অনুকুল প্রতিকূল

অনুকুল প্রতিকূল
– বলো না, তোমার ছেলে বাবু চাই না-কি মেয়ে বাবু?
– আমার তো দুটোই পছন্দ।
– দুষ্টুমি কোরো না। আমার কাছে তো জমজ বাবু নেই। ডাক্তার বলেছেন একটাই বাবু হবে।
– তাহলে তুমিই বলো, তোমার কি বাবু চাই?
– আমার ছেলে বাবু চাই।
– ছেলে কেন? অনেক মায়েরাই তো মেয়ে বাবু চায়।
– আমি চাই আমাদের ছেলে হোক। আমরা দুজন মিলে ওকে তোমার মতো করে বড়ো করবো।
– তোমার মতো করে নয় কেন?
– আমার মতো করেও ওকে সব শেখাবো। কিন্তু আমি চাই তোমার মতো আরেকজন পুরুষ পৃথিবীতে আসুক।
– আমার মতো কেমন?
– তোমার মতো সৎ, আদর্শবান পুরুষ। দায়িত্ববান ছেলে, স্বামী। যে কি-না বাইরের পৃথিবীর পাশাপাশি নিজের ঘরটাকেও স্বর্গ বানিয়ে রেখেছে।
– আচ্ছা? সেটা কিভাবে?
– এইযে মা আমাকে পছন্দ করেন না। তবুও তুমি মাকে কিভাবে ম্যানেজ করে চলো। আমাকেও সবসময় খুশি রাখো। এ পরিবারে আসার পর কিছুদিন মায়ের ব্যবহারে খুব কষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু তারপর মায়ের প্রতি তোমার শ্রদ্ধা, সম্মান আর আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা দেখে আমার সব কষ্ট চলে গেল।
– নিসা, আদর্শ পুরুষ তো সেই, যে পরিবারের মানুষগুলোকে ম্যানেজ করে চলতে পারে। কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি পুরুষই তার মেধা আর পরিশ্রমের সবটুকু দেখায়। কিন্তু বাসায় ক’জন সেটা করতে পারে? আমি সারাদিন অফিস শেষে খারাপ মেজাজ নিয়ে চাইলেই বাসায় এসে তোমাকে বকা দিতে পারি। তাতে আমার মেজাজটা হয়তো শান্ত হবে। কিন্তু তুমি কখনও সুখী হতে পারবে না। অনেক পুরুষ অফিসের রাগটা বাসায় এসে স্ত্রীর সাথে দেখায়। স্ত্রী চুপ করে সহ্য করলেও তাদের মনের দুরত্ব তৈরি হয়। স্ত্রীর মনে তখন স্বামীর জন্য ভালোবাসার চেয়ে বেশি ভয় কাজ করে।
আমি চাই না তোমার মনে আমার জন্য ভয় থাকুক। আর তাছাড়া তুমি কি পরিবারটা ভালো রাখতে কম সাহায্য করো? মা তোমাকে অপছন্দ করার পরও সারাদিন মায়ের সেবাযত্ন করো। মায়ের পছন্দের রান্না করে খাওয়াও। বাবা অসুস্থ, তাঁর সেবা করো। সারাদিন এত কাজ করার পরও আমি সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে কখনও তোমার গোমড়া মুখ দেখিনি। হাসিমুখে আমার ব্যাগটা হাতে নাও। আমার কাপড় এগিয়ে দাও, আমি রেস্ট নিতেই আমার সামনে নাস্তা এনে হাজির করো। তুমি এসব না করলেও আমি রাগ করতাম না। কিন্তু তোমার দায়িত্ব আর ভালোবাসা থেকে সব করো। নিসা, একটা পরিবারকে ভালো রাখতে হলে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সমান দায়িত্ব পালন করতে হয়। দুজনের মনেই দুজনকে বোঝার মতো ভালোবাসা থাকতে হয়। একজন সারাদিন হুকুম দিলো, আরেকজন সেটা পালন করে গেল, এতে শুধু দায়িত্ব পালন করা হয়, ভালোবাসাটা থাকে না।
– এজন্যই বলি তোমার শিক্ষক হওয়া উচিত ছিলো। আমি বাবুর কথা বললাম, আর তুমি রাজ্যের লেকচার দেওয়া শুরু করলে। ধুর ভাল্লাগে না।
– হাহাহা, আচ্ছা আমি লেকচার দিলেও তোমার সাথে দেই, ঝগড়া করলেও তোমার সাথে করি, ভালোবাসলেও তোমাকেই বাসি। আমার আর কে আছে বলো?
– এইতো আরেকটা ভুল কথা বললে। বিয়ের পর মাত্র দুদিন তুমি ঝগড়া করেছো। আর কখনও ঝগড়াই করো নি। সবাই বলে, ঝগড়া হলে ভালোবাসা বাড়ে। কিন্তু তুমি ঝগড়া করতেই চাও না।
– আরে পাগলী, ঝগড়া না করলে ভালোবাসা বাড়ে না এটা তোমাকে কে বললো? তোমার কি কখনও মনে হয়েছে যে আমি তোমাকে কম ভালোবাসি? না-কি তুমি আমাকে কম ভালোবাসো? ঝগড়া করে তোমার গোমড়া মুখ দেখে আমি ভালোবাসা বাড়াতে চাই না। অনেক গল্প হয়েছে। এবার বুকে এসে চুপ করে ঘুমোও। সকালে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
– হিহিহি চলো ঘুমাই।
ডিম লাইটটা জ্বালিয়ে পানির জগ আর গ্লাসটা বিছানার পাশে রেখে নিসাকে বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতে লাগলো নেহাল। নিসা অন্ধকারে ভয় পায়। নেহালের আলোতে ঘুম আসে না। তবুও বিয়ের পর থেকে রুমে ডিম লাইট জ্বালানো শুরু করেছে। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে নিসা রাতে কয়েকবার ঘুম থেকে উঠে পানি খায়। সব কাজ ভুলে গেলেও বিছানার পাশে পানি রাখতে ভুলে না নেহাল।
ভালোবেসে বিয়ে করেছে ওরা। নিসার বাবা-মা এখনও এই বিয়েটা মেনে নেন নি। বিয়ের পর একবারের জন্যেও নিসা ও বাড়িতে যায়নি। ও প্রেগন্যান্ট এ কথা শোনার পর থেকে মাঝে মাঝে ওর মা ফোন করে খোঁজ নেন। পরিবারের সবাইকে ছেড়ে নেহালের হাত ধরে চলে এসেছে নিসা। ওকে এতটুকু কষ্ট দিতে চায় না নেহাল। নেহালের মা নিসাকে বিয়ের আগে থেকেই পছন্দ করতেন না। তিনি চেয়েছিলেন ছেলেকে নিজের বরাবর কোনও পরিবারে বিয়ে দিবেন। নেহাল যে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়েকে বিয়ে করবে এটা তিনি মানতে পারেন নি। নিসার পরিবার প্রথমে নেহালকে পছন্দ করলেও পরে যখন জানতে পারলো যে নেহালের মায়ের আপত্তি আছে, ওরা সাফ সাফ মানা করে দিলো। নিসাকেও বললো নেহালের সাথে আর যোগাযোগ না রাখতে। নেহাল তাদের অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হলো না। নেহালের মায়েরই যখন বিয়েতে মত নেই, অভিভাবক ছাড়া ছেলের হাতে তারা মেয়েকে তুলে দিবেন না। তারা নিসার জন্য অন্য পাত্র দেখছিলেন। বাধ্য হয়ে নিসা নেহালের হাত ধরে চলে আসে। মেয়ের এমন অবাধ্যতার জন্য ওই পরিবারের কেউ মেয়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি।
নিসা প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। নিসার অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু ডাক্তার বা নেহাল ওর সামনে তেমন কিছু বলে না। তবে এটা বলেছে যে ওকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। নিসার শ্বাশুড়ি এখন নিসাকে আগের মতো অপছন্দ করেন না। বংশধর আসছে, পুত্রবধূর খেয়াল রাখা ওনার দায়িত্ব। নিসাকে তিনি যতই অপছন্দ করেন না কেন, তার গর্ভে তো নেহালেরই সন্তান। নিসার সাথে এখন তিনি খারাপ ব্যবহার করেন না। ওকে বেশি কাজ করতেও দেন না। যখন থেকে ওর শারীরিক জটিলতা হচ্ছে তখন থেকে তিনি নিসাকে আরও সাবধানে রাখেন। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল নেহাল। পরদিন ওরা চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে গেল। আল্ট্রাসনোতে দেখা গেল ছেলে বাবু হবে। নিসার খুশি দেখে কে।
– ইয়েএএ বলেছিলাম না ছেলে বাবু চাই? এখন দেখলে?
– তুমি যা চাও তাই হচ্ছে আমার লক্ষী বউটা।
– চলো বাসায় গিয়ে মাকে খবরটা দেই। উনি খুব খুশি হবেন।
নিসার মুখে আনন্দের হাসি থাকলেও ওর যে শারীরিকভাবে কষ্ট হচ্ছে নেহাল সেটা বুঝতে পারছে। ডাক্তার ওকে বারবার সাবধান করেছে, সামান্য সমস্যা হলেও যেন নিসাকে সাথে সাথে হাসপাতালে নিয়ে আসে। খুব চিন্তা হচ্ছে নেহালের। নিসার কিছু হলে ও পাগল হয়ে যাবে। সকাল থেকে নিসার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। তবুও সে চুপ হয়ে আছে। একবার ভাবছে নেহালকে ফোন করবে। আবার ভাবছে নাহ, থাক। গত দুদিন ওর শরীর খারাপ থাকার কারণে নেহাল ছুটি নিয়ে বাসায় ছিলো। আজও যদি শরীর খারাপ লাগছে শুনে বাসায় চলে আসে তাহলে চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে। রাতে নেহাল বাসায় আসলে তখন নাহয় বলবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ওর প্রচন্ড পেটে ব্যথা শুরু হলো। চিৎকার করে শ্বাশুড়িকে ডাক দিলো। শ্বাশুড়ি রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এলেন।
– মা, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
– কেমন লাগছে মা?
– পেটে খুব ব্যথা হচ্ছে মা। এত ব্যথা আগে কখনও হয়নি। জরায়ুতেও প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। আমার সহ্য হচ্ছে না মা।
– তুমি শুয়ে থাকো। আমি নেহালকে কল দিচ্ছি।
– কিন্তু মা ও অফিস থেকে আসবে কিভাবে। গত দুদিন ছুটিতে ছিলো।
– সে দেখা যাবে। হ্যালো নেহাল, বউমার অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না। হাসপাতালে নিতে হবে।
– তুই অফিস থেকে বের হ। আমি আর তোর বাবা বউমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।
হাসপাতালে আনা হলো নিসাকে। নেহালও এসে পৌঁছেছে। ডাক্তার নিসাকে চেকআপের পর নেহালকে ডেকে পাঠালেন।
– আপনার স্ত্রীর অবস্থা খুব খারাপ। মা এবং বাচ্চা দুজনই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ওনার প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন হয়েছে। গর্ভাবস্থার শুরু দিকে রক্তপাতের কারণে এমনটা হয়েছে। দ্রুত অপারেশন না করলে দুজনেরই জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
– যা করতে হয় সব কিছু করুন। কিন্তু আমার স্ত্রী এবং বাচ্চার যেন কিছু না হয়। প্লিজ ডাক্তার।
– নেহাল সাহেব, আমরা ডাক্তার। আমাদের কাজই জীবন বাঁচানো। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করি।
আমরা কখনই চাই না একটা জীবন ঝরে যাক। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। ওনাকে ডাকুন। আরেকটা কথা, এই অবস্থায় বাচ্চার মৃত্যুর আশংকা থাকে। আবার এমন বাচ্চা জন্ম নিলেও বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন। কথাটা শোনার পর নেহালের ভেতরটা মুচড়ে উঠলো। কত স্বপ্ন ওর বাচ্চাকে নিয়ে। ওর চেয়ে নিসার আনন্দ আর স্বপ্ন বেশি। বাচ্চার নাম পর্যন্ত ঠিক করে রেখেছে। ছেলেকে কিভাবে পড়াশোনা শেখাবে, ছেলে বড়ো হয়ে কি হবে, সারাদিন এসব বলে। তবে এসবের চেয়ে এখন বেশি চিন্তা নিসাকে নিয়ে। ওকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো। বাইরে নেহাল ও তার বাবা-মা দোয়া করছেন। নেহালের কান্না থামানো যাচ্ছে না। হাউমাউ করে কাঁদছে। নিসার কিছু হলে ও কিভাবে থাকবে?
[পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন এর সংক্ষিপ্ত তথ্যঃ প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন গর্ভবতী মায়েদের একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। গর্ভকালীন বা সন্তান প্রসবের পূর্বে প্লাসেন্টা(গর্ভফুল) আংশিক বা পুরোপুরিভাবে জরায়ুর দেয়াল থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে বা ছিঁড়ে যেতে পারে। এ অবস্থার সৃষ্টি হলে শিশুর শরীরে অক্সিজেন ও পুষ্টির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যহত হয়। এর কারণে অতিরিক্ত রক্তপাত ঘটে যা মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন এর মাত্রা বেশি হলে প্রি-ম্যাচিউর (অপরিণত) সন্তান প্রসব, এমনকি গর্ভে সন্তানের মৃত্যুও ঘটতে পারে] নিসার জ্ঞান ফিরেছে। ধীরে ধীরে চোখ খুললো। (পাঠক বিভ্রান্ত হবেন না। এখন এ ধরণের সার্জারিতে রোগীর মস্তিষ্ককে অবশ করা হয়না। নিম্নাংশ অবশ করে সার্জারি করা হয়। গল্পের আনন্দ বাড়াতে এভাবে লেখা হলো)। দেখলো নেহাল ওর সামনে বসে আছে। ওর বাবা-মা এসেছেন। নেহালের বাবা-মাও সামনে আছেন। নিসার জ্ঞান ফিরেছে দেখেই ওর হাত নিজের দুহাত দিয়ে শক্ত করে ধরল নেহাল। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। নেহালের বাবা দৌড়ে গেলেন ডাক্তারকে ডাকতে।
– এখন কেমন লাগছে নিসা?
– আমাদের বাবু কোথায়? ছোটো নেহাল কোথায়? ওকে কোন রুমে রাখা হয়েছে?
– কথা বলছো না কেন? আমার ছেলে কোথায়?
– নিসা আসলে
– আসলে কি? বলছো না কেন? আমার ছেলে কোথায়?
– ডাক্তার ওকে বাঁচাতে পারেন নি।
– কি? কি বললে তুমি? তুমি মিথ্যা বলছো। মজা করছ তুমি।
– আমি মজা করছি না। সত্যি বলছি।
– তাহলে ডাক্তার মিথ্যা বলছে।
ওরা মনে হয় আমার ছেলেকে কারও কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি শুনেছি মানুষ হাসপাতাল থেকে বাচ্চা কিনে নিয়ে যায়। আমার ছেলেকে কি করেছে ওরা? তুমি খোঁজ নাও। পুলিশকে ডাকো। আমার ছেলেকে এনে দাও।
– নিসা প্লিজ শান্ত হও। এমন কিছুই ঘটে নি। তোমার এবং বাবুর দুজনেরই জীবনের আশংকা ছিলো। ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যদি দুজনের মধ্যে একজনকে বাঁচাতে হয় তাহলে কাকে বাঁচাবেন। আমি তোমাকে বাঁচাতে বলেছি। বাবুকে বাঁচাতে গেলে তোমাকে বাঁচানো যেত না।
– কি বললে তুমি? তুমি আমার ছেলেকে মেরে ফেললে? তুমি এটা করতে পারলে? আমার ছেলেকে নিয়ে আমি কত স্বপ্ন দেখেছি তুমি জানতে না? সব জানার পরও তুমি আমার ছেলেকে মেরে ফেললে? তুমি বাবা নও। তুমি একটা খুনী। আমি তোমাকে পুলিশে দেবো (চিৎকার করছে আর কাঁদছে নিসা)।
– প্লিজ একটু শান্ত হও। বোঝার চেষ্টা করো। বাচ্চা পরিপক্ব হয়নি, ওর সঠিক বৃদ্ধি হয়নি। এখন ওকে বাঁচালেও জন্মের পর বিকলাঙ্গ হয়ে বাঁচতো। এমনকি ওর শরীরে সঠিক পুষ্টি না থাকায় কতদিন বেঁচে থাকতো এ নিয়েও ডাক্তাররা সন্দিহান ছিলেন।
– তুমি এটা কিভাবে করতে পারলে? আমি মরে যাওয়াইতো ভালো ছিলো। সন্তানের মরা মুখ দেখে আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো বলো। এর চেয়ে ভালো ও বেঁচে থাকতো আমি মরে যেতাম।(কাঁদছে)
– নিসা, এই সিদ্ধান্তটা আমার জন্য কতটা কঠিন ছিলো আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না। স্ত্রী এবং বাচ্চার মধ্যে একজনকে বেঁছে নেওয়া একজন পুরুষের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমি যদি বাচ্চাকে বাঁচাতে বলতাম তাহলে তোমাকে বাঁচানো যেত না। মা ছাড়া বাচ্চাকে আমি কিভাবে বড়ো করতাম? বাবা-মা বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। ওনারা কতদিন ওর দেখাশোনা করতে পারতেন? ওর জন্য নতুন মা আনতাম? সে কি তোমার মতো ওর যত্ন নিতে পারতো? তোমার মতো ওকে ভালোবাসতো? নিসা তুমি একটা মেয়ে। আল্লাহ তোমাকে মা হওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনি যদি চান তুমি আবার গর্ভধারণ করবে। কিন্তু তুমি ছাড়া পৃথিবীতে আমি আর আমাদের সন্তান কিভাবে বাঁচতাম আমি জানিনা। আমার সিদ্ধান্তটা ঠিক ছিলো না-কি ভুল আমি তাও জানিনা।
ওই সময়ে আমার যেটা সঠিক মনে হয়েছে ডাক্তারকে সেটাই বলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও নিসা। আমি খুব স্বার্থপর। তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি নি। সন্তান হারানোর কষ্ট আমারও হচ্ছে নিসা। কিন্তু তোমাকে হারিয়ে আমি ওকে চাইতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করো। অঝোরে কেঁদে চলেছে নিসা। নেহালও কাঁদছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কষ্টগুলোর মধ্যে একটি কষ্ট সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেও তাকে বাঁচাতে না পারা, তার মুখে মা ডাক না শোনা। তবুও ভাগ্যকে মেনে নিতে হয়। সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত