নির্মমতা

নির্মমতা
আমার বিয়ে যখন আমার বড় আপুর বরের সাথে পাকা হয় সেই বিয়ের দিন আমি আমার পছন্দের মানুষ আদিবের সাথে পালাই। আপু ব্লাড ক্যান্সারে মারা যাওয়ার ছয় মাস পর দুলাভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয় যদিও দুলাভাইয়ের এতে মত ছিল না। শুধু মাত্র ছোট্ট দুটো বাচ্চার জন্য রাজি হয়েছেন। আর আপু দুলাভাইয়ের লাভ ম্যারেজ ছিল। এমনকি দুলাভাই বলেছেন আমি কখনো রিনি মানে আপুর জায়গা নিতে পারবো না।
আমার মতামত তো পরে। আমার পরিবারের কাছে আপুর দুটো জমজ বাচ্চার ভরণপোষন তাদের দেখাশোনার বিষয়টা আগে এবং দুলাভাইয়ের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। আমার পরিবার মানা করেনি একবারো যখন আপুর শাশুড়ি প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কারণ অন্য মেয়ে ঘরে আসলে যদি বাচ্চা দুটোর অযত্ন হয়। যত ই হোক অন্যের বাচ্চা বলে যদি অবহেলা করে সেদিক থেকে বাচ্চাদের মায়ের বোন হলে একটু শান্তি আর নিরাপদ। আমি পরিস্থিতি বুঝে কাউকে কিছু বলতে ই পারছিলাম না। কি বলব!! আমার কথা শুনে সবাই আমাকে ই দোষারূপ করবে। অন্যদিকে আদিবের সাথে আমার এত দিনের সম্পর্ক প্রায় ছয় বছরের উপরে। সে এই কথা শোনার পর থেকে পাগল হয়ে আছে যেকোনো মুহূর্তে বাসায় আসতে পারে আর আমি নিজেও তো পারবো না আদিবকে ছাড়া অন্যকাউকে মেনে নিতে!!
কনে সাঁজে বসে ছিলাম ঠিক তবে সুযোগ খুজছিলাম পালানোর। সুযোগটা পেয়ে যখন ই পালিয়ে যাব তখনি আমার শাড়িতে টান পড়ল! পিছন ফিরে তাকাতে ই দেখি আয়ান আপুর ছেলে পনের মাসের বাচ্চাটি আমার শাড়ি চেপে ধরে আছে। মনের ভিতরটা কেমন জানি করে উঠল। তারপরও শাড়ি ছাড়িয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। দুজন কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নিলাম। বাবার বাড়ি আমার জন্য বন্ধ হয়ে গেল! অনেক ভাবে অনেক কথা শুনেছি আমি কখনো সাহস হয়নি আর পা বাড়ানোর। এখন বিয়ের প্রায় আট বছর হতে চলল আমাদের। এখনো সন্তানের মুখ দেখতে পারিনি আমরা। অনেক চিকিৎসা কবিরাজি কোন কিছু ই বাদ রাখেনি আদিব। কিন্তু কোনো সমস্যা নেই আমাদের দুজনের! শ্বশুরবাড়িতে অনেক কথা ই শুনতে হয়েছে বেশি না হলে কম কম।
তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম বাচ্চা এডপ্ট করবো আর করেছি তিন তিন বার। কিন্তু দূর্ভাগ্য কাকে বলে আমার জানা ছিল না এখন সেটাও বুঝে গেছি তিনবার বাচ্চা এডপ্ট নেওয়ার পরও একটা বাচ্চাকেও কোন ভাবে বাঁচাতে পারিনি। কোন এক এক্সিডেন্ট বা রোগে মারা গেছে তিনবার ই। আমি আর আদিব অদ্ভুত ভাবে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম এমন পরিনতিতে। বার বার শুধু পুরনো কথা মনে পড়ছিল!! আদিবও নিজের মত ব্যস্ত সময় পার করে অনেকটা ইচ্ছে করে ই। কোন কিছু ই আর আগের মত নেই। শুধু মনে পড়ছিল,, বিয়ের দিন পালানোর সময় আয়ানের আটকে রাখার দৃশ্যটা শুধু চোখের সামনে ভাসছিল। ভুল টা কি আমার সেখানে ই হয়েছিল!! আবেগের বশে নিয়তিকে হার মানিয়ে সুখ খুজতে গিয়ে বরং নিয়তির পাল্টা জবাব এটা আমার জীবনে!!
হুট করে একটা রেস্টুরেন্ট এর পাশে দুলাভাইয়ের সাথে দেখা অনেক বছর পর! নিজের কাছে ই লজ্জা লাগছিল। তারপর কথা হল রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখতে পেলাম আয়ানকে কেউ একজন খাইয়ে দিচ্ছে আর সে আগের মত ই আচল ধরে আছে! দশ বছরের ছেলেটি! দেখে ই কেমন জানি একটা ধাক্কা লাগল ভীষন। চোখ ঝাপসা হয়ে আসল। বিধাতা ফেরেশতা বাচ্চাদের প্রতি নির্দয় হোন না। তার ই প্রমান। আরো জানলাম ওই মহিলা বিয়ের পর আর কোনো বাচ্চা ই নেন নি আমান আর আয়ানকে ই আপন করে নিয়েছেন। আসলে ই নিয়তির পাল্টা জবাবটা খুব ই নির্মম। আমরা চাইলে ই পারিনা নিজেদের মত সব গুছিয়ে নিতে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত