কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গেটের কাছে আসতেই আমার বান্ধবীরা রিতিমতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে ফুচকার দোকান দেখে।আমি ফুচকা খুব পছন্দ করি বলে ওরা আমার নামও দিয়েছে ফুচকা পাগলী।বান্ধবীরা মিলে ফুচকা খাওয়ার মজাই আলাদা।অনেক বেশি ঝাল দিয়ে আর হুড়োহুড়ি, ভাগাভাগি করে খাওয়া তো আছেই।আশেপাশের অনেকে বিষয়টা ইনজয় করে অনেকে আবার বিরক্তি নিয়েও তাকায় কিন্তু আমাদের কিছু যায় আসেনা।আমরা খাওয়া নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ি।আজ ঝালটা একটু বেশি হওয়ায় চোখে থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে। যে কেউ দেখলে ভাববে আমি হয়তো কাঁদছি।খাওয়া শেষ করে বিল আমি দিলাম।সবসময় অবশ্য আমি দেই ওদের খাওয়াতে বেশ ভালো লাগে।
সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাসার পথে হাঁটতে শুরু করলাম।চোখের পানি থামার নামই নেই।ব্যাগে হাত দিয়ে টিস্যুও খুঁজে পেলাম না।অগত্যা চোখের পানি না মুছেই হাঁটতে লাগলাম।এমনিতেই অনেক দেরি হলো এখন একটা রিকশা পেলে ভালো হতো। এই রিকশাওয়ালা গুলোকেও না, প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায়না।তাই দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষা করছি হঠাত একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাড়ালো আমি একনজর তাকিয়ে আবার রিকশার খোঁজে মন দিলাম। গাড়ির দরজা খোলার শব্দে আবার তাকালাম মনে হয় কোনো হিরো এন্ট্রি নিবে ভেবে মনে মনে হাসলাম,আর অতি আগ্রহ নিয়ে হিরোর মুখ দেখার জন্য চেয়েই থাকলাম।অবশেষে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সুদর্শন একটি ছেলে বের হয়ে আসলো,ব্ল্যাক শার্ট,জিন্স,সু আর সানগ্লাস, চুল গুলো স্পাই করা,দেখতে এত কিউট আমি তো প্রথম দেখেই ক্রাশ খেয়ে গেলাম। আরো অবাক হলাম যখন দেখলাম উনি আমার দিকেই আসছেন।একদম আমার সামনে এসে বললেন….
-এইযে মেয়ে তোমার সমস্যা কি? এভাবে মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে কান্না করছো কেন? আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম
-কই আমি কাঁদছি না তো?
-চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি পড়ছে,চোখ লাল হয়ে গেছে তাও বলছো কাঁদছি না ফাজলামি করো?
-ওহ এই ব্যাপার, একটু আগে অনেক ঝাল দিয়ে ফুচকা খেয়েছি তারজন্য চোখের পানি পড়ছে।
-যেসব ছাইপাস খেয়ে কাঁদতে হয় সেগুলো না খেলে হয়না যত্তসব ননসেন্স ।
-এই যে আপনি আমাকে বকছেন কেন? আমার যা ইচ্ছে আমি খাব আপনি বলার কে?খবিশ মার্কা লোক একটা।
-হোয়াট???? খবিশ????? ভেবেছিলাম কোনো সমস্যা হয়েছে তাই আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে আসলাম আর এসে দেখি শাঁকচুন্নি টাইপ মেয়ে একটা। ফুচকা খেয়ে নাকি কান্না করে।যত্তসব
-ওই শোনেন আপনি আমাকে এমন করে বলছেন কেন?দেখবেন আপনার কপালে আমার মতো ফুচকা পাগলী বউ জুটবে, মিলিয়ে নিয়েন হুহ বলেই হনহন করে হাঁটা শুরু করলাম। কথা বাড়ালে যদি কোনো বিপত্তি বাঁধে তার চাইতে হেঁটে বাসায় যাব তাও ভালো।পিছনে ফিরেে তাকানোর সাহস হয়নি যে কথা বলেছি এখন পালাতে পারলেই বাঁচি। এত সাহস কই পেলাম নিজেও জানিনা।বাসায় গিয়ে লম্বা শাওয়ার নিলাম মনটা ফ্রেশ হয়ে গেলো,খেয়েদেয়ে বই নিয়ে বসলাম এভাবে সময় কাটিয়ে রাতে খেয়ে ঘুৃম দিলাম।পরের দিন সকালে কলেজ গেলাম।সব ক্লাস শেষ করে ফেরার পথে আজকে ফুচকাওয়ালাকে পেলাম না। সবার মুড অফ হয়ে গেলো। ফুচকা ছাড়া আমি অসহায় । মন খারাপ করে বাসার সামনে আসতেই চমকে উঠলাম আরে কালকের সেই খবিশটার গাড়ি তাও আমাদের বাসায়?তবে কি বাসায় বিচার দিতে এসেছে? আমি ফুচকা খেয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে কান্না করি।
ওরে বাবা রে আম্মু শুনলে আমার কপালে দুঃখ আছে।একছুটে বাসায় ঢুকে বড় একটা শক খেলাম শুধু ওই খবিশটা না ওর পাশে একজন ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলাও আছেন মনে হয় ওনার বাবা মা,কিন্তু ওদেরকে নিয়ে আমার বাসায় কি করছেন?গুষ্টি শুদ্ধ কি আমার নামে নালিশ করতে আসছেন নাকি? মনে মনে ভেবেও কুল না পেয়ে ওদের সামনে গিয়ে সালাম দিলাম।ভালো-মন্দ কথা হলো।আম্মু বললো ফ্রেশ হয়ে আসতে।আমিও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ফরমাল ড্রেসে বাইরে এসে বসতেই আম্মু বললো প্রিয়া, ইফতিকে নিয়ে ছাদে যাও ঘুরে এসো এখানে আমরা বড়রা কথা বলি কেমন? ওহ তার মানে ওনার নাম ইফতি।দেখতে যেমন কিউট নামটাও ভীষন সুন্দর।আমি একবার আম্মুর দিকে তাকিয়ে আবার ওনার দিকে তাকালাম দেখি মুচকি হাসছেন।আমার মাথায় কিছুই আসছেনা। কিন্তু আমার ক্রাশ আমার বাসায় ভাবতেই লুঙ্গি ডান্স দিতে মন চাইছে।তবুও নিজেকে সামলে আমি উঠে যেতেই ইফতিও পিছন পিছন আসলো।ছাদে গিয়ে দাড়াতেই বললাম,
-কি ব্যাপার মি.খবিশ, আমার নামে নালিশ করতে বাড়ি অব্দি এসে গেছেন?
-হুম শুধু নালিশ না,আমার কারাগারে তোমাকে চিরদিনের মতো বন্দী করতেও এসেছি।
-কি বললেন আমি বুঝতে পারছিনা।
-তা বুঝবে কেন? মাথায় তো কেবল গোবর।খাও তো শুধু ফুচকা।সত্যি তুমি একটা পাগলী।
-এত পেঁচিয়ে না বলে সোজাসুজি বললেই তো হয়।আর ফুচকা কে মাঝে টেনে না আনলে কি হয় না?
-তুমি বলেছিলে না আমার নাকি ফুচকাপাগলী বউ হবে? তোমার কথাটা অনেক ভেবে ভেবে ঠিক করলাম তাই যদি হয় তাহলে তুমি হলে খুব একটা খারাপ হবেনা।
-ওহ আচ্ছা,শেষ পর্যন্ত এই খবিশটার দ্বায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে তাইতো?
-জি ম্যাডাম। অবশেষে আপনি বুঝতে পারলেন বলে ধন্য হলাম।তো আপনি রাজি তো?
-হুম রাজি তবে একটা শর্ত আছে!
-কি শর্ত? নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো। কারন দিনের শুরু থেকে শেষ অব্দি আমার এই পাগলীটাকেই চাই।কান্নাজড়িত ওই মায়াভরা চোখ আমার চাই!সব করতে রাজি শুধু বলো?
-তেমন কিছুনা শুধু রোজ ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যেতে হবে।আর যখন চোখের পানি পড়বে নিজের হাতে মুছে দিতে হবে
-হুম তাই হবে,দরকার হলে বাড়িতেই ফুচকার দোকান দিয়ে দেব কেবল তোমার জন্য প্রিয়তমা দুজনেই খিলখিল করে হেসে উঠলাম।
গল্পের বিষয়:
গল্প