ক্ষুদা

ক্ষুদা
স্টেশনের শান মেঝেতে ঘুমিয়ে আছি। অল্পক্ষন হলো ঘুমালাম। যখন হালকা ক্ষুধা লাগে শরীর ঝিমুনি দেয়। কেমন যেন ঘুম আসে আমার। তাই ঘুমিয়ে পড়েছি গামছা পেতে। কিন্তু ক্ষুধা বেড়ে গেলে!
গাছের পাতার ফাক দিয়ে রোদ এসে পড়ছে মুখের উপর বার বার। ঘুম ভেঙে যেতে চাইছে। কিন্তু আমি তো জাগতে চাই না। জেগে গেলে যে উদরে আগুন লাগবে। মন শুধু খাই খাই করবে। আমাদের কি অত খেতে আছে? কিন্তু ক্ষুধা ও রোদ দুটিই নাছোড়বান্দা, আমার ঘুম যে তারা ভেঙেই ছাড়লো। কি জানি কি শত্রুতা আমার সাথে। একমুঠো ভাত, এক বাটি মুড়ি, এক টুকরো অর্ধেক ছেড়া রুটি, আহ্ কত সুন্দর স্বপ্ন দেখলাম। উঠে বসে এদিক ওদিক তাকালাম, ওমা! কিছুই নেই দেখি। কোন বজ্জাতে নিয়ে গেলো সব? উঠে গিয়ে স্টেশনের বাইরে একটি দোকানের সামনে আসেছি। কি সুন্দর অমৃতের গন্ধ পাচ্ছি। ভিতরের নাড়ি-ভুড়ি সব বেরিয়ে ছুটে যেতে চাইছে। ঐ খাবারের গন্ধরাও বুঝে গেছে আমি তাদের আত্মীয়। যার জন্য খাবারের জন্ম হলো সেই জানোয়ার আমার মধ্যে উথাল-ফাতাল করছে। তারপরও দোকানের ঐ হারামজাদারা আমায় খেতে দিলো না। উল্টো দুটো গালি আর একটি প্রহার দিলো উপহার।
হেটে একটি বাড়ির সামনে গেলাম। কত মানুষ ডুকছে বাহির হচ্ছে। কত হাসাহাসির রোল। প্যাকেটে প্যাকেটে কি যেন ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে। নাকে গন্ধ লাগার সাথে সাথে ভিতরের জানোয়ারটা আবার লাফালাফি শুরু করলো। আমার নিজেরই গালি দিতে মন চাচ্ছে জানোয়ারটাকে। হেটে একটু ভিতরের দিকে ডুকলাম। একপাশে নারকেল গাছের মত কি গাছ একটা যেন। তার নিচে ধুলার উপর বসে রইলাম। ভাবলাম এখানে কিছু খেতে দেবে। আমার যে আর তর সইছে না। কোথা থেকে দারোয়ার ব্যটা সামনে এসে হাজির হলো। ওর মুখের দিকে চেয়ে আছি। কিছু এনেছে নিশ্চশ।
ব্যটায় কি সব বিড় বিড় করে বলে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। শেষে মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম রেগে গেছে। কেমন শেয়ালের মত মুখ করে আমায় আবার দুই ঘা দিলো হাতের লাঠি দিয়ে। লাঠি দিয়ে ঠেলেই খেদালো আমায় সেখান থেকে। বাইরে এসে মনে পড়লো গামছাটা ফেলে এসেছি। আবার ডুকতে যাবো দেখি দারোয়ান ব্যটা এখনো শেয়াল মুখো হয়ে লাঠি হাঁকিয়ে যাচ্ছে। গামছা টা ফেলেই চলে এলাম বাইরে। এদিক ওদিক হেটে বেড়াচ্ছি কোথাও খাবার নেই। কেউ খেতে দেয় না। ঘুরে ফিরে স্টেশনের সেই ধুলোমাখা মেঝেতেই এসে বসলাম।
পাশের টুলে বসে তিনটি ছোকরা সিগারেট টানছে। কিছুক্ষন তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি জানি কিছু খেতে দেয় কি না। একজনে বলে উঠলো, কি এভাবে মুখের দিয়ে চেয়ে আছেন কেন? আমি বল্লাম ক্ষুধা লাগছে, কিছু খেতে দাও। শুনলো না! আবার বল্লাম, ক্ষুধা লাগছে কিছু খেতে দাও। তাও কিছু দিলো না। আমি চিৎকার করে বলে চলেছি, খেতে দাও। বুকটা ফেটে যাচ্ছে চিৎকারের সাথে তবুও কিছু খেতে দিলো না। একটু পর পাশের ছেলেটা বল্ল, আরে তুই কারে কি জিগাস করস। ওতো একটা পাগল তার উপর বোবা।
কি বল্ল ছেলেটা? বোবা? সেটা আবার কি জিনিস। তারাও উঠে চলে গেল। মানুষ আসে, কিছুক্ষন বসে আবার চলে যায়। কেউ কেউ আমার দিকে চেয়ে থাকে কেউ পাশ ঘেসে চলে যায় কিন্তু কেউই কিছু খেতে দেয় না। সেই ধুলো জমা মেঝেতেই পড়ে আছি। দুবার অন্ধ্যকার হলো দুবার আলো ফুটলো। কি জানি কি বলে, আমার কাছে সবই এক। শুধু হতচ্ছাড়া ক্ষুধা জানোয়ারটার চিৎকার চেচামেচি সব সময়। জীবন আমায় ছুয়ে দেখে না মৃত্যু ও কাছে আসে না। শুধু দুজনে দুরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মজা দেখে।
– হঠাৎ কান যেনো বেজে উঠলো। পাশে কোথাও দুটি কুকুর মারামারি করছে। পাশ ফিরে দেখি একটি অস্ত রুটি নিয়ে তারা ঝগড়া করছে। সাথে সাথে আমার ভিতরের জানোয়ারটা যেনো নেচে উঠলো। না, আমি যাবো না! কিন্তু জানোয়ারটার শক্তির সাথে পেরে উঠিনি। আমায় টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলো। কুকুর দুটোর সামনে থেকে রুটিটি ছিনিয়ে নিয়ে মুখে পুরে দিলো ক্ষুধা বজ্জাতে। আহ কি তেজ জানোয়ারটির। ইউরেনিয়াম থেকেও তেজস্ক্রিয় তিন দিন না খেয়ে থাকা মানুষের ক্ষুধা।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত