সাদিয়া শুনো !! ভয়ে ভয়ে সামনে গেলাম ,,, সাদিয়া আজ রান্না অনেক ভালো হয়েছে। একদম পারফেক্ট। আমি অনেক অবাক হলাম !! কারন আজ রান্নায় লবন বেশি ছিল। ভেবেছিলাম বকা দিবে কিন্তু তা করলো না। আমি যখন বললাম আজ রান্নায় লবন বেশি ছিল আর তুমি বলছো পারফেক্ট??
সে মিষ্টি হেসে বললো: তাতে কি হয়েছে কাঁচা লবন খাওয়া ভালো না। আর আজ তো ঠিক ছিল ভাতের সাথে পারফেক্ট!! হ্যাঁ এই মানুষটি জানে কিছু বললে আমার মুখ মলিন হয়ে যাবে আর আমি কষ্ট পাবো তাই সে এই কথাই বললো। কারন সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে। সকালের যখন ঘুম থেকে উঠতে দেরি হতো ,, সে রেডি হয়ে আমাকে বলে :: লক্ষী শুনো আজ নাস্তা করার একটুও মুড নেই। তুমি খেয়ে নিও প্লিজ। আমি জানি তার ক্ষিদে ঠিক আছে। তবে অফিসের দেরি হবে আর আমার নাস্তা বানাতে ও দেরি হবে। তবে না খেয়ে গেলে পুরা সকালটা আমার খারাপ লাগবে। তাই সে বলেই গেলো তার খাওয়ার মুড নেই। অফিসে হাজার কাজের ফাঁকে আমায় কল দিয়ে খবর নিবে খেয়েছি কি না। কারন সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে।
দুপুরে রান্না করার ফাঁকে ফাঁকে দরজাটা দেখতাম মনে হয় সে এলো বলে,,,, সেও জানে দরজার এপাশে আমি তার পথ চেয়ে,,,, তাই লাঞ্চ টাইমে সময় করে বাসায় চলে আসবে। কারন সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে। এতো টুকুতেও সে ক্ষান্ত নয়!! বাসায় এসেই হাত চেক করবে। কোথাও রান্না করতে গিয়ে পুড়ে বা কেটে যায়নিতো!! আমি আমার জন্য আমার খেয়াল রাখি না। আমি তার জন্য আমার খেয়াল রাখি কারন তার মলিন মুখ আমায় বড্ডো পোড়ায়। রোজ দুপুরে তাকে নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দিতে হয়। আর রাতে তার গুরুদায়িত্ব সে আমায় পরম যত্নে খাইয়ে দিবে। কারন সে জানে ,,,, এতে আমার ভালো লাগবে। বিকেলটা একাকিত্বে কাটে তাই সে আমার পছন্দের হুমায়ূন স্যারের একগাদা উপন্যাস এনে দিলো। কারন সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে।
সন্ধ্যা তার অপেক্ষায় কাটে ,,, হাজার ক্লান্তি ভর করলেও দরজা খুলে তাকাতেই তার সে হাসি হাসি মুখাটার দেখা মেলে। কারন সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে। রাত্রি বেলা সকল কাজ শেষে যখন রুমে যাই ,, তখন সে একচিলতে হাসি নিয়ে বলে সাদিয়া চন্দ্র বিলাস করবে?? ক্লান্তি থাকার পরও তার কথায় রাজী হই। কিন্তু সে বুঝে যায়। তাও খুবকি প্রয়োজন ছিল এতো গুলো সিঁড়ি বেয়ে আমায় কোলে নিয়ে ছাদে উঠা!! তাও সে উঠলো আমার ক্লান্তির রেশ কাটাতে। কারন সে যানে আমার ভালো লাগবে। কিন্তু সকালে ঠিকই আমি নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি। চন্দ্র বিলাস করতে করতে তার কাঁধেই ঘুমিয়ে পড়ি। সে উঠায়নি। যদি আমি বিরক্ত হই!!! তাই আবার এনে বিছানায় শুয়ে দেয়। সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে। রান্না করতে যদি হাত কেটে যায়,, সেইদিন তো আর রক্ষে নেই।
মনে হবে যেন তার হাত ক্ষতবিক্ষত হলো। হাত ধরে কেঁদেই দেয়। বড্ডো ভালোবাসে আমায়। মাসের নির্দিষ্ট ৬টা দিন আমায় কোনো কাজ করতেই দিবে না। মনে হয় যেন আমার কষ্টগুলো আমার আগে তাকে ছুঁয়ে দেয়। ওইদিন গুলো মিলিটারি রুলস ফলো করতে হয়। তা ভেবেই হাঁসি পায়,,,, সে আমার বড্ডো খেয়াল রাখে। কারন সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে। সপ্তাহের শুক্রবার আমার ছুটি। তার ধারনা সপ্তাহে ৬টা দিন আমি তার জন্য এতো কম্প্রোমাইজ করি তাই এই একটা দিন তার। শুক্রবার তার নিয়মেই চলে। সকালে স্নান সেরে শাড়ি পরিয়ে চোখে কাজল আর টপ টপ করে পানি পড়া ভেজা চুলে সাজিয়ে দিবে আমায়। তবে হাটা নিষেধ,, সে জানে শাড়ি পড়ে হাঁটতে গেলে তার প্রেয়সী ঠিকই হোঁচট খেতে পারে। পুরো দিন সে আমায় নিয়ে কাটাবে। কারন সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে।
কখনো রাত করে এলেও আমার রাগ ভাঙাতে হাতে দুটো বেলী ফুলের মালা ঠিকই থাকবে। সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে। মাঝে মাঝে তার সখ জাগে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে হাঁটতে ,, আসলে ইচ্ছেটা আমারই তবে এখন আমার সব কিছুই তার। সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা লুকিয়ে যখন কাজ করি,, তাও সেটা তার দৃষ্টি অগোচরে থাকে না। আমার মাথা ব্যাথা তার হয়ে দাঁড়ায়। ওইযে আবার সব কাজ থেকে আমার অবসর নিতে হয়। যত্ন করে মাথায় বিলিকেটে দিবে। সে জানে এতে আমার ভালো লাগবে। একদিন টেনে চড় মেরে ছিল বুঝে উঠতে পারিনি কেন। আমার চোখ ছলছল করছে। চোখের জল গড়িয়ে পড়বে বলে,, তার আগেই সে হেঁচকা টান দিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজেই কেঁদে দিলো।
পরে বুঝলাম আমার এই ভুলোমনা অভ্যাস যার ফলে গ্যাস অন করেই রেখেছিলাম। ভাগ্যিস সে দেখেছিলি তাই হারানোর ভয় তীব্র ছিল। আর আমার চোখের জল তার বুক ওবদি সীমাবদ্ধ ছিল। তার একটাই কথা:: মায়াবতী কখনো নিজের চোখের জল মাটি ওবদি পড়তে দিও না। তোমার কাছে তুচ্ছ হতেই পারে,, তবে আমার কাছে মুল্যবান। হ্যাঁ তার শাসন গুলো ভালোবাসা,, তার যত্ন গুলো ভালোবাসা তার আবদার গুলো ভালোবাসা। আসলে সে পুরাই একটা ভালোবাসা। সে জানে তার এই ভালোবাসা আমার ভালো লাগে।
গল্পের বিষয়:
গল্প