আমার মা

আমার মা
রোডের দিকে চোখ যেতেই শুভ্র স্তব্ধ হয়ে গেলো। হাত থেকে ল্যাপটপের ব্যাগটা রেখে এক দৌড়ে রোডের মাঝে চলে এলো। খুব সাবধানে নিজের মা কে সরিয়ে ফেললো। কিন্তুু শুভ্র সরে যাওয়ার আগেই ট্রাকটা শুভ্রকে ধাক্কা মেরে চলে গেলো। শুভ্র ছিটকে দুরে গিয়ে পড়লো। কপাল কেটে রক্ত পড়ছে, পা ও কেটে গিয়েছে। শুভ্রর মা ও ছেলেকে এভাবে দেখে থমকে গেলো। রোডে সব মানুষ এক জায়গায় হয়ে গিয়েছে। সবাই ধরাধরি করে শুভ্রকে গাড়িতে ওঠালো। ড্রাইভার তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিলো। শুভ্রর মা শুভ্রর মাথাটা বুকে জড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছে। হসপিটালে আসতেই ডক্টররা শুভ্রকে ভেতরে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো। শুভ্রর মায়ের কান্না কোনভাবেই থামছে না।
শুভ্র ওনার একমাত্র ছেলে। শুভ্র ছোট থাকতেই ওর বাবা মারা গিয়েছে। শুভ্রর বাবা আর মা প্রেম করে বিয়ে করেছিলো। যার কারণে শুভ্রর মা কে তার বাবার বাড়ি থেকে মেনে নেয়নি। শুভ্রর বয়স যখন ৪বছর তখন একটা এক্সিডেন্টে ওর বাবা মারা যায়। তারপর থেকে শুভ্রর মা আর ম্যানেজার সব ব্যবসা দেখে রেখেছে। শুভ্র বড় হয়ে সবটা এখন নিজে দেখা শোনা করে। শুভ্রর মা শুভ্রর প্রান মায়ের চোখে কখনো পানি আসতে দেয়নি। কখনো যদি লুকিয়ে কান্না করে আর শুভ্র দেখে ফেলে তাহলে শুভ্রও কেঁদে দেয়। মায়ের চোখের পানি শুভ্র সহ্য করতে পারেনা। শুভ্রর মা কাঁদছিলো এরমাঝে ডক্টর বেরিয়ে এসে বললো।”
—-” মিসেস চৌধুরী,শুভ্রর মা এগিয়ে উত্তেজিত হয়ে বললো।”
—-” আমার ছেলে কেমন আছে ডক্টর?”
—-” আপনার ছেলে এখন বিপদমুক্ত।
ওনাকে কেবিনে শিফট করে দেবো আপনি তখনি দেখা করতে পারবেন, বলে ডক্টর চলে গেলো। শুভ্রর মা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো। কিছুক্ষণ পর শুভ্রকে কেবিনে শিফট করে দিলো ডক্টর। শুভ্রর মা ছেলের পাশে বসে দু ফোটা চোখের পানি ফেললো। মায়ের কান্নার আওয়াজ কানে যেতেই শুভ্র চোখ খুলে বললো।”
—-” মা তুমি কাঁদছো কেন? তুমি জানো না তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারিনা? আমার বুকটা চুরমার হয়ে যায় মা কেন কাঁদছো?” শুভ্রর মা অবাক হয়ে ছেলের কাহিনী দেখছে। যে কি না নিজে এত অসুস্থ সে এই অবস্থায়ও মায়ের কান্না নিয়ে ভাবছে। শুভ্রর মা হেসে দিয়ে বললো,
—-” আমি কাঁদছি না তো বাবা।”
—-” তুমি এক্ষুণি চোখের পানি মোছো মা। নাহলে আমি স্যালাইন খুলে তোমার চোখের পানি মুছবো। কিন্তুু তোমাকে আমি কাঁদতে দেবো না, শুভ্রর মা চোখ মুছে শুভ্রর কপালে চুমু দিয়ে বললো।”
—-” তুই এখন রেস্ট কর বাবা,
—-” তুমি খেয়েছো কিছু মা?” শুভ্রর মা জানে এখন যদি না বলে তাহলে শুভ্র এই অবস্থায় উঠে যাবে। তাই হাসতে, হাসতে বললো।”
—-” হ্যা আমি খেয়েছি বাবা,
—-” আমাকে মিথ্যে বলছো মা?” শুভ্রর মা এবার রাগ দেখিয়ে বললো।”
—-” তুমি চুপ করে রেস্ট নাও। আমি এখন খেয়ে নেবো। একদম পাকামো করবে না তুমি, শুভ্র মায়ের ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলো। শুভ্রর মা কেবিন থেকে বেরিয়ে হালকা খেয়ে নিলো। ৩দিন পর শুভ্রকে বাড়ি নিয়ে গেলো। বাড়ি গিয়ে শুভ্রর মা গম্ভীর হয়ে কথা বলছে শুভ্রর সাথে। শুভ্র ছোট মুখ করে বললো।”
—-” মা কি হয়েছে?”
—-” কিছু হয়নি,
শুভ্রর পুরোপুরি সুস্থ হতে কিছুদিন কেটে গেলো। শুভ্রর মা এখনো গম্ভীর হয়ে কথা বলে। শুভ্র ওর মা কে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো।”
—-” আমার মায়ের কি হয়েছে?” শুভ্রর মা শুভ্রকে ছাড়িয়ে বললো,
—-” তুই এটা কেন করলি? আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে এমন অবস্থায় পড়লি? তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকতাম বাবা?”
—-” তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে থাকতাম মা?” শুভ্রর মা চুপ হয়ে গেলো। শুভ্র আবার বলতে শুরু করলো।”
—-” তুমিই আমার সব মা। তোমার চোখের এক ফোটা পানি আমার সহ্য হয় না। সেখানে তোমার বিপদ দেখেও আমি দাড়িয়ে থাকতাম বলো? ছোট থেকে তুমি আমাকে কষ্ট পেতে দাওনি। এবার আমার পালা আমিও তোমাকে কষ্ট পেতে দেবো না। তোমার গায়ে একটু আচও আমি আসতে দেবো না। তোমার জন্য নিজের জীবনও আমি দিয়ে দেবো মা। খোদার পরেই আমার কাছে তুমি মা। তুমি এভাবে গম্ভীর হয়ে থাকলে আমার ভাল লাগে না মা, শুভ্রর মায়ের বুকটা গর্ভে ভরে গেলো। এমন সন্তান জন্ম দিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে। আর মনে, মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো। কিন্তুু উপরে একটু গম্ভীর ভাব রেখে বললো।”
—-” আমি আসছি,
বলে হাটা দিতেই কানে ভেসে এলো।
মা গো মা ওগো মা, মা গো মা ওগো মা
জন্ম আমার তোমার কোলে
কথা বলি তোমার বোলে
খোদার পরে মা গো তুমি আমার দুনিয়া
শুভ্রর মা পিছনে তাকিয়ে পড়লো। চোখগুলো খুশিতে ভরে আসছে ওনার। শুভ্রও ওনার দিকে এগিয়ে এসে ওনাকে সালাম করে আবার গাইলো,
তুমি আমার ইবাদত তুমি স্বর্গ আমার
জন্ম নিলে হয় যেন মা তোমার কোলে আবার২
জন্ম দিয়ে করলে ঋণী, শোধ হবে না কোনদিনই
আদর ভালবাসায় দিলে স্বপ্ন দুনিয়ায়
শুভ্র ওর মা কে শক্ত করে জড়িয়ে আবার গাইলো।”
মা গো মা ও গো মা, মা গো মা ওগো মা
জন্ম আমার তোমার কোলে
কথা বলি তোমার বোলে
খোদার পরে মা গো তুমি আমার দুনিয়া
শুভ্রর মা ও শুভ্রকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
—-” তোর মতো ছেলে পেয়ে আমি সত্যিই ভাগ্যবান রে বাবা। আল্লাহ যেন সব মা কে তোর মতো সন্তান দেয়। আমার কষ্ট আমার শিক্ষা বিফলে যায়নি আল্লাহ যেতে দেয়নি।” শুভ্র ওর মায়ের কপালে চুমু দিয়ে বললো,
—-” আমি ভাগ্যবান তোমার মতো মা পেয়ে।” মেয়ে দেখতে এসে মেয়ের সাথে একা কথা বলতে এসেছে শুভ্র। মেয়েটার নাম রোজ, রোজ শুভ্রকে ছাদে এনে মাথা নিচু করে বললো,
—-” জ্বি কি বলবেন বলুন।”
—-” দেখুন এখনকার সমাজে এমন অনেক ছেলে আছে।
যারা বিয়ের পর বউয়ের কথায় বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে যায় নয়তো নিজের ইচ্ছেতে। আবার একসাথে থাকলেও মা কে কষ্ট দেয় মায়ের কথা শোনে না। আমি এই কথাগুলো বলছি কারণ মা আমার সব। খোদার পরে আমার কাছে আমার মা। খোদা আমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে আর আমার মা আমাকে ১০মাস ১০দিন গর্ভে রেখে জন্ম দিয়েছে। তাই আপনার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার আগেই জানিয়ে দেই। আমার মা কে কোনদিন কষ্ট দিতে পারবেন না। আমার মা যা বলবে তাই শুনতে হবে। আর বিয়ে হলে আমার মা ও আপনাকে তার মেয়ের মতোই ভালবাসবে। সো আপনাকে আমার মা কে নিজের মা ভাবতে হবে। আই হোপ ইউ ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড, শুভ্রর সব কথা শুনে রোজ মাথা তুলে তাকালো। তাকিয়ে বেশ বড়, সড় ক্রাশ খেলো। শুভ্র সম্পূর্ণ ব্ল্যাক ড্রেস পড়া। ফর্সা শরীরে ব্ল্যাক ড্রেস ফুটে উঠেছে। রোজ নিজেকে সামলে একটা কথাই বললো।”
—-” আমি কখনো আমার মা কে কষ্ট দেইনি। আর বিয়ের পর আপনার মা তো আমারও মা হবে। তাহলে সেই মা কে কষ্ট দেয়ার দুঃসাহস আমার কখনো হবে না, রোজের কথা শুভ্রর ভাল লাগলো। দুজনেই নিচে গিয়ে বিয়েতে হ্যা বলে দিলো। ১৫দিন পর ধুমধাম করে ওদের বিয়ে হয়ে গেলো। আর সত্যিই রোজ কখনো শুভ্রর মা কে কষ্ট দেয়নি। উনি যা বলে সেটাই শোনে। উনিও রোজকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসে। রোজ, শুভ্রকে একসাথে খাইয়ে দেয়। রোজের ঘুম না পেলে রোজের চুলে বিলি কেটে ঘুম পাড়ায়। রোজও তাই উনি একটু অসুস্থ হলে উত্তেজিত হয়ে যায় ওনাকে সুস্থ করতে। এসব দেখে শুভ্র ভাবে ও ঠিক মেয়েকেই বিয়ে করতে পেরেছে।” “২ বছর পর” আজ শুভ্রর মায়ের জন্মদিন। পুরো বাড়ি রোজ, শুভ্র সাজিয়েছে। শুভ্রর মা সন্ধ্যায় এসব দেখে মুচকি হেসে বললো,
—-” তোরা দুজনেই পাগল।” রোজ, শুভ্র ওনাকে কেকের কাছে নিয়ে এলো। কেকের উপর ওনার ছবি দেওয়া আর বিশাল বড় একটা কেক। ৩জন একসাথেই কেক কাটলো। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে। রোজ তাড়াহুড়ো করে যেতে গেলেই শুভ্রর মা আটকে বললো,
—-” কি করছিস? এই অবস্থায় সাবধানে হাটবি।” রোজ কান ধরে বললো,
—-” সরি মা।” উনি মুচকি হেসে দিলো। রোজ ৫মাসের প্রেগন্যান্ট। রোজ গিয়ে ক্যামেরাম্যানকে সব বুঝিয়ে দিলো। এরপর ৩জন একসাথে দাড়ালো। ক্যামেরাম্যান ৩জনকে এক ফ্রেমে বন্ধি করলো। এভাবেই ওরা সুখে থাকুক,
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত