ভাবির রুমের পাশদিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ভাবি ডাক দিল। ভাবির রুমে গিয়ে বললাম, জ্বি ভাবি বলেন? ভাবি বলল, আমার একটা ফেসবুক আইডি খুলতে হবে। তোর ভাই ফেসবুক বুঝেনা। তুই কি ফেসবুক আইডি খুলতে পারিস?
আমি বললাম, জ্বি ভাবি, পারি। ভাবি আমার হাতে ফোন দিয়ে ফেসবুক আইডি খুলে দিতে বলল। আমি তার ফোন দিয়ে আইডি খুলছিলাম, হঠাৎ করে মাথার মধ্যে শয়তানি বুদ্ধি ভর করল। আমি বললাম, ভাবি, রেফারেন্স ছাড়া আইডি খুলা যাবে না। ভাবি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, রেফারেন্স আবার কি? আমি বললাম, রেফারেন্স হলো, পরিচিত কারো আইডির নাম দিতে হবে। যাতে আপনি কোন অপকর্ম করলে, আপনাকে সহজে খুজে পায়। ভাবি বলল, আমি অতসব বুঝিনা, যেটা ভালো হয় কর। আমি বললাম, ঠিক আছে, আমার রেফারেন্স দিয়ে দিলাম, পরে কোন অঘটন ঘটাইয়েন না, তাহলে আমি বিপদে পড়ব। ভাবির আইডির নাম দিলাম “সুবোধের ভাবি”।
ভাবিকে বোকা বানিয়ে, আমার নাম দিয়ে আইডি খুলে দিলাম। মনে মনে পেশ্চাসিক হাসি দিলাম। নিজের নামটা প্রচার হোক, মনে মনে সেলিব্রেটি সেলিব্রেটি ভাব লাগছিল। আমি ছাড়া বাড়িতে মোবাইল সম্পর্কে তেমন বুঝতনা কেউ। একদিন বাবা বলল, ফেসবুক আইডি খুলে দিতে। বাবাকেও ভাবির মতো বুঝ দিয়ে, বোকা বানিয়ে আইডি খুলে দিলাম। বাবার আইডির নাম, “সুবোধের বাবা” বাবা ফেসবুকে ফানি ভিডিও দেখে, আর খিল খিল করে হাসে। বাবার হাসিতে মা প্রচন্ড বিরক্ত। মা আমাকে বলল, তোর বাবাকে কি যেন খুলে দিছিস ফেসবুক নাকি কি যেন কয়, সেগুলো আমাকেও একটা খুলে দে।মাকেও আমার নাম দিয়ে আইডি খুলে দিলাম। মায়ের আইডির নাম, “সুবোধের মা” বাবা মতো মা’ও এখন ফেসবুকে ফানি ভিডিও দেখে আর হাসে। বাড়ির সবার আইডিই আমার নাম দিয়ে খোলা। বেশকিছুদিন কেটে গেল। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম, হঠাৎ বাবা ফোন করে বাড়ি আসতে বলল।
বাড়িতে গিয়েই দেখি, বাড়ির সবাই নিরব হয়ে থম ধরে আছে, কেউ কোন কথা বলছেনা। মা আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল। বিষয়টা কি বুঝতে পারছি না। বাবা আমাকে দেখে বলল, ছিঃ ছিঃ, তুই এমন কাজ করবি ভাবতেই পারিনাই। মান সম্মান সব শেষ করে দিলি, লোকের সামনে মুখ দেখাব কি করে। ছিঃ ছিঃ ঘটনা কি বুঝতে পারছি না। সবাই কি তাহলে জেনে গেছে যে, তাদের বোকা বানিয়ে আমার নাম প্রচার করার জন্য, আমার নাম দিয়ে তাদের আইডি খুলে দিছি। আমি মিন মিন করে বললাম, বাবা, ফেসবুক আইডিতে কি কোন সমস্যা হইছে? বাবা আমাকে ধমক দিয়ে বলল, আইডিতে সমস্যা হবে কেন? আমি বললাম, তাইলে কি হয়েছে? সবাই আমার সাথে এমন করছ কেন? বাবা বলল, তুই জানছ না? তুই কি করছা? ছিঃ ছিঃ আমি কিছুই বুঝতেছি না, ঘটনা কি!
মিতু কি তাহলে বাবাকে সব বলে দিছে। গতকাল মিতুর সাথে ব্রেকআপ হইছে। কিন্তু মিতু তো বাবাকে চিনে না, বলবে কি করে। তাইলে কি ইশিতা কিছু বলছে, কিন্তু ইশিতা তো কিছু বলার কথা নয়, ওর তো বিয়ে ঠিক। তাহলে কি পলি কিছু বলল, কিন্তু পলি তো এমন মেয়ে না। শায়লাকে সন্দেহ হয়, কিন্ত শায়লার সাথে তো সেই কবেই ব্রেকআপ হইছে। মাথাটা গরম হয়ে গেল ভাবতে ভাবতে, এমন সময় ঠাস করে ডান কান বরাবর বাবা চর বসিয়ে দিয়ে বলল, “তুই আমাদের না জানিয়ে, গোপনে কেন বিয়ে করলি।” বাবার কথা শুনে, আকাশ থেকে পড়লাম। আমি বললাম, বিয়ে করছি মানে? কে বলছে এই কথা?
বাবা তার ফেসবুক লগইন করে বলল,এই দেখ, তোর বউ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাইছে। আইডির নাম, “সুবোধের বউ” বাবাকে শান্তনা দিয়ে বললাম, “বাবা, এটা তো ফেসবুক। এখানে যে কোন নাম দিয়ে আইডি খোলা যায়।” বাবা বাম কান বরাবর আরেক চর বসিয়ে বলল, “তোর রেফারেন্স ছাড়া তোর নাম দিয়ে “সুবোধের বউ” আইডি খুলল কি করে। তুই কি আমারে বোকা পাইছা! উল্টা পাল্টা ভং ছং বুঝাস।” এরপর মাকে অনেক্ষন মুখ নাড়তে দেখলাম। কিন্তু কোন সাউন্ড শুনলাম না। দুইকানে চর খাওয়ার পর কিছুই শুনতে পাইনা, অনলি ভিডিও।
গল্পের বিষয়:
গল্প