“আপনি বিয়েতে ‘না’ করে দিন।” মৌ ছেলেটার সাথে কথা বলতে ছাদে এসেছে। ছেলেটার নাম শুভ। আজ ওদের বাসা ভর্তি মেহমান। পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে মৌকে। মৌ কিছু বলার আগেই শুভ আবার বলতে শুরু করল।
“আমি বিবাহিত। দেড় বছর আগে আমার আর ফারিয়ার বিয়ে হয়েছিল। মাসখানেক আগে আমাদের সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় ও।” শুভ থামে। গলা জড়িয়ে আসে ওর। কিন্তু সবকথা বলতে চায় সে। একটা মেয়েকে ঠকাতে চায় না। “আমার পরিবার বিয়ের কথাটা বলেনি। বিবাহিত ছেলের কাছে কে মেয়ে বিয়ে দিতে চায় বলেন? তারা হয়তো আমার সুখের জন্যই কথাটা গোপন করেছে। কিন্তু নিজের সুখের জন্য আরেকজনকে সারাজীবন ঠকিয়ে কি আসলেই সুখী থাকা যায়? এ বিষয়টা আর কাউকে বলবেন না। আমি চাই না, আমার পরিবার অসম্মানিত হোক। আপনি বরং বিয়েতে না করে দিন। তাহলেই হবে।” অনেক শক্ত করে শুভ কথাগুলো বলল। তবুও মৌ ছেলেটার নরম মনটাকে অনুভব করতে পারছে। কথা বলার সময় যদিও একবারও পিছে ফিরে তাকায়নি শুভ। কিন্তু মৌ এর বিশ্বাস ছেলেটার চোখের কোণ ভিজে আছে।
“আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?” মৌ বলল।
“জি বলুন।” হাত দিয়ে চোখ দুটো মুছে মৌ এর দিকে ফিরল শুভ।
“আপনার কি বিয়ে করার ইচ্ছে আছে?”
“এই কথা কেন বলছেন?”
“আরে বলেন না।”
“হ্যাঁ আছে। তবে কোন মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে বলেন!”
“আপনি কি আপনার হবু বউকে ভালোবাসতে পারবেন?”
“চেষ্টা তো করব। তবে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। এটা তো আর আমার হাতে নেই।”
“তাকে সুখী রাখতে পারবেন?”
“জি, চেষ্টা করব।”
“তাহলে বিয়েতে আমারর আপত্তি নেই।”
“কী বলেন! এটা কী করে সম্ভব!”শুভ চোখ বড় বড় করে বলল।
“অসম্ভবের কী হলো আবার?”
“আপনি তো সব জানেন। তারপরও বিয়েতে রাজী হচ্ছেন! আপনি না করে দিলে আমার থেকেও ভালো ছেলে পাবেন। কমপক্ষে বিবাহিত তো আর হবে না আমার মতো।”
“ভালো ছেলে পাওয়া না পাওয়া সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আমি একটা বাজি ধরতে চাচ্ছি।”
“কেমন বাজী?”
“দেখুন, অ্যারেঞ্জড ম্যারিজ আমার কাছে বাজি ধরার মতই, লাভ ম্যারিজ গুলোর মতো কাল্পনিক সুখের আশা নিয়ে এটা শুরু হয় না। কেউ নিশ্চয়তা দেয় না কোনো কিছুর। কপাল ভালো থাকলে ভালোও হতে পারে আর নাহয় খারাপ!”
“আপনি যেহেতু অ্যারেঞ্জড ম্যারিজই করছেন তাহলে আমিই কেন?”
“কারন বাজিটা তো আপনার উপর ধরেছি।”
“মানে?”
“মানে হচ্ছে, আপনি কথাগুলো গোপন করতে পারতেন। এই সৎ ব্যাক্তিত্বটা ভালো লেগেছে আমার কাছে।
বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর জানলেও হয়তো তখন আর করার মতো তেমন কিছু থাকতো না। মেয়েদের দ্বিতীয় বিয়ে এই সমাজে অনেক কঠিন। আপনি বলেছেন, আপনার বিয়ে করার ইচ্ছে আছে এবং হবু বউকে ভালোবাসবেন ও সুখী রাখবেন। আমি এর অর্থ ধরে নিচ্ছি, আপনি নতুন করে শুরু করতে চাচ্ছেন সবকিছু। আর আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, এই একজীবনে সবাই একজনকে ভালোবেসেই পুরো জীবন কাটিয়ে দেয় না। অনেকে দ্বিতীয়জনকে আগের প্রিয় মানুষটার থেকে বেশি ভালোবাসতে পারে বা ভালোবাসে। আমার ধারনা আপনিও পারবেন। আর যদি না পারেন, খবর আছে কিন্তু বলে দিচ্ছি!” চোখ রাঙিয়ে শেষের কথাটা বলল মৌ। “আমি আগে নিচে যাচ্ছি। আপনিও চোখ মুখ মুছে নিচে আসুন একটু পর।”
শুভ বোকার মতো দাড়িয়ে আছে। মৌ এর কাছ থেকে এমন কথাবার্তা আশা করেনি । মেয়েদেরকে বুঝা আসলেই বড্ড কঠিন। এর আগে ফারিয়াকে বুঝতে পারেনি, আর এখন মৌকে। হাসির এক ঝিলিক শুভর মুখে দেখা দিলো।
মৌ আর শুভর বিয়েটা হয়ে গেলো মাসখানেক পরই।বিয়ের পর মৌ খেয়াল করেছে, শুভ কখনই ফারিয়ার নাম মুখে নেয়নি। এমনকি কখনো মৌ ইচ্ছে করে কথা তুললেও হাসিমুখে শুভ এড়িয়ে যায় প্রসঙ্গটা। বছর শেষ না হতেই খুশির সংবাদ জানল সবাই। মৌ সন্তানসম্ভবা। সবচেয়ে বেশি খুশি শুভ। সারাদিন শুধু হবু সন্তানের চিন্তা! ‘এটা করো না বাবুর সমস্যা হবে না।’ সারাদিন শুভর দিক-নির্দেশনা মেনে চলতে হয় মৌকে। আগামী মাসের ১৩ তারিখ ডাক্তার ডেট দিয়েছেন। আর এদিকে শুভ ১১ তারিখ থেকেই ৭ দিনের ছুটি নিয়ে রেখেছে।
“আপনি বিয়েতে ‘না’ করে দিন।” রাফিনা ছেলেটার সাথে কথা বলতে বারান্দায় আসল। ছেলেটার নাম শুভ। আজ ওদের বাসা ভর্তি মেহমান। পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে রাফিনাকে। রাফিনা কিছু বলার আগেই শুভ আবার বলতে শুরু করল। “আমি বিবাহিত। দুই বছর আগে আমার আর মৌ এর বিয়ে হয়েছিল। মাসখানেক আগে আমাদের সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় ও।” শুভ থামে। গলা জড়িয়ে আসে ওর। চোখের কোণে কয়েক ফোঁটা পানি। কিন্তু ওকে তো সব বলতে হবে। বলতে হবে কারন একবার হলেও নিজ সন্তানের মুখ দেখতে চায় শুভ। কিন্তু মানুষগুলো বড্ড দুর্বল হওয়ায় কোনো মেয়েই শুভর অমানুষ সন্তানগুলো জন্ম দিতে পারেনি!
গল্পের বিষয়:
গল্প