বিমান বন্দর রেল স্টেশন। মুখের চারপাশে লেগে থাকা টুথ পেস্টের ফেনা সমেৎ টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান। শার্টের বুক পকেটে ব্রাশ খানিক পর পরই লেগে যাচ্ছে কাপড়ের সাথে। পোটলা অথবা ব্যাগ বলতে ওই হিপ পকেটে রাখা ফারিয়ার দেওয়া মানি ব্যাগটাই। একটা নীল রংয়ের ট্রাউজার, আর সিংগেল স্ট্রাইপড গেরুয়া রংয়ের শার্ট আর পায়ে পায়রা লেখা চপ্পল।
টিকিট কেটে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বুক পকেটে ব্রাশ নিয়ে প্ল্যাটফর্মে এসে দাড়াল ও, ট্রেন আসবে এখনই। ট্রেনে উঠেই পকেট হাতড়ে মোবাইল বের করলো ও। ইনবক্স ঘেটে বের করলো সেই বহুদিন আগের আর্কাইভ করা একটা মেসেজ। একটা ঠিকানা। ট্রেন দোল খায়, ধীর লয়ে সশব্দে এগোয়। পিছিয়ে যায় বাকি সব, পথটা চেনা আয়ানের। এ পথে সে দুই বছর ধরে একটা নির্দিষ্ট তারিখে একটা নির্দিষ্ট ঠিকানায় যায়। এবারও ব্যাতিক্রম হয় নি। আয়ান দাঁড়িয়ে থাকে ওই ঠিকানার ঠিক বরাবর রাস্তায়। দুই বছর আগে এইখানে ফারিয়া নামে একটা মেয়ে থাকতো পরিবার নিয়ে। ওকে আয়ান পরী বলে ডাকতো।
পরীর সাথে যখন স্বপ্নলোকে ভেসে বেড়াতো আয়ান, তখনই একদিন ফোনে কথা বলার সময় আগুন বলে চিৎকার করে পরী ফোন কেটে দেয়। এরপর আয়ান যখন পৌছায় তখনো পুরো বাড়িটা আগুনে পুড়ছিলো। ঠিক এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছে ও, আগুনের আঁচ সেখানেও আসছিলো। পাশের কেমিকেল ফ্যাক্টরির এই আগুন সারাদিন জ্বলে ছিল দাউ দাউ করে। লাশতো দূর, কোন হাড়গোরও পাওয়া যায় নি। ফারিয়ার সাথে কখনো দেখাই হয় নি আয়ানের, রঙ নাম্বার থেকে কথা বলা আর প্রনয় সব আচমকা হয়ে গিয়েছিল। মেসেজে ঠিকানা দিয়ে কথা হয়ে গিয়েছিল দেখা করার। সব প্রস্তুতিও ছিলো, কিন্তু তার আগেই।
আয়ান হিপ পকেট থেকে ওর জন্ম দিনে ফারিয়ার সারপ্রাইজ উপহার দেওয়া মানি ব্যাগটা বের করলো। ভিতর থেকে ফারিয়ার একটা পাসপোর্ট সাইজ ছবি বের করে হাতে নিলো। মানিব্যাগের সাথে কুরিয়ার করে ওটাও পাঠিয়েছিল ফারিয়া। আয়ান একপলক দেখেই রেখে দিলো ছবিটা। শুধু এই দিনটাতেই মাত্র একবার দেখে ওটা। এবার মানিব্যাগটা রাখলো বুক পকেটে অনুভব করলো ওর পরীকে, পরীর স্পর্শ লেগে থাকা ভালবাসাকে। পকেট হাতড়ে আবার বের করলো মোবাইলটা। মেসেজ খুজে বের করলো ঠিকানা পরীর ঠিকানা, যেখানে পরী থাকে না।
গল্পের বিষয়:
গল্প