নয় বছর হতে চললো বিয়ের এখনো তো একটা বাচ্চা মুখ দেখাতে পারলা না। কেন পরে আছো আমার বাড়ি?চলে যাও তোমার মুখটাও আমার দেখতে ইচ্ছে করে না।বন্দা মেয়ে ছেলে যত্তসব আমার কপালে এসে জুটছে। আমার ছেলেটার জীবনটা শেষ করে দিচ্ছে একেবারে। বিকেলে বসে বসে আমার ওনার সাথে কথা বলছিলাম এমন সময় বাইরে শাশুড়ী মায়ের এমন চেচামেচি শুনে ভরকে গেলাম আর বুঝতে পারলাম উনি ওই সব কথা গুলো আমার বড় জা পায়েলকে বলছিলেন। তাকে বলে ফোনটা কেটে দিয়ে বাইরে বেরুলাম। দেখি বড় ভাবি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে। প্রতিদিনই মা উনাকে নানান ভাবে অপমান করে আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারি না। নতুন বউ হওয়ার সুবাদে কিছু বলতেও পারি না। তবুও আজ সাহস জুগিয়ে মা কে জিজ্ঞেস করলাম-
-কি হয়েছে মা?
-কি আর হবে সবই আমার কপাল সবই আমার কপালের দোষ।
বলেই উনি ঘরে চলে গেলেন আর ভাবি দেখি এখনো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। এই মানুষটাকে আমি যতো দেখি ততো যেন অবাকই হই মা উনাকে এতকিছু বলেন তবুও মুখ ফুটে একটা কথাও উনি বলেন না। এত সহ্য উনি কই থেকে পান আল্লাহই জানেন।
-ভাবি ঘরে চলো। ছলছল চোখে ভাবি আমার দিকে তাকালো।
-আমি আর পারছি নারে বোন। আল্লাহ কেন আমার সাথে এমন করছে রে? একটা বাচ্চা যে আমার খুব দরকাররে বোন ইদানীং তোর ভাই ও আমার সাথে ঠিক করে কথা বলে না। কি করে কথা বলবেই বল? একটা বাচ্চার মুখ যে আমি তাকে দেখাতে পারছি না। বলেই ভাবি কাঁদতে লাগলেন।আমি ভাবিকে ঘরে নিয়া আসলাম।
– ভাবি কান্না করো না প্লিজ দেইখো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে আর তুমিও একটা গুলুমুলুর আম্মু হবা।
– দোয়া করিস বোন।
ভাবি মানুষটা খুব ভালো। আমি এসেছি এই বাড়ি একবছর হতে চললো। আমি এই বাড়ির মেঝো ছেলের বউ। বড় ভাই ব্যবসা করেন, আর আমার উনি পুলিশে আছেন,আর আমার দেবর এবার কলেজে পরে আর আমার উনার বড় একটা বোন আছে যার বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। রাতে খাবার টেবিলে আমি আর ভাবি সবাইকে খাবার দিচ্ছিলাম এমন সময় আমার শাশুড়ী বললেন–
– দেখ মায়াজ অনেক হয়ছে এবার তুই এই বন্ধাটাকে বিদায় করে আবার আর একটা বিয়ে করে। কথাটা শুনে ভাবির হাত থেকে চামচটা পরে গেল আমিও অনেকটা অবাক হলাম উনার কথা শুনে।ভাইয়া এতে হ্যা বা না কিছুই বললো না। টেবিলে আমার শশুড়,শাশুড়ী, ভাইয়া, আমার হাসবেন্ড,নায়াজ(আমার দেবর) সবাই আছে।আজ ৬ মাস ধরেই মা এই কথাটা বলছেন। দেখলাম ভাবি কান্না করছে। কেন জানি আমার আর সহ্য হলো না আজকে।
– সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি বাচ্চাটা খুবই ইম্পর্ট্যান্ট মা? একটা বাচ্চা হচ্ছে না বলেই কি আপনি ভাবির সাথে এমন ব্যবহার করেন? আমি আসার পর থেকেই দেখছি আপনি ভাবির সাথে কখনো ভালো করে কথায় বলেননি। আপনিও তো একজন মেয়ে মা,আপনি কি বুঝেন না একটা মেয়ের মা না হওয়াতে তার ভেতরে কি পরিমাণ কষ্ট হতে পারে? মা ভাবি তো সেই ছোট বেলায় মা হারিয়েছে বিয়ের পরতো এইটুকু আশা করতেই পারে যে তার শাশুড়ি মায়ের থেকে অন্তত একটু ভালোবাসা পাবে। কিন্তু মা আপনি কি কখনো ভাবিকে একটু ভালোবাসা দিয়েছেন? সেই বিয়ের পর থেকেই আপনি ভাবির সাথে খারাপ ব্যবহার করেন কারন উনি গরিব বাড়ির মেয়ে বাবার টাকা নাই। কোন কিছু আনতে পারে না আর মুল কথা ভাইয়া হুট করেই আপনাকে না জানিয়ে ভাবিকে বিয়ে করে এই বাড়িতে এনেছিলো।
মা প্রতিটা মেয়েই তো অনেক শ্বপ্ন নিয়ে শশুর বাড়ি আসে সংসার করতে। কিন্তু এসে যদি সে দেখে যার কাছ থেকে সে মায়ের ভালোবাসা পেতে চায় সেই তাকে সহয় করতে পারে না। তাহলে তার কষ্টটা কতখানি হতে পারে আপনি বুঝেন? মা আমি প্রায়ই দেখি ভাবি কান্না করে এমনকি ভাইয়াও আজকাল ভাবিকে সহ্য করতে পারে না। এই মেয়েটা কই যাবে মা? বলুন? মা মায়শা আপুরও(আমার ননদ) তো ১০ বছর পর অনেক চিকিৎসা করে বাচ্চা হয়েছে কই উনার শাশুড়ী তো ওনাকে এগুলো বলে নাই কখনো বরং উনি নিজে আপুকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেছেন উনাকে সাহস দিয়েছেন।
আপনি কেন তার বিপরীত হচ্ছেন? আপুর সাথে এমন কিছু হলে আপনি মানতে পারতেন? যদি আপুকে ওরা এই বাড়িতে ফেলে যেত আপুর হাসবেন্ড যদি আবার বিয়ে করতো আপনি পারতেন নিজের মেয়ে এমন একটা পরিস্থিতিতে দেখতে? ভাবিকে কেন এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন করছেন মা? ভাবিকে কি আপুর জায়গায় বসানো যায় না মা? আপুর যদি বাচ্চা না হতো তাহলে কি আপনি পারতেন নিজের মেয়ের এই কষ্ট গুলো মানতে? যে কষ্ট গুলো আপনি ভাবিকে দিচ্ছেন? একনাগাড়ে কথা গুলো বলে আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। আমার শশুড় মাথায় হাত দিয়ে বললেন তুমি একদম ঠিক বলেছো মা। আমি তোমার শাশুড়িকে কম বুঝায়নি কিন্তু সে তো বুঝতেই চায় না। দেখলাম মা ছলছল চোখে তাকিয়ে ভাবির কাছে গেলেন হয়তো মানুষটার অনুতাপ হচ্ছে।
– সত্যি হয়তো আমার ভুল হয়ে গেছে মা। আসলে আগের দিনের মানুষতো আমি এত কিছু ভাবি নাই।আমায় ক্ষমা করে দিস মা।
বলেই উনি ঘরে চলে গেলেন। ধন্যবাদ ছোট ভাবি মাকে কত বুঝানোর ট্রাই করেছি কিন্তু মা তো বুঝেই না কিছু।(নায়াজ) দেখলাম ভাইয়াও ছলছল চোখে ভাবির দিকে তাকিয়ে আছে আমার উনাকে ইশারা দিয়ে ঘরে যেতে বললাম।নায়াজও বুঝতে পেরে ঘরে চলে গেল।উনাদের এখন একটু প্রাইভেসি দরকার মান অভিমানের পাল্লা ভাঙার সময়টা হয়তো এখুনি।
– ওয়াও আমার বউ এত কথা বলতে পারে আমিতো ভাবতাম কথায় বলতে পারে না।হাহাহা (আমার উনি)
– তাই নাকি আমি বুঝি বোবা?
– না না একদম না। মা যে রাগি আমিতো ভয় পেয়ে গেছিলাম কি না কি হয়!
– বড়রাও ভুল করে মশাই কিন্তু উনাদের ভুলটা উনাদের কাছে ভুল মনে হয় না তাই মাঝে মাঝে একটু ভুল ভাঙাতে হয় এই আরকি।
আজকের পর হয়তো ভাবিকে কিছুটা হলেও কম অপমান সহ্য করতে হবে।পাড়ার লোক যা ইচ্ছা বললেও অতটা কষ্ট লাগে না কিন্তু নিজের লোক গুলোর একটু আঘাতও মেনে নেওয়া যায় না।