সুখী কান্না

সুখী কান্না
‘আমি যে প্রেগন্যান্ট তা জানার পরেও তুমি আরেকটা বিয়ে করতে চললে এটা কী ঠিক বলো? তোমাকে ভালোবেসেই তো আমি সাত বছর আগে বাপের বাড়ি ছেড়েছি।’ তামান্নার কথা শুনে সাজ্জাদ অপর পাশ থেকে চেহারা ঘুরিয়ে একটু তাকালো তামান্নার দিকে। পাশে থাকা চেয়ারটায় বসে বলল, ‘তোর ঘ্যানঘ্যানানি আমার আর ভালো লাগছে না। এক গ্লাস পানি নিয়ে আয়।’
কথাটা বলেই সাজ্জাদ একটা সিগারেট ধরিয়ে তাতে লম্বা টান দিলো। সাজ্জাদ অপেক্ষায় আছে কখন পানি আনবে তামান্না তার জন্য। কিছুক্ষণ পরে তামান্না এসে পানির গ্লাস হাতে দিতে গিয়ে সাজ্জাদের হাতটা চেপে ধরে বলল, ‘প্লিজ তুমি বিয়ে করিয়ো না! বিশ্বাস করো আমি সইতে পারবো না। আমি তোমার দুইটি সন্তানকে জন্ম দিয়েছি, আরেক সন্তান আমার গর্ভে। প্লিজ তুমি এই কাজ করিয়ো না।’ তামান্না কথা গুলো বলতে বলতে প্রায় কেঁদে দিয়েছে। তামান্নার কান্না দেখে সাজ্জাদ কিছুক্ষণ হাসলো তারপর বললো, ‘হ্যাঁ তুই জন্ম দিয়েছিস, কিন্তু সব মেয়ে। আর এখন যেটা জন্ম দিবি ওইটাও মেয়ে। আমার ছেলে লাগবে। তুই তো তা দিতে পারবি না। চুপ থাক, এসব ন্যাকামি করিস না।’
তামান্না পানির গ্লাস নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। সে জানে যে ছেলে বা মেয়ে যা ই হোক না কেন তার সম্পুর্ন নির্ভর করে পুরুষের উপর। সে এই কথাটা এই নিয়ে হাজার বার বুঝিয়েছে তাও সাজ্জাদ বারবার এইসব বলে। তামান্না জানে যে সাজ্জাদ এইসব বোঝে তাও শুধু শুধু এই বাহানাটা করে। সাজ্জাদের মূল উদ্দেশ্য আরেকটি বিয়ে করা। এই সংসার তার আর ভালো লাগছে না। তামান্নার বাবা-মা মেনে না নেয়ার পরেও তামান্না সাজ্জাদের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে। সাজ্জাদের পরিবারও কোনো রকম মেনে নিচ্ছিলো না। শেষমেশ একবছর পরে সাজ্জাদের পরিবার তাদেরকে বাসায় উঠতে দেয়। এরপর থেকে কতো ঝড় যে বয়ে গেছে তা একমাত্র তামান্না ই জানে।
আনমনা হয়ে তামান্না কথা গুলো ভাবছিলো। তারপর তার শ্বাশুড়ি ডাক দিয়ে বলল, ‘বউমা! আমার পানের বাটাটা দিয়ে যাও তো!’ তামান্নার দুই হাতেই কাজ, তার উপর তার শ্বাশুড়ির এইসবে সে বিরক্ত হয়ে গেছে। তার শ্বাশুড়ি যে খাটে বসে আছে তার অপর পাশেই আলমারির নিচে পানের বাটা রয়েছে। কিন্তু তাও তামান্নার হাতের কাজ রেখে গিয়ে পানের বাটা উনার হাতে দিয়ে দিতে হবে। রাত দশটা বেজে গেছে। তামান্না দুই মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে অপেক্ষা করছে সাজ্জাদের। তামান্নার সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে এক্ষুনি সাজ্জাদ এসে বলবে, ‘সব মিথ্যে ছিলো৷ আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, তা তো আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই রক্ত।’ তামান্নার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে যেন সাজ্জাদ এসে এমন কথা বলে।
ভাবতে ভাবতে কলিংবেলের শব্দে তামান্নার ঘোর ভাঙ্গে। সে বুঝতে পেরেছে সাজ্জাদ এসেছে। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে সাজ্জাদের দিকে চেয়ে রইলো অপলক দৃষ্টিতে। সাজ্জাদের হাতে নতুন আংটি দেখে বুঝতে আর বাকি নেই যে সাজ্জাদ বিয়ে করে ফেলছে৷ তামান্না আর কিছুই বলতে পারছে না। তার চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। সে চুপচাপ গিয়ে মেয়েদের রুমে শুয়ে পড়লো। আজকে আর সাজ্জাদ তাকে ডাকলো না। তামান্না মাঝরাতে পানির জন্য রান্না ঘরে যেতেই চোখ পড়লো তার বেডরুমের দিকে। সাজ্জাদ ফোনে কথা বলছে আর হাসছে। আগে সাজ্জাদের হাসিতে তামান্না সুখ পেতো। এই ভেবে যে তার প্রিয় মানুষ সুখে আছে। কিন্তু এখন তার এই হাসি সহ্য হচ্ছে না। রান্না ঘরে যেতে যেতে একটা ফন্দি আঁটলো। সাজ্জাদের মেয়ে রোগ হয়েছে। আজকাল আমায় ভালো লাগছে না বলে অন্য মেয়ে বিয়ে করছে। কোনো কারণ ছাড়াই বিয়ে।
তামান্না পানি আনার সময় দুই জগ পানি নিয়ে আসলো। এক জগ সাজ্জাদের রুমে দিয়ে এসে অন্য জগ নিয়ে মেয়েদের রুমে চলে গেল। ‘কাল সাজ্জাদের দ্বিতীয় বাসর রাত’ বলেই তামান্না একটা হাসি দিয়ে মেয়েদের জড়িয়ে ধরলো। নাহ, এই হাসি দুঃখের না। হয়তো সুখের, নাহয় এমন ভয়ংকর হাসি দিতো না। তামান্না সকাল সকাল নামাজ পড়ে সাজ্জাদের রুমে উঁকি দিলো। দেখছে কোনো সাড়া শব্দ নেই। তামান্না রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এমন সময় তার শ্বাশুড়ির চিৎকার শুনতে পায় তামান্না। ‘সাজ্জাদ বাপ উঠ’ বলেই তার শ্বাশুড়ি একটা চিৎকার দিয়েছে। তামান্না নাস্তার প্লেট হাতে নিয়ে মেয়েদের খাওয়ায় দিতে দিতে বলল, ‘তোর বাপ আর বেঁচে নেই রে মা।’
তারপর বেডরুমে গিয়ে সাজ্জাদকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলো। তারপর সেখান থেকে উঠেই রান্না ঘরের দিকে যেতে লাগলো। পুরো ঘরে লোকে ভরপুর। তামান্না রান্নাঘরে গিয়ে ঘুমের ওষুধের খালি পাতা গুলো বাইরে ফেলে দিয়েছে। রাতে প্রায় সাইত্রিশ টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলো সাজ্জাদের পানির সাথে। রান্নাঘরের দুই রুম আগেই তার শ্বাশুড়ির রুম। রাতে পানি নিতে এসে শ্বাশুড়ির রুম থেকেই ওষুধ গুলো নিয়ে নেয় তামান্না। তামান্নার এখন সাজতে হবে সুখী কান্না করতে। সে রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে তার পেটে হাত দিয়ে বলল, ‘তোকে তোর বাবা অভিশাপ মনে করেছে, তাই তোর জন্মের আগেই এমন অমানুষকে আমি পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলাম রে মা।’
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত