ব্যবহার

ব্যবহার
নতুন বউ হয়ে শশুড় বাড়ীতে পা রাখার পর পরই আমার প্রথম যেই কথাটি শুনতে হয়েছে সেটি হলো,চুন্নির ঘরের চুন্নি। কি অবাক হচ্ছেন? তবে চলুন মূল ঘটনায়। আমি যখন কনের সাজে আমার শশুড় বাড়ীতে প্রথম পা রাখি,ঠিক তখনই আমাকে বরণ করতে কে যেন এক চামচ চিনি এনে মুখের সামনে ধরেন। আমি সামান্য টুকু মুখে নিতেই সে আমার মুখে আস্ত চিনি পুড়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,পুরো টুকু খাস না কেন চুন্নির ঘরের চুন্নি?সব টুকু মুখে নে। নইলে মুখ দিয়ে যে মধুর কথা বের হবেনা।
আমি সেদিন মাত্রাতিরিক্ত হতাশ হই এই গালিটা শুনে।তাও আবার আমার মাকে তুলে গালি। বিয়ের পরের দিন সকাল সকাল বর বল্লো,যাও আমার মা ভাবীকে হেল্প করে আসো। মনে মনে ভাবলাম,বিয়ে হতে না হতেই এই অবস্থা। গেলাম শাশুড়ি মায়ের কাছে,গিয়ে বললাম মা কিছু করা লাগবে? তিনি আমাকে মিষ্টি কুমড়া ভাজি কাটতে বললেন। বাবার বাড়ীতে কোন কাজ করিনি আমি,কাটাকাটির ধারেকাছেও যাইনি তাই জানাও নেই কিভাবে কি কাটে। মাকে বললাম,কিভাবে কাটবো একটু বলে দিবেন? সে বললেন, তোমার মা কি শুধু গিলতেও শিখিয়েছেন? কিছুই কি পারেনা তোমার মা? খুব আঘাত পেয়েছিলাম সেদিন তার কথায়। দুপুরে যখন সবার সাথে খেতে বসি তখন আমার শশুড় আমাকে বললেন, সবজি নে। আমি আসলে সবজি খাইনা।(নিরামিষ) তাই বললাম,বাবা আমি অন্য কিছু দিয়ে খেয়ে নিবো। সবজি আমি আসলে খাইনা। তিনি আমাকে বললেন, বান্দির বাচ্চা খেয়ে দেখ আগে। সব খাওয়া শিখা লাগে। মন টা খুব খারাপ হয়ে গেলো।
এ বাড়ীতে সবাই শুধু গালাগাল করে।মা তুলে কথা বলে।অথচ আমার বাসায় কেউ এমন ভাবে কথা বলেনা কোন দিন। বিকেল বেলা আমার বরের কিছু কাজিন বোনেরা আসলো আমাকে দেখতে, রুমে যখন ঢুকবে তখন কিছু বিশ্রি গালি দিয়ে আমাকে সম্বোধন করে হাসতে হাসতে ঢুকলো রুমে। আমার তখন শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো ঠাস করে এক এক করে চর বসিয়ে সব কয়টার গালে। কিন্তু আমি নিরুপায়। সব সহ্য করতে হলো। দিন যাচ্ছে আর আমি বুঝতে লাগলাম,এই বাড়ীর মানুষ গুলো আসলে আর সবার মত না। এরা গালি গুলো শখের বশে দেয়। এদের কাছে গালি দেয়া মানেই রসের ডাক। কথায় কথায় গালি দেয়া এদের নেশা। মুখের বুলি হয়ে গেছে এদের। এরা একে অপরের সাথে কথা বলার সময় সবাই গালি ব্যবহার করেন। ভালো কথা হোক বা মন্দ কথা।
শুধু মাত্র আমার বর আর আমার জা ছাড়া সবাই একই ধারার। তাই আমি ভাবতে লাগলাম কিভাবে এদের ঠিক করা যায়। এরপর থেকে শাশুড়ি আর শশুড়ের সাথে খুব ভালো ব্যবহার শুরু করলাম। তারা গালাগাল দিলে আমি আরো ভালো ব্যবহার করতাম। আর শুধু বলতাম,আল্লাহ্‌ তায়ালা নিজ নামে না ডেকে অন্য নামে ডাকলে,বাজে নামে ডাকলে নারাজ হন। এরপর থেকে আমার কাজিন ননদ ননাস রা আমাকে গালি দিয়ে ডাক দেয়ার আগেই আমি তাদের বলা শুরু করলাম, আপু ভালো আছেন? শরীর কেমন? খেয়েছেন? আসেন খাওয়াদাওয়া করি। তারা কিছু বলার আগেই আমি কথা বলা শুরু করলাম। আর তারা যত খারাপ ব্যবহার করতো আমার সাথে আমি সবার সাথে তার চেয়ে কয়েক গুণ ভালো ব্যবহার করা শুরু করলাম। তা হোক আমার শাশুড়ি,হোক আমার শশুড় বা ননদ ননাস। প্রায় এক মাস পর বিশ্বাস করবেন না, তারা টোটালি পরিবর্তন হয়ে গেছে।
এখন তারা আমার সাথে কথা বলার সময় কোন গালি ব্যবহার করেন না। আর ননদ ননাস রা আসলেই হয় বোন বলে কথা বলে নয়তো ভাবী বলে কথা বলে। কেমন আছি,খাওয়া দাওয়া করি যেন ঠিক মত এসব কথাই বলে। আর আগে তারা ভাবী বা বোনের পরিবর্তে গালি দিয়ে ডাকতো। আসলে কি জানেন, আপনি ভালো তো সব ভালো। আমি নিজে যদি সেদিন তাদের সাথে তাল মিলিয়ে গালাগাল করে কথা বলতাম,দেখা যেতো ভবিষ্যৎ এ আমার বাচ্চাকাচ্চারাও এসবই শিখতো আমার থেকে। বরং আমি আমার ভালো ব্যবহার দিয়েই তাদের খারাপ আচরণ গুলোকে রোধ করতে পেরেছি। তারা ভেবেছেনহয়তো,এই মেয়েটার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করি অথচ মেয়েটা একটা খারাপ কথা উচ্চারণ করেনা।হয়তো তারা ভেতর ভেতর অনুতপ্তও হয়েছেন। মনে রাখবেন,আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয় বহন করে। আপনার উত্তম ব্যবহার দ্বারাই আপনি পারবেন একদিন মানুষকে সঠিক পথে আনতে।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত