~ আমার আজ ভালো লাগছে না৷ আজ থাকনা প্লিজ। আর শরীরটাও খারাপ। গায়ে জ্বর একটু।
– চুপ। জ্বর চলে যাবে। কাছে আসো। একটা কথাও বলবা না।
তনুর অনিচ্ছা সত্ত্বেও নেহাল ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। এটা নতুন না পুরনো। ওদের বিয়ের পর থেকেই নেহাল এমন করে। তনুর কোন কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে ও ওর শারীরিক চাহিদা পূরণ করে নেয়৷ তনু আড়ালে চোখের জল ছেড়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে সব ভুলে যায়। কিন্তু আবার কদিন পর নেহাল ঠিকই তা মনে করিয়ে দেয়। তনুর এই না করা নেহাল আরো বেশী ইঞ্জয় করে। কিন্তু তনু যে এতে কষ্ট পাচ্ছে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই নেহালের। চাহিদা শেষ হলে তনু একপাশে পড়ে থাকে আর নেহাল ঘুমিয়ে যায়। যেন তনু ওর বউই না, বাইরের কোন মেয়ে। সারারাত কান্না করে বালিশ ভিজিয়ে তবু সংসার করে তনু। একদিন অফিসে, নেহাল আর ওর কলিগরা লাঞ্চ টাইমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে লাঞ্চ শেষ করে। নেহাল, সাইফুল আর সালমান। এরা বলতে গেলে বন্ধুর মতোই। সবসময় একসাথে কাজ করে। একে অপরের সাহায্য করে। এবং সব ধরনের কথাই শেয়ার করে৷ কথায় কথায় সাইফুল বলে উঠলো,
– কি যে বলবো ভাই আছি বড়ো কষ্টে।
– কেন ভাই? (সবাই)
– আর বইলেন না, মনে হয় বিয়া আরেকটা করতে হবে। (মজা করে)
– হাহা। বলেন কি! কেন? (নেহাল)
– আরে আপনাদের ভাবী আমাকে তার কাছেই যাইতে দেয় না। বলে অসুস্থ ভালো লাগছে না৷ খালি বাহানা। কেমনটা লাগে বলেন?
– আমারটাও এমন করে। তবে আমি ওর কোন কথায়ই পাত্তা দিনা। আরে ওর উপর আমার অধিকার আছে। না করবে কেন? আপনিও কোন পাত্তা দিবেন না৷ জোর করে করবেন। শত হলেও বউ। হাহা। (মজার সুরে বলল)
সালমান কিছু বলল না৷ তাই নেহাল বলে উঠে,
– কি সালমান ভাই আপনারো কি সেইম কাহানী নাকি? হাহা। সালমান ঠিক করে বসে সাইফুল আর নেহালকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে,
– আমার স্ত্রী আমার উপর অনেক সন্তুষ্ট। কিন্তু আপনারা কি জানেন আপনাদের স্ত্রী আপনাদের উপর একদম সন্তুষ্ট না। বিশেষ করে নেহাল ভাইয়ের স্ত্রী।
– মানে! কেন ভাই? আমি কি করেছি?
– আপনি কীভাবে আপনার স্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন! এটা যে কতটা খারাপ আপনি জানেন?
– কি বলছেন ভাই? মাথা ঠিক আছে আপনার? সে আমার বিয়ে করা বউ। তার উপর আমার পূর্ণ অধিকার আছে। তার সাথে আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি।
– ভুল। একটা মেয়ে বিয়ে করে তার পুরো পরিবারকে ছেড়ে আপনার কাছে এসেছে৷ যাতে শুধু আপনার শারীরিক চাহিদা মেটাতে পারে তারজন্য? কখনোই না। সে এসেছে আপনার স্ত্রী হয়ে৷ আপনার সংসার সামলাতে। আপনার বংশকে সামনে এগিয়ে নিতে৷ তার বিনিময়ে আপনি কি করছেন তার সাথে? তাকে প্রতিনিয়ত জুলুম! এরজন্য কি সে আপনাকে বিয়ে করেছে? আপনি না একজন শিক্ষিত লোক? আপনার স্ত্রীকে আপনি ভালবাসেন না? তার ইচ্ছা অনিচ্ছার কি কোন মূল্য নেই আপনার কাছে? একবার ভেবেছেন তার মনের অবস্থা? সে আপনার কাছে একটু ভালবাসা চায়৷ আদর,স্নেহ আর যত্ন চায়৷ আর আপনি কি দিচ্ছেন তাকে? আপনারা যদি আপনাদের স্ত্রীকে এগুলো দেন তাহলে তারা কখনোই আপনাকে নারাজ করবে না৷ তার ইচ্ছা না থাকলেও আপনাদেরকে খুশী করার জন্য তারা রাজি থাকবে৷ কারণ তারা চায় শুধু একটু ভালবাসা। কিন্তু আপনারা দুজন না আপনাদের মতো অনেকেই তা দেয় না। তারা স্ত্রীকে মনে করে শুধু শারীরিক চাহিদা পূরণের একটা বস্তু মাত্র। না ভাই এরকম আর করবেন না৷ তারা আপনার স্ত্রী। আপনার সন্তানের মা। তাদের গুরুত্ব আপনার জীবনে অনেক বেশী।
তাদের প্রতি এভাবে আর জুলুম করবেন না৷ তাদের মনের অবস্থা আপনাকে বুঝতে হবে৷ সবসময় আমাদের মন কিংবা শরীর ভালো থাকে না৷ তখন আমাদের প্রয়োজন হয় এমন একজন মানুষের যে সেই সময়টায় তাকে আগলে রেখে তার মনটা ভালো করে দিবে৷ তার যত্ন করে তাকে সুস্থ করে দিবে৷ আপনারা পারলে তেমনিই একজন হয়ে দেখান। তাহলে আর কোনদিন দ্বিতীয় বিয়ে করার চিন্তাও মাথায় আসবে না৷ আর বললেন অধিকারের কথা। আচ্ছা আপনার স্ত্রী যদি প্রতিদিন আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনার মানিব্যাগ থেকে টাকা নেয় তখন আপনার কেমন লাগবে? কারণ আপনার টাকার উপর তার তো অধিকার আছে। তখন? ভেবে দেখবেন একবার। তাই স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া আর কখনোই তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবেন না। কারণ আল্লাহ তায়ালা তা পছন্দ করেন না। ক্ষমা করবেন যদি কষ্ট দিয়ে থাকি।
নেহাল আর সাইফুল এসে সালমানের হাত ধরে বলে,
– ভাই চোখ খুলে দিয়েছেন৷ ভাবতেও পারিনি আমি এরকম জঘন্য একটা ভুল করছিলাম এতদিন যাবত। প্লিজ ভাই আপনি আমাদের মাফ করে দিন।
– মাফ আমার কাছে না আল্লাহর কাছে আর আপনাদের স্ত্রীর কাছে চান।
– জি ভাই অবশ্যই। আমি আজই চাইবো। (নেহাল)
– আমিও ভাই।(সাইফুল) রাতে বাসায়, নেহাল বাসায় ঢুকেই তনুর হাত ধরে ওদের রুমে নিয়ে যায়। তনু প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়৷ নেহাল কিছু বলার আগেই তনু ভীতু গলায় বলে উঠে,
~ প্লিজ আজ আমার শরীর অনেক খারাপ। আমি কোন ভাবেই কিছু করতে পারবো না। আমার মিনস চলছে।
নেহাল তনুকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। আর কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,
– আমাকে ক্ষমা করে দেও তনু। আমি বুঝতে পারিনি আমি এতদিন তোমার সাথে পশুর মতো আচরণ করেছি। ছিঃ ঘৃণা হচ্ছে নিজের উপর। আমি আর কখনো তোমার সম্মতি ছাড়া তোমার সাথে কিছু করবো না। আমি প্রমিজ করছি। আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। দয়া করে আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও। নাহলে আল্লাহ তায়ালাও আমাকে ক্ষমা করবেন না। তনু কান্না করতে করতে বলে,
~ ছিঃ ছিঃ আপনি আমার বড়ো। আপনি আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন কেন? আপনার কোন দোষ নেই। আসলে সারাদিন রান্না বান্না করে আর সংসার চালিয়ে অনেক ক্লান্ত হয়ে যাই। তখন আর শরীরে শক্তি থাকে না। তাই আমি না করি। এরপর থেকে আর করবো না। আপনি প্লিজ আর ক্ষমা চেয়েন না।
– না তনু আমি বুঝতে পেরেছি। আমি জুলুম করেছি এতদিন। তোমার অবস্থাটা আমি বোঝার চেষ্টা করিনি। এখন থেকে আমি তোমাকে শুধু ভালবাসা দিবো। তোমার যত্ন করবো। তোমার খেয়াল রাখবো। তোমাকে বোঝার চেষ্টা করবো। বিনিময়ে তুমি আমাকে শুধু ভালবাসা দিও৷ আর কিছু চাই না। তনু খুশীতে কান্না করছে অঝোরে। এইতো সেই নেহাল, যাকে তনু চেয়েছিলো। আজ ও অনেক খুশী। যা লিখে হয়তো বুঝানো যাবে না৷
আমাদের জীবনে সালমানের মতো হয়তো মানুষ খুব কম। আর নেহালের মতো মানুষের সংখ্যা অগণিত। হয়তো গল্পের মতো আকস্মিক পরিবর্তন সম্ভব না। কিন্তু আমরা কি পারি না সালমানের মতো হতে? পারি না স্ত্রীকে মন থেকে ভালবাসতে? চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। আশা করি কেউ আর স্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করবেন না৷ বরং তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিবেন। ধন্যবাদ।
গল্পের বিষয়:
গল্প