মিতব্যয়ী

মিতব্যয়ী
–জানিস দোস্ত আমার আম্মু টা কিপটা জাতের কিপটা।দুই টাকার হিসাব ও আম্মুকে দিতে হয়।
–কি বলিস!!মাত্র দুই টাকায় কি আসে যায়?আমার আম্মু ত আমাকে ডেইলি ১০০ টাকা খেতে দেয়।
–ইসস,তোদের মতো যদি বড়লোক হতাম,পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারতাম।
–আমার বাবার অনেক টাকা,তাই হিসাব করেনা।
–হুম…
“হাসান আর তার বন্ধু জনি একসাথে গল্প করছে।হাসান তার মায়ের প্রতি সন্তুষ্ট না।কেন এত হিসাব করে সংসার চালাতে হবে,তার বাবার অতো যতেষ্ট টাকা আছে,তাহলে কেন সে যা চায় তা তাকে দেয় না?একটু বাজার করে আনলে ও হিসাব চাইবে,আলু কত,মুরগী কত?আবার সব টাকা ও নিয়ে নিবে।আমার কি হাতখরচ নেই?কিছু বললেই বলে নিজে উপার্জন করার বয়স হয়েছে।ভাল লাগেনা এ জিবন!
–আম্মু আমার কিছু টাকা লাগবে।
–কেন?
–সব কেন তোমাকে বলতে হবে?টাকা লাগবে মানে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে?
–তোমার আব্বুর সৎ উপার্জনের কষ্টের টাকা,তুমি কি কাজে ব্যয় করবে জানার অধিকার আমার নিশ্চয় আছে?
–আমার বন্ধু নতুন মডেলের একটা ফোন নিয়েছে,আমার ফোন পুরাতন হয়ে গেছে,আমি ও এমন কিনবো?
–যার যেটুকু আছে সেটুকু তে সন্তুষ্ট থাকা প্রয়োজন,তুমি তোমার থেকে নিচের মানুষ গুলো কে দেখবে,এমন কিছু বন্ধু আছে তোমার,যাদের ফোন ও নেই তাদের দেখবে তবে ই বড় হতে পারবে জিবনে।
–সবসময় এই ফালতু উপদেশ।এত কিপটা কেন তুমি?
–একটা টাকা বাচলে এটা তোমার আব্বুর টাকা ই ত বাচবে তাই না?
তাছাড়া এতই যদি ইচ্ছে হয় নতুন ফোনের,নিজে যখন আয় করবে তখন কিনে নিও কিছুদিন পর শুনতে পায়,তার অই বন্ধুর বাবা জেলে চলে গেছে,তারা এখন অনেকটা ই গরীব,কারণ যখন টাকা ছিল তখন ইচ্ছেমত খরচ করেছে।সঞ্চয় ছাড়া যে টাকার মূল্য নেই তারা তখন সেটা জানতো না যে হাসানের আব্বু হঠাৎ করেই মারা যান।পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব তার কাধে এসে পরেছে।মাত্র অনার্স এ পড়ে সে।কিভাবে চাকরী যোগাড় করবে ভেবে পায়না।এদিকে একটা বোন ও আছে।বোন আর মায়ের দেখাশোনা কিভাবে করবে?হাসান অনেকটায় ভেঙ্গে পরে।
–এই নাও।এই টাকা গুলা দিয়ে ব্যবসা করো..তোমার আব্বুর ব্যংকে জমানো টাকা গুলা না হয় দিয়ার(হাসানের বোন) বিয়ের জন্য থাকুক।
–কি ব্যবসা করবো আম্মু?
–হুম একটা কাপড়ের দোকান দাও.
–এত টাকা তুমি কোথায় পেলে?
–তুমি আমাকে বলতে না?
আমি কিপটামি করি,হ্যা আজ আমি কিপটামি করেছি বলেই এ টাকা গুলা জমাতে পেরেছি।এটাকে কিপটামি বলে না।এটাকে বলে মিতব্যয়ী।আমি জিবনে অতিরিক্ত কখনো খরচ করিনি,তাই তোমার জন্য আমি কিপটা ই থেকে গেলাম “হাসান অবাক হয়ে চেয়ে আছে মায়ের দিকে।তারপর সে পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করলো। “এখন তার জিবনটা তেমন খারাপ লাগেনা বরং মায়ের পাশাপাশি সে ও কিপটামি করে।সেদিন হাত থেকে ফোন টা পরে ভেঙ্গে গেলো।কিন্তু সে সেটা ঠিক করতেই নিয়ে গেছে।এখন চাইলেই ত নতুন ফোন কিনতে পারে।
–তুমি চাইলে নতুন ফোন কিনতে পারো?(মা)
–কষ্টের উপার্জন খরচ করতে কষ্ট হয় আম্মু।
–তাই বলে ইচ্ছে টা মরে যাবে কেন?টাকা থাকতেই ইচ্ছে পূরণ করা উচিত।
–না আরেকটু জমা থাকুক টাকা,পরবর্তী তে কাজে লাগবে।একেবারে নষ্ট হওয়ার পর ফোন কিনবো তাও তোমার জন্য।
–আমি বুড়ি হয়ে ফোন কি করব?
–কেন? কথা বলবে খালামনি আর মামাদের সাথে ভিডিও কলে।
–হুম,কত বড় হয়ে গেছিস?
–হুম,যখন আব্বু ছিল টাকার মর্ম বুঝিনি,
অথচ নিজে যখন উপার্জন করছি তখন একটু অপচয়ে কত কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে একটু জমালে ভাল হবে সে দুই টাকা হোক অথবা পাচ টাকা।আজ আমি কোথায় আর আমার সে বন্ধুটা কোথায়?? “হাসানের আম্মু তখন হাসানকে এক্টায় উপদেশ দেয়–“”ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা,বিন্দু বিন্দু জল। গড়ে তোলে মহাদেশ,সাগর অতল।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত