অধোগতির অবসান

অধোগতির অবসান
“এখন থাক, আগামীকাল রাতে আসবো কেমন?”
“হুম যাও তোমার বউ হয়তো টেনশন করছে”
“আহা এমনভাবে বলছো কেন?তুমি কি আমার বউ নও?
” হুমম, শুধু নামেই তোমার বউ,
“কেন? তোমায় কি আমি বউয়ের অধিকার দেইনি?”
“থাক এসব নিয়ে কথা বলতে চাইনা আমি, তুমি না হয় যাও এখন।। রিদ্ধি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে হয়তো”
“তুমি কথা ঘোরালে,আমার উত্তরটা দিলেনা।! “
“উত্তর তুমিই খুজে নিও ধ্রুব।
একটু ভেবে দেখো তুমি ” ধ্রুব আর কথা বাড়ালো না, জামাকাপড় পড়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল প্রিয়তার বাসা থেকে৷ পুরো রাস্তায়ই মাথায় শুধু এতটুকুই আসছিল, আসলেই কি প্রিয়তাকে ওর অধিকারটা দিতে পেরেছ ও? বাসার কলিংবেল বাজাতেই, রিদ্ধি দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিল।
-আজ আবারও দেরী করলে যে?অফিসে কাজের চাপটা খুব বেশী ছিল তাইনা?
-হ্যা, খেয়েছো তুমি?
-নাহ, তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
-সরি রিদ্ধি, তবে আমি খেয়ে এসেছি।
-ওহহ,আমি ভাবলাম একসাথে খাবো আজ।।
-নাহ, আমার পেট ভরাই আছে, তুমি খেয়ে নাও।
-ঠিক আছে।
ক্লান্ত শরীর ও তিক্ত মেজাজ নিয়ে অমনিই শুয়ে পড়লো ধ্রুব। এতটাই ক্লান্ত যে রিদ্ধির দিকে তাকানোর সময়টুকুও পেল না। রিদ্ধির দিকে চোখ তুলেও দেখলো না একটিবার। আজ যে ও সেজেছে তাও বুঝলো না ধ্রুব।ধ্রুব বলেছিল লাল পাড়ের কালো শাড়ী গায়ে জড়িয়ে সামনে যেতে।।। আজ তেমন করেওছে সে। তবে ধ্রুব!
খোপায় লাগানো গাজরা খুলে ড্রেসিংটেবিলের ওপর রেখে দেয় সে। দু বছর বয়সী ছেলের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে রিদ্ধি। প্রিয়তা জানালার ধারে বসে বাইরের নীরব প্রকৃতির দিকে চেয়ে আছে। ধ্রুব কি করবে ওর জানা নেই। অগত্যা বৌ হওয়ার অধিকারটা ফলানোর চেষ্টাও করেনা প্রিয়তা। কারন ওর মনে হয়, ধ্রুব যেটুকু ওকে দিয়েছে তা দিয়েই সারাজীবন কাটানো সম্ভব। ভালোবাসার অভাবে বড় হওয়া যে কেউ বিন্দু পরিমান ভালোবাসার ছোয়া পেলে অনেককিছু মনে করে। সেসব মানুষের মাঝেই পরে প্রিয়তা। নিজের কাছে নিজেই পুরস্কৃত সে। প্রতিদিন সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে একটুও ভুলে যায়না। সকাল সকাল ধ্রবর মোবাইলে একটা ফোনকল আসলে রিদ্ধি দৌড়ে গিয়ে ফোনটা ধরে, ধ্রুব বাথরুম থেকে বের হলে সে বলে,
-প্রিয়তার সাথে তুমি এখনও যোগাযোগ রাখো ধ্রুব? ধ্রুবর মুখে কোন প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছেনা রিদ্ধি। আবারও বলে সে,
-কি হলে জবাব দাও?
এবারও মৌনতা অবলম্বন করে ধ্রুব। ফোনটা মেঝেতে আছাড় দেয় রিদ্ধি। এতে ধ্রুব অনেকটা রেগে যায়। এবং রিদ্ধিকে একটা থাপ্পড় মেরে বসে। ফোনটা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় ধ্রুব রিদ্ধি রাগে দেয়ালে নিজের হাত দিয়ে আঘাত করে। প্রায় আধঘন্টা পর ধ্রুব বাড়ি ফেরে।। নাহ একা নয় ওর সাথে প্রিয়তাও রয়েছে।। প্রিয়তাকে দেখে রিদ্ধি একদফা বিস্মিত।।
-ও এখানে কি করছে ধ্রুব?ওহহহ তার মানে বুঝলাম তোমাদের অবৈধ সম্পর্ক তাহলে এতদিন যাবৎ টিকে রয়েছে?
-চুপ!একদম চুপ!আজ আমি বলবো তুমি শুনবে,
কি যেন বললে? অবৈধ সম্পর্ক? হাহ।।আমাদের সম্পর্কটি তো আমি সেদিনই বৈধ করে নিয়েছি যেদিন তোমাকে তোমার প্রেমিকের সাথে অবৈধ মেলামেশা করতে দেখেছিলাম। কি মনে করেছিলে?আমায় এত সহজেই ধোকা দিয়ে আমার জীবন নষ্ট করে চলে যাবে?কিন্তু কি যানো আল্লাহ তা কবুল হতে দেন নি। তাইতো আমার এবং প্রিয়তার সম্পর্কটা কবুল করে নিয়েছেন। আমি প্রিয়তার প্রতি স্ত্রীর অধিকার ফলিয়েছি তবে ওকে কখনো ওর যোগ্য অধিকার ও সম্মান দেইনি। আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো তোমার কর্ম শুধরে নেবে। কিন্তু নাহ, কাল সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার মূহুর্তে যখন ওই লোককে বাসা থেকে বের হতে দেখলাম আমি আমার সিদ্ধান্ত সেখানেই ঠিক করে ফেলেছিলাম। আমায় কথা না হয় নাই ভাবলে আমাদের বাচ্চাটা কি করেছিল?ওকে এত শাস্তি কেন দিলে তুমি?
আমি চাইনা তুমি আর এখানে থাকো।। আমি তোমার সেই সুসম্পর্কের মানুষকেও সাথে এনেছি। তোমার জন্য দরজা খোলা। তুমি চলে যাও এখান থেকে। রিদ্ধিও মনে মনে ভাবলো এখানে থেকে জীবন শেষ না করে ওর কাছের মানুষটির সাথে জীবন নতুন করে শুরু করা যাক। বাচ্চাটা রেখে সে লোকটির সাথে চলে গেল। ধ্রুব দাড়িয়ে চোখের দু ফোটা জল ঝড়ালো রিদ্ধির জন্য। ধ্রুবর দু বছরের বাচ্চাটা কাদছে। প্রিয়তা দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাকে কোলে তুলে নেয়। হয়তো প্রিয়তার কোলে নিজের মায়ের মতই সুখ পেয়েছে বাচ্চাটি, তাই কিছুক্ষণের মাঝেই সে ঘুমিয়ে পড়ে। ধ্রুব প্রিয়তার কাছে গিয়ে কপালে একটা চুম্বন করে বলে,
-ভালোবাসি!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত