দুপুরে গোসল শেষে ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।এমন সময় পাশের বিল্ডিং এর কাকিমা বললেন কি গো নবিতা এতো রোদে ছাদে দাঁড়িয়ে আছো কেন??আমি বললাম কাকিমা একটু চুল শুকাতে এসেছিলাম। কাকিমা একটু বাকা হাঁসি দিয়ে বলল এমনিতেই গায়ের রং কালো এই ভাবে রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে তো তোমাকে রাতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।কথাটা বলে কাকিমা হাসতে হাসতে চলে গেলেন।
আমি কিছু মনে করিনি। কারণ আমার এইসব কথা শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছে।আরো কিছুক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে থাকার পর রুমে আসলাম।মা আমার দিকে রাগি চোঁখে তাকিয়ে বলল কতো করে বলেছি রোদে যাসনা । নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখেছিস কখনো। তোর জন্য মরেও শান্তি নেই আমার। লোকে যা পছন্দ করেনা তা করিস কেন। মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মায়ের চোখে পানি। বুঝতে পারলাম পাশের বাসার কাকিমা মাকে আমার নামে কিছু বলেছে। আর সেই রাগ মা আমার উপর দেখাচ্ছে।
আমি একটু মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে এলাম। কয়েক দিন পর আমার একটা ফ্রেন্ডের বিয়ের দাওয়াত পেলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম যাবো না। কিন্তু আমার ফ্রেন্ড খুব জোর করলো বিয়েতে যাওয়ার জন্য তাই বাধ্য হয়েই গেলাম।বর এসেছে সবাই চলে গেল বর দেখতে আমি বসে আছি বৌ এর পশে।তখন একটা মহিলা এসে বললো তুমি মুখে কিছু ব্যবহার করোনা??আমি একটু হাসি মুখ নিয়ে বললাম করিতো কিন্তু গায়ের রং এ যে এমন কী করবো বলেন।তখন মহিলাটা বললো তুমি বৌ এর পাশ থেকে একটু সরে যাও।বর পক্ষ বিয়ে পড়াতে আসবে তোমাকে দেখলে ওদের খারাপ লাগবে।আমি আমার ফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি একটু হাসি দিয়ে বললাম আসিরে ।অন্য কোনদিন তোর বরের সাথে দেখা করে নেব। হাঁসি মুখেই চলে এলাম বিয়ে বাড়ি থেকে।
চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। সবাইকে দেখলাম অনেক সুন্দর করে সেজেছে।আমি ও একটা শাড়ি, কপালে টিপ, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়েছি। শুনেছি শাড়িতে মেয়েদের অনেক সুন্দর লাগে। তাহলে নিশ্চয়ই আমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পাশের লোকজন আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছে।মাথা নিচু করে বসে আছি তখন ডাক পড়লো আমার। ইন্টারভিউ দিতে রুমে গিয়ে বসতেই দেখলাম স্যার আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল।আমি আমার সার্টিফিকেট গুলো তার দিকে দিতেই তিনি বললেন আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমাদের একজন স্মার্ট লোক প্রয়োজন।আমি মাথা নেড়ে বললাম হ্যাঁ জানি।তখন তিনি সার্টিফিকেট গুলো আমার দিকে দিয়ে বললেন সরি।
বাবা মা চাচ্ছে আমার বিয়ে দিতে। কিন্তু যতবার পাত্রপক্ষ আমাকে দেখতে এসেছে ততবার আমাকে দেখার পর তারা না করে দিয়েছে।অনেকে বলে বাসায় গিয়ে ফোন দেবে কিন্তু বাসায় যাওয়ার পর তাদের আর কোন খোঁজ থাকে না। আমার জন্য আমার ছোট বোনের ও বিয়ে দিতে পারছেনা। আমার ছোট বোন আমার থেকে হাজার গুণ সুন্দর আর অনেক ফর্সা ।ওর ভালোবাসার মানুষটির চাকরি হয়ে গেছে কিন্তু আমার জন্য ও ওর ভালোবাসার মানুষটির কথা বাড়ি বলতে পারছেনা।
আমি আর আমার বোন পাশাপাশি বসে আছি।তখন বোনের ফোনে কল আসলো ও ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন বললো তাঁর বাড়ি থেকে মেয়ে দেখতে চাচ্ছে।তাই এখন বোনের কথা বাড়ি বলবে। কিন্তু বোন তাকে মানা করে দিয়ে বললো যতক্ষণ না আপুর বিয়ে হবে সে বিয়ে করতে পারবেনা। ছেলেটা রাগ করে ফোন রেখে দিল। আমি বোনের পাশ থেকে চলে আসার সময় দেখলাম ও কাঁদছে।আমি ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আর ভাবছি আমার ছোট বোনটা কতো বড় হয়ে গেছে নিজের বোনের জন্য ভালোবাসার মানুষটিকে মুখের উপর না করে দিলো।
আর প্রতি রাতেই মায়ের কান্না শুনতে শুনতে আমার ঘুম আসে। বাবার অসহায় মুখটা দেখতে দেখতে বাবার হাঁসি মুখটাই এখন দেখা হয়না। এই সব ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি পড়তে লাগল।এখন চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছে আর বলতে ইচ্ছা করছে কালো মানুষের কেন এতো কষ্ট।কি অন্যায় করেছি আমরা ,কেন সমাজ তাদের কে এতো অবহেলা করে।আমরাও তো আর পাঁচটা মানুষের মতো।
গল্পের বিষয়:
গল্প