আরও একবার

আরও একবার
– বিয়ে করেছো?
– নাহ।
– কেন?
– বিয়ে করার মতো সাহস নেই আর।
– একজনের ভুলের জন্য সবাই কে শাস্তি দেওয়ার মানে?
– সবাই কে কোথায় শাস্তি দিলাম?
– দাওনি বলছো?
– হমম বলছি।
দুজনেই নীরবতা পালন করছে এখন। পার্কের বেঞ্চে বসে নিধি বই পড়ছিল ঠিক সে সময় হঠাৎ কাওর গলা ঝারার আওয়াজ পেয়ে মাথা উপরে তুলতেই দেখে সেই মানুষটিকে “যে একদিন তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্য কাওকে জীবনসঙ্গী করেছিল।” আজ ২ বছর পর সে আবার কি চায় নিধির কাছে? ভালোই তো ছিলো সে একা, নিজের মতো করে। নীরবতা ভেঙ্গে নিধি জিজ্ঞেস করলো,
– সব নিধি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার আগেই একটি মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো পিছন থেকে,
– নির্ঝর! দেরী হয়ে যাচ্ছে তো? ফিরতে হবে এবার।
নির্ঝর ঘাড় ঘুরিয়ে শুধু মেয়েটির দিকে তাকালো আর ইশারা করলো চলে যেতে। মেয়েটির কোলে একটা বাচ্চা মেয়ে। নির্ঝরের ইশারায় মেয়েটি মাথা নিচু করে চলে গেলো। নিধির মনে আবারও কালো মেঘের ঘনঘটা আর চোখে বৃষ্টির পূর্বাভাস। নিজেকে সামলে নিধি উঠে দাঁড়িয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে এগোতে নিলেই নির্ঝর উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
– নিজের কথা সম্পূর্ণ করলে না যে? নিধি নির্ঝরের দিকে পিছন ফিরেই জিজ্ঞেস করলো,
– “সবাই কে শাস্তি দিয়েছি” কথার অর্থ বুঝতে পারলাম না।
– দোষ তো আমি করেছিলাম। তুমি তো বিয়ে করতেই পারতে। তোমার জন্য অনেক ছেলেই অপেক্ষা করে আছে আমার জানা মতে।
– কিন্তু আমি অন্যকাওর প্রতিশ্রুতি তে বিশ্বাস করেছিলাম, অগাধ বিশ্বাস! যা সে নিমিষে ভেঙ্গে দিয়েছে। তাই আর “বিয়ে” নামক জিনিসের সাথে নিজেকে জরাইনি। আসছি। নিধি এগোবে তার আগেই নিধির হাতে টান পরলো। নিধি চোখ বন্ধ করে এই স্পর্শের মালিক কে তা নির্ধারণ করতে পারে। আজও বড় চেনা তার এই স্পর্শ। নিধি চোখ খুলে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
– আমাকে স্পর্শ করার অধিকার আপনার নেই মিস্টার নির্ঝর! ভুলে যাবেন না আপনি বিবাহিত।
– আমি কিছুই ভুলিনি। তোমার মনে আরো প্রশ্ন আছে। আজ যখন সুযোগ পেয়েছো তখন তার সৎ ব্যবহার করবে না? নিধি এক গাল হেসে নির্ঝরের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– সময়ের সৎ ব্যবহার যে জানে না সে আর সুযোগের সৎ ব্যবহার কি করে করবে?
– সত্যি কিছু জিজ্ঞেস করার নেই?
– একটাই প্রশ্ন আছে। আপনার সাথে কোনদিন মুখোমুখি হলে জিজ্ঞেস করবো ভেবেছিলাম।
– হমম করো। তোমার প্রশ্নের উত্তর আশা করছি দিতে পারবো। নিধি অশ্রুসিক্ত চোখে জিজ্ঞেস করলো,
– মিথ্যে প্রতি শ্রুতি কেন দিলেন যখন সেটা পালনই করতে পারবেন না? প্রতিশ্রুতি না দিলেই পারতেন।
– মিথ্যে প্রতিশ্রুতি তো দিইনি। আজ আমি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই এসেছি তোমার কাছে। অনেক খোঁজার পরে যে তোমায় পেয়েছি।
– মাথায় ও আনবেন না এই ধারনা। আপনি এসেছেন বলেই যে আমি মেনে নেবো তার কি কোনো মানে আছে?
নিধি বেশ জোর গলায় রাগান্বিত হয়ে কথাটা বললো নির্ঝর কে। পরিবর্তে নির্ঝর হাসলো। প্রথম থেকেই নির্ঝর খুব শান্ত, রাগের ছায়া তার মধ্যে দেখা যায় না।
– মানবে। মানবে বলেই তো এতক্ষণ ধরে আমাকে সহ্য করলে। ইভেন এখনও করছো। নিধি তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকালো নির্ঝরের দিকে আর বললো,
– নিজের স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সুখে থাকুন। আমার সাথে যে অন্যায় করেছেন তা আপনার স্ত্রীর সাথে করবেন না।
– ” আরও একবার ” ফিরে পেতে চাই তোমায় নিধু! নিধি জানো নিজের জায়গায় স্তব্ধ হয়ে গেলো। এসব কি বলছে মানুষটা? ভাবছে নিধি। কিছুটা নরম সুরে নিধি বললো,
– আপনার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আমাকে ফিরে পেতে চেয়ে লাভ আছে? নিধি কথাটা বলে চলে যেতে নিলে নির্ঝর তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
– যদি বলি আমার বিয়ে হয়নি। তাহলে? তাহলেও কি তোমায় ফিরে পাবো না?
নিধি জানো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বিয়ে হয়নি নির্ঝরের। এটা কি করে সম্ভব? নিধি উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কি বলছো এসব নির্ঝর? তোমার বিয়ে হয়নি?
– নাহ।
– আমাকে যে রিশান বললো তুমি বিয়ে করে নিয়েছো সেই মেয়েটা কে যার বিয়ের সময় বর আসেনি।
– ওই আমাকে ফাঁসিয়েছে। মেয়েটার বিয়ের দিন বর কে টাকা খাইয়ে আসতে বারণ করে দেয় আর মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য আমাকে বিয়ের জন্য জোর করে কারণ ও তোমাকে ভালোবাসত।
– এসব কি বলছো তুমি?
– হ্যাঁ। আমি জোরাজুরির ফলে বিয়ের জন্য রাজি হবো তার আগে তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও দেয়নি। সে সময় আমারই আরেক বন্ধু মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। ও নাকি আগে থেকে মেয়েটাকে ভালোবাসত।
– ম..মেয়েটা কোথায়? নির্ঝর নিধির দিকে তাকিয়ে দেখলো নিধি কাঁদছে। আলতো হাতে নিধির চোখ মুছিয়ে বললো,
– কিছুক্ষণ আগে যেই মেয়েটা আমাকে ডাকলো, ওই সেই মেয়ে। যাকে তুমি আমার স্ত্রী ভাবছিলে। নিধি চুপ করে আছে। ওদের দুজনের কমন ফ্রেন্ড যে এত বড় ষড়যন্ত্র করবে ওদের বিরুদ্ধে তা ভাবতেও পারছে না নিধি। বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। নিধি চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তখন নির্ঝর নিধির দিকে হাতবাড়ালো। নিধি নির্ঝরের হাতের দিকে তাকিয়ে নির্ঝরের চোখের দিকে তাকালো। নির্ঝর হেসে বললো,
– ” আরও একবার ” হাতে হাত রেখে হাঁটতে চাই, সারাজীবন। আমাদের মাঝে জানো আর কেউ আসতে না পারে। রাজি?
– রাজি।
নিধি দেরী না করে নির্ঝরের হাতে হাত রেখে উত্তর দিলো। তারপর একসাথে পা বাড়ালো নিজেদের গন্তব্যের দিকে, যেখানে থাকবে শুধু ওরা দুজন।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত