টিউশন প্রেম

টিউশন প্রেম
-কিছু মনে কর না। তোমার বেসিকটা আগে আমার দেখা দরকার।
-জ্বী দেখতে পারেন।
-আচ্ছা।’বায়ো’ অর্থ কি??
-জীবন।
-রসায়ন মানে কি??
-পদার্থের এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রুপান্তরের ফলে পদার্থের তাপমাত্রার চাপ,ঘনমাত্রার পরিবর্তন হয়।এ বিষয়সমূহ যে শাখায় আলোচনা করা হয় তাকে রসায়ন বলে।
– হুম।অনেক কিছুই তো পার।তো কোন বিষয়ে তোমার দূর্বলতা বেশি??
-জ্বী।অংকে।
-বাসা থেকে দেখে আসলে বুঝিয়ে করাতে পারবেনা??
-জ্বী।
-আচ্ছা তুমি এখন যাও।আমি তোমায় জানাবো।
-আমিতো ফোন চালাইনা।
-ওহ!তোমার বাসার ঠিকানা লিখে দাও।
ভদ্রলোক কাগজ আর কলম বাড়িয়ে দিলেন।আমি খচখচ করে লিখে গেলাম।উনি চশমার ফাঁক দিয়ে কতক্ষন আমাকে দেখলেন আর আমার লেখাকে। এতক্ষন যার কাছে ভাইভা দিলাম তিনি মিঃ কামরুল। তিনি টিউশনি ঠিক করে দেন।আমি গেছিলাম এই কাজেই।ভাবলাম অফ টাইমে পড়িয়ে বেসিকটাও ভাল হবে উপরি পাওনা হিসেবে বাড়তি হাতখরচাটাও ভাল হবে।
তিনদিন পর উনি আমার বাসায় এসে হাজির। আমি যেটাতে থাকি সেটাকে বাসা না বলে রাজমহল বললে কিছুমাত্র ভুল হবেনা। আমার এক বন্ধু নামমাত্র ভাড়ায় বাসাটা ঠিক করে দিল। অবাক হয়ে ছিলাম এত ভি. আই.পি জায়গায় এত কম টাকায় বাসা পাওয়ায়। কপালটা ভালই বলা চলে একে তো ভাল বাসা পেলাম তার উপর ভাল টিউশন পেলেতো চিন্তাই নেই। তো উনি নিয়ে গেলেন আমাকে আমার হবু স্টুডেন্ট এর বাসায়। আলিশান বাড়ি।নিচে সারি সারি গাড়ি।দুটোর নাম পড়তে পারলাম এর মধ্যে। সাদা যে গাড়িটা সেটার নাম এলিয়েন,আর কালোটা পাজেরো। পুরাদস্তুর ভদ্র লোকের মত বসে আছি।শার্ট কখনো ইন না করলেও আজ করেছি।কামরুল সাহেব কোথা থেকে একটা কালো টাই এনেছেন সেটাও গলায় বাধা। পায়ে একজোড়া শু থাকলে ভালো মানাত কিন্তু নেই। বোকা বোকা লাগছে খুব। হঠাৎ এক মহিলা আসল ট্রে হাতে করে।আমি উঠে দাড়িয়ে সালাম দিলাম।কামরুল সাহেব হাত টেনে বসিয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগলেন
-আরে ইনি এ বাসার কাজের মহিলা।
-তো?? তাকে কি সালাম দেয়া যাবেনা??
কামরুল সাহেব খুব অস্বস্তিতে পড়লেন বুঝতে পারলাম। অল্প কিছুক্ষন পর এক সুন্দরী মহিলা আসল।তাকে সালাম দিলাম। যদিও দাড়াইনি এবার।কামরুল সাহেবতো খুশিতে গদগদ হয়ে,বিনয়ে একেবারে মাখোমাখো হয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করছেন। মহিলা আমায় দেখিয়ে বললেন
-এই কি সেই ছেলেটা?যার কথা বলেছেন?
-জ্বী।
-ওকে তো খুব অল্প বয়সী লাগছে। পারবে তো?
-হুম পারবে।ভালো না লাগলে বলবেন চেন্জ করে দিব।
-হুম।কত দিন পড়াবে।কত কি দেয়া লাগবে?
-ওর সাথে কথা বলুন। মহিলা সরাসরি আমার দিকে তাকালেন।
-তুমি কতদিন পড়াতে পারবে?
-জ্বী ৪ দিন পড়াব সপ্তাহে।
-ডিম্যান্ড??
-আপনার ইচ্ছা।
-১০০০০ এ হবে? অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে।উনি কি আমায় কিনতে চাচ্ছেন। অন্য সময় হলে কিছু জবাব দিতাম।
-জ্বী হবে।
-আচ্ছা কাল থেকে পড়াতে এস।
ভাবছিলাম আমার স্টুডেন্ট বোধহয় ছাত্র কিন্তু এযে ছাত্রী! তাও আবার পরীর মত চেহারা।আমি নিয়মিত পড়াতাম। টাইম মত যেতাম। ছাত্রীও বেশ ভালো।মুন নাম ওর। আন্টিও আস্তে আস্তে খুব ভাল ব্যবহার করতে লাগল। মাঝে মাঝে মনে হত মুন কিছু একটা বলার জন্য হাসফাস করছে। আমি এড়িয়ে যেতে লাগলাম। পড়াশোনার বাইরে কথা বলতাম না। ৩ দিন জ্বরের ঘোরে অজ্ঞান!মাথা তুলতে পারিনা।তারপরও সিগারেটের তৃষ্ণা পেল খুব। শুয়েই জ্বালিয়ে দিলাম।প্রায় শেষ এমন সময় দরজায়টোকা!!মুখে সিগারেট নিয়েই দরজা খুললাম। দেখি মুন।আমার ছাত্রী!! আরও অবাক করা ব্যাপার তার পিছনে ওর আম্মু দাড়িয়ে। আমি তাদের ভিতরে নিয়ে আসলাম।সিগারেট ফেলে পারফিউম দিলাম।
– তুমি পড়াতে আসনি কেন??
-আন্টি অসুস্থ ছিলাম।আপনি বাসার ঠিকানা পেলেন কোথায়?
-হা! হা! কামরুল সাহেব দিয়েছেন।সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার যে তুমি এই বাসায় থাক!!
-কেন আন্টি??
-না কিছুনা। যদি সুস্থ হও কাল থেকে পড়াতে এস।
-জ্বী।আমি দুঃখিত কিছু খেতে দিতে পারলাম না।
-আরে ব্যাপার না। বলে আন্টি মুনকে নিয়ে চলে গেল।
ব্যাপারটা অবাক করার মত!! এমন পরিস্থিতিতে কখনো পড়ব কল্পনা করিনি। পড়ানোর সময় টের পেয়েছি যে মুন আমার প্রতি দুর্বল। কি করব বুজে উঠতে পারছিলাম না। আজ হঠাৎ করে আমাকে প্রপোজ করে বসল। ওর চোখে প্রেম দেখেছি কিন্তু আমার জন্য এটা মরনফাঁদ! আমি আন্টিকে ডাকলাম।মুনকে ভিতরে পাঠিয়ে দিলাম।
-আন্টি!
-হ্যা বলো।
-আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।আমার স্বপ্ন খুব ছোট ছোট। আমি কখনো বড় স্বপ্ন দেখিনি। আজ আপনার মেয়ে আমায় সে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।। কি করব আমি?
-আসলে আমি সব জানি বাবা।মুন তোমাকে ভালবাসে তাও জানি। কামরুল সাহেবের তোমাকে নিয়ে আসা কিংবা তোমার বন্ধুকে দিয়ে আমার বাসায় তোমাকে থাকতে দেয়া,তোমায় দেখতে যাওয়া সব মুনের কাজ। আমি ও না করিনি।আসলে তোমাকে খুব ভালবাসে ও। আমার একটা মেয়ে,সম্পদের অভাব নেই।আমি চাই আমার মেয়ের শান্তি। আমি চাই আমার মেয়ের মনের মত একটা ছেলে।তুমি কি ফিরিয়ে দিবে আমার মেয়েকে?
– আন্টি!! আমি কাঁদতে লাগলাম।
-ওই পাগল এখনো আমায় আন্টি বলে ডাকবে?
আন্টি মুচকি হাসল।মুন এতক্ষন পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে ছিল।পা টিপে টিপে ভিতরে আসল। আমি কাছে ডাকলাম। দেখি চোখের কোনে পানি জমে আছে। চোখ মুছে দিলাম।হাত দুটো ধরলাম আলতোকরে।আন্টি চুপি চুপি চলে গেল।এ মুহুর্তে তার থাকা ঠিক না। হয়ত ইতিহাসে এই প্রথম কোন মা তার মেয়েকে প্রেম করার অনুমতি দিয়ে গেল। পাগলীটা বুকের ভিতর মুখ লুকিয়ে কাঁদছে।আমি আলতো করে চেপে রাখলাম ওকে।পর্দার আড়াল হতে এক জোড়া চোখ দেখা যাচ্ছে। মুচকি হাসলাম।। শাশুড়ি এক প্রকার দৌড়ে পালাল। আর এদিকে বন্ধুর চিৎকার আর চেঁচামেচিতে আমার ঘুমটাও ভেঙ্গে গেল। “শালা উঠ, আজকে তোর পড়াতে যেতে হবে, নতুন টিউশন ঠিক করেছি মাসে ১৫০০।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত