‘কেশবতী?’ বিছানায় শুয়ে থাকা নিনিত আবার বলল, ‘কেশবতী?একটু শুনবে?’ পারু রান্না করছে। নিনিতের ডাক শুনে তাড়াহুড়োয় উঠে দাঁড়ালো। মনে মনে শুভকে কিছুসময় বক’ল। শুভকে নিনিতের পাশে রেখে বলেছিল, ‘বাবার কিছু লাগলে আমাকে ডাক দিবি।’ শুভ মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়েছিল। এখন তার মাথা নাড়া’নি বের হবে। নিনিতের পাশেই শুভ কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে আছে। তার এক হাত নিনিতের বুকের ওপর। সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছে। পারু আঁচলে হাত মুছে নিনিতের কপালে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, ‘কিছু লাগবে?’
নিনিত চোখ খুলল। পারুর ডান হাত নিজের ডান হাতের গন্ডিতে নিল। পারুর চোখে চোখ রেখে বলল, ‘তোমাকে। আমার তোমাকে লাগবে।’ ‘ রান্নাটা শেষ করি। তারপর সারা রাত তোমার ইচ্ছেমতো কাছে থাকব।’ ‘আমার এখন চাই। কেশবতীর খুলা কেশ দেখতে যে বড্ড ইচ্ছে করছে ।’ পারু হাসল। এই হাসি মনের গহীন পুরের হাসি। স্বর্গের এক বিশুদ্ধ হাসি। হাসিটা সম্পূর্ণ মুখে ছেয়ে গেল। মুখটা বেশ মায়াবী হয়ে উঠেছে। ঠোঁটের হাসি নিয়ে বলল, ‘বাবু দশ’টা মিনিট সময় দাও। ‘
‘আমার যে এখন লাগবে।’
‘একটু বুঝ শুভ এখনো খায় নি। রান্না করতে হবে ।’
‘আচ্ছা যাও।’
পারু নিনিতের এই অভিমানী মুখ দেখে হাসল। সব হাসি যেন আজ তার ঘরে এসেছে। সে নিনিতের কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তাদের বিয়ের বয়স সাত বছরের মতো হবে। বিয়েটা প্রণয়ঘটিত। পারু তাকে প্রেমে পড়ার একটা কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ‘তোমার এই চুল।’ পারু বলল, ‘এই চুল তো নকলও হতে পারতো।’ ‘নকল হলে তাকে আসলে পরিণত করতাম।’ এই প্রকার বার্তালপ তাদের মধ্যে প্রায়ই হয়। একসময় তা ঝগড়ায় রূপ নেয়। নিনিত বিভিন্ন ভাবে ভিন্ন দিক দিয়ে পারুর চুলের বর্ণনা করে তার পরও বর্ণনা শেষ দেখতে পায় না। প্রতিবারই নতুন কথা মনে আসে। তার মতে এক বিশাল প্রকৃতি পারুর চুল। পারুর চুল কোমরের অনেকটা নিচ পর্যন্ত বিস্তিত। এই ঘন চুল পারুর সুন্দর্য্যের এক অংশ বটে। যখন খুলা থাকে তখন মনে হয় এক অপূর্ব ঝর্ণা । আশেপাশের ঘহীন পরিবেশের কারণে তার জল কুচকুচে কালো রং ধারণ করেছে।
নিনিত চোখ বুজল। আয়োজন নিয়ে চোখ বুজা যাকে বলে। সে তার কল্পনায় কেশবতীকে আমন্ত্রণ করবে। সব কল্পনা সরাতে সরাতে একসময় দেখল সদ্য স্নান করা পারু তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে। এই পানি নিচে পড়লে কী টুপ টুপ আওয়াজ হয়? জমাকৃত পানিতে পানি পড়লে টুপ টুপ শব্দ হয়। সে তো কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছে না। না-কি কল্পনা শব্দহীন? শব্দ গবেষণা বাদ দিয়ে চুল নিয়ে আলোচনা করাই মঙ্গলকর। চুলের এই রূপ দেখে তার মনে হল এ যেন একগুচ্ছ সুন্দর কালো মেঘ পরস্পর জগড়া করছে। সেই মেঘ থেকে প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে অসংখ্য বৃষ্টি কণা। ধরণী সেই কণা পেয়ে ধন্য হয়েছে। এই ধরণী নিনিত নিজে।
আজ তিনদিন ঘরে কিছু নেই।পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয় সবাই পারুর পরিবারের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পারুর একার পক্ষে সংসার চালানো ভীষণ কষ্ঠকর হয়ে উঠেছে। এক সপ্তাহ ধরে বিছানায় পড়ে আছে। অসুস্থ শরীর কাজের জন্য অনুপযুক্ত। এদিকে ঘরে খাবার নেই। পারুর নিজেকে অকুল সমুদ্রের বাসিন্দা মনে হচ্ছে। সেদিন রাত্রে নিনিতের চোখ চিরতরে বন্ধ হয়েছিল। দশ মিনিট আর পার হয়নি। পারুর এ জীবনে দুঃখ বলতে কিছু থাকলে সেটা এই দশ মিনিট। সেদিনের পর থেকে বাড়িতে থাকা কালীন সময় চুল খুলা থাকে। তার ধারণা নিশ্চই নিনিত আড়াল থেকে তাকে দেখছে। বাঁধা চুল নিনিতের অপছন্দ।
দেখলে রাগ করবে। সে আবার অল্পতে রেগে যায়। সেই রাগটাও মিষ্টি। তবে এখন সে আর রাগাতে চায় না। একটু ভালোবেসে দশ’টা মিনিট অনুভব করতে চায়। তার ভিতরে বাস করছে এক গভীর পিপাসা। এটা বাকি থাকা ছয় শত সেকেন্ড পিয়াস। কিছুক্ষণ ধরে বাইরে থেকে ফেরিওয়ালা ডাকছে। পারু মনে মনে বলল, এতো ডাকার কী আছে? একবারে হয় না যখন চলে যাবে। সে কয়েকবার শুভকে ডাকল । জবাব না পেয়ে নিতান্ত অনিচ্ছায় ঘরের বাইরে আসল। ফেরিওয়ালা বলল, ‘বই-খাতা,প্লাস্টিক, লোহা, চুল এসব কিছু আছে? বেচবেন?’ পারু বলল , ‘না এসব কিছু নাই। আপনি আসুন।’ ফেরিওয়ালার বস্থা খালি। সে কয়েকবার বলল কিছু আছে কি-না খুঁজে দেখার জন্য। পারু সাফ জানিয়ে দিল নাই। ফেরিওয়ালা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যেতে লাগল। মিনিট দু-এক পর কী মনে করে পারু তাকে ডাকলো। ফেরিওয়ালা এসে বলল, ‘কী আছে দেন?’
‘চুল কিভাবে নেন?’
‘বিভিন্ন ভাবে নেই। আপনার কাছে কতো টুকু আছে?’
‘আছে বেশ কিছু।’
‘বেশি হলে কেজি হিসাব।’
‘কেজি কত করে?’
‘আপনার কাছে চুল আছে?’
‘আছে। দাম বলেন।’
‘দু’শ টাকা।’
‘এতো কম?এতো কম টাকায় হবে না।’
‘আচ্ছা যান আরো পঞ্চাশ টাকা।’
‘তিন’শ?’
‘ভাবি আর পারব না।আর গেলে উপরে পড়বে। এগুলো বেচে আমারও চলতে হবে।’
‘আচ্ছা। ঠিক আছে। ‘
চুল বিক্রির টাকা দিয়ে কিছু খাবার আর ঔষধ আনা হলো। রোগ নিরাময় করা জরুরী হয়ে পড়েছে। পরের বার বেচার কিছু নাই। খাবারের জন্য কাজ করতে হবে। কাজের জন্য সুস্থ শরীর চাই। অসুস্থ শরীর চায় ঔষধ । শুভ কিচ্ছুক্ষণ পর পর মায়ের মাথার দিকে তাকাচ্ছে। মায়ের এই বিদ্রুপ অবস্থা দেখে সে বিস্মিত। বিষয়টা বুঝতে পারছে না । আবার সাহস করে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছে না। বাবার মৃত্যুর পর মা কেমন তেতো হয়ে গেছেন। এখন হিসেব করে কথা বলতে হয়। যতটুকু তেতো ভাব নেওয়া যাবে সেই ওজনের কথা। শুভর এমন চাওয়া চাওয়ি দেখে পারু বলল, ‘এমন করে কি দেখিস?’ শুভ দ্রুত মাথা নাচতে নাচতে বলল, ‘কিছু না। কিছু না।’ ‘মাথা দেখছিস?’ শুভ দৃষ্টি সরিয়ে বলল, ‘না । না।’ ‘মাথায় বেশ উকুন হয়েছে। উকুন যন্ত্রনায় ঘুমুতে পারি না। তাই সব ফেলে দিয়েছি।’
শুভ মনে মনে বলল,’ তাই বলো। আমিও তো বলি যেখানে খুলা চুল থাকে আজ সেখানে কাপড় !’ একসময় ভাবল বেশ ভালো হয়েছে এখন আর ভাতে চুল পাওয়া যাবে না। ঘেন্না হীন ভাত খাওয়ার সাধটা নিশ্চয়ই অপূর্ব। বাবা মারা যাওয়ার পর তো ভাতে চুল পাওয়া ডাল-ভাতের মত হয়ে গেছে। মা’কে দেখতেও বেশ ভালো লাগছে। স্কুলের কথা মনে হতেই ভিমরি খেল। মায়ের এমন রূপে দেখলে সবাই তাকে খেপাবে। মা তো স্কুলের পাশেই কাজ করে। এখন কী হবে? পারু পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘কী এতো ভাবছিস। খাবার সময় শুধু খাওয়ার চিন্তা। একমনে খাবার শেষ করবি।’ ‘হু। হু।’ ‘চিন্তা করিস না। চুল ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তোর স্কুলের আশেপাশে যাব না।’ শুভ বড় বড় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সেই বিস্মিত চোখে ভয় দেখা দিয়েছে। মনের খবর মা কী করে জানলেন? মা কি আমার মন পড়তে পারে? সর্বনাশ! এখন থেকে মায়ের সামনে সতর্ক হয়ে থাকতে হবে। মনে মনে মা’কে কত কিছু বলা হয়। মা এসব জানলে শিরচ্ছেদ অনিবার্য।
দু’বছর হলো শুভ ইতালিতে আছে। তার শশুরের উদ্বেগে ইতালিতে যাওয়া। শুভর স্ত্রী মণীষা। সুন্দরী,রূপবতী,গুণবতী সব কিছু সে। পারুর মতে সব গুণের অধিকারী তার ছেলের বউ । বউয়ের এমন আদর যত্ন দেখে তৃপ্ত মনে বলেন, ‘আমি জীবিত অবস্থায় স্বর্গ সুখ লাভ করছি। আমার কোন দুঃখ নাই।’ মণীষাও সুখী ও খুশি । শাশুড়ি তাকে একদম মেয়ের মত দেখেন । তার মনেই হয় না যে সে শশুর বাড়ী আছে । আর বিয়েও হয়েছে! বাপের বাড়ি থেকে বরং এখানে বেশি সুখে আছে। বাপের বাড়ি নিজের পছন্দ , ইচ্ছা নিয়ে সংশয়ে থাকতে হতো। কিছু করতে হলে আগে থেকে অনুমতি লাগত। এখন সেই ইচ্ছা পছন্দের বিষয় গুলো শাশুড়ি বউ মিলে আলোচনা করেন। স্বপ্ন মণীষার হলেও যেসব জায়গায় ত্রুটি থাকে সেখানটায় শাশুড়ি ধরিয়ে দেন। মণীষা খুশি মনে সেগুলো শুধরেও নেয়।
তাদের ভরা গাঙ্গে ভাটা পড়ল। হঠাৎ একদিন পারুর সৎ বোনের আগমণ। তারা পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন বলে কোন আত্মীয় স্বজনের সাথে সম্পর্ক নেই। পালিয়ে বিয়ে করার একটা কারণ ধরা যেতে পারে সেই রাতকে।
দীপালি কিছু পারেন আর না পারেন কলকাঠি নাড়তে বেশ ভালো জানেন। বোনের বাড়িতে প্রথম কয়েকদিন ভালো মতোই কাটল। কিছুদিন পর তিনি তার গুণাগুণ দেখাতে শুরু করলেন। একমাসের মধ্যেই বউ শাশুড়ির মধ্যে দূরত্ব বাড়তে লাগল। এখন আলোচনার বদলে ঝগড়া হয়। ঝগড়া অবশ্য একতরফা। মণীষা বলে আর পারু শুনে। দু’মাসের মধ্যে ছেলের মধ্যেও দূরত্ব সৃষ্টি হল। শুভ ইতালি থেকে ফ্রান্সে যাবার জন্য যাত্রা শুরু করেছে। তাই আগের মতো ফোনালাপও হয় না। দু-একদিনে একবার ফোন আসলেও তারা দু’জন কথা বলে সময় পার করে দেয়। শুভ যে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে না তা না, জিজ্ঞেস করলে মণীষা বাহানা দেয়। সেই বাহানার কারিগর মণীষার পাশেই থাকেন।
শুক্রবার সকাল দ’শটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। পারু বিছানায় শুয়ে আছে। ইদানিং শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে। কোমরের যন্ত্রণাটা বেড়েছে। তার ঘুম ভাঙল চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে। কিছু সময় ব্যতিত হবার পর বুঝলেন এই শব্দের উৎস মণীষা। আজকাল তার গলা একটু বেশিই শুনা যায়। তিনি শুয়ে শুয়ে চিৎকার শুনছেন। বেসুরা কন্ঠ কোন তালমিল নেই। শব্দগুলো ক্রমাগত তীব্র হচ্ছে। মণীষা চিল্লাতে চিল্লাতে পারুর কাছে আসলো। সে বলল, ‘ম্যাডাম ফুলি, এখনো ঘুমে আছেন দেখি। উঠবেন কখন আর কাজ করবেন কখন?’ পারু নিঃশব্দে বিছানা থেকে উঠল। মণীষাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। হাত মুখ ধুয়ে কাজে লাগল। রান্নাঘরে কাজ করছিল এমন সময় মণীষা এসে বলল, ‘বেশ্যা বেটি একশো বার বলছি চুল খোঁপা করে রাখবি। এই তোর চুল ছাড়া কেন? ভাতে চুল পেলে তোর বেশ্যাবৃত্তি বের হবে । ‘ মনীষা আরো কিছু সময় বকল। পারু তার নিজের মত কাজ করছে।
এই দু’মাসে তার কানে কিছু গালি সাধারণ শব্দে পরিণত হয়েছে। এখন এগুলো শুনলে খারাপ লাগে না। শুধু মণীষার গালি দেওয়ার ভঙ্গিটা খারাপ লাগে। মনটা তখন বড্ড খারাপ হয়। তখন মনে ঢুকে অপিরিমিত বিষ। যার যন্ত্রণা ভয়ানক। প্রথমে কিছুদিন নিরাপদ পরিধি থেকে প্রতিবাদ করলেও এখন তা পুরোপুরি বন্ধ। কিছু উল্টা-পাল্টা করলে বা অবাধ্য হলে মণীষা হুমকি দেয়। হুঁশিয়ারি গুলো উচ্চ ধরনের। সেসবের মধ্যে একটা হুমকি হলো, শুভর ক্ষতি করবে। তার বাবাকে বলে যেকোন কিছু করতে পারে। কথার অবাধ্য হলে খবর আছে।
পারু মণীষার কথা শুনে মনে মনে হাসে। সে জানে মণীষা কিছু করবে না। সে কেন পৃথিবীতে এমন কোন নারী নেই যে নিজের সোহাগ নিজেই নষ্ঠ করবে। প্রয়োজনে নিজে প্রাণ দিবে তবু স্বামী উপর আঁচ পড়তে দিবে না। নারী বড় মমতাময়ী। সে যে রূপেই হোক না কেন। কন্যা, স্ত্রী, মা,ভাবি,চাচি,মামি সব জায়গায়ই তাদের কোন তুলনা হয়না। তারা তুলনাহীন! দীপালি ও মণীষা ভাত খাওয়ার জন্য টেবিলে বসে আছে। পারু দু’থালা ভাত টেবিলে রাখল। দু’হাতে তরকারি বাটি দুটো টেবিলে রাখছে। এমনকরে দু’হাত দিয়ে প্রয়জনীয় সব টেবিলে আনছে। খাবার টেবিলে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু কাঙ্ক্ষিত ভাবে ঘটল। দীপালির থালায় চুল পাওয়া গেছে। দু’জন ভাত খাওয়া শুরু করলে একসময় মণীষার সামনে দীপালি তার থালা উঁচিয়ে বলল,’ দেখতো মা ওটা কি? কেমন শাকের মতো লাগছে। ঘরে শাক আনলো কে?’
মণীষা দীপালিকে কিছু বলল না। ফোঁস ফোঁস করতে করতে পারু, এই পারু বলে ডাকল। পারু টেবিলের কাছে আসা মাত্র মণীষা দীপালির থালাটা তার মুখের দিকে ছুড়ে মারল। থালার সবকিছুই পারুর গা থেকে মেঝেতে পড়ল। মণীষা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, ‘বলেছিলাম না ভাতে যেন চুল না পাই। এটা তোর দিয়ে রাখছিস। এই তোর মন কই থাকে? পাড়ায়? এতো সখ যখন যা না ওখানে ফুর্তি কর গে।’ পারু বলল,’ চুল কোথায়? আমি দেখলাম না তো?’ মণীষা ভাতে মাখা হাতটা পারুর দিকে উঁচিয়ে ধরল। পারুর মুখে আরো কিছু ভাত পড়ল। সে তীব্র শব্দ করে বলল,’চোখে মরদ ভাসলে দেখবি কী করে? পারু মাথা নিচু করে ফেলল। অপরাধি কণ্ঠে বলল,’কার থালায় চুল ছিল?’ ‘কার আবার দীপু মাসির থালায়।’
পারু আর কোন শব্দ করল না। চুপচাপ নতুন করে দুটি থালা সাজিয়ে নিল। টেবিলে রাখার সাথে সাথে থালা দুটি মেজেতে ফেলে তারা দু’জন বাইরে বের হয়ে গেল। আজকের ভাত হয়তো বাইরে লিখা ছিল। পারু কিছু সময় পর বুঝতে পারল চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। চোখের পানি নালার মতো গাল বিয়ে একসময় কাপড়ে পড়ছে। তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছল। এই বয়সে চোখে জল আসা নিতান্তই লজ্জার বিষয়। কেউ দেখলে কী না কী ভাববে । চোখের পানিরও একটা নির্দিষ্ট বয়স আছে। একেক সময় তা একেক অর্থ বহন করে। এই বয়সে চোখের পানি গোপন রাখাই মঙ্গল। দীপালি দি কেন এমন করছে সে বেশ ভালো করেই জানেন। দীপালি দি নিনিত কে চাইতেন। তার একবার মনে হল সবকিছুর মূল হলো সেই রাত। সেদিন যদি এমনটা না হতো, তাহলে এমন হতো না। এখন হয়তো সবকিছু অন্য রকম হত।
ভোর পাঁচটা। পারু তার চামড়ার বেগ কাঁধে নিল। বেগের ভিতর কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আছে। মণীষা ও দীপালি বেলা করে ঘুম থেকে উঠে। তাদের চোখ খুলার আগেই তিনি নিরুদ্দেশ হবে। এই পরিকল্পনা কাল দুপুরে করেছে। কোন রকম আগপিছ না দেখেই পথে নামল। তার মনে একবার এসেছিল যে, ভবিষ্যত ভয়ঙ্কর হতে পারে। তখন নিজেকে বলেছে, ভয়ঙ্করের আর কী বাকি আছে? গৃহ ত্যাগের দু’মাস পূর্ন হয়েছে। নতুন শহরে দুপুরের রাস্তায় হাঁটছেন এমন সময় পিছন থেকে ডাকল। তাকে থামতে বলল। সে পিছন ফিরে তাকালো। ছেলেটাকে কোন দিন দেখেছে বলে মনে হয় না। তাকে দেখলেও কোন সাধু সন্ন্যাসী মনে হবে না। মা বলে ডাকার কোন কারণও নেই। তাহলে সে মা বলে ডাকল কেন?
গল্পের বিষয়:
গল্প