রিলেশন চলার বছর খানেক পর হঠাৎই ছেলেটা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে বসে,
— আচ্ছা, তোমার পরিবারের পর কাকে তুমি বেশি ভালোবাসো? মেয়েটি নির্লিপ্ত কণ্ঠে সাথেসাথেই উত্তর দিয়েছিল,
— আমার প্রাক্তনকে!
ছেলেটা উত্তর শুনে খুব বেশিই মর্মাহত হয়েছিল। কারণ সে ভেবেছিল নামটা নিশ্চয় তারই আসবে! কারণ সে মেয়েটাকে এতটাই বেশি ভালোবাসতো যে মেয়েটাও তাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। অথচ এমন উত্তর পেলো সে।
মেয়েটা তখন ছেলেটাকে বলল,
— আমি আসলেই আমার প্রাক্তনকে তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসি। এইযে তুমি আমাকে শুধুমাত্র প্রেমিক হিসেবেই ভালোবাসো তাইনা? অথচ সে আমাকে ভালোবাসতো কখনও বন্ধুর মতো, কখনও বা বড় ভাইয়ের মতো আবার কখনও শাসন করতো বাবার মতো। সে কখনোই আমার খারাপ চাইতো না জানো তো! আমাকে সব সময় বাবার মতোই আগলে রাখতো! অথচ বোকা আমিটা সেই সময় বুঝতেই পারিনি সেই মানুষটার ছায়াতলে কতটা মমতায় ছিলাম আমি। জানো তো, আমার কাছে তার এই ভালোবাসা, শাসন সবই কেন যেন অতিরিক্ত মনে হতো। তার কেয়ারগুলো বড্ড একগুঁয়ে লাগছিল আমার। তার ছায়া তলে থাকতে বড্ড বেশিই বিরক্ত লাগছিল তখন। অথচ মানুষটা আমার ভাল ছাড়া খারাপ চায়নি একটা বারও।
জানো তো, তবুও আমি সেই মানুষটাকে বহু কষ্ট দিয়ে আমার জীবন থেকে দূর করেছিলাম৷ যাকে বলে তিলে তিলে মারা। প্রথম প্রথম তাকে কথায় কথায় অপমান করতাম সবার সামনেই। উনি চুপ করেই থাকতো তবুও, আরও সুন্দর করে বুঝাতো। তবে আমি আরও বেশি অপমান করতাম। এভাবেই তার সাথে বছর চারেকের সম্পর্কটা নষ্ট করে দেই। জানো তো, বিদায় বেলায়ও মানুষটা আমাকে আগের মতোই বুঝিয়েছিল। বন্ধু হিসেবে, বড় ভাই অথবা বাবার মতো করে! তার চোখের ভাষা সেদিন বুঝার চেষ্টাও করিনি জানো তো! তার ঘোলাটে চোখজোড়া আমার কাছে ছোট্ট একটা উত্তর চাইছিল মনেপ্রাণে, ” থেকে যাই তোমার হৃদয়ে”? তবে আমি রাখি নি। সেই মায়ার ছায়াভরা মানুষটার চোখকেও সেদিন বড্ড বিরক্ত লাগছিল আমার। অনেক অপমান করেই বলেছিলাম,
— তুই ভালোবাসার মানেই বুঝিস না! আমি চাই তুই যেন আর আমাকে বিরক্ত না করিস। জানো তো, এরপর সে আর একটা কথাও বলেনি। কতশত বার তার সাথে দেখা হয়েছিল তারপরও। পাত্তা দেইনি। তবে দেখতাম সে দূর থেকে ওই ঘোলাটে চোখে তাকিয়ে থাকতো।
আমি মুক্তি পেয়েছিলাম৷ তার হাজার শাসন আর উপদেশ থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথম প্রথম নিজেকে আসলেই স্বাধীন মনে হয়েছিল। তবে কী জানো তো, একসময় না একসময় মানুষ ঠিকই ভুল বুঝতে পারে। এখন আমিও বুঝি। মানুষটা আমার জীবনে বটছায়া হয়েই থাকতে চেয়েছিল। অথচ আমি সেই বটছায়া ছেড়ে কাঠফাঁটা রোদে ভরা মাঠে সুখ খুঁজতে গেলাম৷ বটগাছটা আর নেই জানো তো। অনেক অবহেলায় মৃতপ্রায় গাছটা। তুমি আমাকে ভুল বুঝতেই পারো। তবে সত্যি বলছি, আমি এখনও আমার প্রাক্তনকে খুব বেশিই ভালোবাসি!
গল্পের বিষয়:
গল্প