আপনি কী কাউকে ভালবাসেন?মানে বোঝাতে চাচ্ছি আপনার কী কারো সাথে সম্পর্ক আছে? নাফিসা অগ্নি চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল, “লজ্জা করছে না,এই প্রশ্নটা করতে?বিয়ের প্রথম রাতে বউকে এই প্রশ্নটা করছেন কোন সাহসে?বিয়ে করার আগে প্রশ্নটা করেননি কেন?তখন মনে ছিল না এটা জেনে নেওয়া উচিত,মেয়েটা মনের দিক থেকে একা না অন্য কেউ তার মনে আছে?যে মেয়েটাকে বিয়ে করছেন, তার সাথে এটুকু কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি যখন, এখন এই প্রশ্নটা বড় বেশি বেমানন।আর আপনে না করার পিছনে কারণও আছে,আপনার টাকা প্রয়োজন,আর আমার বাবা সেটা আপনাকে দিতে প্রস্তুত যখন, তখন আমার মনের খোঁজ আপনার করার কথা না।আমি যে দেখতে শুনতে খুব খারাপ তা না,তবুও বাবা দু’হাত ভরে আপনাকে দিয়েছে আমার সুখের জন্য।
ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই হাস্যকর!কেন হাস্যকর বলছি, আপনাকে পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, আমি একজনকে খুব ভালবাসি, সেও আমাকে ভালবাসে।তার কোনো কিছুর অভাব নেই,অভাব শুধু একটা চাকরির। যে জন্য বাবা আমার মনের কোনো মূল্য দেয়নি।আর আপনার সাজানো ব্যবসা,লসে পড়ে এখন একটু খারাপ অবস্থা, শ্বশুর যদি একটা মোটা অংকের টাকা দেয় তাহলে ব্যবসাটা চালাতে সহজ হবে।এতে আপনার ব্যবসা বড় হবে,আয় বাড়বে।তাই আপনার মত পাত্র পেয়ে বাবা দু’বার ভাবেনি।কিন্তু এটা জেনে রাখেন,তার চাকরি হওয়ার পরে এখানে আমাকে শিকল দিয়েও বেঁধে রাখা যাবে না।আপনার ত বউ না টাকা প্রয়োজন ছিল,সেটা যখন পেয়ে গিয়েছেন তখন ত সব মিটেই গেল।আমার উপর স্বামী হিসেবে কোনো অধিকার খাটাতে আসবেন না,এর ফল ভাল হবে না।আমার বাসায় জানাবেন,জানাতে পারেন।এত কোনো পরিবারের সম্মান ই বাড়বে না।”
রাহাত কথাগুলো শুনে বেশ অবাক হল।ও ত এমনটা চায়নি,তবুও যে কেন হয়ে গেল।নিজের কাজের জন্য নিজেই অনুতপ্ত হচ্ছে। এত তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে গেল,এ যুগে এসেও কেন যে একবার ওর সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করলাম না।আগের দিন সন্ধ্যায় মেয়ে দেখে পরের দিন বিয়ে করে নিয়ে আসলাম। রাহাত এসব ভাবতে ভাবতে বসা থেকে ওঠে পড়ল। রাহাত বলল,”আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে, সেটা শারীরিক এবং মানসিক দু’ভাবেই।” নাফিসা আর কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়ল। বিয়ের এক সপ্তাহ পরে নাফিসা রাহাতকে বলল,”আগামীকাল আমি বের হব।”
“কোথায় যাবেন?”
“শাফিনের সাথে দেখা করতে।”
“আব্বু-আম্মুকে কী বলব?”
“বলবেন আমরা একটু ঘুরতে বের হব,
বের হয়ে আমি আমার মত চলে যাব,আপনি আপনার মত থাকবেন। বাসার সামনে এসে ফোন করব,তখন চলে আসবেন আর একসাথে বাসায় ঢুকব।” পরেরদিন নাফিসা শাফিনের সাথে দেখা করল। নাফিসা শাফিনকে বলল,”শাফিন দেখো নিয়তির কী খেলা!বাবা চাইলে তোমাকেও কিছু দিয়ে সাহায্য করতে পারতেন,আমাকে তোমার হাতে তুলে দিতে পারতেন।কিন্তু তা করেনি,কারণ একে ত তোমার জব নেই,তার উপর মামা মামীর কাছে বড় হয়েছ।মাকে সেই ছোটকালেই হারিয়েছ।
বাবা আছেন, ওনি তোমার বেশ খোঁজ খনর নেয়,কিন্তু ঘরে সৎমা,তাই তোমার মামা মামী ঐখানে তোমাকে রাখেনি।তোমার মামা নিজের সন্তানের মত তোমায় মানুষ করেছেন,কোনো কিছুর অভাব তোমায় দেয়নি।আর মামী মায়ের স্নেহ দিতে কোথাও কমতি রাখেনি।ওনাদের একমাত্র মেয়ে আঁখি এবার অনার্সে পড়ছে।তুমি আমায় বলেছ,আঁখির সাথে তোমার বিয়ে দিতে চায় ওনারা।সেটা বলেছ সম্পর্কের দুই বছর পরে।তখন আর আমার পিছনে ফিরে যাওয়ার কোনো দরজা খোলা নেই।ভেবেছি তুমি চাকরি পেলে মামা-মামীর সাথে প্রয়োজনে আমি কথা বলব,আর আঁখি আমাদের সম্পর্কের কথা জানে যখন,তখন নিশ্চয় ওনাদের বুঝানো যাবে।আমরা চাইলেই পালিয়ে বিয়ে করতে পারতাম।সেটা করলে মামা-মামী যেমন কষ্ট পেতেন,অন্যদিকে আমার পরিবারও কষ্ট পেতেন।সবদিক বিচার করে,আর বাবার কথা ভেবে বিয়েটা করতে হল।
আমার বর কিন্তু আমায় এখনও ছোঁয়নি পর্যন্ত। কারণ তোমার কথা আমি ওরে বলেছি,আর এটাও বলেছি তোমার চাকরি হয়ে গেলে তোমার কাছে আমি চলে আসব।কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সেটা আমি চাইনা,তোমার সাথে আমার জীবন স্রষ্টা লিখেনি,লিখলে তোমার সাথেই থাকতাম।স্রষ্টা তোমার সাথে আঁখিকেই লিখে রেখেছেন আর আমার সাথে রাহাতকে।আমার জানামতে তোমার সাথে আমি কোনো প্রকার পাপে জড়াইনি,তবুও আমি ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব আর তওবা করব।তবে এখনই না,দেখি ও আমায় আরও কত সহ্য করতে পারে।তুমি কিছু বলবে শাফিন?দেখো শাফিন সব কষ্টই এক সময় শেষ হয়ে যায়,এটাও শেষ হয়ে যাবে।” “না কিছু বলার নেই।তুমি ভাল থেক,আমি না হয় একটু দুখে থাকলাম তাতে কী!তবে তোমার মত করে এত সহজে হয়ত স্বাভাবিক হতে পারব না,তবে সময় সব ক্ষতই এক সময় সারিয়ে তুলে,হয়ত আমারও সেরে যাবে,হয়ত না।তবুও দোয়া করি তুমি ভাল থেক,সুখে থেক।”
“শাফিন এগুলো নিয়ে যাও,আঁখির জন্য। চকলেট আছে,ওর পছন্দের লেখকের দুইটা বই আছে,দিয়ো বলো আমি দিয়েছি,খুশি হবে।” এরপর আর কখনো নাফিসা শাফিনের সাথে দেখা করেনি,কোনো যোগাযোগ পর্যন্ত রাখেনি।কিন্তু রাহাতকে বুঝাতো ওদের এখনও সম্পর্ক আছে।বাহিরে কাউকে বুঝতে দেয় না রাহাতের সাথে নাফিসার সম্পর্ক কেমন,খুব স্বাভাবিক আচরণ করে সবার সাথে। প্রায় ১১ মাস পরে রাহাত শ্বশুরের থেকে নেয়া বিশ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরেছে। এর জন্য রাহাতকে দিন রাত ব্যবসার পিছনে সময় দিতে হয়েছে। যদিও শ্বশুর টাকা ফেরত নিতে চায়নি,রাহাত জোর করেই দিয়েছে। নাফিসার বাবা ফোন করে নাফিসাকে টাকার কথা জানালো,নাফিসা শুনে বেশ অবাক।
রাত ১০ টায় রাহাত বাসায় ফিরলো।রুমে আসতেই আমতা আমতা করে নাফিসা বলল,”আপনি বাবাকে টাকা ফিরিয়ে দিলেন শুনলাম, কিন্তু কেন?” “কারণ আমি টাকার জন্য হয়ত বিয়েটা করিনি তাই,তখন সমস্যা ছিল একটু তাই নিয়েছিলাম।এখন সমস্যা শেষ হয়ে গিয়েছে তাই ফিরিয়ে দিয়েছি।শুধু তাই না,আপনি এখন আরও খুশি হবেন।” রাহাত ডিভোর্স পেপারটা নাফিসার হাতে দিল। “আপনার মুক্ত হওয়ার পথ এটা,টাকাটা ফেরত দিতে পারছিলাম না ত তাই এতদিন আপনাকে মুক্তির স্বাদ দিতে পারিনি। শুনলাম আপনার প্রেমিকের চাকরি হয়েছে, এখন আপনাকে গ্রহণ করতে সমস্যা হবে না আশা করি।” নাফিসা একটানে ডিভোর্স পেপারটা ছিঁড়ে ফেলল আর বলল,”চাকরি হয়েছে এটা জানেন, অথচ এটা জানেন না সে যে বিয়ে করেছে?”
“বিয়ে করেছে!তাহলে আপনার কী হবে?”
“যে মেয়েটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, স্বামী,সংসার আছে,সে অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করবে এটা কী করে ভাবেন!আমার তকদিরে আপনি লেখা ছিলেন, সেটা বিয়ের রাতেই মেনে নিয়েছি। আর আপনি যে ভেবে আসছেন, আমার সাথে তার যোগাযোগ আছে,একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন, ওর সাথে বিয়ের এক সপ্তাহ পরে যে দেখা করেছি,তারপর আর করেছি কিনা?”
“তাহলে যে প্রতি সপ্তাহে বের হন ঐটা?মাঝরাতে যে কথা বলেন এগুলো কী?” “এই সবকিছু আমার আর নুসরাতের প্ল্যান ছিল।কোনোদিন ত আমার কথা শুনেননি,এমনকি আমি কোথায় যাচ্ছি সেটাও ফলো করে দেখার চেষ্টা করেননি।দেখছিলাম আমায় কত সহ্য করতে পারেন।বলতেই হবে আপনার অনেক ধৈর্য। শুধু এইটুকু বলব সম্ভব হলে আমায় ক্ষমা করুন,আর আপনার সাথে জীবন কাটানোর সুযোগ দিন।” রাহাত কী বলবে বুঝতে পারছে না।
রজনীগন্ধা হাতে দিয়ে বলল,এগুলো কিনেছিলাম শেষ বিদায় জানিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভ কামনা করব বলে।কিন্তু এখন ত আর এটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না,বাকীটা বুঝে নিন।ফ্রেশ হয়ে আসছি,খাবারের ব্যবস্থা করুন।” এই বলে রাহাত ওয়াশরুমে চলে গেল,আর নাফিসার চোখ থেকে সুখের পানি ঝড়ে পড়ছে! শাফিন জীবন সাজিয়েছে আঁখির সাথে।তবুও যেন কোথাও বুকের ভিতর সেই নীরব ব্যথাটা রয়েই গিয়েছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প