এপিটাফ

এপিটাফ
অফিসে যাবার আগে ইবনাতের দিকে একবার তাকাঁলাম। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে শাড়ির আচল হাতের মধ্যে মুষ্টিময় করে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে ওকে আমার পুতুল মনে হয়। যে পুতুলের মনে কোন শব্দ থাকে না, থাকে না আবদার, আশা, আকাঙ্খা, ইচ্ছা। কিন্তু ইবনাতের কিছু ইচ্ছা রয়েছে আমার নিকট। দরজার কাছে গিয়ে আমি আরেকটা বার ওর দিকে তাকাঁলাম তারপর বললাম….
“তুমি কি সত্যিই ডিভোর্স চাচ্ছো?
ও চুপ করে থেকে শাড়ির আচলের কোনা হাতের আঙ্গুলের মাঝে পেচিয়ে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সুচক ইশরা দিল। ওর ইশারাটা যেন আমাকে বলছিল আর কত? মুক্তি দিতে চাও না তোমার রাজ্য থেকে? তোমার শহরে আমার কোন আলো নেই, যে শহরে আলো নেই সে শহরে একা আধাঁরের মাঝে আমি নিশ্বাস কি করে নিব? আমার কি আলোর মাঝে হারাতে ইচ্ছে করে না? বলো তোমার শহরে আছে কি সেই আলো? আমি জোড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। কাধের ব্যাগটা ঠিক করে দরজার বাহিরে গিয়ে বললাম ”দরজাটা লাগিয়ে দাও। আজকে আসতে একটু লেইট হতে পারে। অফিস শেষে উকিলের কাছে যাব। সব কিছু ঠিকঠাক করতে হবে। চিন্তার কোন কারন নেই। ”আমি চিন্তা করি না। চিন্তা তো করো তুমি। তুমি স্বাভাবিক হও। তাছাড়া তুমি জানোই আমার সম্পর্কে।
আমি আর কিছু না বলে চুপ করে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। জীবনের রংগুলা কত বিচিত্র রকমের। কারো কারো জীবনে পারফেক্টলি হয়ে রং ফুটে ওঠে না। আর ওঠলেও এই পৃথিবীর হাওয়া বাতাসে খুব শিঘ্রই সৌন্দর্যের রুপটা বিলিন হতে সময় নেয় না। যদিও মানুষ আবার ঐ রং এর উপর রং লাগায়। গেটের কাছে যেতেই শব্দ শুনতে পেলাম। পিছনে ফিরে তিনতলা জানালাটার দিকে তাকালাম। তিনতলা জানালাটার মাঝে ইবনাতের উপস্তিতি খুব বেশি। ওকে যখন হতাশা দেখি বা মন খারাপ দেখি তখন এই বারান্দার জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে। কখনো চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। রাস্তার ওপারে একটা শিউলি ফুলের গাছ আছে। ভোর বেলা উঠলে প্রায় দেখা যায় কয়েকটা ছেলে মেয়েকে ফুল কুড়াতে। শব্দটা আবার কানে এসে লাগলো ”দাঁড়াও যেও না। আমি আসছি।
আমি ওর আসার অপেক্ষায় রইলাম। হঠাৎ করে আবার কেন ডাকলো বুঝলাম না। মানুষের সবকিছুতেই সব বুঝতে নেই। কিছু কিছু বিষয়ে না বুঝাই আমি মনে করি শ্রেয়। হাত ঘড়িটার দিকে তাকালাম, টিকটিক করে চলছে। একটা ব্যাপারকি এই একটা জিনিস যে কিনা কারো কথা, কারো জন্য না ভেবে নিজের মতো চলতে থাকে। ঘড়ি থেকে চোখ উপরে তুলতেই ও আমার নিকট লাঞ্চের টিফিন বাটিটা বাড়িয়ে বললো…
”বলেছিলাম না আমি ঠিক আছি। তুমি ঠিক নেই। তোমার স্বাভাবিক হওয়া দরকার। তুমি বিষয়টা মেনে নিতে পারছো না। তুমি ঘোরে আছো। দেখেছো ঘোরের কারনে লাঞ্চ নিতে ভুলে গেছো। এত ভুলো মন হলে চলে? চুপ করে ইবনাতের দিকে তাকিয়ে থাকলাম । দুজন দু রাস্তার বিপরীত চললেও এই মেয়েটা আমার খাবারের দিকে খুব যত্নশীল। আমি লাঞ্চে এর বাটিটা ব্যাগে নিয়ে বললাম ”সব কিছু ভুললেও তোমার ডিভোর্সের কথাটা ভুলবো না। উকিলের সাথে দেখা করেই আসবো। এইটা বলেই হাটা দিলাম। ওর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সাত মাস। চাকরির সুবাধে বিয়ের পর আমি ওকে আমার সাথে করে নিয়ে আসি। আব্বা আম্মার কাছেই রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু আম্মা আমার সাথেই পাঠিয়ে দিয়েছে। বলেছে ”ঢাকায় থাকিস, কি খাস , না খাস ঠিক নেই। বিয়ে করেছিস এখন থেকে বউ এর হাতের রান্না খাবি। বিয়ে করা মানেই বউ এর হাতের রান্না খাওয়া বুঝছিস? এখানে রেখে লাভ নেই। তোর সাথেই নিয়ে যা। তোর ভাই , ভাবী, আর মিনা তো আছেই।
আম্মার কথাই ওকে নিয়ে আসি। আগে ব্যাচেলর থাকতাম। একা মানুষ, একা বড় ঘর নিয়ে লাভ নেই। ঢাকায় এসে এই বাড়িটার তিনতলায় বাসা ভাড়া নিয়ে ইবনাতকে নিয়ে ওঠি। অবশ্য একদিকে আমার জন্য ভালো হয়েছিল বিষয়টা ভেবে যে, আব্বা আম্মা অন্তত এই বিষয়টা থেকে অজ্ঞত থাকবে। বাসর রাতে আমি রুমে ঢুকার সাথে সাথেই ও আমাকে বলেছিল ”আমি জানি আজকে কি রাত। এই রাতে শহর আর গ্রাম আলাদা থাকে না। এই রাতে শহর আর গ্রাম মিলে একটা নতুন শহর তৈরি হয়। আপনি চাইলে আমার মাঝে মিশে নতুন শহর তৈরি করতে পারেন, কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার সাথে নতুন শহর গড়ে তুলতে আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। কথাটা শুনেই আমি খানিকটা বাকরুদ্ধ অবস্থায় ছিলাম। ভাবলাম ও আমার সাথে ফান করছে। একটু স্বাভাবিক হয়ে হেসে বললাম..
”আই নো ম্যাম। আপনি জোক করছেন আমার সাথে।
” নো, আ’ম সিরিয়াস।
আমি খাটে বসে পরলাম। বাসর রাতে কোন মেয়ে এমন কথা বলতে পারে? বাসর রাতে মেয়েরা কত নার্ভাস থাকে। চুপ করে বসে থাকে। কিন্তু রুমে ঢুকার সাথে সাথেই কেন এই গুলা বলছে। আমাকে কি বিড়াল বানানোর চেষ্টা করছে? বোকা বানাতে চেষ্টা করছে? আমি কি বোকার মত দেখতে? কিছু বলতে যাব ঠিক তখনি ও ঘোমটা খুলে বললো…
”বিশ্বাস করুন এই বিয়েতে আমার মত ছিল না। এমনকি আপনাকে ঠকানোর কোন ইচ্ছাও আমার ছিল না। কয়েকবার ভেবেছিলামও আপনাকে বলার কিন্তু সাহস হয় নি। আব্বুর মুখের উপর আমি কোন কালেই না শব্দ উচ্চারন করি নি। না শব্দটার সাথে আব্বু জড়িত না। আর এই একটা মাত্র শব্দের মাঝেই আমি আটকে গিয়েছি। আটকে গিয়েছি আপনার শহরে। তবে এইটুকু নিশ্চিত থাকুন আপনার শহরে আমাকে কখনো আলো হয়ে জ্বলতে দেখবেন না। আমি কি বলবো কোন কথাই খুঁজে পেলাম না। একটু ইতস্তত হয়ে বললাম ”কাউকে ভালোবাসেন? ও মাথা দিয়ে হ্যা সূচক ইশারা দিল।
”আমাকে একটা বার বললেই পারতেন। আমাকে তো দ্বিধায় ফেলে দিলেন আর নিজেও মনের ভেতর পুড়ে পুড়ে ছাই হচ্ছেন কয়েকদিন পর আমাকেও আপনার সাথে পুড়াবেন। পালিয়ে গেলেন না কেন? ”চেয়েছিলাম কিন্তু ফয়সালের সাথে পালাতে পারি নি। পারি নি বললে ভুল হবে মায়েল জন্য পারি নি। পালানোর সময় বার বার মার চেহাড়াটা ভেসে আসছিল। আমার মা সহ্য করতে পারবে না এই ব্যাপারটা। বড়ই অদ্ভুত তাই না? মানুষ যা চায় তা কি পায়? সত্যিই কি পায়?
”এখন কি করতে বলছেন?
ও একটু চুপ করে রইলো। অনেক কিুছু হয়তো বলবে তার জন্য যেন একটু সময় নিচ্ছিলো যেটা ওর চুপ থাকা দেখেই আমি অুনমান করতে পারছিলাম। ওর চুপ থাকা যেন আরো বলছে নোনা স্বপ্নে ঘর বাধা যায় না, হালকা মৃদু বাতাসেই বালির মতন হাওয়ায় বিলিন হয়ে যায়, পরে রঙ্গিন সময়ে দিন শেষে একা একা শূন্য ঘরে ঢুকরে ঢুকরে হাউমাউ করে ক্রন্দনে চোখে জল ফেলতে হয়। ও কোন কথাই বললো না, না বলার ধরনটা আমি বেশ বুঝে নিলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম ”কপালে যা হবার তাই হয়েছে। কপালের লিখন কেউ বদলাতে পারে না। আমার আধাঁর ঘরে আপনাকে আলো ছড়াতে হবে না, বা আপনাকে কোন দিন জোর করবো না। আলোর প্রদীপটা তার জন্যই রেখে দিন। কথা দিচ্ছি আপনার প্রদীপের কাছেই আপনাকে পৌছে দিব, সেখানেই না হয় জ্বলে ওঠবেন। তবে আমাকে একটু সময় দিতে হবে। ভয়ের কিছু কারন নেই, আপনাকে স্পর্শ করে নতুন শহর গড়ার ইচ্ছাটুকুও দেখাবো না। ইবনাত খানিকটা মায়া মায়া চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকালো। ওর মায়াময় চোখ দুটি যেন আমাকে বলছে আপনার কথায় আমি পূর্ণ আস্তা রাখলাম। আপনি খুব ভাল একটা লোক। আমি হাসলাম। আমার হাসি দেখে হয়ত ও অবাক হয়েছে, হয়ত ভাবছে একটা মানুষ এই অবস্থায়ও কি করে হাসে?
ভাবনার জগৎ এ সব সময় থাকা মস্তিস্কের জন্য খুব একটা খারাপ দিক। ভাবনার জগৎ এর গন্ডি পেরিয়েই হঠাৎ কখন যে অফিসে আসলাম ঠিক বুঝতে পারছি না। ইদানিং বেশ বুঝতে পেরিছি আমার একটা রোগ হয়েছে। রোগটার নাম ঘোর। একটা মানুষ, অন্য একটা সুস্থ মানুষের মত খাওয়া, চলাফেরা, কাজ সব কিছুই করবে কিন্তু তার মস্তিস্ক এর মাঝে অন্য কিছু কাজ করবে, অন্য কিছু নিয়ে ভাবাবে। যেটা আমার মাঝে বিরাজ করছে। এই ঘোরের মধ্যেই কখন যে অফিসে চলে এসেছি ঠিক আন্দাজ করতে পারছি না। তবে রোগটার নাম জানি। রোগটার নাম ইবনাত। ওকে নিয়েই আামার ঘোর। অফিসে এসেই চোখ গেল তিয়ানার দিকে। আকাশী রঙ এর একটা শাড়ী পড়ে এসেছে। মেয়েটাকে শাড়ীতে খুব মানায়। চোখ গুলো তারা নিংড়ানো আলোর মত জ্বলতে থাকে। মনে হয় সেই তারা নিংড়ানো আলোর মাঝে নিজেকে বিসর্জন দিয়ে তলিয়ে দি তার ছায়ায়। কিন্তু পরিস্থিতি আর এই সমাজের কাছে আমি বাধা। যেন আমি জেল খানার কয়েদি, আমার হাতে শিকড় দিয়ে বেধে রেখেছে। তার চলাফেরার মাঝে আমি একটা গন্ধ পাই, ভালোবাসার গন্ধ। দিব্বি সেই গন্ধে আমার দিন কেটে যাবে। কেটে যাবে অনেক রাত। কিন্তু পারি না, কিচ্ছু পারি না আমি। আস্তে আস্তে হেটে ওর কাছে যেতেই ও বললো ”তোমার রাজ্যের রানীর মত লাগছে না আমায়?
আমি কিছু বললাম না। ও জানে আমার বিয়ে হয়েছে। আমি এখন অন্য কারো। অন্যকারো হওয়া সত্বেও ও আমার মাঝে ডুবে থাকে। আসলেই কি আমি অন্যকারো? ”কি হলো কি ভাবছো? ভয় নেই তোমার রাজ্যে ডুব দিলেও গভীরে যাব না জাহেদ। তোমার বউ আমার আস্ত রাখবে না। সেই গভীর থেকেও হিচড়ে টেনে তুলে আমার চুলের মঠোয় ধরে বলবে রাক্ষুসী কত বড় সাহস আমার সংসার ভাঙ্গিস? তোর একদিন কি আমার একদিন। হি হি হি। একটা বিষয় কি জানো? সে খুব ভাগ্যবতী তোমাকে পেয়েছে। এই যান্ত্রিক শহরে মানুষ গুলাও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। দেখোই না আমি কি বোকা নিজের ভালোলাগার কথাটাই বলতে পারি নি তোমাকে। যান্ত্রিকের মত শব্দহীন হয়ে বোবা হয়ে ছিলাম। ”তোমকে খুব সুন্দর লাগছে তিয়ানা।
ও একটু হাসলো। ওর হাসিটার মাঝে একধরনের মায়া আাছে। যে কেউ এমন ভাবে হাসতে পারে না। বিধাতা এই হাসির জন্য বিদ্যমান কিছু মানুষকেই সৃষ্টি করেছে, তার মধ্যে তিয়ানাকে আমি একজন মনে করি। হাসিটা থামিয়ে বললো ”তুমি বেশ ভালো ভাবে কথা ঘুড়াতে পারো জাহেদ। তুমি কি জানো এটা তোমার একটা বিশেষ গুন। সুন্দর তো লাগবেই আমি যে তোমার রাজ্যের রানী।
নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলাম। তিয়ানা হয়তো ভাবছে খুব খুশিতে দিন কাটছে আমার। বিয়ে করেছি, সংসার সাজিয়েছি, বউ পেয়েছি, বউ এর ভালোবাসায় ডুবে আছি। কিন্তু কেউ কি জানে আমার ভিতরকার কথা? আমার হৃদয়ের প্রতিটা শব্দের কথা? কি বলতে চায় আমার প্রতিটা শব্দ, কি বুঝাতে চায়? কেউ কি বুঝতে চেষ্টা করেছে? আমি কি এতই অভাগা? বিধাতা আমায় সব কিছু দিয়েও সঠিক নৌকাটা দেয় নি। যে নৌকায় ঝড় তুফান আসলেও তাকে নিয়ে একসাথে বিশাল নদী, সাগর পারি দিতে পারবো। আমি কি খুব সস্তা? ভালোবাসা আমাকে নিয়ে এমন করে খেলছে কেন?
আফজাল সাহেবের চেম্বারে ঢুকেই এদিক ওদিকটা বেশ ভাল করেই তাকালাম। মানুষ হিসেবে ভাল তবে সহজে হাত খরচ করে না। কিছু মানুষের সিগারেটের প্রতি অনেক নেশা থাকে। দিনে অন্তত দশ/বারোটা খায় বা অধিক। কিন্তু এই মানুষটা অন্যদের থেকেও ভিন্ন। ভিন্ন কথাটা খুব সহজে কাউকে বলা যায় না। ভিন্ন হতে হলে কিছু গুন অর্জন করতে হয়। পেশা উকিল হলেও এই মানুষটা কিপটা টাইপের এটাই তার গুন। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অর্ধেক খাবে আর বাকিটা রেখে দিবে পরে খাওয়ার জন্য। এত কিছু ভেবে কাজ নেই আমার কাজ হলেই চলে।
”তো আপনি জাহেদ সাহেব।
”আজ্ঞে হ্যাঁ।
”আমি শুনেছি আপনার সমস্যার কথা। আদনান সাহেব বলেছে। সব কিছু ভেবে চিন্তেই করছেন তো? আমি মাথা দিয়ে হ্যা সূচক ইশারা দিলাম। আদনানের মাধ্যমেই উনার কাছে আসি। আমি যে এলাকায় থাকি আদনান সে এলাকায় থাকে। উনি চশমাটা ঠিক করে বললো…
”কি জন্য দু জনে আলাদা হচ্ছেন জানতে পারি? ”আসলে এই যান্ত্রিক শহরে চলতে গেলে কত জনের সাথে সম্মুখীন হতে হয়। চলতে চলতে একটা মানুষ এক পর্যায়ে অনুভব করে তার এই চলার পথে একজন দরকার খুব দরকার। যে তার সব সময় পাশে থাকবে। তার হাসি কান্না ভাগ করে নিবে। কিন্তু চলার সঙ্গী পেলেও যখন একে ওপরের সাথে বনীবনা হয় না, এক সাথে থাকলেও কেন যেন মনে হয় কেউ পাশে নেই, একাকীত্বের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি তখনই মানুষ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। রাস্তা ভাগ করে নেয়। ” আই নো, বাট ট্রাই টো আন্ডারস্ট্যান্ড ইয়াঙ্গ ম্যান। এই বয়সে জীবনে কি এত বড় ধাক্কা খাওয়ার শক্তি আছে তোমার? ডোন্ট মাইন্ড, তুমি আমার ছোট হবে তাই তুমিই করেই বললাম। আমি একটু হাসলাম। আমার হাসি দেখে উনি একটু অবাক হয়েছে। একটু নেড়ে চড়ে ঠিক করে বসলাম তারপর উনাকে বললাম…
”আপনি কাগজপত্র সব তৈরি করা শুরু করে দিন। মিছে মিছে স্বপ্ন দেখার চেয়ে একা একা হাটাই ভালো। সেখানে কোন চিন্তা থাকবে না। থাকবে না হাহাকার। ”দেখো এটা আমার পেশা, এই পেশায় আমি কত কিছু দেখেছি। টাকার জন্য আমি মিথ্যেকে সত্য আর সত্যকে মিথ্যে বানাতে পারি। কি করবো বলো, না হলে তো পেট চলবে না। আমি কাজ আরম্ভ করতে পারি কোন ব্যাপার না, তুমি আরেকটা বার ভাবো। আরো একটু সময় নাও। তোমার চোখ আর চেহারা তো অন্য কথা বলে। তোমার চোখ তো বলছে না তুমি এটা চাচ্ছো। আর কিছুটা সময় নাও। দেখো কি হয়।
আমি উনাকে কাজ শুরু করেই দিতে বলি। ওখান থেকেই বেরিয়ে ফুটপাথের চায়ের টঙ্গে একটা চা খেলাম। আর ভাবতে লাগলাম আব্বাকে কি বলবো? আম্মাকে কি জবাব দিব? বলবো তোমাদের বউ অন্য ছেলের সাথে চলে গেছে এটা বলবো? আজকাল মাথায় কিছু আসে না আমার। সাড়ে দশটার নাগাত খাবার টেবিলে বসে আছি। আর ইবনাত আমার প্লেটে ভাত বেড়ে দিচ্ছে। গতকাল একটা ইলিশ মাছ এনেছিলাম। ইলিশ মাছ ইবনাতের পছন্দ। মানুষ মাত্র দুজন আমরা। একদিন বাজার করলে তিন চার দিন চলে যায়। আমি আবার কাটা যুক্ত মাছ খেতে পারি না। কিন্তু মাঝে মাঝে খেতে হয়। কাটা যুক্ত বলেই কি ইলিশ মাছ খাব না? আমার প্লেটে একটা ডিম দিয়ে বললো…
”তোমাকে মাছ দিব?
”হ্যা দিতে পারো।
”তুমি তো আবার কাটাওয়ালা মাছ খেতে পারো না। গতকাল তো খেতেই পারছিলে না।
আমি হাসলাম। গতকাল যখন কাটা বাছতে বাছতে আমার প্লেটের ভাত খাওয়া হচ্ছিল না। ইবনাত দেখে মুচকি মুচকি হাসছিল। তারপর ও কাটা বেছে দিয়েছিল। আমি বুঝলাম আমি কাটাযুক্ত মাছ খেতে পারি না বলে আজ ডিম সিদ্ধ করে পেয়াজ দিয়ে ভুনা করেছে আমার জন্য । আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখনি ও আমার প্লেটে মাছ দিয়ে বললো ”দেখি দাও বেছে দিচ্ছি। আমি চলে গেলে কি হবে তোমার কে জানে। শুনো আমি চলে গেলে খুব শিঘ্রই বিয়ে করে ফেলিও কেমন? আমি কিছু বললাম না। শুধু চুপ করে ওর কাটা বাছার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ওকে আমার খুব জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে তুমি কি সত্যিই বুঝো না, এই সাতটা মাসে আমি কত ভয়ঙ্কর ভাবে ভালোবেসেছি তোমায়। কত ভয়ঙ্কর ভাবে তোমার চোখে হারাতে চেয়েছি। তুমি কি জানো না এই সাতটা মাস তুমি একটু একটু করে কতটা ভালো লাগার জায়গা দখল করেছো আমার। তুমি কি অবুজ? আমি তো জানি চোখ দেখেই মেয়েরা বলে দিতে পারে একটা ছেলে কি বলতে চায়। মনটা কেমন করে যেন উঠলো। কাটা বাছতে বাছতে ও বললো ”গিয়েছিলে উকিলের কাছে?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। ও আবার বললো ”আসলে আমি চাই তুমিই আমাকে ডিভোর্স দাও। আমি চাইলে চলে যেতে পারতাম। কিন্তু তুমি আমার কাছ থেকে সময় নিয়েছিলে মনে আছে? আমি জানি আমি ডিভোর্স দিলে তুমি সয্য করতে পারবে না যা আমি উপলব্দি করতে পেরেছি। সেজন্যই আমি তোমাকে দিতে বলেছি। ও হ্যাঁ তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। ফয়সাল একটা চাকরি পেয়েছে। এইটা বলেই ও থামে। আমার চুপ থাকা দেখে ও আবার বলতে শুরু করলো..
” আরেকটা কথা বলার ছিল।
”বলো।
”আগামী সপ্তাহেই ফয়সাল আমাকে নিতে আসবে স্টেশনে। ওর সাথে কথা হয়েছে। তাই বলছিলাম কাজটা খুব দ্রুত করার।
আমার বুকটা যেন ধুক করে উঠলো। বুকের ভিতরে যেন যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ মানেই গোলা বারুত, চারদিকে অগ্নি। সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সর্বভুকের ছোয়ায়। ঠিক যেন এমন সর্বভুক আমার দেহে জ্বলতে শুরু করলো। এই তো আর কিছু দিন পর সপ্তাহটা হাতের সন্নিকটে চলে আসবে। আর কিছুদিন পরেই ব্যস্ত শহরে আমার সময় থমকে যাবে। থমকে যাবে আমার হৃদপিন্ড। একা একা হাটবো। আবার একা হয়ে যাবো। একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। তারপর মুখে চাপা হাসি দিয়ে বললাম ”ডন্ট ওরি। আমি আছি তো। আমি তো তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমার প্রদীপের মাঝেই তোমোকে জ্বলতে হাত বাড়িয়ে দিব।
আমি চিন্তাই পরে গেলাম, দিন গুনতে থাকলাম। একদিন, দুদিন, দেখতে দেখতে ছয় ছয়টা দিন পার হয়ে যায়। এদিকে তিয়ানা প্রতি দিনকের মতো তার ভালোবাসার গন্ধ বিচরন করে। আচ্ছা যখন ইবনাতের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হইনি, তার আগে একটা বার কি তিয়ানা পছন্দের কথা বলতে পারতো না? আমি যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, এর আগে কেন বললে না? বিয়ে হওয়ার পর কেন বলছো? ও বলেছিল বোকা কোথাকার তুমি জানো না, আমরা মেয়ে জাতি। চোখের ইশারা বুঝতে পারো নি? জানোই তো মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফুঠে না… আমি চেহারায় একটা বিরক্তকর ছাপ এনে বলেছিলাম স্টুপিড কোথাকার। ও হেসে উঠেছিল। তারপর বলেছিল.. আসলেই আমি একটা স্টুপিড। দেখোই না। তুমি বিয়ে করেছো, এখন তোমার থেকে আমার দুরুত্ব বজায় রাখা উচিৎ। কিন্তু আমি কি করছি? দিন যতই যাচ্ছে ততই তোমার মাঝে হারাতে ইচ্ছে করছে, আরো বেশি মিশছি তোমার সহিত। আমি স্টুপিড না, আমি একটা বেহাইয়া। হা হা হা।
সেই দিনটা আমার হাতের মুঠোয় এসে পৌছে গেছে। পৌছে গেছে আমার একা হওয়ার দিন। আমি সারা রাত ঘুমোতে পারি নি। সারা রাত ইবনাতের কথা ভেবেছি। রাতে একবার বলতে চেয়েছিলাম.. তুমি থাকতে পারবে আমাকে ছাড়া। এই সাতটা মাসে কি একবারো আমার প্রতি মায়া তৈরি হয় নি? তৈরি হয় নি আমার প্রতি একটুও ভালোবাসা? ইবনাত সেঁজে বসে আছে। আজকে ওকে দিয়ে আসার কথা ফয়সালের কাছে। একটু পরেই ষ্টেশনের উদ্দশ্যে রওনা দিব। ষ্টেশনে এসেই সেই ভাগ্যবান ফয়সালের সাথে দেখা হলো। ও আমাকে দেখে একটু বিভ্রান্ততে পরে গেল। ওর কাছে যেতেই ইবনাত বললো ”জাহেদ, এ হলো ফয়সাল যার কথা তোমাকে বলেছিলাম। আর ফয়সাল এ হলো জাহেদ। যে তোমার ইবনাতকে সাতটা মাস আগলে রেখেছে। আমি হাসলাম। ফয়সাল আমার সাথে হ্যান্ডশেইক করতে করতে বললো..
”আপনার কথা অনেক শুনেছি মিঃ ইবনাতের মুখে। বড় অদ্ভুত আপনি। আমি ফার্স্ট এমন একটা মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলাম যে কিনা তার ওয়াইফ কে তার প্রেমিকার হাতে তুলে দিচ্ছে।
”কি করবো বলেন, কপালের লিখন তো কেউ বদলাতে পারে না।
এই কথা সেই কথা বলতে বলতে ট্রেন চলে আসে। কথা বলতে বলতে নিজেকে নিজেই একটু পর পর শান্তনা দিচ্ছিলাম কুল জাহেদ কুল। ট্রেনে উঠার পর ওদের বিদায় দিয়ে দিলাম। আর আপন করে নিলাম একাকীত্বকে।ভালোবাসা তুমি বড় নিষ্ঠুর। ট্রেনটা ছাড়ার আওয়াজ দেয়। আস্তে আস্তে চলতে শুরু করে। আমি চেয়ে চেয়ে তাকিয়ে থাকলাম। যাওয়ার সময় ইবনাত বলে গেল ডিভোর্স এর কাজ শেষ হলে ওকে যেন বলি। ও সিগনেচার করে দিয়ে যাবে। আকাশটা কি পরিষ্কার , প্রকৃতির হাওয়ার সহিত তাল মিলিয়ে ট্রেনের গতি বাড়তে থাকে। আকাশ পরিষ্কার থাকলেও আমার মনটা কালো আধাঁরে ঢেকে গেছে।
আমার পুরো শরীর টা যেন অবশ হয়ে গেল। আমার ভাল্লাগছেনা কিচ্ছু ভাল্লাগছে না। কি ভেবে যেন আমি দৌড়াতে থাকলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে ট্রেনে উঠে ওদের কাছে গেলাম। ওরা দুজনেই অবাক করা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকলো। আমি হাপাতে থাকলাম। ইবনাত বললো…কি হয়েছে? আমি হাপাতে হাপাতে বললাম.. শেষবারের মত আরেকটু সময় তোমার ছায়ার আশে পাশে থাকি? প্রমিজ সামনের ষ্টেশনে নেমে যাব। কি ফয়সাল সাহেব একেবারের জন্যই তো নিয়ে যাচ্ছেন আর একটু সময় থাকতে দিবেন না? ফয়সাল সাহেব মাথা দিয়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা দিল তবে কিছু বললো না। আমি সময় গুনতে থাকলাম প্রত্যেকটা সেকেন্ড আমার নিকট অনেক মূল্যবান। আমি চুপ করে ইবনাতের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। না চোখ সরানো যাবে না। সামনের ষ্টেশনেই নেমে যেতে হবে ওকে আর আমার আশে পাশে পাবো না। একটুর জন্যও চোখ সরানো যাবে না।
ট্রেন চলছে ঝকঝকা ঝক ঝক। আমার চোখের কোনে পানি জমতে শুরু করেছে। আমি বুঝিনা যে মেয়ে আমার সাথে থাকতে চায় না। সে মেয়ের জন্য আমার চোখে পানি আসবে কেন? কেন এই মেয়ের প্রতি আমার এত মায়া তৈরি হবে? কেন ভালোবাসা জন্মামাবে? আমি কি ভেসে আসছি? ট্রেন চলছে আার কিছুক্ষন পর পর শব্দ শুনিয়ে দিচ্ছে আমায়। ট্রেনটাও বড্ড খেলা করছে আমার সাথে। আমি কি খেলার পাত্র। যে কেউ আমার সাথে খেলতে চায়। তবুও আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকলাম ইবনাতের দিকে। ট্রেনটা শব্দ করে আস্তে আস্তে চলতে থাকে। ষ্টেশন চলে এসেছে। না এবার আর কোন অযুহাত দেওয়া যাবে না, দেখানো যাবে না কোন কারন। ট্রেনটা থামতেই আমি নেমে পড়লাম। ইবনাত বলতে থাকলো..নিজের প্রতি খেয়াল রেখো। ঠিক মত খাবে। ঠিক টাইমে অফিস থেকে আসবে। আমি মনে মনে বললাম কেন এত মায়া দেখাচ্ছো আবার? আমি হাসি দিয়ে নেমে গেলাম।
ট্রেন ছেড়ে দেয়। আমিও হাটতে থাকি আনমনে। শুনেছি মানুষ যখন রোমান্টিক মুডে থাকে তখন রোমান্টিক গান শুনে আর যখন যন্ত্রনায় বা কষ্ট অনুভব করে তখন একাকীত্বের গান শুনে। আর যখন সেই ফিলিংসে গান শুনা হয় তখন মনে হয় গান টা তার জন্যই লিখা হয়েছে তার জন্যেই গাওয়া হয়েছে। আমিও ব্যতিক্রম নই। শার্টের কলার টা ঠিক করে হাটতে হাটতে গুন গুন করে আর্টসেলের গান গাইতে থাকলাম যেন গানটা আমার জন্যই লিখা হয়েছে। গানটার সাথে আমার কত মিল আমার পথ চলা আমার পথে যেন বেলা শেষে আকাশ কার মোহে আমার স্বপ্ন আমার সাথে যেন স্বপ্ন ফিরে আসে স্বপ্ন হয়ে খুঁজে পায় জীবনের তীর জীবনকে কোন স্বপ্ন ভেবে। আমি কার আশাতে ছুটে চলি পথে পথে যেন কার মায়াতে বাধা পড়েছে জীবন যে কত সুর কল্পনা কত মিথ্যে প্রলোভন কষ্টের প্রতিটিক্ষণ শোনায় কার আহ্বান….
সারাদিন বাহিরেই কাটিয়ে দি এপথ ওপথ চলতে। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। ক্লান্ত শরীর নিয়ে তিয়ানার বাসায় গেলাম। দরজার ভিতরে ঢুকতেই আমার জগৎট আরেকবার থমকে গেল। কি হচ্ছে কি আমার সাথে। ওকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে। সবার সামনে ও সেজে বসে নাস্তার প্লেট সবার হাতে হাতে দিচ্ছে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। ও আমাকে দেখেই একটু কেমন করে দেখলো। ওর তাকানোর ভঙ্গিমা দেখে বুঝলাম ওর চোখ দুটো আমাকে বলছে, কি করবো বলো। জীবনে তো একজন না একজনকে গ্রহণ করতে হবে। তোমার সাথে হয়ত আমার জুটি কপালে লিখা ছিল না। আমি সাথে সাথেই বের হয়ে আসলাম। একটু পর তিয়ানার ফোন আসে। আমি রিসিভ না করে সুইচ অফ করে দিলাম। আমি হাসলাম। আকাশের দিকে তাকালাম। উপরে ঐ যে সবার মালিক, বিধাতা আছে তাঁর দিকে তাঁকালাম, না তাঁকে দেখা যায় না। আমার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। না ছেলেদের কান্না করতে নেই।
পানি টুকু মুছে একটু হাসলাম। বিধাতাকে আমার জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছে করছে.. খুব ভাল খেলা খেলছো তুমি আমার সাথে। খেলে মজা পাচ্ছো? আমিও দেখবো এই খেলা কতক্ষন চলে আমার সাথে। আর কিছু না ভেবে চলে আসলাম। একটা ঘুম দিতে হবে। অনেক দিন আমি ঘুমাই না। আমার চোখ থেকে নিদ্রা চলে গেছে। আজ নিদ্রায় যাব আমি। কারো জন্য ভাবতে হবে না, কারো মায়ায় পড়তে হবে না। দরজার খুলতে গিয়ে দেখি দরজা আগে খোলা। আমি কি দরজা খোলা রেখেই বের হয়ে গিয়েছিলাম? আজকাল মাথা ঠিক নেই । হতেও পারে। দরজার ভিতরে গিয়ে আমি শেষ বারের মত থমকে গেলাম। চমকে উঠি আমি। খুব রাগ উঠছিল আমার। আস্তে আস্তে ইবনাতের কাছে গেলাম। ও চুপ করে সোফায় বসে আছে। ও আমার কাছে যাওয়া দেখে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আমি বললাম ”তুতুতুমি চলে এলে যে? ও চুপ করে রইলো। আমি আবার বললাম ”তোমরা কি শুরু করলে আমাকে নিয়ে, আমি কি মানুষ না?
ও কান্না করতে থাকলো। এবার আমি শান্ত হয়ে ওর কান্না দেখতে লাগলাম। তারপর ও যা বললো তার সার সংক্ষেপ এই যে.. ইবনাত ফয়সালকে জিজ্ঞাস করেছিল .. ফয়সাল তোমাকে একটা কথা বলবো। আমি আর জাহেদ সাতটা মাস এক সাথে থেকেছি। তোমার কি মনে হয় না জাহেদ আমাকে ছুয়ে দেখে নি। আমার সাথে জাহেদের শারিরিক মিলন হয় নি একবারো। এইগুলা তোমার একবারো মনে হয় নি? ফয়সাল বলেছিল .. না তুমি তো বলেছো.. জাহেদ তোমাকে ছুয়েও দেখে নি। তারপর ইবনাত বললো… আমি তোমার কাছে একটা কথা লুকিয়েছি। জাহেদের সাথে আমার শারিরিক মিলন হয়েছে। একটা ঘরে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে সাতটা মাস থেকেছে এ থেকে তুমি কিছু বুঝতে পারো না? ফয়সাল চুপ করে নাকি কিছুক্ষন ছিল তারপর ইতস্তত করে বললো… ইবনাত তোমার সাথে যাওয়াটা মনে হয় সুন্দর দেখায় না। ইবনাত বললো.. কি বলতে চাচ্ছো তুমি?… মানে একদম পরিষ্কার কথা… তোমাকে নিয়ে নতুন সংসার গড়া আমার পক্ষে পসিবল না।
ইবনাত এখনো কান্না করছে। আমি ওর কাছে গেলাম। আমি জানি না ইবনাত এই কথাটা কেন বলেছে। অথচ ওর সাথে আমার শারিরিক মিলনই হয় নি। আমি ওকে বললাম কেন বলেছো এই কথাটা? ও চোখের জল টুকু মুছে বললো ”তুমি যখন আমাকে বিদায় দিয়েছিলে, তারপর আবার ট্রেনে উঠেছিলে আর যতক্ষন ছিলে ততক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে আমি তোমার চোখের ভাষা গুলো সব পড়েছি, কি বলতে চেয়েছিল তোমার চোখ। তুমি যখন নেমে গেলে বিশ্বাস করো আমার একটুও ভালো লাগছিল না। আমার মনে হচ্ছিল আমি অন্যায় করছি তোমার সাথে। খুব খারাপ কিছু করতে যাচ্ছি। তোমার প্রতি এক অদ্ভুত ভালোবাসা জন্মাতে লাগলো… তাই ফয়সালকে এই গুলা বললাম। আর ফয়সাল বিশ্বাস করে নিল। মানুষ বড় অদ্ভুত তাই না?
আমি চুপ করে রইলাম। ওর আরো কাছে গেলাম। ইচ্ছে করছে ওকে খুব জড়িয়ে ধরি। ইচ্ছে করছিল বলতে, আমাকে নিঃসঙ্গ করে আধারের মাঝে ফেলে যাবে নাতো? কিন্তু তার আগেই ইবনাত বললো “আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে? আমি খুব ভুল করতে যাচ্ছিলাম এমন ভালোবাসা ফেলে অন্য কোথাও আলো ছড়াতে। অতচ সাতটা মাস সত্যিকারের আলোটাই আমার সামনে ছিল।” আমি আর কিছু না ভেবে ওকে জড়িয়ে নিলাম। জড়িয়ে ধরার পর আমার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। আমি ওক জড়িয়ে নিয়েই মেসেজ চেক করলাম তাতে লিখা…
“এতো বোকা হওয়া ঠিক না জাহেদ সাহেব। ইবনাত যখন আপনার আর ওর শারিরিক বিষয়ে বললো তখনি আমি বুঝতে পারলাম ও আপনাকে কতটা ভালোবাসতে শুরু করেছে। ও যা বলেছে আমি একটুও বিশ্বাস করিনি। তাই আপনার কাছে দিয়ে দিলাম। খুব যত্নে রাখবেন আর ভালো থাকবেন। আমি ওকে মেসেজের কিছুই বুঝতে দেইনা। এতো বুঝার কি দরকার। আমি ওকে এখনো জড়িয়ে আছি। এইভাবেই যে জড়িয়ে থাকতে চাই আজীবন…
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত