‘তোকে আমি কিডন্যাপ করে বিয়ে করবো দেখিস’ কথাটা বললো মিম রাফসানের দিকে তাকিয়ে। হাবাগোবা রাফসান মাথায় একগাদা তেল দিয়ে চোখে চশমা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিমের সামনে। রোজ এক’ই স্টাইল করে ভার্সিটির বারান্দায় এসে দাঁড়ায় সে। মিম খটখটায় রাফসানের মনের দরজা, কখনো সারা পাবেনা জেনেও রোজ একটু কথা বলার জন্য ছুটে আসে মিম। রাফসান নিরূপায়। ওর কাউকে ভালোবাসার অধিকার নাই। অধিকার নাই কারো মনে আশা জাগাবার। নিজের ভুলের কারনে সে সবকিছু হারিয়ে আজ শূন্য মনে দাঁড়িয়ে তেপান্তরে। সে চায় না এ মনে অন্য কেউ জায়গা করে নিক। সাজানো গোছানো জীবন যেন নিমিষেই শেষ করে চলে গেছে তার অতীত।
‘আচ্ছা আপু আপনি আমার সাথেই এমন কেন করেন বলেন তো? আদৌও কি আমি আপনার যোগ্য?’
‘শালা খচ্চর তুই আমাকে আপু ডাকছিস কোন সাহসে?’ বলেই তেড়ে আসছিল মিম রাফসানের দিকে, রাগান্বিত চোখে যেন রাফসানকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। মিমের বান্ধবীরা ওকে আটকে রাখে।
‘তুই যদি আমাকে দ্বিতীয় বার আপু ডাকিস না তোকে আমি কিমা বানিয়ে রোস্ট করে খেয়ে ফেলবো’
রাফসান ভয় না পেয়েও ভয় পাওয়ার অভিনয় করে যাচ্ছে, নিচু স্বর বললো
‘ঠিক আছে আর বলব না’
‘গুড বয়’
রাফসান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কোনো কথাই বলছে না মিমের শরীর জ্বলে যাচ্ছে। অনেকটা সময় পর পাশ কাটিয়ে চলে যায় রাফসান মিম ও কিছু বলেনা। ছেলেটা অনেক চুপচাপ। কারো সাথে তেমন কথাও বলে না। রোজ ভার্সিটি এসে নিজেকে আলাদা মনে করে সে। স্টাইলিশ মানুষদের মাঝে শুধু সেই একজন একসাথে তিনটে জামা পরে ভার্সিটি আসে।
প্রথমে ধূসর কালারের একটা গেঞ্জি তারপর কালো একটা শার্ট তার উপর আবছা নীল রঙের শার্ট। সেদিন গেটের দারোয়ান তাকে পাগল বলে তাড়িয়ে দিতে গিয়ে দেখে রাফসানকে, দারোয়ান তখন থমকে গেছিলো। রাফসানের হাত ধরে ক্ষমা ও চাইছে, তখন সে চুপচাপ ছিল। কাউকেই কিছু বলেনি। কেননা তার পরিচয় এ সমাজের ছোট থেকে বৃদ্ধ নাম শুনলেই থরথর করে কাঁপতে শুরু করে আতংক সে মৃত্যু আতংক। দারোয়ান আর কখনো রাফসানের আশেপাশে দেখা দেয় না বরং তাকে দেখা মাত্র দাঁড়িয়ে যায়। যথা সম্ভব দূরে থেকেই নজরে রাখে। সে চায়না এ ভার্সিটির কোনো বখাটে ছেলে তার হাতে জীবন হারাক। আজ প্রায় তিনবছর রাফসান এ ভার্সিটিতে আছে। কারো কখনো ক্ষতি হয়নি, কোনো বখাটের রাতের অন্ধকারে হাত পা ভাঙেনি, কেউ কখনো গুম হয়নি, দারোয়ান ভাবছে এ রাফসান সে রাফু নয় যাকে সে ভাবছে। আজও রাফসান ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকছে মিম ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
‘এইযে মিস্টার হাবলু এইদিকে’
‘জ্বি বলেন।’
‘ফুসকা খাবেন?’
‘ওটা মেয়েদের খাবার’
‘লাখো ছেলেরা খাচ্ছে এটা তাদের প্রেমিকার সাথে’
‘আপনি তো আমার প্রেমিকা নন’
‘হতে কতক্ষণ? আর নাহয় হয়ে যাব’
‘অনেকক্ষণ’
‘কতক্ষণ? ‘
‘তিনটে বছর’
‘হুহ্! অবশ্য এ তিনবছরে ভালোবাসি বলা কিংবা কাছে জাওয়া হয়নি শুধু মুচকি হেসে কথা বলা পর্যন্ত এসেছেন জনাব। যদি আপনার প্রেমিকা হতে আরও তিনবছর এমন করে থাকতে হয় তাও ঠিক আছে।’
‘দেখেন আপনি জেদি। তার মানে এই নয় যে জোর করে ভালোবাসা পাবেন’
‘আমি কখনোই জোর করছি না, তোকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করে ফেলব তখন বলিস জোর করে বিয়ে করছি’
‘সরি কিডন্যাপ আমি হতে পারব না। আমার জীবনে অনেক কিছু দেখার বাকি আছে। তারচেয়ে বরং ফুসকা খেয়ে আসি?’
‘চলেন ভালো ছেলের মত’
‘আর হ্যাঁ একটা কথা বলেন’
‘জ্বি কি কথা?’
‘আপনি রোজ এই তিনটে শার্ট কেনো পড়ে আসেন?’ আর কোনো শার্ট নাই?’
‘আমার এই কালার্র তিনটে খুব পছন্দের। আর এতে থাকা মানুষ গুলো ও’
‘এই এক শার্টে মানুষ থাকে? তিনবছর থেকে?’
‘আপনাকে এর আগেও বলছি এই তিন কালার্রের মোট ১৫০ টি শার্ট আছে আর গেঞ্জি ও।’
‘আচ্ছা এ তিনটে শার্টে কি এমন আছে?’
‘ওগুলো সিক্রেট থাকুক,
চলেন ফুসকা খেয়ে আসি’ দুজনে ফুসকার দোকানের সামনে বসে আছে। ঝালঝাল করে ফুসকার অর্ডার করে মিম। এদিকে রাজ আসছে আজ ভার্সিটিতে। রাজ মিমকে পছন্দ করে, মিম যে রাফসানকে পছন্দ করে সেটাও রাজ জানে। তবুও এমপি বাবার ক্ষমতা দেখিয়ে বখাটে ছেলেদের সাথে নিয়ে দলবল বেঁধে নিজেকে ডন ভাবে।
‘এই ওঠ এখান থেকে’ বলেই রাফসানের হাতের ফুসকার প্লেট ফেলে দেয় রাজের চ্যালা হাসু। চুপেচুপে তেল ভর্তি চুল ধরে টেনে তুলে রাজের সামনে নিয়ে আসে। রাজ তার গাড়ির সামনের দিকে বসে ছিল। ওকে দেখেই রাজ ওর সামনে নেমে আসে। ‘বোকা** ভাব নিয়ে তুই আমার মিমকে আলাদা করে দিতে চাস?’ ‘দেখেন ভাই আমি কিছু করিনি।’ বলতে না বলতেই রাজ কশিয়ে এক আঘাত করে রাফসানের গালে, ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরছে। মিম দেখতে পারছে না এ দৃশ্য। রাজের সামনে এসে বলে ‘দেখ রাজ রাফসানের কোনো দোষ নাই। আমি ওকে ভালোবাসি ও নয়’ রাজ রাগান্বিত চোখে বলে উঠল,
‘কি বললে? হারামিরবাচ্চা তোমাকে পছন্দ করে না? হা হা ওর আজ জীবন শেষ। সবকিছু তো আমি জেনেই আসছি আজ তোর জন্যই ও এ ভার্সিটিতে এসেছে। আগে কী করত জানিনি এ টুটুই যথেষ্ট’ বলেই রাজ রাফসানের শরীরের উপরের দুটো শার্ট টেনে ছিড়ে ফেলে। বেরিয়ে আসে ধূসর রঙের গেঞ্জিটা। হা করে তাকিয়ে থাকে মিম। গেঞ্জির উপরে মিমের নিজ হাতে আর্ট করা একটা মিমের ছবি প্রিন্ট করা। রাফসান কিছু বলছে না, চুপচাপ হাটুগেরে বসে আছে। রাজ রাফসানকে ছেড়ে মিমের দিকে যাচ্ছে। আর বলছে.. “তোকে বলছিলাম আমি তোকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার মাঝে অন্য কেউ যদি আসে তাহলে কি হবে জানিস ই তো।’ বলেই মিমের গলা টিপে ধে রাজ। খক খক করে শব্দ বেরিয়ে আসে মিমের গলা থেকে। রাফসান এক বোতল পানি দিয়ে ওর চুবাচুবে তেল ভর্তি চুল ধুয়ে ফেলছে। পকেটে থাকা ছোট্ট চিরুনি দিয়ে চুলগুলো উপরের দিকে উঠিয়ে ঠিক করে দাঁড়িয়ে গেছে।
” রাফু ভাই” চিৎকার দিয়ে বললো একজন। কোমড়ে গুঁজে থাকা পিস্তলটা চোখে পড়ে দুজনার, যে যেখান থেকে পারে দৌড়ে পালিয়েছে, রাজ নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের দিকে বা পিছু হাটার শক্তি নাই। বুক ছিঁড়ে গেছে ০৬ ক্লেভার এর ৩ এমএম বুলেট। চিৎকার দিয়ে বলছে ‘হেয় রাজ তুই ভুল করেছিস আমার কলিজায় হাত দিয়ে যার বিফলে তোর জীবনের সমাপ্তি ডেকেছি। কতকিছুই তো জেনেছিস আমি কে এটা জানাটা তোর উচিত ছিল। আমি অস্ত্র রেখেছি চালানো ভুলিনি, মাইন্ড ইট রাজের নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে. মিম তাকিয়ে আছে রাফসানের দিকে রাফসান অসহায়।
“সবকিছু ছেড়ে তোমার কাছে আসতে চেয়েছি। পেরেছি ও বটে। তিনটে বছর নিজ পরিচয় গোপন করে বাঁচতে শিখেছিলাম তোমায় নিয়ে। তোমার জন্যই আসা এই ভার্সিটিতে। আমার জীবন তো খুন দিয়েই শুরু। কিছু আগন্তুক আমার দশবছর বয়স থাকতে আমার মা বাবাকে খুন করেছে নিজ চোখে তা দেখেছি, প্রতিশোধের আগুনে ঝলসে গেছি আমি, তাদের নিজ হাতে খুন করে আমি রাফু হয়েছি। তবে তোমাকে দেখার পর যেন সবকিছু উল্টে গেছে। বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছি। তাই এসেছিলাম তোমার দুয়ারে। শুধু তিন বছর নয় তোমার জন্য তিনশো বছর নিজেকে লুকিয়ে রাখব তোমার খেয়াল রাখব। ভালোবাসি রোজ।
প্রতিটি মুহূর্ত মগ্ন থাকি তোমার। তোমাকে ভালোবাসি ভুল কিছু নয় আমিও মানুষ নিষ্ঠুর নই। তোমার সামনে পড়ে থাকা রাজের জ্ঞান ফিরবে ১২ ঘণ্টা পরে। আমি তোমাকে দেখি মানুষ মারা বাদ দিয়েছি, রাজ যখন এ নিদ্রা থেকে উঠবে তুমি কিংবা আমি দুজনার এক জনকেও চিনবে না। ওর অতীত থেকে মুছে যাবে দুজন। আমি জোর করছিনা তোমাকে, আমাকে ভালোবাসতেই হবে নয়তো কিডন্যাপ করে বিয়ে করতে হবে। আমি শুধু আমার মনের কথা বলছি। আমার সত্যিটা বলছি। মিম কান্না করছে। সে কতবড় ভুল করেছে। একজন ভিলেন কে ভালোবেসেছে সে কি আদৌও রাফসানের হবে? মনের ভিতরে উত্তাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। বাঝ ভেঙে পড়ছে ওর মনে। ইশিকা মিমের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রাফসানের সামনে থেকে। রাফসান তাকিয়ে আছে মিমের চলে যাওয়ার দিকে। মিম কি আমার হবে না? প্রশ্নটা রাফসানের ভিতরটাকে খণ্ড খণ্ড করে ফেলছে।
“ইশিকা আপু শুনো আমার হাতটা ছাড়ও” চোখের জল মুছতে মুছতে বললো মিম। ইশিকা মিমের হাতটা ছাড়তেই দৌড়ে এসে রাফসানের বুকে মুখ লুকায়। বুকের উপর দুটো থাপ্পড় দিয়ে বলল, “খচ্চর পোলা তোরে আমি ন্যাংটা ভুতের কাছে রেখে আসব, কিমা বানিয়ে চুপেচুপে তেলে ভেজে খাব, শালা হনুমান। বদমাইস। তুই শুধু আমার” বলেই মিম আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে রাফসানের বুক। রাফসান ও তার দু’হাতে শক্ত করে মিমকে আগলে রাখে। “ভালোবাসার জয় হোক”
গল্পের বিষয়:
গল্প