আগের বার যখন বাড়ি থেকে এসেছিলাম তখন অনেক বড় একটা কষ্ট নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলাম। একবছর এই কষ্টটা নিয়ে ঢাকায় ছিলাম৷ কষ্টটা নিজের জন্য ছিল না৷ আমার এক দাদুর জন্য ছিল। তার নাম জহির। পুরো নাম জহিরউদ্দিন। তিনি হচ্ছেন আনার বাবার আপন কাকা। জীবনে কোনদিন বিয়ে করেনি৷ এর পেছনে ছিল লম্বা কাহিনী। সেটা ছিল বীরত্বের, বেদনার, কষ্টের আর আত্মমর্যাদার। আমি যখনই বাড়িতে যেতাম দাদু প্রতিবারই এই গল্পটা বলতেন। দাদু ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি খাতায় ছিল না। তিনি প্রায়ই তার যুদ্ধের সময়ের কাহিনি বলতেন। আমরাও সেটা অনেক আগ্রহ নিয়ে শুনতাম। তিনি গল্পটা বলতেন এভাবে,
‘দেশে তখন চরম বিপর্যস্ত অবস্থা। চারদিকে শুধু হাহাকার। পাকিস্তানিরা চারদিকে মানুষ মারছে। কারও উপর কোন রকম দয়া দেখাতো না। আর কোন সুন্দরী মেয়ে দেখলে তার সর্বনাশ করে ফেলত। আমি তখন বিএ- তে পড়তাম। তখনো যুদ্ধ ভালোভাবে শুরু হইনি। কিন্তু বুঝা যাচ্ছিল খুব বড় যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে। বোধহয় এপ্রিল মাস ছিল। যুদ্ধের ভয়াবহতা এই গ্রামে তখনো পৌছায়নি। মিলিটারিরা তখনো আমাগো এই গ্রামে এসে পৌছায়নি। কিন্তু ঢাকার আশেপাশে টুকটাক যুদ্ধ হচ্ছিল। তাই আব্বাজান চিঠিতে বাড়িতে চলে আসতে বললেন। আমিও তখন আব্বাজানের কথামতো বাড়িতে চলে আসি। আমাদের পাশের বাড়িতে এক মেয়ে থাকত নাম ছিল নীলিমা। মেয়েটাকে আমার অনেক ভালোলাগত। তোমাগো যুগে মানুষ এটাকে ভালোবাসা বলে। কি ভাবছ আমি ভালোবাসতে পারি না? বিয়েটা হয়তো কখনো করিনি কিন্তু একজনকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম আর সে ছিল
নীলিমা।’
এই কথা বলে আমার দিকে তাকালে আমি হেসে দিতাম। দাদু আমার সাথে অনেক মজা করত। নিজের নাতি হিসেবে না দেখে বন্ধুর মতো দেখত। আমরাও তাকে নিজেদের বন্ধুর মতোই দেখতাম। তার বয়সটা কখনো বাধা হয়ে দাড়াইনি। তিনি আবার গল্প বলা শুরু করতেন, ‘নীলিমা যদি একবার শুনতো যে জহির বাড়ি এসেছে তাহলে তাকে আর আটকায় কে। আমাদের বাড়িতে চলে আসত। দরজার আড়ালে দাড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখত। আমিও তাকে দেখতাম। তার লজ্জায় লাল হওয়া চেহারাটা দেখতাম। জীবনটাই ছিল অন্যরকম। বাড়ির সবাই আমাদের দুজনের কথা জানত। আর দু পরিবারের সম্মতিও ছিল। তারা বলেছিল যে আমার পড়ালেখা শেষ হলেই নীলিমার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিবে। বাবার জমিজমা থাকার কারণে আমাকে সেই সময়ও ঢাকায় পড়ালেখার জন্য পাঠায়। বাড়িতে আসার পর গ্রামের লোকজন আমাকে দেখতে আসত।
যেন আমি নতুন বিয়ে করে আসা বর। আসলে তখন বেশি শিক্ষিত মানুষ ছিল না তো। তাই সবাই ভাবত আমি কি না কি হয়ে গেছি। এই সুযোগে নীলিমাও বারবার আসত। বাড়িতে ঘরের কাজে আমার মা আর বোনকে সাহায্য করত। আমি বিকালে একবার ওর সাথে দেখা করি সামনাসামনি। ও তো আমায় দেখে একদম লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিল। মাথা নামিয়েছে তো একদম নামিয়েছে। আর ওঠানোর কোন নাম নেই। ওর শ্যামলা মুখটা লাল হয়ে গেছিল। আমি ওর মুখটা উচু করে ওর হাতে ওর জন্য ঢাকা থেকে কেনা নীল চুরি গুলো দেই। ওর লজ্জা পাওয়ার পরিমাণ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। কিন্তু মনে মনে যে কতটা খুশি হয়েছিল সেটা বুঝতে পারছিলাম। চুড়িগুলো হাতে নিয়ে বলল, ‘আপনি একটা পাগল।’ তারপর ছুটে নিজেদের বাড়িতে চলে গেল। আমি কিছুক্ষণ হাসলাম ওর অবস্থা দেখে।
রাতের বেলায় আব্বুর সাথে বসে রেডিও তে খবর শুনছিলাম। রেডিও তে বলছিল দেশের অবস্থা নাকি অনেক খারাপ বিভিন্ন জেলায় জেলায় মিলিটারিরা ঢুকে পড়ছে। বাঙালিদের গুলি করে করে মারছে। কিন্তু বাঙালিরাও অস্ত্র তুলে নিয়েছে। বাঙালিরাও সামনে থেকে লড়াই করছে। এমন সময় মা এসে বলল যে শফিক ভাই নাকি আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। আমি এটা শুনে শফিক ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলাম। শফিক ভাই হচ্ছে তোমার রফিক দাদূর ভাই ছিলেন। যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি শহীদ হয়েছিলেন৷ আমি তার সামনে যেতেই বলল, ‘কেমন আছো জহির?’
‘জ্বী ভাই ভালো।’
‘তুমি তো এখন বিএ তে পড়ছ?’
‘জ্বী ভাইজান।’
‘তা দেশের অবস্থা তো মনে হয় ভালো মতোই জানো?
‘হুম। রেডিও তে শুনলাম মিলিটারিরা নাকি গ্রামে গ্রামে ঢুকছে। আর মানুষ মারছে।’
‘এটাও নিশ্চয় জানো যে বাঙালিরাও বইসা নাই। পাল্টা আক্রমণ করছে।’
‘হ শুনলাম তো।’
‘তো আমাদেরও তো কিছু করা দরকার। দেশও আমাদের মা। মায়ের জন্য তো কিছু করা দরকার। তুমি শিক্ষিত মানুষ তুমি অল্পতেই বুঝবা৷’ আমি বুজতে পারছিলাম শফিক ভাই কি বলতে চাইতেছিল। সে আমাকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বলছিল। আমি যাতে দেশের জন্যে কিছু করতে পারি। সেটা চাইছিল। আমি বললাম, ‘তো কেমনে কি করবেন?’
‘আমরা প্রথমেই বর্ডার হয়ে ভারতে যাব এরপর সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে ফিরে এসে ঝাপিয়ে পড়ব।’
‘ভাইজান! আমি কাল সকালে সিদ্ধান্ত জানাব৷’
‘ভাই এটাই সুযোগ। কাজে লাগাতে পারলে জীবনটা না থাকলেও জীবনটা সার্থক হয়ে যাবে।’
এই বলে শফিক ভাই চলে যায়। আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম৷ আমারও ইচ্ছা ছিল যুদ্ধে যাওয়ার। তাই মনে মনে এক রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে দেশের জন্য লড়ব। তাই রাতের বেলাতেই নীলিমার সাথে দেখা করতে ওদের বাড়িতে যাই। নীলিমা আমারে দেইখা বাইরে বের হয়ে আসে৷ ওদের বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। আর পুকুর ঘাটটা ছিল শান বাধানো। আমি আর নীলিমা পুকুরে ঘাটে গিয়ে বসি। মেয়েটা অনেক লজ্জা পেতেছিল। নীলিমার লজ্জাটা একটু বেশিই ছিল। জোৎস্না রাত ছিল। চাদের আলো পুকুরের পানিতে পড়ছিল। আমি আর নীলিমা চুপচাপ সেই আলো দেখছিলাম। আমি নীরবতা ভেঙে দিয়ে বললাম, ‘আজকের রাতটা অনেক সুন্দর না?’
‘হুম।’
‘জানো দেশে এখন যুদ্ধ চলছে। দেশে ভয়াবহ অবস্থা।’
‘হ। হুনছি রেডিও তে।’
‘তোমাকে একটা কথা বলি। শফিক ভাই আমাকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য।’ নীলিমার চোখ ছলছল করে উঠল। যেন কেদে ফেলবে। নীলিমা বলল, ‘তো আপনে কি যাবেন?’
‘আমার যাওয়ার ইচ্ছা আছে। দেশের জন্য সবার কিছু করা দরকার। তাই তোমার সাথে কথা বলতে আসলাম।’
‘ক্যান যাইবেন আমারে ছাইড়া? আমারে কি আপনে ভালোবাসেন না?’ ‘বাসিতো। কিন্তু তার থেকেও বেশি যে দেশকে ভালোবাসি।’ নীলিমা কেঁদে ফেলে। আমি হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে বললাম, ‘তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। কিন্তু এখন তো সময় এসেছে বীরের মতো যুদ্ধ করার। তুমি চিন্তা করো না। আমি ফিরে আসব। আর তোমাকে বিয়ে করব। আমাদের একটা সংসার হবে।’ নীলিমা আমার দিকে এগিয়ে এসে বসল। প্রায় লাগালাগি অবস্থা। নীলিমা বলল, ‘আপনে যাইয়েন না। আমি আপনারে ছাড়া বাচমু না।’ ‘আমি না গেলে যে দেশ বাঁচবে না৷’
আমি নীলিমাকে বুকের সাথে লাগিয়ে ফেলি৷ নীলিমা আমার বুকের সাথে মুখ লাগিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে। আমি নীলিমাকে কিছুক্ষণ সান্ত্বনা দিলাম। কিন্তু সে মানছিল না। আমি নিজেও পুরো নিশ্চিত ছিলাম না৷ ফিরব কিনা। তাই শেষ বারের দেখা ভেবে নিয়ে নীলিমার সাথে অনেকক্ষণ কাটালাম। বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে বললাম আমি যুদ্ধে যেতে চাই৷ মা এই কথা শুনে কেঁদে ফেলল। কোন ভাবে যেতে দিতে চাইছিল না। মাকে অনেক বুঝালাম। বাবা আমার যুদ্ধে যাওয়ার মত দিয়ে দেয়। সেও মাকে বুঝায়। পরের দিন সকালে শফিক ভাইয়ের সাথে গ্রাম ছাড়লাম। এরপর বর্ডার পার হয়ে ভারতে চলে যাই৷ সেখানে তিন মাসের ট্রেনিং নেই। ট্রেনিং সময় একটা বাড়িতে চিঠি পাঠাতাম। আর একটা নীলিমার কাছে পাঠাতাম।। বুঝতে পারতাম না চিঠি পৌছেছে কিনা। দেশের যা অবস্থা তাতে চিঠি না পৌছানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকত। কিন্তু একবার একটা চিঠি এসেছিল। আমি চিঠিটা পড়ে অনেকটা কেঁদে ফেলেছিলাম। সব সময় চিঠিটা নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে রাখতাম।
ট্রেনিং এর সময় আমরা খালি মেশিন গান চালানো শিখলাম আর কিভাবে গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে সেটা শিখলাম। এরপর বাংলাদেশে ঢুকেই আক্রমণ শুরু করি। সামনে যখনই কোন পাকিস্তানিকে দেখতাম কোন ছাড় দিতাম না। সরাসরি গুলি করে মারতাম। কাউকে রেহাই দিতাম না। যুদ্ধের সময় নিজ জেলায় যাওয়া হয়নি। আমি যুদ্ধ করেছিলাম কুমিল্লার দিকে। এই জেলায় এসেছিলাম যুদ্ধের পর। গ্রামে এসে দেখি যে বাবা-মার কিছু হয়নি। তারা এই যুদ্ধের পরও বেঁচে আছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি এটা জানার পর। কিন্তু সব চেয়ে বড় আঘাত পাই যখন নীলিমার খবরটা পাই। নীলিমাকে নাকি কেরামত আলি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। কেরামত আলি শান্তি কমিটির সদস্য ছিল। ওরা নীলিমাকে ছাড়ে নি। ওরা ওকে মেরে ফেলেছিল। সেদিন অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। মনের ভেতরে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল যে কি লাভ হলো এই যুদ্ধে গিয়ে যদি নিজের ভালোবাসাকে রক্ষা করতে না পারি।
ভালোভাবে জানতে পারলাম যে কেরামত আলি যুদ্ধের পরও আরামে ঘুরাঘুরি করছে। আর তাকে কেউ কিছু বলছেও না। এই কথাটা শোনার পর আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম কেরামত আলিকে মেরে ফেলব। কারণ সবার যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও আমার জন্য তখনো যুদ্ধ শেষ হয় নি। সেদিন রাতেই কেরামত আলির বাড়ি গিয়ে কেরামত আলিকে মেরে ফেলি। সেদিন রাতেই গ্রাম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। পাঁচ বছর আর গ্রামে ফিরিনি। মনের ভেতর ভেতর ক্ষোভ ছিল যে যুদ্ধে নিজের আপন মানুষকে বাঁচাতে পারি নি সেই যুদ্ধের সম্মাননা কেন নিব! তাই রাগ করে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা নেই নাই।’
দাদুর দিকে খেয়াল করে দেখেছিলাম ওনার চোখ ছলছল করছিল। আমি তখন ওনার আরও কাছে গিয়ে বসি। দাদু আমার কাধে হাত দিয়ে বলল, ‘জানো আমার শেষ ইচ্ছা কি? আমি মারা গেলে যেন শুধু গার্ড অব অনার পাই৷ কারণ এখন যখন মুক্তিযোদ্ধাদের মারা যাওয়ার পর গার্ড অব ওনার দিতে দেখি তখন হৃদয় কুঁকড়ে যায়। মনে মনে বলি, ইশ! আমার নামটা যদি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় থাকত তাহলে আমিও গার্ড অব ওনার পেতাম। যে পতাকার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম সেটা দিয়ে যেন আমার লাশটা ঢাকা থাকত। কিন্তু কেউ তো ভালো মতো জানেই না আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। সবাই মনে করে আমি যুদ্ধের সময় এলাকা থেকে ভয়ে পালিয়ে গেছিলাম। তাই আমার মনে হয় না কেউ আমারে গার্ড অব অনার দিবে। ভাই! তুই একটু দেখিস আমি যেন মারা গেলে গার্ড অব ওনার পাই।’
শেষ কথাগুলো দাদু গত বছর বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার দিন বলেছিল। কিন্তু কথাগুলো আমার কানের মধ্যে এখনো বাজতে থাকে।
আবার বাড়ি যাচ্ছি৷ কারণ জহির দাদু কাল রাতে মারা গেছে। যেতে ইচ্ছা করছে না। কারণ দাদু আমাকে এতোটা ভালোবাসত যে আমার মানতে কষ্ট হচ্ছিল। মারা যাওয়ার আগে তিনি আমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন বাড়ি যেতে পারি নি। আমি গ্রামে পৌছে সেই জায়গায় গিয়ে বসলাম যেখানে দাদু আমাকে সব সময় গল্প শোনাতো৷ বাড়ি যেতে ইচ্ছা করছিল না৷ পা বাড়াতে ইচ্ছা করছিল না৷ আমি বার বার দাদুর সাথে তোলা সেলফি গুলো দেখছিলাম। আর চোখ দিয়ে পানি ফেলছিলাম। দাদু আমাকে বলেছিল যেন আমি তার মৃত্যুর পর তাকে গার্ড অব অনার দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু আমি সেটা পারিনি। আমি কিছুই করতে পারিনি।
অনেকক্ষণ বসে থাকলাম। মা ফোন করে তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে বলল। কিন্তু আমার পা এগোচ্ছিল না। অনেক কষ্টে বাড়ির দিকে এগোলাম। বাড়ির সামনে গিয়ে দেখলাম পুলিশের গাড়ি। দেখে বুঝতে পারছিলাম না। বাড়িতে ঢোকার পর দেখলাম। দাদুকে মসজিদের খাটের উপর শোয়ানো হয়েছিল। কাছে যেতে ইচ্ছা করছিল না। কাছে গেলাম অনেক কষ্টে। নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল কারণ দাদুর শেষ ইচ্ছা পূরনের জন্য কিছুই করতে পারিনি। অনেকক্ষণ পর জানতে পারলাম পুলিশ নাকি দাদুকে গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য এসেছে। জানিনা কেন মনে হচ্ছিল বুকের উপর থেকে অনেক বড় একটা পাথর নেমে গেল।
বিস্তারিত জানলাম যে দাদুকে কুমিল্লা জেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শনাক্ত করেছে। দাদু কুমিল্লায় ব্যাপক যুদ্ধ চালিয়েছিল। তাকে নাকি পাকিস্তানের মিলিটারিরাও ভয় পেত। জানিনা কেন আনন্দ বুকটা ভরে উঠছিল। আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। দাদুকে আমার সামনে গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো। তার লাশটা বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। আর পুলিশ এগিয়ে গেল লাশের কাছে। সারাক্ষণ আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। তবে মনের এক কোণে একটা আনন্দ কাজ করছিল। কারণ দাদুর শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। হয়তো আমি পূরণ করতে পারিনি কিন্তু পূরণ হয়েছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প