হলুদ শাড়ি অথবা কদম ফুলের গল্প

 

সকাল থেকে চোখের সামনে একটা রঙ ভেসে আছে আমার। হঠাৎ হঠাৎ কদম ফুলের মত হলুদ হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে খুব । ইচ্ছেটা স্বপ্নের মতোন। কেমন যেন ডানা মেলে আকাশে উড়তে চাইছে। নিজেকে হলুদ পরীর রূপে দেখতে সাধ জাগছে মনে।আচ্ছা, হলুদ রঙের আবার পরীও হয় নাকি? জানিনা আমি।না হলে না হবে, আমি না হয় হলুদ পরীই সাজবো একটুক্ষণ।

হলুদ রঙটি আমার বরাবর ই ভীষণ অপছন্দের। যে সে অপছন্দ না, একদম সহ্য করতে পারিনা টাইপ অপছন্দ। কেমন যেন ক্যাটকেটে রঙ মনে হয়। কিন্তু আজ সকাল থেকে এ যাবতকাল থেকে অপছন্দ করে আসা এই হলুদ রঙের উপরেই আমার গভীর এক অনুরাগ জন্মেছে।
অনুরাগ জন্মানোর পিছনে মজার এক কারণ আছে। কারণ টা বলি তাহলে??
সকালে ফজরের নামাজ পড়ে এক কাপ আদা দেওয়া, মশলা দেওয়া রঙ চা নিয়ে ব্যালকোনি তে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখা অভ্যাস আমার। কিন্তু গতকাল রাত্রে ঘুমিয়েছি দেরী করে আর আজ ইউনিভার্সিটি বন্ধ থাকায় সকালে নামাজের পর ভাবলাম একটু ঘুমিয়ে নিই। সময় তো আছেই আজ অফুরন্ত।

এরপর ঘুমটা আমার এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ভেঙেছে। দেখলাম, কোন এক সবুজ খোলা প্রান্তরে আনমনে দাঁড়িয়ে আছি আমি। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ ।ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে, আকাশ টা নির্মল, হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর সামনে আগাতেই দেখলাম কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একগুচ্ছ কদম ফুল। উঁহু, এক গুচ্ছ বললে কম হবে। একঝুড়ি বলা উচিত। সে সেই সব ফুল আমাকে দিলো, আমি দুহাত পেতে তা গ্রহণ করলাম।তারপর সে আমার হাতটা ছুঁয়ে দিলো আলতো করে । অনুরক্ত আমি চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। ধীরে ধীরে সে কথা বলে উঠলো।

বললো,

— খুশবু, তুমি হলুদ পরী হয়ে যাও না কেন?যদি হতে তবে আমি কাব্যচর্চা করতাম । এই সবুজের প্রান্তর ঘেঁষে থাকা এক হলুদ পরীর কাব্য… তুমি কি হবে??

মুগ্ধ আমি, অবাক চোখে তাকে প্রশ্ন করতে চেয়েছি, “ আচ্ছা, এখন কি বর্ষা কাল??কই না তো।তবে এই এত কদম ফুল আপনি পেলেন কোথায়?”

কিন্তু আমার বিস্ময়ের রেশ কাটতেই চাইছে না।

অবশেষে আমি কিছু বলতে যাবো তখন ই ঘুম টা ভেঙে গেলো আমার। আর বলা হলো না, সে বললে আমি পরী হয়ে যাবো।

অদ্ভুত স্বপ্ন বলেছি এই কারণে যে, আমি যাকে দেখেছি সে একেবারেই অস্পষ্ট আমার কাছে। আমি তাকে আগে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। বাস্তবে এমন কাউকে আমি চিনিও না। অথচ তার প্রতি আমি মুগ্ধ, আমি অনুরক্ত। সেই অচেনা তাকে দেখে মনের মধ্যে সেই যে উথালপাতাল শুরু হয়েছে তা এখনো থামেনি। দেখিনি তাকে কখনো অথচ মন বলছে কতদিনের যেন সে চেনা আমার! মনের যেন কত গভীরে চুপটি করে আসন গেড়ে বসে আছে ! সে যেন আমার সমগ্র মনরাজ্য দখলের জন্য হাজির হয়েছে ।

মনের মধ্যে তারপর থেকে এক মিশ্র অনুভূতিরা লুটোপুটি খাচ্ছে যেন। এক অপরিচিত ভালোলাগার অনুভূতি তার সাথে সাথে উৎকণ্ঠা, ” কোথায় গেলে পাবো আমি তাকে? ”

এরপর থেকেই চোখের সামনে কদম ফুলের মত রঙ টি ভেসে বেড়াচ্ছে। ইসসস,কদম ফুলের যে এমন মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য আছে কখনো খেয়াল ই করলাম না? এ জীবনে এটা সত্যিই এক ব্যার্থতা।

কেমন কেমন যেন রঙ টা…ভাবতে ভাবতেই হৃদয়ের কুটিরে এক ছবি দেখতে পাই আমি।

দেখি, “ বড্ড সাজানো গোছানো এক ছোট্টবাড়ির একটা ঘরের বিশাল জানালার সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি দেওয়ালে হেলান দিয়ে। হলুদ শাড়ি পরেছি, চোখে কাঁজল টেনেছি ইচ্ছেমত, খোপায় কদম ফুল গুঁজে দিয়েছি আর দুহাত ভর্তি সবুজ রঙের কাচের চুড়ি। চুপচাপ বাতাস, মেঘলা আকাশ, আমার চোখে বড্ড উদাস দৃষ্টি!

মাধবীলতা জানালার পাশ ঘেঁষে দোতলা থেকে নিচে নেমে গেছে। মগ্ন হয়ে আমি নীরবতা আর মেঘলা প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর মিলনমেলা উপভোগ করছি। এতটাই মগ্ন আমি যে ঘ্রাণহীন মাধবীলতা থেকেও যেন মিষ্টি কোন ঘ্রাণ আমার অনুভূতি ছুঁয়ে দিচ্ছে বারবার। মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে আর আমি শিহরিত হচ্ছি। নিজেক আমি আয়নায় দেখিনি।কে যেন কানে কানে গোপনে বলে গেছে, সে আসবে। আমি চাই না এই সাজে সে আমাকে দেখার আগে আমি নিজেকে দেখি। আচ্ছা, আমাকে কি হলুদ পরীর মত দেখতে লাগছে? সে কি অবাক চোখে আমাকে দেখবে??আমাকে দেখে কি সে মনের খেই হারিয়ে ফেলবে ?…..”

নাহ, আর ভাবতে পারছি না। মনের মধ্যে অস্বস্তি টা ক্রমশই বাড়ছে। সাতপাঁচ না ভেবে বিকেলবেলায় স্বপ্নে দেখা সেই হলুদ শাড়ির খোঁজে বের হলাম। আমার যে সেই শাড়িটা চাই ই চাই।

প্রচুর ঘুরে ঘুরে ওই রকম একটা শাড়ি আমি খুঁজলাম। কিন্তু কোত্থাও পেলাম না । কেউ যেন হলুদ রঙ চেনেই না। এমন সব শাড়ি দেখায় যেসব হলুদ রঙ দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়। হতাশ হয়ে যখন ফিরে আসছি ঠিক তখন ই আমার চোখ আটকে গেলো এক দোকানের একটা শাড়ির উপর। শূন্যতার মাঝে এক অন্যরকম প্রশান্তির স্রোত বয়ে যায় আমার শিরা উপশিরায়। ঝটপট দোকানে ঢুকে দোকানী কে বলি,

— আংকেল, আমাকে কি শাড়িটা একটু খুলে দেখানো যাবে?

বলার সাথে সাথেই তিনি শাড়িটি নামিয়ে আমার হাতে দিলেন । আমি ছুঁয়ে দেখলাম আলতো হাতে, যেন একটু জোরে ধরলেই শাড়িটি ব্যাথা পাবে, অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে । স্বপ্ন কখনওই এতো স্বস্তা হতে পারে না, হাজারের ভীড়ে সে একটা ই হয়। সেই স্বপ্নে দেখা শাড়িটির মত রঙ, কদম ফুলের সমস্ত সৌন্দর্য যেন শাড়িটি গায়ে মেখে আছে। সবুজ রঙের পাড়,সেই পাড়ে কেউ যেন তার সমস্তটুকু যত্ন ঢেলে দিয়ে সুতোর কাজ তুলে দিয়েছে, জমিনে ছোট ছোট লাল ফুল, সবুজ ডালপালা, লতা পাতা,আঁচলটাতে যেন মায়া ছড়িয়ে দিয়েছে কেউ! আমার মন আনন্দে ভরে ওঠে।

শাড়িটি তাড়াতাড়ি প্যাক করে দিতে বলি আমি। কিন্তু বিপত্তিটা বাধে পেমেন্ট করার সময়। তাড়াহুড়ায় আমি আমার পার্স টি বাড়িতেই ফেলে রেখে এসেছি। মন টা ভীষণ খারাপ হয়ে যায় আমার। ব্যাগ হাতড়ে এটিএম কার্ড টা পেয়ে যাই। দৌড়ে যাই শপিং সেন্টারের এটিএম বুথে। কিন্তু আবার ও হতাশ হতে হয় আমাকে। বিশেষ কোন কারণবশত বুথটি এখন আউট অফ সার্ভিসে আছে।

কাছেপিঠে আর কোন বুথ ও আমি খুঁজে পাইনা। প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে দোকানে ফিরে আসি । দোকানী কে খুলে বলি সব কথা। প্রচুর রিকুয়েস্ট করি, শাড়িটা যেন আর কাউকে সেল না করে দেন। বলে আসি, আগামীকাল সকালে ই আমি এসে শাড়িটি নিয়ে যাবো।
.

পরের দিন খুব অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা ঘটে আমার সাথে । সকালে উঠেই আমি সেই দোকানে চলে যাই। গিয়ে দেখি তখনো সেই দোকান খোলা হয়নি।অপেক্ষা করতে থাকি। একসময় দোকানী আসেন। আমাকে দেখেই মুচকি হাসি উপহার দেন। দোকান খুলেন। আমাকে শাড়িটি দেওয়ার জন্য যেতেই দেখেন শাড়িটি নেই। নেই মানে সারা দোকানের কোত্থাও নেই। এর ই মধ্যে উনার ভাই দোকানে আসেন।দোকানী তার ভাইকে শাড়িটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন।কারণ গতকাল সন্ধ্যার পর নাকি তার ভাই ই দোকানে ছিলেন। উনি অন্য একটি কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। উত্তরে তিনি যা বলেন তা শোনার জন্য কোনভাবেই আমি প্রস্তুত ছিলাম না। শাড়িটি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদের ই এক রেগুলার কোন কাস্টমারের কাছে। আসলে, দোকানে এসে একটি শাড়ি নিচে দেখে তিনি সেটা আবার ডিসপ্লে তে সাজিয়ে রাখেন। এমন সময় একজন ছেলে তার মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে আসেন। তখন ই তার শাড়িটির উপরে চোখ পড়ে আর শাড়িটি সে কিনে নেয়। আমি যে শাড়িটির জন্য এত অনুরোধ করে গিয়েছি সেটা তো আর উনি জানতেন না ।

রাগে, দুঃখে আমার ওখানেই কান্না পেয়ে যায়। ছুটে বেরিয়ে আসি আমি। বাড়িতে ফিরে খুব করে কেঁদে নিই খানিক। যে নিয়েছে তার উপর রাগ হয় খুব। যে শাড়িটি নিতে পেরেছে সে হয়তো তার প্রিয় কাউকে উপহার দেওয়ার জন্যই নিয়েছে। ইসসস, মেয়েটা সত্যিই খুব লাকি। চমৎকার একটা জিনিস সে পাবে। হিংসে করতে খুব ইচ্ছে করছে তাকে আমার এখন।

তারপর আবারো আমি খুঁজেছি। ঠিক ওরকম ই একটি শাড়ি, কদম ফুলের মত সৌন্দর্য্য যার আঁচলে,পাড়ে, সমস্ত জমিন জুড়ে শোভা পাবে ।

খুঁজছি, খুঁজছি….পাবো পাবো ভেবে যাই আমি। বারবার সেই দোকানে ছুটে যাই যেখানে শাড়ি সেকশনের একটা কোণে সব রঙের ভিড়ে হ্যাঙ্গারে চেপে একটা অভিমানী রঙ সবার অলক্ষ্য হয়ে লুকিয়ে আছে। দোকানে ঢুকতে যতবার পা পড়ছে, ঠিক ততবারই বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা অভাববোধ হচ্ছে।

কিন্তু শাড়িটি আর পাওয়া হয়না আমার। আসলেই পাইনা আর খুঁজে। তবুও খুঁজে যাই, সেই হলুদকে যে সবার চেয়ে আলাদা। জানি সেটাই পাবো না, তবু ও যদি সেই রঙ টাকে যদি অন্তত আমার করে নিতে পারি।

বেশ অনেকদিন আমার মন খারাপ থাকে শাড়িটির জন্য। ধীরে ধীরে সয়ে যায় ব্যাপার টা। আগের মত প্রায়ই শাড়ির দোকান গুলোতে গিয়ে আর খোঁজা হয়না কিন্তু আমি একবারেই ভুলে যাই না। শপিংমার্কেটে ঢুকলেই আমার চোখ খুঁজে ফেরে তাকে।

মাঝে মাঝে ভীষণ অভিমান হয় স্বপ্নে দেখা মানুষটার উপর। সেই ই তো আমাকে অন্য চোখে হলুদ রঙ টাকে দেখালো, চেনালো।

তারপর….??

তারপর কেটে গেছে অনেক গুলো দিন, অনেক গুলো মাস আর প্রায় দুই বছর…

গতকাল আমার বিয়ে হয়েছে। পুরোপুরি পারিবারিকভাবে দেখাশোনা করে বিয়ে।
খুব হুট করেই বিয়ে টা হয়ে গেছে। প্রথমে আমি ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলবো। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে যখন সে আর তার পরিবার আমাকে দেখতে এলো তখন ই তাকে দেখে আমি ভূত দেখার মত চমকে উঠি । এ যেন স্বপ্নে দেখা সেই অস্পষ্ট মানুষ টা । সেইরকম ই যেন চোখ দুটো, সেই একইরকম যেন গলার স্বর। মনে মনে আমি আপ্লুত হই, স্বপ্নে দেখা সেই অস্পষ্ট চেহারা যেন এখন আমার সামনে জীবন্ত, বাস্তব আর স্পষ্ট হয়ে বসে আছে ।
এরপর বিয়েটা হয়েই যায়।

বসে বসে বিয়েতে আমাকে দেওয়া গিফট গুলো বিশেষ করে শাড়িগুলো খুলে খুলে দেখছিলাম। মনে মনে কোন যুক্তি ছাড়াই সেই স্বপ্নের মানুষ টাকে পেয়ে যাওয়ার মত স্বপ্নের শাড়িটিও পেয়ে যাওয়ার আশায়।

— খুশবু…!!

হঠাৎ ডাকে সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার মত চমকে উঠি। দেখি বরমহাশয় দাঁড়িয়ে আছেন। অবাক চোখে তাকে দেখি আর ভাবতে থাকি, অবিকল যেন সেই ডাক!

তাকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। ভেবেছি, বলবো তাকে আমার স্বপ্নের কথা, কদম ফুলের প্রতি তার জন্য ভালোবাসা জন্মানোর কথা আর শাড়িটি না পাওয়ার আক্ষেপের কথা। কিছুটা অভিমান ও দেখাবো। কেন সে কদম ফুল আর শুকনো পাতার মত হলুদ রঙ ভালোবাসতে শেখালো?

আমাকে এভাবে ভাবতে আর দেখতে দেখে দুষ্টুমি হাসি ফুটে তার ঠোঁটের কোনায়।হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,

— এই মেয়ে আর কত দেখবা??

লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলি আমি।

আড়ষ্ট কণ্ঠে জানতে চাই,

— কিছু বলবেন??দরকার কিছু?

সে আমার হাত টা ধরে নিয়ে গিয়ে
বিছানায় বসিয়ে দিলো। তারপর বললো,

— ভালো করে কথা বলার, গল্প করার ই তো সময় পেলাম না তোমার সাথে । শুনো, আজ আমরা একটা জায়গায় ঘুরতে যাবো। সেখানে শুধু আমরা দুজন ই থাকবো। তখন যতখুশি দেখো। আর এই নাও তোমার গিফট। এখন খুলবে না। এটা আমি অনেক আগে তোমার জন্য কিনে রেখেছি। একবার দেখাতেই খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো ঠিক তোমার মত।

বলেই হাসলেন তিনি। তারপর আবার বললেন, “ সেখানে গিয়ে এটা পরবে।”

রক্তিম আভায় আমার মুখটা ভরে গেলো। কিছু বলতে পারলাম না আমি। সে মুচকি হেসে উঠে চলে গেলো।

বিকালে আমরা এসেছি জায়গাটা তে। শহর থেকে অনেক দূরে। এটা তাদের গ্রামের বাড়ির কোন একটা জায়গা। পাশে ছোট্ট একটা কাঠের বাড়ি। বাড়ি নয় কুটির।এই কুটির তার খুব সাধ করে বানানো।আমার জন্য নাকি। আমার জন্য সে এত প্রেম, এত অনুরাগ জমিয়ে রেখেছে ভাবতেই আমি আমাকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলছি! আমার ভাবনাগুলোও যেন থেমে যাচ্ছে ।

জায়গাটার উপর আমার ভীষণ রকম প্রেম জন্মে গেছে কয়েক ঘণ্টাতেই।

সে আমাকে বললো, চলো একটু ঘুরে আসি। রেডি হয়ে নাও। আর হ্যা, সকালে দেওয়া প্যাকেট টা খুলে দেখতে পারো।বলেই সে বাইরে চলে গেলো।

আমি প্যাকেট টি হাতে নিয়েই বুঝলাম। শাড়ি আছে এতে। শাড়িটি বের করার পরেই বিস্মিত,অভিভূত আমার চোখে জল চলে এলো। এতো সেই শাড়িটা….!

ইসসস, অবশেষে তাকে খুঁজে পেলাম তবে আমি। কিছু কিছু না পাওয়া পরে দ্বিগুন আনন্দ নিয়ে ফিরে আসে। সে সময়ের অনুভূতি বোঝানো মুশকিল।

আমি ঝটপট শাড়ি পরে, চুড়ি পরে বাইরে চলে এলাম। যেটা মিসিং সেটা হচ্ছে, কদম ফুল। কিন্তু বাইরে এসে আমাকে আরেকদফা চমকাতে হলো। সে দেখি কদম ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে যেতেই খোপায় গুঁজে দিয়ে বললো,

— এত অবাক হওয়ার ও কিছু নেই, উদ্ভট ভাবার ও কিছু নেই। গাঁদাফুল খোপায় গোঁজা গেলে কদম ফুল ও যাবে।

অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে আবার বলে উঠলো,

— এইবার চলো, আমি এখন আমার হলুদ পরীকে নিয়ে কাব্যকথা সাজাবো।

সে আমার হাত ধরে হাঁটছে, তার সাথে আমিও পা মিলাচ্ছি। আর মনকে বলছি, কোন কোন ব্যাপারে যুক্তি খুঁজতে নেই। স্বপ্ন সত্যি হতেই পারে, কো ইন্সিডেন্ট ঘটতেই পারে তাতে যুক্তি খুঁজতে যাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই না ।

 

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত