আঁধার জীবনে আলোর পরশ

আঁধার জীবনে আলোর পরশ
এই জীবনটা চালাতে আমাকে কতকিছু সহ্য করতে করতে হচ্ছে । এর থেকেতো মৃত্যুও অনেক ভালো। আমার আঁধার জীবনে কখনো হয়তো সূর্যদ্বয় হবে না। সেখানে অন্ধকার কেটে আলো পৌঁছাতে পারবে না। তবুও আমাকে অন্ধকার কে আপন করেই বেঁচে থাকার লড়াই করতে হবে।
আমার এমন ভাগ্যো যে আমি শান্তিতে মরতেও পারব না। কারণ আমার জীবনের সাথে যে আরও দুটো জীবন জড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে আমার মা অন্যজন আমার ছয় বছরের ভাই। তাদের জন্যেই আমাকে বাঁচাতে হবে। সেটা এই অন্ধকার জগৎ হলেও। আসলেই কী আমি বেঁচে আছি এটাকে বেঁচে থাকা বলে? আমার মন তো সেই কবেই মরে গেছে। দেহও পঁচে গেছে সেই গন্ধ যে আমার নাক দিয়ে অনুভব করতে পারি। তবে আমার মত আর কেউ সে গন্ধ পায় কিনা তা জানিনা। কিন্তু একসময় আমারও তো সুন্দর একটা পরিবার ছিল। বাবা,মা ,ভাই ও আমি কত সুখে ছিলাম। বাবা ছোট খাট একটা চাকরি করতো । দুই রুমের ফ্লাটে আমরা ভাড়া থাকতাম। বাবার বেতন দিয়ে আমাদের সংসার ভালো মতোই চলে যেত। দুই বছর আগে একদিন বাসায় আসার সময় রাস্তা পার হওয়ার মূহুর্তে গাড়ি এক্সিডেন্টে করে ঘটনা স্থলেই আমার বাবা মারা যান। আর তখন থেকেই আমাদের হাঁসি খুশি পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার।
উপার্জন করার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে তখন আমাদের দিশেহারা অবস্থা। এরমধ্যেই বাবার এক্সিডেন্ট ও মৃত্যুর খবর শুনে মা সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করেন। সে থেকে এ পর্যন্ত মায়ের এক সাইড অচল হয়ে আছে। আমার চার বছরের ভাইকে নিয়ে আমি যেন মাঝ নদীতে পড়ে ছটফট করতে থাকি। মনে হচ্ছিল সাঁতার না জানায় তীরে উঠতেও পারছি না। ববার মৃত্যু মায়ের এই অবস্থা এই শহরে আমার কোন আপনজন না থাকায়। কারো কাছে সামান্য সাহায্যটুকু পায়নি। সবাই আমাদের দেখে আফসোস করতো কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। পরিবারের এমন অবস্থা যেন নতুন করে আমাকে পৃথিবীর মানুষের নিষ্ঠুরতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। এমন কঠিন সময়ে বাঁচার তাগিদে মানুষের বাসায় কাজ করতে শুরু করি। তা দিয়ে আমাদের খাবার ঝুঁটলেও তা দিয়ে তখন মায়ের ঔষুধ কিনতে পারিনি। বাবা মারা যাবার পরেই বস্তিতে ছোট এক রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করি। আমাদের সাথে রুমে এক খালাও ভাগে থাকতেন। সেই পরিস্থিতিতেই খেয়ে না খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছি দের বছর।
কিন্তু তাও ভাগ্যে সয়লো না। আমি একটু বড় হতেই আমার উপরে নজর দিতে শুরু করেন যে যে বাসায় কাজ করতাম সেই বাসার পুরুষেরা। এতে ক্ষেপে তাদের বৌয়েরা বলল,আমি নাকি রূপ দেখিয়ে তাদের বরদের মাথা খারাপ করি। তাইতো আমাকে পুরো বেতন না দিয়েই বিদায় করে দিলেন। তারপরেও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কাজ না পেয়ে আমাকে পা বাড়াতে হয়েছে এই অন্ধকার জগতে। নাহ্ আর এসব ভাবতে চায় না আমি। আজকে রাতেই মায়ের ঔষুধ শেষ হয়ে গেছে। রাতের জন্য ভাত আলু থাকলেও সকালের জন্য চাউল কেনার টাকা নেই। ছোট ভাইটা একদম ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। তাওতো সব সময় তিন বেলা খাবার দিতে পারিনা ওঁর মুখে । বেশ রাত হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এখন পর্যন্ত তো আজ একটা কাষ্টমারও পেলাম না। তাহলে কী আমাকে খালি হাতেই ফিরতে হবে?
আজকে মনে হচ্ছে আমায় টাকা ছাড়াই ঘরে ফিরতে হবে। কিন্তু তাহলে যে মায়ের ঔষুধ নিয়ে ঘরে ফিরতে পারব না। আর মাকে ঔষুধ না খাওয়ালে তো মায়ের শরীর আরও খারাপের দিকে যাবে । কিছু ভাবতে চায় না তবুও ভাবনাগুলো এসে হানা দেয় কেন! এসব ভাবতে ভাবতেই সামনে এগিয়ে যাচ্ছি । ও আমার পরিচয় তো আপনাদের দেওয়া হলো না। অবশ্য দেওয়ার মত বিশেষ কোন পরিচয় নেই। আমি চামেলি । ক্লাস অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ হয়েছে। এরপর ইচ্ছে থাকলেও বাবা মারা যাওয়ার কারণে পড়াশোনা করতে পারি নাই। একসময় মানুষের বাসায় কাজ করতাম কিন্তু আমি দেখতে সুন্দর তাই নাকি আমার রূপ দেখিয়ে তাদের বাসারপুরুষের চরিত্র নষ্ট করে ফেলেছি এজন্য কেউ কাজে রাখতে চায় না। আমি সুন্দরী এটাও কি আমার অপরাধ !
কোথাও কাজ না পেয়ে মা ও ভাইয়ের অনাহারী মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে এ পথে নামতে হয়েছে। আমি এখন রাতের আঁধারে নিজের দেহ ফেরি করে বেড়ায়। ছোট সময় আমার মা আমাকে পরী বলতো । তার ধারণা ছিল আমি যেহেতু দেখতে রূপবতী তাই আমার ভাগ্যে অনেক ভালো হবে, ভালো ঘর ও বর পাব। আমার ভাগ্যে এতো ভালো হয়েছে যে একজনের শয্যা সঙ্গী না হয়ে অনেকের শয্যা সঙ্গিনী হয়েছি । হ্যাঁ আমি যে একজন ণিশীকন্যা। চারপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনা যাচ্ছে। মাঝ রাত হয়ে গেছে তাও একটা কাষ্টমার পেলাম না। বিরবির করে কথাগুলো বলছিলাম। তারমধ্যেই কোথায় থেকে যেন একটা গাড়ি এসে আমার সামনে থামালো। হঠাৎ করে সামনে গাড়ি থামাতে ভয় পেয়ে গেলাম। হয়তো অনেকেই ভাবছেন একজন ণিশীকন্যার আবার ভয় কিসের? আমার ভয় হচ্ছে আমাকে কেউ মেরে ফেললে বা বেঁচে দিলে আমার মা ও ভাইয়ের কী হবে? আল্লাহর পরে একমাত্র আমি ছাড়া তাদের যে দেখার আর কেউ নেই এসব চিন্তা করছিলাম। হঠাৎ কথা বলায় আমার ভাবনার ছেদ ঘটে । এই মেয়ে আমার সাথে যাবে? তোমাকে খুশি করে দিবো?
তাকিয়ে দেখি আমার সামনে থাকা গাড়ির জানালা খুলে ভিতরে থেকেই এক যুবক কথা বলছে । এই মূহুর্তে আমার মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে আমার টাকার প্রয়োজন এরসাথে গেলে তা পাওয়া যাবে ঠিক কিন্তু অনেকের কাছেই শুনেছি রাতে ভদ্রলোক বেসে এসে আমার মত মেয়েদের নিয়ে বিদেশে বেঁচে দেয়। এই লোকটা তেমন হবে না তো! আজকেই এই এলাকায় প্রথম দেহফেরী করতে এসেছি। এখানে এসে কাষ্টমার এর দেখা পায়নি। আর আগের যে এলাকায় দেহফেরী করতাম ওটা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থাকায় ওখানে আমার কাষ্টমার বেশি ছিল। তাদের মধ্যে গাড়ির ড্রাইভার বেশি ছাড়া অন্য পেশারও ছিল তাবে কম। শালা কিছু ড্রাইভার ছিল মানুষ রূপি জানোয়ার । আমাকে ছিঁড়ে খুবলে খেতে কিন্তু টাকার দেওয়ার সময় যা দেওয়ার কথা তার অর্ধেক দিতো। পুরো চাইলে বলতো, শালী তুই তো মজায় দিতে পারিস না খালি খালি তোর পিছনে সময় নষ্ট হয়েছে, তাই যা দিয়েছি তাই অনেক।
একবার তো এক কাষ্টমার মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় নিয়ে কয়েকজন মিলে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। সেদিন মনে হয়েছে আমি মারা যাচ্ছি। আমার ঠোঁট কামড়ে রক্ত বের করে দিয়েছিলো। আমি বাঁচতে ছুটাছুটি করায় আমাকে অনেক মেরেছিলো। জানোয়ারের গুলো আমার শরীরের সব জায়গায় খামচে কামড়ে একাকার করে দিয়েছিল। প্রথম দিন কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন তার থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছি। সেদিনের পরে সুস্থ হতে অনেক দিন সময় লেগেছে। তারপরে থেকে ঐ এলাকায় আর যায়নি। এরপর থেকে শুধু পরিচিত হোটেলে ছাড়া কারো বাসায় যেয়েই সার্ভিস দেয় না। কিন্তু হোটেল ম্যানেজার ইদানিং টাকা বেশি কেটে নেয়। তাই আবারো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কাষ্টমার খুঁজতে নেমেছি। কারণ বেশি টাকা কেটে নিলে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। আর আমার উপরে নির্ভর করে চেয়ে থাকে মা ভাই। ঘরে বাজার , ঔষুধ শেষ শেষ হয়ে গেছে।
তাইতো আজকে আমার মে ভীষণ টাকার দরকার । তাই এর সাথে না গেলেও চলছে না। তাই ভাগ্যে আমার কি আছে গিয়ে দেখি ! এটা ভেবেই বললাম,স্যার আমি যায়তে রাজী আছি কিন্তু টাকা বেশি দেওয়া লাগবো। লোকটি বলল, সমস্যা নেই তুমি আগে আসো তো, তোমাকে খুশি করেই দিব। লোকটি গাড়ির দরজা খুলে আমাকে ভিতরে আসতে বললেন। আমি ও চুপচাপ গাড়ীতে উঠে পরলাম। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। অনেকক্ষণ পরে একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো। বাড়ির গেট লাগানো ছিল ভিতরে থেকে দাড়োয়ান এসে সালাম দিয়ে গেট খুলে দিল। লোকটি সালামের উত্তর দিয়ে গাড়িটা নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো। আমি গাড়িতে বসেই আশেপাশে‌ তাকিয়ে দেখলাম বাড়ির দুই পাশে নানা রকম ফুলের বাগান । আমি দেখতে ব্যস্ত তখন লোকটি আমাকে গাড়ি থেকে নামতে বললেন। আমি নেমে সামনে তাকিয়ে সবকিছু হা হয়ে দেখছি ।
এমন দুতলা সুন্দর বাড়িতো ছোট বেলায় সিনেমাতে দেখতাম। ইস্ বাড়িটিকে বাহিরে থেকে লাইটের আলোয় দেখতে কি অপূর্ব সুন্দর লাগছে! এরমধ্যে লোকটিআমাকে তার সাথে নিয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। ওনি বাড়ির ভিতরে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে দেয়। তা দেখে আমার মনে হলো বাড়ির বাহিরে থেকেও ভিতরে আরও সুন্দর। দেখা শেষ হয়েছে এবার আমার সাথে উপরে এসো এই প্রথম আমি এমন সুন্দর বাড়ি বাস্তবে দেখছি এরমধ্যে লোকটা তার সাথে উপরে যেতে বলল। লোকটি আমাকে উপরে একটা রুমে নিয়ে গেল। আলমিরা থেকে একটি ঘুমানোর পোশাক হাতে দিল। তারপর বাথরুম দেখিয়ে দিয়ে বলল, তুমি গোসল করে এটা‌ পরে এসো আমি আবার ঘামার্থ শরীর ছুঁতে পারিনা। এর কথা শুনে যতটা অবাক না হয়েছি কিন্তু বাথরুম গিয়ে আরো বেশি অভাগ হলাম! মনে হচ্ছে সিনেমা দেখা সেই বাথরুমে আমি বসে আছি। কিন্তু অযথা এসব ভেবে সময় নষ্ট করা ঠিক হচ্ছে না।
তাই আমি জামাকাপড় খুলে তোয়ালে পরে গোসল করেই তার দেওয়া পোশাক পরে বের হয়ে আসলাম। সে আমাকে বের হতে দেখেই হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালো। আমি মনে মনে ভাবলাম আবার আমার জন্য একটা বিভীষিকা রাত অপেক্ষা করছে।কিন্তু লোকটা কথায় আমার ভাবনার ছেদ পড়ল। লোকটি বলল,শুন আমার নাম হচ্ছে আশফি রহমান। আর তোমার নাম কী ? আমতা আমতা করে বললাম, আমি চামেলি। আশফি স্যার আমি এ পেশায় কতদিন ধরে আছি সবকিছু জিজ্ঞেস করলেন আরো অনেক কথা বললেন। কথার এক পর্যায়ে সে আস্তে আস্তে আমার ঠোঁট দখল করে নিল। আমি ভয় পাচ্ছিলাম সে আবার অন্যদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়বেন কিনা। কিন্তু এই প্রথম কারো ছোঁয়ায় আমি শরীরে কোন ব্যথা পাচ্ছি না। এই প্রথম কোন কাষ্টমার আমার সাথে ভালো ব্যবহার করলেন। নাম জানতে চাইলো এবং আমার শরীরের কোন আঘাত করেন নাই। আমাকে কিছুটা সময় দিয়ে তারপর একটু একটু করে আমার গভীরে ডুব দিয়েছে।
এ পর্যন্ত যারা আমাকে ভাড়া করেছে তারা সবাই হোটেল ঢুকেই আমার উপরে ঝাপিয়ে পড়ত। নিজেদের পাওনা উসুল না হওয়া পর্যন্ত আমাকে ছিঁড়ে খুবলে খেত। কিন্তু আজ প্রথম এমন কাষ্টমার পেয়েছি। এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় চোখ বুজে এলো। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল, জেগে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, ৬টার বেশি বাজে । আমার এখন বাসায় যেতে হবে তাই আমি আস্তে আস্তে আশফি স্যারকে জাগাতে চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণ পরে স্যার বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,কি হয়েছে এতো ভোরে ডাকছো কেন! আমি আমতা আমতা করে বললাম স্যার টাকাটা দেন আমি চলে যাই। আশিফ স্যার বিছানায় থেকে উঠে এসেই মানিব্যাগ হাতে নিয়ে ওখানে থেকে টাকা বের করে আমাকে দিল। আমি গুনে দেখি পাঁচহাজার টাকা । আমি ভেবেছি স্যার ঘুমের ঘোরে বোধহয় এত টাকা দিয়েছে। তাই বললাম, স্যার এখানে পাঁচ হাজারের মতো আছে। স্যার বললেন , জানি তো রেখে দাও।
টাকাটা নিয়ে আমি আমার জামাকাপড় গুলো পড়ে আসার সময়ে স্যার ডেকে বললেন, আজকে রাতেও এখানে এসে পরো । কী মনে থাকবে তো? আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। আর মনে মনে বলছি, স্যার এজন্যই হয়তো এতো গুলো টাকা দিয়েছে। ওখানে থেকে ফিরার সময় মায়ের ঔষুধ কিনলাম ও কিছু বাজার করে নিয়ে এলাম। ছোট ভাইটার ফার্মের মুরগী ভেজে ভুনা তরকারি অনেক পছন্দ। টাকার অভাবে খাওয়াতে পারিনা। আজকে হাতে টাকা থাকায় অন্য বাজারের সাথে একটা মুরগিও নিয়ে নিলাম। আর বাসায় আসার পথে এলাকার হোটেল থেকে় রুটি ও ডালভাজি নিয়ে এলাম। এসে মাকে নাস্তা খাওয়ায় দিয়ে ঔষুধ খাওয়ায় দিলাম। এরপর আমি আর ছোট ভাই দুজনে একসাথে খেলাম। ভাইটা আমার মুরগী দেখে কি যে খুশি হয়েছে! তা দেখে আমার চোখে পানি এসে গেল। ছোট মানুষ অল্পতেই খুশি হয়ে যায়। আমি রান্না করতে গেলাম।
রান্না ঘরে যাওয়ার আগে আমাদের সাথে যে খালা থাকেন তাকে আজকে দুপুরে খেতে বলেছি। খালা ভিক্ষে করে তাই আমি আসার পরে সে তার কাজে চলে গেল। আটমাস পরে আটমাস হয়েছে এরমধ্যে আমি প্রতিদিনই রাতে আশফি স্যারের বাসায় আসি। বাসায় কাজের লোক থাকে দুজন। তারা আমাকে দেখলেই কেমন করে যেন তাকায়। তাদের চোখে দেখলেই বুঝতে পারি। আমাকে খারাপ মেয়ে ভেবে ঘৃণা করে। কিন্তু এ অন্ধকার পথ ছাড়া যে আমার কিছু করার নেই। এতদিনে আশফি স্যার আমার কাছে থেকে আমার পরিবারের সম্পর্কে সবকিছু জেনে নিয়েছে। স্যারের সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস আমার কখনো হয়নি। তবে কয়েক দিন আগে স্যার নিজেই তার জীবনের অতীত কাহিনী বলেছেন। আশফি স্যারের ছোট বেলায় মা মারা যান এবং পাঁচ বছর আগে বাবা মারা যান। স্যারের ছোট বেলায় ভাই বোন না থাকায় বেশী ভাগ একাই সময় কাটিয়েছেন। আপনজনদের আদর পায়নি। বড় হয়ে স্যার একজনকে ভালবাসত। তাকে বিয়েও করতে করেছিলো।
সে মেয়েটির স্যার ছাড়াও আরো ছেলেদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু স্যার বিয়ের আগে তা জানতেন না। তাদের বিয়ের পরেই নাকি আস্তে আস্তে বুঝতে পারেন। ভালোবাসায় এত বড় ধোঁকা স্যার সহ্য করতে পারছিলেন না। রাগে ক্ষোভে নিজেকে শেষ করে দিতেও চেয়েছিলেন।কিন্তু তার ভালোবাসা মৃত্যুর কাছে হারতে দিতে চায়নি। কখনো কখনো ভালোবাসা নিজেকে অসহায় করে ফেলে। স্যার ম্যাডামকে অনেক ভালোবাসতেন তাইতো তার এতো বড় ধোঁকা ক্ষমা করে তাকে মেনে নেয়। কিন্তু ম্যাডাম তার স্বভাব ঠিক করতে পারেনি একদিন স্যারের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ল।স্যার যেহেতু তাকে আগেই বুঝিয়ে সাবধান করে ছিলেন । তবুও আবার একই বিষয় দেখে সহ্য করতে না পেরে তার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে এবং বলে সে কেন তার সাথে বারবার এমন করছে?
তখন নাকি ম্যাডাম বলে,আশফি তোমার মধ্যে আমাকে আকর্ষণ বা আকৃষ্ট করার মত এখন কিছু খুঁজে পায়না। যা অন্যদের মাঝে পায়। এ কথা শুনে স্যার নাকি বলেছে,তোমার থেকে বাজারের মেয়েরাও অনেক ভালো। অনন্ত তারা তোমার মত তো স্বেচ্ছায় এই পথে আসে না। এ কথা বলে স্যার সেদিনই ম্যাডামকে বাসায় থেকে বের করে দেয়। এর একমাস পর তাদের তালাক হয়ে যায়। এসব কথা স্যারের কাছেই শুনেছি। আমি ভেবে পায়না স্যারের মত এমন লোকের মধ্যেও নাকি আকর্ষন পায় না। যেখানে স্যারকে দেখতে পঁচিশ বছরের যুবক মনে হয়। তবে স্যার বলেন তার বয়সঃ ৩২ বছর। দেখতে নায়ক মান্নার থেকেও লম্বা ,বড় বড় মায়া চোখ ও ফর্সা চেহারা ,জিম করা ফিটফাট বডি। যা দেখলেই ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে আর ম্যাডাম কিনা তাতেও আকর্ষিত হয় না। এ পৃথিবীতে মানুষ বুঝা বড় দায়।
আমি বসে বসে ভাবলাম আজকে এখানো কেন স্যার বাসায় আসছেন না! স্যারের দেরি দেখে আমি এই ফাকে গোসল করে নীল রঙের একটা শাড়ি পড়েছি। আমার জন্য এ বাসায় অনেক শাড়ি ও থ্রিপিস এনে রেখেছেন স্যার। তার সাথে সম্পর্ক হওয়ার পরে থেকে আমার আর কোন টাকার জন্য সমস্যা হয়নি। আগে তো বস্তিতে থাকতাম এখন ফ্লাটে ভাড়া থাকি স্যারের সহায়তায়। স্যার আমার মা ও ছোট ভাইয়ের দেখাশোনা করতে একজন লোকও রেখে দিয়েছেন। এখন আর আমাকে অনেকের মনোরঞ্জন করতে হচ্ছে না। কিন্তু তাঁর পরেও আমার একটায় পরিচয় আমি একজন পতিতা। যে অন্ধকার জগতে একবার প্রবেশ করেছি সেখানে আর কখনো সূর্যোদয় হবে। একদিন হয়তো এভাবেই শেষ হয়ে যাব। আঁধার থেকে কখনো হয়তো আলোর পরশ পাব না। এসব ভাবতে ভাবতে বিভোর হয়ে ছিলাম। হঠাৎ পিছনে থেকে কোমরে দুই হাত দিয়ে জরিয়ে ধরায় চমকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি স্যার এসেছে স্যারকে কিছু বলার আগেই আমার ঠোট দুটি বেদখল হয়ে গেছে । স্যার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে আমার পিঠে ঘাড়ে স্পর্শ করছে। এতে আমি বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছি।
স্যার আমাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমার উপরে তার ভর ছেড়ে দিয়ে আদর করতে লাগল একসময় আমি সারা দিয়ে তার সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিলাম। এরমধ্যে স্যার হুট করেই সরে গেল। এবং আমাকে শাড়ি ঠিক করে বাহিরে আসতে বলল। আমি নিচে গিয়ে দেখি স্যার অস্থির হয়ে পায়চারি করছে এবং কাকে যেন ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলছেন। আমি ভয় পাচ্ছিলাম স্যারকে কখনো এমন করতে দেখিনি। আমার কোথায় ভুল হয়েছে মনে মনে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তার একঘন্টা পরেই দেখলাম হুজুরকে নিয়ে দুজন লোক ভিতরে ঢুকলো। এরপরের মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে আরও দু’জনে আসছেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে! আশফি স্যার আমাকে কাছে ডেকে ফিসফিস করে বললেন,প্রিয়ন্তি আজকে এই মূহূর্তেই আমি তোমাকে বিয়ে করতে চায়। এবং বিয়ে ছাড়া একদিনও তোমাকে আর অবৈধ ভাবে ছুঁতে চায় না। বিয়ে করে আমাদের সম্পর্ক পবিত্র করতে চায় প্রিয়ন্তি। আমার মাথায় ঘুরছে স্যার এসব কি বলছেন আমার মত নষ্ট মেয়েকে বিয়ে করবেন। তা কী করে হতে পারে ?
ও আরেটা কথা স্যার আমার চামেলি নাম পছন্দ করতেন না তাইতো অনেক আগে আমার নাম প্রিয়ন্তি রেখেছেন।
স্যারের কথা শুনে বললাম,স্যার আপনার মত ভালো মানুষদের সাথে আমার মত নষ্ট মেয়েকে মানায় না। আমাকে বিয়ে করে আপনার জীবন কেন নষ্ট করবেন? আপনি কী ভুলে গেছেন আমি যে একজন পতিতা? স্যার আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে রাগে হিসহিসিয়ে বললেন,প্রিয়ন্তি তোমাকে কতবার বলেছি আমাকে নাম ধরে ডাকতে! আর তোমার সাহস হলো কী করে আমার হবু বৌকে পতিতা বলার? এখানে যদি এখন কেউ না থাকতো তাহলে এর জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হতো। আর শুন তুমি নষ্ট হলে আমিও তো নিশ্চিয়ই দুধের ধোয়া না তুলসী পাতা না। আমি তো অন্ধকারে বাসিন্দা ছিলাম। তাই আর কখনো যেন ভুলেও তোমার মুখে এসব না শুনি। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না মনে থাকে যেন। আর এই মুহূর্তে বিয়ে হবে কোন কথা শুনতে চায় না। আর আমাদের বিয়ের পরে মা ও ছোটন আমাদের সাথেই থাকবে।
আশফি মনে মনে বলল, তোমার শরীরে আমি প্রথম যেদিন বিচরণ করেছি সেদিনই বুঝতে পেরেছি তুমি এই পেশায় আনাড়ি । তারপরে থেকে ছয় মাস তোমার চলাফেরা খেয়াল করেছি। তোমার সম্পর্কে খোঁজ খবর সব নিয়েছি। তোমার স্বপ্ন হচ্ছে তোমার পরিবারকে একটি সুস্থ্য সুন্দর জীবন দেওয়া সেটাও জেনেছি। তুমি যে অন্ধকারের এ জীবনকে ঘৃণা করো তোমার সাথে থেকেই তা বুঝতে পারলাম। তাইতো তোমাকে আমার জীবনে জরিয়ে তোমার আমার জীবনের সকল অন্ধকার দূরে সরিয়ে আলো সন্ধান পেলাম। বিয়ে নামক পবিত্র এক সম্পর্ক দিয়ে আমাদের জীবনের অন্ধকার দূর করব প্রিয়ন্তি। কিছু সময়ের মধ্যেই আশফি ও প্রিয়ন্তির বিয়ে হয়ে গেলো। ওদের বিয়ের সাক্ষী হলো আশফির বন্ধুরা।
আশফি তাদের কাছে প্রিয়ন্তির আসল পরিচয় গোপন করেছে। আশিফ চায় না কেউ তার স্ত্রীর উপরে আঙ্গুল তুলক। এদিকে এসব কিছু প্রিয়ন্তির কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। কিন্তু আশফি বিয়ের পরে যখন প্রিয়ন্তির হাতে চুমু খেয়ে বলল,বৌ তোমাকে স্বাগতম আমার অন্ধকার নীড়ে আলো হয়ে আসার জন্য। একথা শুনে প্রিয়ন্তির চোখে পানি টলটল করছিল। প্রিয়ন্তি মনে মনে বলল, আমার অন্ধকার জীবনে আলো পরশ হয়ে এসেছেন আপনি। আশফি আপনার পরশে আমার জীবনের রাতের আঁধার কেটে নতুন সূর্য উদয় হয়ে সেখানে আলো প্রবেশ করেছে । আপনি হচ্ছেন আমার আঁধার জীবনের আলোর পরশ। যার ছুঁয়ায় আমার অন্ধকার জীবন আলোকিত হয়ে গেছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত