সাফল্য

সাফল্য
আমার স্ত্রী সুরাইয়া আজ দুদিন জ্বরে ভুগছে। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে একবার হাতটা তাঁর কপালে দিতেই, চমকে উঠলাম। গায়ে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। দুদিন বললাম চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। সে বাসায় থাকা নাপা এক্সট্রা খেয়ে বললো, জ্বর সেরে যাবে। আমিও সারাদিন অফিসে থাকি। কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলে বলে জ্বর কমে গেছে। এটা সেটা বলে বুঝ দিয়ে দেয়।গতকাল আমিও অফিস থেকে এসে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম। এখন নাস্তা করে তাঁর জ্বর দেখতেই মনটা খারাপ হয়ে গেছে। সে এত অসুস্থ একবারও বলার প্রয়োজন মনে করে না।
আমি বললাম, “এই পাগলী চলো, হাসপাতালে যাই। আমি না হয় চাকুরীর জন্য, তোমাকে সময় দিতে পারি নাই। আর জিজ্ঞেস করলেই উল্টো পাল্টা বলো। আমাকে বললে কি হতো? এত জ্বর! তোমার শরীর কেমন লাগছে কি হয় বলতে পারো না? ” একটু অভিমানের স্বরে বললো, ” যাঁর বউ সে নিজেই দেখুক। বলে দেখানোর দরকার নাই। আর যান অফিসে। ডাক্তারের কাছে নিজেই যেতে পারবো। ” “অফিসে যাবো না। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। এখনই যাবো ডাক্তারের কাছে। ” সুরাইয়া’কে নিয়ে চলে আসলাম “রেনেসাঁ হসপিটালে” । ডাক্তার ইরফান আমার পরিচিত। তাঁর কাছে নিয়ে গেলাম সুরাইয়া’কে। জ্বর মেপেছে, ১০৪° হয়ে আছে তাপমাত্রা। ঔষধ লিখে দিলো। আর বললো, মাথায় জলপট্টি দিতে। দুদিন বিশ্রাম নিলে সুস্থ হয়ে যাবে।
ফার্মিসি থেকে ঔষধ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে সুরাইয়া’কে খাবার খাইয়ে দিয়ে, ঔষধ খাওয়ালাম। সে শুয়ে আছে, আমি পাশে বসে কপালে জলপট্টি দিচ্ছি। খেয়াল করলাম দেখি দুপুর ২টা বেজে গেছে। নিজেও খেয়ে নিলাম আবার জলপট্টি দিতেছি সুরাইয়াকে। অফিসে একটা কল দিয়ে বলে দিলাম ৩-৪দিন আসতে পারবো না। কোন উত্তর শুনবার আগেই কল কেটে দিলাম। সরকারি ছুটি ছাড়া, কখনো অফিসের ছুটি নেই নাই গত ১বছরে। নতুন চাকুরী। দুদিন সেবা করে যাচ্ছি আমার বউকে। পাশের ফ্লাটের ভাবি গুলো দু-একবার উঁকি দিয়ে দেখে বললো, আমাদেরও স্বামী আছে। এত নাটক করতে হয় না। অসুস্থ সবাই হয়। আমি বউয়ের সেবা করি বলে এই কথা। গ্রামের বাড়িতে মা,বাবা। চাকুরীর কারণে দুজন শহরে থাকি। মা-বাবাকে বললাম শহরে চলে আসতে । কেউ আসে না। বলে, জমিজমা, বাড়িঘরে কে দেখবে।
সুরাইয়া একটু সুস্থ হলে ৪দিন পর অফিসে আসলাম। আমি আসতেই অফিসে আমার চেয়ে উপরের কর্মকর্তা বললো, “রানা সাহেব বউয়ের সেবা করেন। অফিসে আর আসতে হবে না। আপনার চাকুরী আর নাই। নতুন করে চাকুরী খুঁজেন। ” আমি আর কিছুই বললাম না। চুপচাপ চলে আসলাম। বেসরকারী চাকুরী তাই এই অবস্থা। আগে ২-৩টা চাকুরির ছাড়লাম মন মতো হয় না বলে। শেষমেশ এটা নিজেই আমাকে বের করলো। এমন চাকুরী চলে যাওয়া ভালো। নিজের স্ত্রীর সেবা করতে গিয়ে চাকুরী চলে যায়। এমন চাকুরী করে লাভ নাই। বাসায় ফিরে সুরাইয়া’কে বললাম চাকুরী এটাও শেষ। সে অনেক বুদ্ধিমতি। না বললেও বুঝে গেছে কেনো চাকুরী শেষ।
অনেক ভাবলাম, এমন কিছু করতে হবে। যাতে আমার স্ত্রী’কে সেবা করতে, ভালবাসতে বাধা না হয়।গ্রামে চলে যাবো এটাই ভালো। দুদিন থেকে বাসা ভাড়া, সকল কিছু মিটমাট করে বাসা ছেড়ে দিলাম। ঘরের সকল আসবাবপত্র নিয়ে চলে আসলাম গ্রামের বাড়িতে। সুরাইয়া ৪মাসের অন্তঃসত্ত্বাও। সব কিছু ভাবনার পরই চলে আসা। বাড়িতে মা-বাবাও জানতে চায়নি কেনো চলে আসছি। বরং তারাও চায় গ্রামে থাকি। কয়েকদিন ভাবলাম কি করা যায়। অনেক চিন্তার পর, দেখি কৃষি কাজে কি হয়। গ্রামে শিক্ষিত মানুষ কিছু করলে কটুকথা শোনাই সবাই। সবাই নানান কথা বলে, চাকুরী নাই এন তেন। নিজের পুকুরের শুরু করলাম মাছ চাষ। পুকুরের পাশে হাঁসের খামারও তৈরি করলাম। কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে বড় আকারে শুরু করলাম, হাস পালনও। তিন হাজার হাঁসের বাচ্চা নিয়ে আসলাম।।
দেখা শোনা করতে একজন লোকও রাখলাম। জমানো সকল টাকাই শেষ হয়ে গেলো এইসব করতে। গ্রামে নিজের স্ত্রী পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালোই দিন যাচ্ছে। এখন এটা সেটা করে সংসার চলছে। দেখতে দেখতে ছয় মাস চলে গেলো। আমাদের ঘরে নতুন মেহমান আসলো, একটা মেয়ে হয়েছে। সুরাইয়া’কে অনেক ভালবাসি। তাই তাঁর জন্য সব করতে পারি। সেও আমাকে ভালবাসে।
আরো মাসখানেক চলে গেলো। খামারের হাস শ’খানেক মারা গেছে। বাকি হাঁস গুলোর কিছু হাস ডিম দিতে শুরু করলো। আরো কিছু দিন যেতেই দৈনিক আড়াই হাজার ডিম রোজ পাচ্ছি। এইসব বিক্রি করে হাঁসের খাবার, শ্রমিকের বেতন দিয়েও মাসিক লাখ খানিক থাকছে। কয়েক মাস যেতেই সফল একজন কৃষক হয়ে উঠলাম।
স্ত্রী, বাচ্চা সবাইকে সময় দিচ্ছি। এখন রোজ করে অফিসে চিন্তা নেই। আমার খামারে ৫জন কাজ করে। শহরে থেকে সব খরচ শেষে ২০হাজার জমানোর কষ্ট এখন নাই। সবাইকে নিয়ে ভালো ভাবে থেকেও লাখ খানিক থাকে সেভিং।
আমার সকল সাফল্যের পিছনে আমার স্ত্রী’র ভালবাসাই বড় অবদান। স্ত্রী’কে ভালবেসে শহরের চাকুরী ছেড়ে আজ এত কিছু হলো। স্ত্রী’কে ভালবাসলে আল্লাহ খুশী হয়। সব কিছুতে বরকত দেয়। প্রত্যেক মানুষের সাফল্যের পিছনে স্ত্রীর হাত। সবাইকে নিয়ে অনেক ভালো আছি। আল্লাহ যেনো এমন ভাবেই আমাদের সংসারে ভালবাসায় পূর্ণ করে রাখে এটাই চাওয়া কেবল।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত