কুয়াশায় ভিজেনি গা

কুয়াশায় ভিজেনি গা
ক্যাম্পাসের সুন্দরী মেয়েটার পেছনে অনেকদিন ঘুরেছি। যেদিন তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়, সেদিন সে আমার সাথে প্রথম কথা বলে। আমার সাথে টিএসসিতে আড্ডা দিতে চায়। আমিও না করিনি। সুন্দরী মেয়েদের আমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করার দুঃসাহস আমার নেই। সেই প্রথম থেকেই ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট স্টুডেন্ট আমি। অথচ সুন্দরী মেয়েটা আমার থেকে কোনো হেল্প নেয়নি। কিন্তু এখন নেয়। আমাকে বেশ সময় দেয়। আমিও দেই। কেননা সুন্দরী মেয়েরা চাঁদের মতো। তাদের মধ্যে থাকা সেই চাঁদের আলোটা গায়ে মাখতে আমার বেশ ভালোই লাগে।
শুক্লপক্ষের পঞ্চদশ তিথিতে সেই মেয়েটা আমাকে প্রপোজ করলো।। আমি অবাক হইনি। আমার জব হয়েছে ছয় মাস হলো। সিক্স ডিজিটের একটা হ্যান্ডসাম স্যালারি পাই। আমাকে সে প্রপোজ করবে, এটা নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার। সে তার রূপ দিয়ে আমাকে কিনতে চায়। আমি তাকে সরাসরি না করে দিলাম। কারণ চাঁদ যদি একবার হাতে চলে আসে। তবে পুরো হাতটাই ভস্ম হয়ে যায়। মেয়েটার নাম চন্দ্রিমা। আমি তাকে ছোট্ট করে চন্দ্র বলে ডাকি। এক কুয়াশা মাখা সকাল বেলা মেয়েটা আমাকে শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটার আমন্ত্রণ জানালো। বললো, মাহমুদ আমি তোমার সাথে হাঁটতে চাই। আমি হ্যাঁ বলে দিলাম। সে আমাকে সাথে নিয়ে পিঁচঢালা পথে হাঁটতে থাকলো। আমি বললাম, ঘাসের উপর হাঁটার জন্য ডেকে পিঁচঢালা পথে কেন?
– এমনিই। হঠাৎ এখানে হাঁটতে ইচ্ছে হলো তাই।
– তোমার প্রস্তাব আমি কেন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম জানো?
– কেন?
– তোমার ইচ্ছের পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটে। তোমার চাহিদা ভিন্ন। তোমার সাথে বন্ধুত্ব করা যায়, বিয়ে নয়।
চন্দ্রিমা কষ্ট পেল। সেটা তার মুখ দেখেই বুঝতে পারলাম। আমার এভাবে বলা ঠিক হয়নি। সূর্য উঠতেই আমি বাসায় চলে এলাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় রবিনের সাথে দেখা করতে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়েছি। রবিন তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেবে, সাথে তার প্রথম প্রেম উপলক্ষে ট্রিট দেবে। গিয়ে দেখলাম চন্দ্রিমা রবিনের হাত ধরে বসে আছে। আমাকে দেখে সে হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি একটু হেসে বললাম, কীট পতঙ্গের খোলস পাল্টাতে কিছুটা সময় লাগলে পানির রং পাল্টাতে কোনো সময় লাগে না। এই ঘোলা, আবার এই স্বচ্ছ। আঁখি। তার কাজল কালো আঁখি। আমি তাকে নয়ন ডাকি। খুবই শান্ত স্বভাবের একটা মেয়ে। চাকরিতে নতুন জয়েন করেছে। তার সাথে ফোনে কথা বলতে গেলে বেশ ভালোই লাগে। কেননা তাকে নয়ন বলে সম্বোধন করায় কারো সামনে কোনো বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় না।
সদ্য বিয়ে করেছে সে। তার হাজবেন্ডের নাম রবিন। আমার বন্ধু রবিন। আঁখির কথাবার্তা চাল-চলন রবিনকে মুগ্ধ করে। অন্যদিকে রবিনও বেশ হ্যান্ডসাম। কেমন হুট করেই তারা বিয়ে করে ফেলে। চন্দ্রিমার সাথে যোগাযোগ কমেছে আমার। মাসে এক দু’দিন কথা হয়। সে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলেছে। কোনো উশৃঙ্খলতা নেই তার মাঝে। রূপের বড়ই কমে গিয়েছে। রবিনকে একদিন কল করে আমার বাসায় ডাকলাম। সে চলে এলো। জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার সময় তাকে বললাম, মরিচিকা কাকে বলে? সে জানে আমি অদ্ভূত সব কথাবার্তা বলি। সে উত্তর দিলো। আমি বললাম, আঁখি একটা মরিচিকা। বেশি কাছে গেলে সে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। সেদিন সে বাসায় গিয়ে দেখে আঁখি একটা চিঠি লিখেছে বাসা থেকে চলে গিয়েছে। রবিনের ব্যাংক ব্যালেন্স সব আঁখির নামে। সে একাউন্ট চেক করে দেখে সব শূন্য।
পরদিন সকালে তাকে কল করে বললাম, খোলসের নিচের মানুষটাকে চিনতে সময় লাগে। কিন্তু তোর ধৈর্য কম ছিল। চন্দ্রিমা মেয়েটা বেশ ভালো ছিল। তার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল বেশ কয়েকটা বছর। আমি মেয়েটাকে চিনি। তুই তাকে কেন ছেড়ে দিয়েছিলি ঠিক জানি না। হয়তো ব্যবহার করেছিলি তাকে! কিন্তু অাঁখির আবরণ দেখে তাকে ব্যবহার ছাড়াই ট্রাস্ট করে বসেছিলি। ভেবেছিলি যে, এই মেয়েটাকে হারালে তুই খাঁটি হিরে হারাবি। আগামী সপ্তাহে চন্দ্রিমার বিয়ে। দাওয়াত দিয়েছে আমাকে। তোকেও আমন্ত্রণ করেছে। যেতে ভুলিস না যেন!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত