এক নতুন ছাত্রীর বাসায় পড়াতে এসেছি। আজ প্রথম দিন। বই নিয়ে বসতেই ছাত্রীর মা বললেন,
-শোন মা, আমার মেয়ের একটা সমস্যা আছে ও পড়তে বসলেই খুদা গেয়ে যায়। এটা নিয়ে তুমি ওকে কিন্তু কিছু বলো না। ও যখন বলবে আমার খুদা লেগেছে তখনি ওকে ছেড়ে দেবে। ও খাওয়া- দাওয়া করে আবার আসবে।
-আমি হাসতে হাসতে বললাম, এটা কোন সমস্যা নাকি আন্টি। আমিও পড়তে বসলেই খেতে বসি। সমস্যা নাই আপনি এই বিষয় নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না।
-আচ্ছা ঠিক আছে। বলে আন্টি নাস্তা দিয়ে চলে গেলেন।
ছাত্রীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম- আচ্ছা তোমার নামটা তো শোনা হলো না নাম কি তোমার? ছাত্রী আমার দিকে তাকিয়ে একটা বিস্কুট হাতে নিতে নিতে বললো,আমার নাম সায়মা। আমি অবাক হয়ে ছাত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। আমাকে দেওয়া বিস্কুট ওর নিতে কি একবার ও ভয় করলো না। কি সাহস রে বাবা। নাকি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে না। আমি এবার একটু ধমকের সাথে বললাম, শোন আমি বেশি কথা বলা একদম পছন্দ করি না। বই বের করো। ছাত্রী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,আপনি তো নাম জিজ্ঞাসা করলেন। আমি আমতা আমতা করে বললাম,আচ্ছা ঠিক আছে বই বের করো। আগে ইংরেজি বইটা বের করো। সায়মা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আন্টি ইংরেজি বই এর নাম শুনলেই আমার খুদা লেগে যায়। আমি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম, কি বললে তুমি আমাকে?
-কেন আন্টি।
-জানো না যিনি পড়ান তিনি ম্যাডাম হন।
-জানি তো। আম্মু পড়াতো আমাকে মাঝেমধ্যে আন্টি বলতাম। তাই অভ্যাস হয়ে গেছে। সমস্যা নাই আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।
-কি বলবো ভেবে না পেয়ে বললাম -আচ্ছা ঠিক আছে ইংরেজি থাক বাংলা বের করো। সায়মা এমন ভাবে চিৎকার দিয়ে বললো, আপু বাংলার কথা বইলেন না। ওই ভাষার কথা শুনলেই আমার যুদ্ধের কথা মনে পড়ে যায়। আর তখনি আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, খুদা লেগে যায়? সায়মা চেয়ারে হেলান দিতে দিতে বললো, না আপু ফ্রি ফায়ার খেলতে ইচ্ছে করে। আর্মিটাকে মনে হয় আমি আর তখনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা লাগে।
– ওহ তা খুব ভালো। মনে মনে বললাম, এই মেয়ের ভালো ট্রিটমেন্ট দরকার। মাথায় নিশ্চয়ই গন্ডোগোল আছে।
আচ্ছা তোমাকে না বললাম, আমাকে ম্যাম অথবা ম্যাডাম বলতে?
-ওহ একদম ভুলে গেছিলাম। আসলে কিছুই মনে থাকে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে অংক বইটা বের করো।
বলতেই সায়মা আবার কিছু বলতে যাচ্ছিলো ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, শোন চুপচাপ বই বের করো। একটা কথা বললে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবো। সায়মা এবার চুপচাপ ব্যাগ থেকে বই বের করলো। নিজেকে এবার ম্যাডাম ম্যাডাম মনে হচ্ছে। অংক বইয়ের পৃষ্টা উল্টাতে উল্টাতে দেখি সায়মা পেটে হাত দিয়ে বসে আছে।
-কি ব্যাপার কি হয়ছে?
-খালা খুদা লাগছে।
-কি? তুমি আমাকে কি বলে ডাকলে?
-সরি ম্যাম। আসলে খুদা লাগলেই খালাকে ডাকিতো তাই আর কি।
-আচ্ছা ঠিক আছে যাও।
সায়মা চলে গেছে চুপচাপ বসে আছি। বিশ মিনিট পর এসে আবার পড়তে বসলো। একটা ম্যাথ সবে শুরু করেছি সায়মা আবার চিৎকার দিয়ে বললো, ম্যাম খুদা পেয়েছে।
-তুমি না এই মাত্র খেয়ে আসলে।
-কি করবো ম্যাম বার বার খুদা লাগে।
-আচ্ছা যাও। আবার বিশ মিনিট পর সায়মা এসে পড়ার টেবিলে বসলো-
-কি ব্যাপার এত সময় লাগলো কেন?
-জ্বি ম্যাম আসলে একটু ফেসবুকে ঢুকেছিলাম। নোটিফিকেশন চেক করছিলাম। আমি একটা গ্রুপের মডারেটরতো তাই আর কি?
-কি? মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া একটা বাচ্চা মেয়ে বলে কি না ফেসবুক আছে।
-ম্যাম আপনার সময় শেষ হয়ে গেছে। কাল আবার আসবেন। আম্মু বলেছে এক ঘন্টার বেশি না পড়তে। একটু পড়ে অন্য একজন আসবেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে। বাসার কাজ কালকে দিব কেমন। আজ আসি। বলে উঠে চলে এলাম। বের হওয়ার সময় সায়মার আম্মু ডেকে বললো,আসলে আমার মেয়েটা এই রকমি। একটু দুষ্টু। সারাদিন সুয়ে থাকে। একদম পড়াশোনায় মন নেই। কিছু খেতেও চায় না। ওই পড়তে বসলেই যা খায়। দুইটা ম্যাডাম রেখেছি যাতে আমার মেয়েটাকে একটু মানুষ করে দেয়।
– সায়মার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম- আপনার মেয়ের কি স্মার্ট ফোন আছে?
-সায়মার আম্মু হাসতে হাসতে বললো, হ্যাঁ। আসলে বুঝোইতো একটা মেয়ে। আবদার অপূরণ রাখি না।
-হুম। হাসতে হাসতে বললাম খুবই ভালো। আচ্ছা আসি। ইনশাআল্লাহ আপনার মেয়েকে মানুষ করে দিব। কাল দেখা হবে। পরের দিন যথাসময়ে হাজির হলাম। সায়মা আমাকে দেখে বললো, আরে খালা আপনি কেমন আছেন?
-আমি হাসতে হাসতে বললাম, হ্যাঁ ভালো আছি । তবে সায়মা আজ আমি তোমার জন্য একটা পুরুষ্কার নিয়ে এসেছি।
সায়মা বেশ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এলো, ব্যাগ থেকে মাঝারি সাইজের দুইটা কুঞ্চি বের করলাম। জানো সায়মা এর অনেক উপকারীতা। যাদের পড়তে বসলে বার বার খুদা লাগে বিশেষ করে তাদের জন্য। সায়মার দিকে তাকিয়ে বললাম, পছন্দ হয়েছে তোমার? আমার কিন্তু খুব পছন্দ হয়েছে। ভেবেছি একটা তোমার আম্মুকে দিয়ে যাব। অন্য টিচার আসলে যেন এর গুনাগুন তাকেও বুঝিয়ে বলে। আচ্ছা দ্রুত বই বের করো। সায়মা কিছু বলতে যাচ্ছিলো ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, আচ্ছা তোমার খুদা লাগেনি তো? ওয়েট। সায়মার আম্মুকে ডেকে বললাম, ওর জন্য এক প্লেট বিস্কুট দিতে। ও আজ পড়বে আর খাবে। সায়মার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মুখটা আমসত্বের মতো হয়ে আছে। সায়মা কিছু বলতে যাওয়ার আগেই কুঞ্চিটা নাড়াতে লাগলাম। আর এর গুনাগুন বোঝাতে লাগলাম।মেয়ে আজ চুপচাপ পড়া করেছে। একটা বিস্কুট ও খায়নি। চল্লিশ মিনিটে আজ পড়া শেষ।
উঠে যাবার সময় সায়মার আম্মুকে কুঞ্চিটা দেখিয়ে বললাম, আপনার মেয়ের এটা প্রয়োজন। যখনি আপনার মেয়ে বলবে ভালো লাগছে না তখনি মাইর শুরু করবেন। দেখবেন আর বলবে না। যখনি পড়তে বসলে বলবে খুদা লাগছে তখনি মাইর। খাইতে না চাইলে মাইর। ফোন চাইলে মাইর। ভালো লাগছে না বললেই মাইর। যদি আপনি এইসব কিছু করতে না পারেন তাহলে আপনার মেয়েকে আমার বাসায় পাঠিয়ে দিবেন। মানুষ করে আপনার কাছে দিয়ে যাব। আজ আসি কেমন। আর শুনুন কুঞ্চিটা যত্ন করে রাখবেন। এর গুনাগুন নিশ্চয়ই আপনি জানেন। না জানলে মেয়ের কাছ থেকে জেনে নিবেন। ভালো থাকবেন বলে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে এলাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প