খুব সকালে বউয়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। বিয়ের আগে মেয়েরা সকাল নয়টা দশটার পর ঘুম থেকে উঠলেও বিয়ের পর ঘুম থেকে ওঠে ভোর পাঁচটায়।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি বউ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। বিয়ের আগে প্রেমিকার হাসিমুখ দেখলে ভালো লাগতো। কিন্তু সেই প্রেমিকা যখন বউ হয়ে আসে সে হাসি দেখে আতঙ্ক হয়, ভয় লাগে।
বউ হাসিমুখে একটু আদুরে ভঙ্গি যোগ করে বললো, আশিক যাও হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হও। বাজারে যেতে হবে। এই হাসি আর আদুরে ভঙ্গি শুনতে ভালো লাগলেও এটা আমার কাছে প্রাণনাশ করা তলোয়ারের মতোই ভয়ঙ্কর। এই দুইটা অস্ত্র ব্যাবহার করে যুগে যুগে বউয়েরা তাদের স্বামীদের দিয়ে সব ধরনের কাজ করিয়ে নেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো কোনভাবেই এই অস্ত্রের মুখ থেকে সরে আসা যায় না। আমি নিজেও পারলাম না। বউয়ের হাসির সামনে পরাজিত সৈনিক হয়ে আমিও একটা ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম। বিবাহিত জীবনে একজন ব্যক্তি তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটা জিনিস হাতছাড়া করে। প্রথমটা হলো স্বাধীনতা। দ্বিতীয়টা হলো আরাম আয়েশ। বিয়ের পর আপনার পছন্দের কোন প্রাধান্য নেই, বউ যেইটা পছন্দ করে সেটা আপনারো পছন্দ হতে হবে। কিছু মেয়ে তো বিয়ের পর স্বামীদের স্মার্ট থেকে সাদাসিধা ফ্যাশনহীন মানুষে পালটে দেয় যাতে অন্য মেয়েদের নজরে না পড়ে।
আমার বউ অবশ্য এদিক দিয়ে আমাকে ছাড় দিয়েছে। কারন বিয়ের আগে থেকেই আমি সাদাসিধা, বোকা ধরনের ছেলে। এর জন্য বউয়ের আলদা ভাবে কিছু করতে হয়নি। তবে বিয়ের পর কিছু ক্ষেত্রে বউয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বন্ধুদের থেকে কিছু বুদ্ধি নিয়েছি এবং খুব ভালো ভাবে প্রয়োগ করেছি। যেমন সকালের বাজারের কথাই ধরা যাক। অন্যকেউ হলে বউয়ের এক কথায় বাজারে যেতে চাইতো না। এতে বউ রেগে যেতো ফলস্বরূপ সকালের নাস্তা বন্ধ এমনকি রাতে বসার ঘরের সোফাতে ঘুমুতে হতো। কিন্তু আমি খুব ভালো ভাবে রাজি হয়ে বাজার করতে চলে আসলাম। ভাবছেন তাহলে তো হয়েই গেলো। শেষমেশ বাধ্য হওয়া বিড়ালের মতো একজন বাধ্য স্বামী হয়ে গেলাম। তবে এর মাঝে একটা কিন্তু আছে।
বিড়ালের তেমন বুদ্ধি নেই কিন্তু মানুষের তো আছে। এখানেই আমি সেই বুদ্ধির প্রয়োগ করলাম। বাজারের ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে একটু সামনে এগিয়ে চায়ের দোকানে বসলাম। পাড়ার ছোটভাইকে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে হাতে পঞ্চাশটাকার নোট দিয়ে বললাম, যা বাজার করে নিয়ে আয়। আর এইটা তোর। এতে দুইটা লাভ, প্রথমত বউয়ের কাছে পারফেক্ট স্বামী হলাম বাড়িতে ঝামেলা হলো না। দ্বিতীয়ত নিজের কাছে নিজের একটা মূল্য থাকলো। এভাবেই মনে মনে নিজের বুদ্ধির প্রশংসা করছিলাম। প্রায় বিশ মিনিট পর বউয়ের ফোন আসলো। আমি ভাবলাম তাড়াতাড়ি বাজার নিয়ে যাওয়ার কথা বলবে হয়তো। ফোন রিসিভ করে হ্যালো বললাম। বউ অতিরিক্ত রকমের শান্ত গলায় বললো, বাসায় আসো। আমি বললাম, এইতো বাজার নিয়ে আসছি। বউ এবার আরো শান্ত গলাতে বললো, বাজার আমার কাছে চলে এসেছে তুমি বাড়িতে আসো।
তুফান আসার আগে যেমন প্রকৃতি একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়। বউয়ের শান্ত গলা শোনার পর সেই তুফানের ভয় অন্তরে ঢুকে গেলো। বাজার করতে দিয়েছি রনিকে, বউ কিভাবে বাজার পেলো! কোনরকম বাসায় পৌঁছাতে দেখি রনি বসার ঘরে বসে আছে। আমাকে দেখে সুন্দর করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, ভাবী ভাইয়া আসছে। আমি আজ আসি। রনি বের হয়ে যেতেই বউ কোমরে দুই হাত রেখে বের হয়ে আসলো। এই ভঙ্গিটা হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস আসার আগের তীব্র ঝড়ের ইঙ্গিত। সেইদিন আমার উপর দিয়ে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো সব গিয়েছিলো। এমনকি রাতে সোফাতে শুয়ে মশাড় কামড়টাও খেতে হয়েছে।
এসব ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় ব্যাপার হলো কখনো বউয়ের সাথে চালাকি করতে যাবেন না। বিয়ের আগে প্রেমিকাকে বোকা মনে হলেও বিয়ের পর সেই প্রেমিকা বউয়ের রূপে শার্লক হোমস হয়ে ওঠে। রনিকে আমি পঞ্চাশ টাকা দিয়েছিলাম সেখানে আমার বউ ওকে একশো টাকা দিয়ে সব জেনে নিয়েছে। বউয়ের সামনে নিজেকে কখনো বুদ্ধিমান ভাবতে যাবেন না এতে আপনি নিজেকে দুনিয়ার সবথেকে বড়ো বোকা প্রমাণিত করবেন।
গল্পের বিষয়:
গল্প