এই মাত্র আমার ক্রাশ আমাকে ছেড়ে চলে গেলো তার বাবা মায়ের হাত ধরে। আমি অনেক কান্নাকাটি করেও তাকে আটকে রাখতে পারিনি। ক্রাশ চলে যাওয়ার পর থেকেই আমি ধুরুম ধুরুম করে জ্ঞান হারাচ্ছি। আমার বাবা-মা আমাকে সান্ত্বনার বানী শুনিয়েও আমাকে শান্ত করতে পারছে না। আমি দুই মিনিট অন্তর অন্তর ‘ও আল্লাহ গো! এখন আমার কী হবে?’ এই কথাটা বলেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি। জ্ঞান ফেরার কিছুক্ষন পর বড় আপু আমার সামনে এসে বসলো। আমি তখনও কেঁদে যাচ্ছি। বড় আপু নরম গলায় বললো, ‘এতো কান্নাকাটির কী আছে? তুই তো উঠতে বসতে ক্রাশ খাস। এক ক্রাশ গেছে অন্য ক্রাশ আসবে। সমস্যা কী?’
আমি নাক টেনে টেনে বললাম, ‘আপু তুমি বুঝতে পারছো না আমার কষ্টটা। তুমি এখন যাও আমি বি আমার কথাটা শেষ করার আগেই বড় আপু চেঁচামেচি করে বাসা মাথায় উঠিয়ে ফেললো। আব্বু-আম্মু দৌঁড়ে আমার রুমে আসলো। উনারা রুমে আসতেই আপু উনাদের ধরে মরা কান্না জুড়ে দিয়ে বললো, ‘আম্মু গো দেখো, তোমার ছোটো মেয়ে নাকি ওর পঞ্চাশতম ক্রাশের জন্য বিষ খাবে?’ আপুর কথা শুনে উপস্থিত সবাই যতটা না চমকালো, তার থেকে বেশি চমকালাম আমি। আজব আমি কখন বললাম আমি বিষ খাবো! আমি তো বিস্কুট খেতে চাচ্ছিলাম। আর পুরো কথাটা না শুনেই এমন আজাইরা কথা বলার কোনো মানেই হয় না। আমার পঞ্চাশতম ক্রাশ চলে যাওয়ার পর যেখানে আমার পাগল হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে আপু পাগল হয়ে গেলো ক্যান? বিড়বিড় করে এসব বলছি।
আপুর কথাশুনে আম্মু-আব্বু কেমন করে জানি আমার দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে আমি কোনো চিড়িয়াখানার জন্তু! যে আমাকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখতে হবে। আজব! এসব কাহিনি ভালো লাগছে না দেখে রান্না ঘরে চলে গেলাম। ওমা, আমার পিছন পিছন সবাই রান্নাঘরেও চলে আসলো। আমি বিরক্তিকর চাহনিতে কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে গিয়ে দা হাতে নিলাম। এই দৃশ্য দেখে আব্বু খপ করে আমার হাত থেকে দা কেঁড়ে নিয়ে বললেন, ‘মা এমন পাগলামি করতে হয় না। তোমার পঞ্চাশতম ক্রাশ তো কয়েক বছরের জন্য লন্ডন গেছে। তারপর তো তোমার কাছে ফিরে আসবে। এখন যদি তুমি তোমার জীবন শেষ করে ফেলো, তাহলে ও কষ্ট পাবে না?’ আশ্চর্য! আমি কখন আমার জীবন শেষ করতে গেলাম। আমি তো দা হাতে নিয়েছি ডাব কেঁটে খাওয়ার জন্য। আপুর সাথে সাথে কি আব্বুও পাগল হয়ে গেলো? এসব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। না, এখানে এদের সাথে থাকা যাবে না। তাহলে নিশ্চিত আমিও এদের সাথে সাথে পাগল হয়ে যাবো।
কিছুক্ষণ রুমের মধ্যে পায়চারি করলাম। আমার সাথে সবাই পায়চারি করলো। রাগে আমার গা ফেটে যাচ্ছে। মাথা দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। নাহ, আর এক মুহুর্তও আমি রুমে থাকতে পারবো না। এই মুহুর্তে একটু ছাদে যাওয়া দরকার। তাহলে মাথাটা একটু হলেও ঠান্ডা হবে। যেই ভাবা সেই কাজ ছাদে যাওয়ার আগে মোটা দড়িটা খুঁজে বের করতে হবে। স্টোর রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আম্মু পিছু ডাকলো। দাঁত কিড়মিড় করে বললাম, ‘কী হয়েছে? শান্তিতে একটু দড়িটাও খুঁজতে দিবে না নাকি?’ আমার কথা মাটিতে পড়তে দেরি, কিন্তু আম্মুর হা হুতাশ বিলাপ পাড়ার দেরি হলো না। ‘তুই এমন করিস না মা। দেখ তোর ক্রাশ ফোন দিয়েছে। ভিডিও কল দিয়েছে। আয় একটু কথা বলে নে। তোর ভালো লাগবে।’
আম্মুর কথাশুনে আমি খুশিতে গদগদ হয়ে গেলাম। দৌঁড়ে গেলাম আমার পঞ্চাশতম ক্রাশকে দেখার জন্য। ওমা কী সুন্দর করে হাসছে আমার বাবুটা। ওলে বাবালে আবার দেখি ফিডারও খাচ্ছে। কিছুক্ষণ ক্রাশকে দেখার পর ক্রাশের মা আসলো ক্যামেরার সামনে। উনাকে সালাম দিয়ে বললাম, ‘মামী, আমার পঞ্চাশতম ক্রাশটাকে দেখে রাখবেন। ও যাতে একটুও কান্নাকাটি না করে। সময়মতো খাওয়াবেন। খুব যত্ন নিবেন। ওর মাত্র দুইবছর বয়স দেখে ওকে রেখে দিতে পারলাম না আমার কাছে। নাহলে ওকে ওই সুদূর লন্ডনে যেতেই দিতাম না।’ মামী আমার কথা শুনে হেসে উঠলেন। আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন যে উনি খেয়াল রাখবেন আমার ক্রাশের। যাক, ক্রাশকে এক নজর দেখে মনটা কিছুটা হলেও ভালো হয়ে গিয়েছে।
যাইহোক, এবার দড়িটা খুঁজে বের করতে হবে। অবশেষে দড়ি খুঁজে আবার ছাদের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। মাঝখানে বেগড়া দিয়ে দাঁড়ালো আম্মু। করুন গলায় বললেন, ‘ক্রাশের সাথে কথা বলেও শান্ত হলি না? সেই দড়ি খুঁজে বের করলি গলায় ফাঁসি দেওয়ার জন্য? এতো অবুঝ তো তুই ছিলি না। এর আগেও তো তোর ঊনপঞ্চাশটা ক্রাশ তোকে ছ্যাঁকা দিয়ে চলে গেছে। তখন তো এমন করিস নি।’ আম্মুর কথাগুলো শুনে মেজাজ চরমভাবে বিগড়ে গেলো। কড়া গলায় বললাম, ‘চুপ করবে এবার তোমরা? সেই সকাল থেকে শুরু করছো এসব। একবার আপু, একবার আব্বু আর এখন তুমি। আজব! আমি কখন বললাম, আমি সুইসাইড করবো? দড়িটা খুঁজে বের করলাম ছাদে দোলনা টাঙানোর জন্য। উফফ!
আর উনপঞ্চাশটা ক্রাশ আমাকে ছ্যাঁকা দিয়েছে মানে? শুনো, মাত্র বিশজন আমাকে ছ্যাঁকা দিয়েছে। আর দশজনকে আমি নিজেই ছ্যাঁকা দিয়েছি। দশজন এখনও আমার ক্রাশের লিস্টে আছে। আর দশজনকে ছাড়িও নাই এখনো, আবার ঠিকঠাক ভাবে ধরেও রাখিনি। মানে পেন্ডিং রেখেছি। আর একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা শুনো, আমার ক্রাশ খাওয়ার লেভেল মাত্রাতিরিক্ত! বুঝলা? মাত্র হাফসেঞ্চুরি হয়েছে। সেঞ্চুরি হওয়ার আগ অবধি তোমার এই মেয়ে থামবে না। আর এসব সুইসাইড ফুইসাইড করার জন্য তোমার মেয়ে জন্মেনি। তোমার মেয়েছে জন্মেছে শুধুইইই ক্রাশ খাওয়ার জন্য। যতদিন বেঁচে আছি, ক্রাশ খেয়েই যাবো, খেয়েই যাবো, খেয়েই কথাটুকু শেষ করার আগেই পিছনে ধপাস করে একটা শব্দ হলো। তাড়াতাড়ি পিছন ঘুরে দেখি আমার কথাগুলো হজম করতে না পেরে আব্বু মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে আব্বুকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো। আব্বুর সাথে আমিও গেলাম। হসপিটালে গিয়ে ডাক্তারকে দেখে আবার ক্রাশ খেয়ে ফেললাম। তবে এবার এই একান্ন নাম্বার ক্রাশের কথা আপাতত চেপে রাখলাম। নাহলে হয়তো আব্বুর সাথে সাথে আম্মুও মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে!
গল্পের বিষয়:
গল্প