া আর রইল না। ওর মনে হল এ তো দারুণ মজা। অধীর হয়ে ও জিজ্ঞেস করল, “আপনি যেখানে খুশি যেতে পারেন এভাবে?”

উত্তর এল, “হ্যাঁ, আমি যে জায়গার কথা মনে করি সেখানেই চলে যাই।”

পপন বলল, “আমার ভীষণ কাশ্মীর যাওয়ার ইচ্ছা, আপনি একবার কাশ্মীরের কথা ভাবুন না। কিংবা বিলেত বা আমেরিকা।”

ভদ্রলোক বিষণ্ণ স্বরে জবাব দিলেন, “আমি তো কখনো ওসব জায়গায় যাইনি। ভাবলেও ট্যাক্সি যাবে না।”

পপন বলল, “বা, আপনার তো খুব সুবিধে। অনেক জায়গা ঘুরতে পারেন।”

ভদ্রলোক বললেন, “মোটেও না। খদ্দেররা আমায় মারতে ওঠে। রোজ তো আর শিবসাগর যাই না। যে শিয়ালদহ যাচ্ছে সে যখন দেখে দমদম আসছে, তখন গালিগালাজ করে। কেউ ভয় পেয়ে যায়। এ ট্যাক্সিটা আমায় ছেড়ে দিতেই হবে।”

পপন ভেবেই পেল না কেন এ ট্যাকসি ছাড়বেন ভদ্রলোক। ও আবার জিজ্ঞাসা করলল, “আপনি কোথায় গিয়েছেন শিবসাগর ছাড়া?”

ভদ্রলোক বললেন, “আমার জন্ম পাটনায়। সেখানে ছাড়া আর কোথাও যাইনি। ওই একবার একমাস শিবসাগর ছিলাম।”

পপন বলল, “আপনি তাহলে পাটনার কথা ভাবুন।”

গাড়ি তখন শিয়ালদার ভিড় কাটিয়ে মৌলালীর দিকে এগোচ্ছে। ভদ্রলোক বললেন, “দেখি আপনার পাটনা দেখা হয় কিনা। গাড়ি মৌলালী পেরোল, এন্টালি বাজার পেরোল। জোড়া গির্জা প্রায় এসে গেছে। ভদ্রলোক চুপ। পপন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এবার পপনের মাথা একটু ঘুরে গেল। খুব জোরে লিফট ওপর দিকে উঠলে যেমনটি হয়। খুব জোরে লিফট ওপর দিকে উঠলে যেমনি হয়। তারপরই দেখল ওদের গাড়ি আর-একটা রাস্তা দিয়ে চলেছে। একদিকে প্রচুর বাঁশের গুদাম আর অন্য দিকে বিস্তৃত নদী। কী চওড়া। নদীর বুক দিয়ে একটা বিরাট স্টীমার চলেছে। এই সময়ে পপন একটা ভুল করল। “বাঃ কী সুন্দর” বলে হাততালি দিয়ে উঠল। ভদ্রলোকের চটকা আবার ভেঙে গেল। গাড়িও চলে এল বেকবাগানে।

ভদ্রলোকের বোধহয় পপনকে বেশ ভাল লেগেছিল। তিনি বললেন, “কী দেখলে? গঙ্গার ঘাট?” এই প্রথম উনি তুমি বললেন।

পপন বলল, “কই আর দেখলাম! একটু ভাল করে দেখতে গিয়েছি, অমনি তো বেকবাগান এসে পড়ল।”

পপনের নতুন জায়গা আর দেখা হল না। ভদ্রলোক অবিশ্যি পপনকে খিদিরপুর, বেহালা, গড়িয়া এইসব জায়গায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পপন ছোড়দির বাড়িই এল।

ছোড়দি এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। ট্যাক্সির বিল মিটিয়ে আসতেই সোজা খপ করে নিয়ে গিয়ে আসনে বসিয়ে দিল। বলল, “আর মাত্র আড়াই মিনিট দ্বিতীয়া আছে। তুই সারাজীবন আমায় জ্বালিয়েই গেলি।”

পপন ফোঁটা নিয়েই বলল, “দাঁড়া, আরও একজনকে ফোঁটা দিতে হবে।” ছুটে বেরিয়ে এসে দেখল-ট্যাকসিটা চলে গেছে। বোধহয় এখন শিবসাগরের সেই মন্দিরের ধারে আবার পৌঁছে গেছে। তখন পপনের খেয়াল হল, ভদ্রলোকের নাম-ঠিকানা কিংবা ট্যাক্সির নম্বর কিছুই রাখা হয়নি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত