– একবার দেখা করবে? খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
– সময় হবে না।
– বেশিক্ষণ থাকতে হবে না। পনেরো মিনিট বসে তারপর চলে যেয়ো।
– বললাম তো সময় হবে না।
– তাহলে তোমার অফিসের সামনে আসি? তোমার ছুটি হলে দুজন একটু হাঁটবো। তারপর তুমি চলে যেয়ো। নাহলে দুজনএকসাথে রিক্সায় বসবো। তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি ফিরে যাবো।
– উফফ কি শুরু করেছো নিসা? অফিসের সামনে আসবে মানে কি? তুমি এসে দাঁড়িয়ে থাকবে। তারপর আমার কলিগরা দেখবেআমার প্রেমিকা আমার জন্য বেহায়ার মতো অফিসের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। তোমার আত্মসম্মানবোধ না থাকতেপারে, আমার আছে। এসব ন্যাকামি করবে না।
– আমি চলে যাবো নেহাল। তুমি কি বুঝতে পারছো? আবারকবে দেখা হবে ঠিক নেই।
– তো যাও না। আমি কি ধরে রেখেছি? যখন আসবে তখন দেখা হবে।
– যদি না আসি?
– চুপ করে আছো কেন? আমি না আসলে তুমি যাবে দেখা
করতে?
– সময় পেলে যাবো।
– আমি চলে যাওয়ার মূহর্তে একবার দেখা করার জন্য যার সময় হচ্ছে না, সে অন্য বিভাগে অন্য জেলায় গিয়ে আমার সাথে দেখা করবে?
– আবার পেচানো শুরু করেছো। তোমরা মেয়েরা এমন কেন বলো তো? ন্যাকামি আর ইমোশনাল কথা ছাড়া কিছুই জানোনা। কোথায় ভালোভাবে বাই বলে যাবে, তা না। ন্যাকামি শুরু করেছো। আর কিছু বলতে পারলাম না। চোখদুটো ভিজে গেছে। গলাটা প্রচন্ড ধরে আছে। এবার যদি কিছু বলি তাহলে শব্দের বদলে স্বর দিয়ে কান্না বের হবে। আমি চাই না ও আমার কান্না শুনুক। ফোনটা কেটে দিলাম। সম্পর্কটাতে ফাটল ধরেছে অনেক আগেই। চাকরি হওয়ার ছয়মাস পর থেকে নেহালের মাঝে পরিবর্তন দেখতে পাই। ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে আমার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছিলো। আমিও বিশ্বাস করতাম। নতুন চাকরি। ব্যস্ত থাকতেই পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম ওটা শুধু অজুহাত ছিলো আমাকে এড়ানোর।
চব্বিশ ঘণ্টায় একটা মানুষের কি দশ মিনিট সময় হয়না আমাকে দেওয়ার জন্য? আমি না খেয়ে থাকলে যে বারবার কল দিয়ে বকা দিতো, তার সারাদিনে আমি খেয়েছি কিনা একবার জিজ্ঞেস করার সময় হয়না। যখন নিজে থেকে বলেছি আমার জ্বর হয়েছে, “ওষুধ খাও ভালো হয়ে যাবে” বলে তারপর এক সপ্তাহেও একবার খোঁজ নেয়নি আমি কেমন আছি। অথচ সে ভুলেই গিয়েছিলো সে একবার জিজ্ঞেস করলেই আমি অর্ধেক সুস্থ হয়ে যেতাম। মনের অসুখ যে বড়ো অসুখ। আমার বাবা ওনার জীবনের শেষ প্রমোশন পেয়েছেন।সরকারি চাকরি। প্রমোশনের কারণে ট্রান্সফার হয়ে রাজশাহী যেতে হবে। সাথে পুরো পরিবার। আবার কবে এ শহরে আসবো জানিনা। আমি তো মেয়ে। কোনও কারণ ছাড়া তোআমাকে বাবা-মা এখানে একা আসতে দিবেন না। আর এ শহরে আমাদের কোনও আত্মীয় নেই যে পরিবারের কেউ এখানে বেড়াতে আসবে। সহজ কথায় এখানে আর আসা হবেনা।
নেহালের সাথে দেখাও হবেনা। ভালোই হলো। ও যেটাচাচ্ছিলো কোনও ঝামেলা ছাড়াই সেটা হয়ে গেল। আমি এখানেথাকলে হয়তো আরও ন্যাকামি করতাম, আরও বেহায়া হতাম, একসময় নেহাল বাধ্য হতো আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিতে। তার চেয়ে এই ভালো হলো। পাঁচ বছর পর আবার সেই শহরেই এসেছি যেখানে নেহালকে রেখেগিয়েছিলাম। আসতে চাইনি। কিন্তু কি আর করবো। জীবনের প্রথম চাকরি। তাছাড়া নেহালকে অনেকটাই ভুলে গিয়েছি, এখন আর কষ্ট হয়না তেমন। অনেকটা মানে? ওর স্মৃতিগুলো ভুলতে পারি নি। খুব ভালোবাসতাম কি না। কিন্তু ওকে ভেবে এখন আর আগের মতো কষ্ট হয়না। নিজেকে সামলে নিয়েছি। একটা কথা আছে না? Time heals. আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাই এ শহরে থাকতে আমার অসুবিধা হবেনা। তবুও মনের ভেতর থেকে কেউ একজন বলছে, একটিবার নেহালের সাথে দেখা হোক। কতদিন ওকে দেখিনি। আচ্ছা, ও কি বিয়ে করেছে? পাঁচবছর তো খুব বেশি সময় না। ওর চেহারায় কি পরিবর্তন এসেছে?না-কি আগের মতোই আছে?
– সহজভাবে কথাটা বলি, আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা। যেহেতুবাবা আপনাদের বলেছেন যে আমি দেখা করবো, তাই ওনার সম্মান রাখতে এখানে এসেছি।
– বিয়ে করতে চান না কেন? পড়াশোনা শেষ, চাকরি করছেন। এখনই তো সঠিক সময় বিয়ে করার।
– ছ্যাঁকাখোর চিনেন? সোজা বাংলায় আমি ছ্যাঁকাখোর।
ভালোবাসতাম একজনকে। সম্পর্কটা ভেঙে গিয়েছিলো।তারপর আর কোনো সম্পর্ক জড়ানোর সাহস হয়নি। এখনঅনেকটা রিকভার করেছি। কিন্তু আমি আরও সময় চাই। এখনই বিয়ে করতে চাইনা।
– আরও সময় নিতে গিয়ে যখন বয়স আরও বাড়বে, তখন দেখা যাবে বিয়েই হলো না। একা থাকতে হবে।
– একা থাকবো। তাতে আপত্তি নেই।
– আপনার আপত্তি না থাকলেও আপনার পরিবারের থাকবে, সমাজের থাকবে।
আপনি একটা মেয়ে সমাজে একা থাকতে পারবেন না। মানুষ নানান কথা বলবে, টিপ্পনী কাটবে। একদল বসে থাকবে আপনার সতীত্ব নিয়ে কথা বলার জন্য। আরেক দল বসে থাকবে সেই সতীত্ব হরণ করার জন্য। আপনাকে সমস্যায় ফেলার মানুষের অভাব হবে না। এ সমাজ একা একটা মেয়েকে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে দেয়না।
– তখন দেখা যাবে।
– একটা কথা বলি?
– বলুন।
– আপনাকে আমার ভালো লেগেছে।
আপনি বিয়ে করতে না চাইলে তো জোর করতে পারবো না। তবে আমাকে কিছুদিন দেখুন, আমাকে জানুন। যদি আপনার মনে হয় আমি আপনার জন্যপারফেক্ট তাহলে বিয়ের জন্য এগোবো। আরও কিছু কথা বলে চলে আসলাম। ইনি নিশাদ। বাবার কলিগের ছেলে। রিটায়ারমেন্ট এর পর থেকে আমার জন্য পাত্র দেখায়বাবা ব্যস্ত থাকেন। এ পর্যন্ত অনেকবার মানা করেছি। তবুওশোনেন না। এখানে আসার পর তো ওনার কিছু কলিগের সাথে মিলেই পাত্র খুঁজছেন। সবাই রিটায়ার করেছেন, অফুরন্ত সময়।
আর তার ফলস্বরূপ আমাকে ভুগতে হচ্ছে। নিশাদের সাথে কথা হয়, দিনে কয়েকবার। এই যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে মর্নিং উইশ করবে। অফিসে গেলাম কি-না, লাঞ্চ করলাম কি-না, বিকেলে বাসায় ফিরে টায়ার্ড না-কি, কফি খেয়েছি না- কি, রাতে ঘুমোনোর আগে গুড নাইট উইশ, এমন নানান কথা বলে। আমার ভালো লাগে, কিন্তু ভয়ও হয়। নেহালও প্রথমদিকে এভাবে আমার কেয়ার করতো। কিন্তু পরে আসল রূপ দেখিয়েছিলো। তাই নিশাদের এসব কেয়ার খুব একটা আমলে নেই না। মাঝে মাঝে ফেসবুকে মেসেজ দিলে রিপ্লাই দেইনা। আবার সিন করে রেখে দেই। তবুও ছেলেটা বিরক্ত হয়না। না-কি ধৈর্য ধরার নাটক করে জানিনা। আজ অপরিচিত একটা আইডি থেকে রিকোয়েস্ট আর মেসেজ এসেছে। নামটা খুব পরিচিত। মেসেজ চেক করে রিপ্লাই দিলাম।
– কেমন আছো নিসা?
– ভালো আছি। আপনি কে?
– নাম দেখেও চিনতে পারছো না?
– দেখুন একই নামে পৃথিবীতে অনেক মানুষ থাকে। তাই নাম দেখেই অনুমান করা যায়না। পরিচয় দিলে চিনতে সুবিধা হবে।
– আমি নেহাল।
– তারপর? এটুকুই পরিচয়?
– যাকে তুমি একসময় ভালোবাসতে।
– ওহ আচ্ছা, তুমি। কেমন আছো?
– আছি একরকম।
– একরকম কেন? তোমার তো ভালো থাকার কথা।
– তুমি কি ভালো আছো?
– ভালো না থাকার মতো কোনও কারণ আছে কি?
– না না, তা নয়। আচ্ছা নিসা, আমার কথা মনে পড়ে তোমার?
– সত্যি শুনতে চাও না-কি মিথ্যা?
– সত্যিটাই বলো।
– মনে পড়ে। মাঝে মাঝে তোমার কথা ভাবি। বাদ দাও। কি মনে করে নক করলে?
– তোমাকে সেদিন রাস্তায় দেখলাম। তুমিই কি-না কনফার্ম হওয়ারজন্য তোমার পিছু নিয়েছিলাম। দেখলাম তুমি একটা অফিসে ঢুকছো। গার্ডের সাথে কথা বলে শিওর হলাম এটা তুমিই। আর তুমি ওই অফিসে জব করো।
– আমাকে দেখেছো তার জন্য নক করলে। না দেখলে তো করতে না।
– আসলে তা না। সাহস হয়নি তোমাকে নক করার। কিন্তু সেদিন তোমাকে দেখার পর থেকে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলাম না। তাই নক করলাম।
– তোমার বাসার সবাই কেমন আছেন? আন্টির শরীর ভালো?
– মা আগের চেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছেন। আমি সারাদিন অফিসে থাকি। মায়ের সেবা করার মতো কেউ নেই।
– তুমি বিয়ে করো নি?
– না।
– কেন?
– সে অনেক কথা।
– বলো, আমার শোনার মতো অনেক সময় আছে।
– তুমি চলে যাওয়ার পর আমার অফিসের এক কলিগের সাথে আমার সম্পর্ক হয়। আসলে তুমি যাওয়ার পর না, তুমি যখন ছিলে তখন থেকেই সে আমার আশেপাশে থাকতো, আমার এটেনশন নিতে চাইতো। সারাদিন একই অফিসে থাকতাম তো, কখন যে ওর প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম বুঝতে পারি নি।
– তারপর?
– বিয়ে করবো ঠিক করেছিলাম আমরা। তিন বছরের সম্পর্কের পর যখন বিয়ের সময় আসলো সে আমার চেয়ে ভালো কাউকে পেয়ে তাকে বিয়ে করলো।
– দুঃখজনক ব্যাপার। তো এখন অন্য কাউকে বিয়ে করো। সারাজীবন তো বিয়ে না করে থাকতে পারবে না।
– তুমি বিয়ে করেছো?
– না, করিনি।
– কেন?
– আর কাউকে তোমার মতো ভালোবাসতে পারিনি তাই।
– নিসা একটা কথা বলি?
– বলো।
– আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায়না? আমরা কি আবার শুরু করতে পারিনা? আমরা কি বাকি জীবনটা একসাথে কাটাতে পারিনা?
– আমার ঘুম পাচ্ছে নেহাল। শুভরাত্রি।
– উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
ফোনটা রেখে দিলাম। খুব কান্না পাচ্ছে। নেহালের অবহেলাগুলো মনে পড়ছে। পাঁচ মিনিট ওর সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করতাম। এক পলক ওকে দেখার জন্য পাগল হয়ে থাকতাম। ফোনে কল আসলেই বুকটা ধুক করে উঠতো, এই বুঝি নেহাল কল দিলো। কিন্তু অন্য কারও কল দেখে হতাশ হতাম। দিনগুলোর কথা মনে পড়ে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটু কাঁদবো। কাঁদলে মন হালকা হয়।
– ফ্রি আছো?(নেহাল)
– লাঞ্চ শেষ করলাম। হাতে দশ মিনিট সময় আছে। কিছু বলবে?
– তাহলে কল দেই? মেসেজ লিখে দশ মিনিট নষ্ট করতে চাইনা।
– আচ্ছা, দাও। মেসেঞ্জারে কল দিলো নেহাল।
– আসসালামু ‘আলাইকুম।
– কি হলো? চুপ কেন? আমার হাতে সময় কম।
– ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
– আছি আর কি অনেকদিন পর তোমার কণ্ঠ শুনলাম তো কি বলবো বুঝতে পারছি না।
– বুঝতে না পারলে ফোনটা রেখে দাও। অযথা সময় নষ্ট করে লাভ কি।
– না না, কথা বলছি তো। কাল রাতে কখন ঘুমিয়েছিলে?
– দুটোর পর।
– কেঁদেছিলে?
– তোমার কেন মনে হলো যে আমি কেঁদেছি?
– আমি তো তোমাকে জানি। আমার সাথে কথা বলার পর তুমি কেঁদেছো হয়তো।
– হ্যাঁ কেঁদেছি। এতই যদি জানতে তাহলে তখন হাতটা ছেড়ে দিয়েছিলে কেন? জানতে না আমি কতটা কষ্ট পাবো?
– জানতাম নিসা। আমি ভুল করেছি। অনেক বড়ো ভুল হয়েছে। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– ক্ষমা করলাম।
– সত্যি?
– হ্যাঁ, সত্যি।
– বলছি যে…. বিকালে একবার দেখা করবে?
– অফিস শেষে বিজি থাকবো। সময় হবে না।
– তাহলে তোমার অফিসের সামনে আসি?
দেখা করেই চলে যাবো। কথাটা শুনে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো। সেদিনও আমি ঠিক এভাবেই বলেছিলাম। নেহাল আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু আমি অতটা নির্দয় না। আমি ওকে ফেরাবো না।
– কথা বলছো না যে? আসবো।
– এসো।
– কখন আসবো?
– সাড়ে পাঁচটায়।
– রাখছি তাহলে।
– আল্লাহ হাফেজ। অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। একটু অস্বস্তি হচ্ছে। আবার একটু ভালো লাগা। মন আসলে কখন কি চায় মন নিজেই জানে না। দূর থেকে পরিচিত কাউকে আসতে দেখছি। সেই পরিচিত মুখ। সামনে এসে দাঁড়ালো।
– কেমন আছো?
– এইতো ভালো। তুমি?
– তোমাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। তোমার সাথে উনি কে?
-পরিচিত হও। উনি নিশাদ। আমার হবু বর।
বাবা ওনাকে পছন্দ করেছেন। বাবার পছন্দেই বিয়ে করছি। বাবা-মা সন্তানের জন্য কখনও খারাপ চান না। আমরা সন্তানেরাই মাঝে মাঝে ভুল সিদ্ধান্ত নেই। তার জন্য ভুগতে থাকি। আচ্ছা, অনেক কথা বলে ফেললাম। আসলে নিশাদের সাথে শপিং এ যাবো। দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় নেই। তুমি চাইলে আমাদের সাথে আসতে পারো।
– না, ঠিক আছে। তোমরা যাও। শুধু শুধু বিরক্ত করলাম।
– আরে না, বিরক্ত হবো কেন। আমার খুব ভালো লেগেছে।
নিশাদের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দিলাম। বিয়েতে দাওয়াত দেবো, আসবে কিন্তু। নেহালের সামনে নিশাদের হাত ধরলাম। তারপর ওর সাথে হাঁটা শুরু করলাম। নেহাল আড়াল হতেই নিশাদের হাতটা ছেড়ে দিলাম।
– কি ব্যাপার? হাত ছাড়লেন যে?
– না, মানে আপনার অনুমতি ছাড়াই হাত ধরেছি।
– অনুমতির কি প্রয়োজন? আমি তো সারাজীবনের জন্য আপনার হাত ধরতে চাই।
– বিয়ে করবেন আমাকে?
– সত্যি বলছেন? আমি তো ভাবলাম নেহাল সাহেবকে দুষ্টামি করে বলেছেন।
– সত্যি বলছি।
– হবু বর বলে তো পরিচয় করিয়েই দিলেন। এবার আপনাকে বিয়ে করে আপনার সম্মান বাঁচাতে হবে তো। নাহলে যে লোকে মন্দ বলবে। সবাই বলবে মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে। আমি থাকতে আপনার এত বড়ো সর্বনাশ হতে দিতে পারি?
– আপনি না……
– আমি কি হুম? বলুন বলুন?
– জানি না….
কাল রাতে খুব কেঁদেছি। তবে নেহালকে ভালোবেসে কাঁদি নি। ওর দেওয়া কষ্টগুলো সব মনে পড়ছিলো। একটা হৃদয় তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে কিভাবে কঠিন হয়ে গিয়েছিলো সব মনে পড়ছিলো। নেহালকে ক্ষমা করেছি। অপরাধ ক্ষমা করা যায়, কিন্তু ভুলা যায়না। আমার সাথে নিশাদকে দেখে নেহাল কষ্ট পাচ্ছিলো, হয়তো ওর ভেতর অনুতাপ হচ্ছিলো। ওর চোখদুটো ছলছল করছিলো। ওকে এভাবে দেখে আমার একটুও খারাপ লাগে নি। বরং আনন্দ হচ্ছিলো। নির্লজ্জের মতো নেহালের পেছনে পড়ে থেকেছি। ও আমাকে অবহেলা করে গেছে। যখন ভালোবাসার পরিমাণ খুব বেশি হয়ে যায়, আর অবহেলার পরিমাণ তার চেয়েও বেশি হয়, তখন ভালোবাসা অভিমানের নিচে চাপা পড়ে যায়। সেই অভিমান যদি ভাঙানো না হয়, তখন অভিমানগুলো জমতে জমতে আকাশচুম্বী হয়ে যায়।
যেখান থেকে ভালোবাসা আর বেরিয়ে আসতে পারে না। আর কখনও কখনও, অবহেলার কারণে সৃষ্ট জমাটবদ্ধ অভিমান থেকে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। আমি আর পেছনে ফিরতে চাইনা। বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই। নিশাদ আমার জন্য পারফেক্ট। নেহালের পর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি তার মানে এটা না যে পরেও আর পারবো না। ভালো লাগা থেকেই তো ভালোবাসা হয়। একজনের ভালোবাসা দেখে সামনের জনের মনেও ভালোবাসা এসে যায়। আমার ক্ষেত্রেও নাহয় তাই হোক।
গল্পের বিষয়:
গল্প