– আচ্ছা আজ কি রঙের শাড়ি পরবো?
– আগে বলো আমি কি রঙের পাঞ্জাবী পরবো।
– উঁহু, শাড়ির রঙটা বলো না আগে।
– তোমার ব্যাকলেস ব্লাউজ আছে?
– কেন? উদ্দেশ্য কি শুনি?
– উদ্দেশ্য কিছু সুবিধার না, তা তুমি ভালো করেই বুঝতে পারছো জানি৷ আছে ব্যাকলেস ব্লাউজ?
– আছে।
– তাহলে চকলেট কালার শাড়ি পরো।
– মেরুন চলবে?
– আচ্ছা আমরা শাড়ি নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করছি কেন! একটা সময় পর না তোমার গায়ে শাড়ি থাকবে আর না থাকবে আমার গায়ে পাঞ্জাবি।
– ছিঃ, আবার শুরু করলে?
– আমি গরমের কথা ভেবে বললাম। তাছাড়া তুমি আমি কেউই শাড়ি এবং পাঞ্জাবিতে অভ্যস্ত না।
– ওহ্, স্যরি।
– হয়েছেটা কি বলো তো?
– আসলে আমি খুব এক্সাইটেড৷ কতদিন পর তোমাকে দেখবো বলো তো৷
– একই কথা তো আমিও বলতে পারি। দেশে আসার পর সবার প্রথমে তোমার সাথে মিট করবো বলে আমার আসার খবরটা কাউকে জানাই নি এখনো।
– কি রান্না করবো বললে না কিন্তু।
– ফ্রিজে চিংড়ি মাছ আছে?
– তোমার আসার খবর পেয়ে চিংড়ি আর শুঁটকি তখনি আনিয়ে রেখেছি।
– ব্যস্, এতেই চলবে৷ আবার দেখো, রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে বসে থেকো না যেন। পরে দেখা যাবে, রোমান্সের বদলে ডাক্তারি করতে হচ্ছে আমাকে।
– ইশ্, আমি আর আগের মত বেখেয়ালি থাকি না রান্না করার সময়৷ আর রান্নাটাও খুব ভালো রপ্ত করে নিয়েছি বুঝলে?
– সে তো টেস্ট করলেই বুঝা যাবে। যাই হোক, সুমনের কথা মনে আছে তোমার?
– কোন সুমন?
– আরে আমাদের ডিপার্টমেন্টেই ছিল৷ তোমার বেস্টফ্রেন্ড রিয়ার সাথে কত কাহিনী করলো মনে নেই?
– ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। কিন্তু ওই জোচ্চরটার কথা তুললে কেন হঠাৎ?
– এয়ারপোর্টে ওর সাথে দেখা হয়েছিলো৷ বউ নিয়ে থার্ড হানিমুনে যাচ্ছে ব্যাংককে। অথচ আমাদের দেখো, এখনো ফুলসজ্জাটাই সারতে পারলাম না।
– আমাদের বিয়েটা এবার হচ্ছে তো আদিল?
– যদি তুমি আবারো আমাকে অপেক্ষা না করাও।
– সেদিনের কথা এখনো ভুলতে পারো নি দেখছি।
– তুমি হলে ভুলতে পারতে?
– হয়তো পারতাম না।
– আমি কাজী অফিসের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর ওদিকে তুমি বাবা-মায়ের বাধ্য মেয়ের মতো তাদের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে। কিন্তু নিয়তি তোমাকে আবারো আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে এলো।
– এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না আদিল। আগেও বলেছি তোমাকে।
– সত্যিই কি ছিল না? বাই দ্যা ওয়ে, তোমার হাজবেন্ড এখন কোথায় আছে? যোগাযোগ নেই তার সাথে?
– নাহ। ডিভোর্সটা হয়ে গেলে বাঁচি।এখন এসব কথা থাক প্লিজ? কিন্তু তোমার ফ্যামিলি? আন্টি যদি আবার…
– সবার সাথে কথা বলা হয়ে গেছে আমার। আমি আমার ডিসিশন সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি।
– আর তাদের ডিসিশন?
– আই ডোন্ট কেয়ার।
– কিন্তু…
– নট এগেইন প্লিজ নওরিন। আমাকে এখন ছাড়ো। কত কাজ বাকি জানো? তোমার ওখানে আসার আগে আমাকে কতগুলো জিনিস গুছাতে হবে।
– কি জিনিস?
– সারপ্রাইজ। দেখলেই বুঝতে পারবে।
– লেট মি গেস…
– থাক আর গেস করতে হবে না৷ পারবে না, শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে৷ আচ্ছা শুনো…
– উঁহু, এখন ভিডিও কলে আসার কোনো রিকোয়েস্ট চলবে না৷
– কি করে বুঝলে এটাই বলবো?
– তোমাকে পড়তে পারার শক্তিটা এখনো ক্ষয়ে যায় নি যে। সন্ধ্যা হতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। ছয়টা বছর অপেক্ষা করতে পারলে আর এখন এতটুকু সময় অপেক্ষা করতে পারবে না?
– পারবো৷ যেমন তোমার ইচ্ছা। তবে মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড থেকো। এমন কিছু হতে যাচ্ছে যা তুমি স্বপ্নেও ভাবতে পারো নি এতদিন।
– একটুখানি হিন্টস কি দেয়া যায়?
– উঁহু, সন্ধ্যা হতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি।
– হয়েছে হয়েছে। আর মজা নিতে হবে না।
– রাখছি এখন৷ সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে।
– আমি অপেক্ষায় থাকবো।
রাত ১২টা… বারন্দায় পায়চারি করতে করতে একটু পরপর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে নওরিন। পরনে তার সবুজ রঙের জরজেটের শাড়ি আর চুলের খোঁপায় আদিলের পছন্দের বেলী ফুলের গাঁজরা লাগানো৷ আদিলের আসার কথা সন্ধ্যে ৭টায়। এদিকে ওর ফোনটাও সুইচড অফ দেখাচ্ছে। অপেক্ষা করতে করতে নওরিনের চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। সময় যত ঘনাচ্ছে, আশার আলো ততো নিভু নিভু করছে তার। একসময় সে ক্লান্ত হয়ে খোঁপা থেকে ফুলের গাঁজরাটা একটানে ছিঁড়ে ফেলে দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। ঠিক তখনি তার ফোনে একটা মেসেজ আসে। কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজটা ওপেন করে নওরিন, “আজ আমারও কোনো উপায় নেই জানো? বাবা মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হতে হয়েছে। তবে হিসেবটা এখনো বরাবর হয়নি। আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো ৭ ঘণ্টা। আর তুমি অপেক্ষা করলে মাত্র ৫ ঘণ্টা।” সাথে সাথে নওরিন তার হাজবেন্ড ওয়াসিমকে কল করে জানায়,
– প্ল্যান ক্যানসেল৷ ও আসবে না। তাছাড়া ওকে কিডন্যাপ করে আমরা বড় কোনো এমাউন্ট হাতাতে পারতাম বলে মনে হয় না। হোপলেস হওয়ার কিছু নেই। নেক্সট প্ল্যান নিয়ে ভাবো।
গল্পের বিষয়:
গল্প