অসমাপ্ত ভালোবাসা

অসমাপ্ত ভালোবাসা

খুব বিরক্ত হয়ে সোফার এক কোনায় বসে আছে ইফতি। বিরক্ত হলেও মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। কেননা ছোট ভাইয়ের বন্ধুর জন্মদিনে আসতে হয়েছে মায়ের আদেশে। নিজের সমবয়সী তেমন কাউকে না পেয়ে বেকার বসে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই। কেক কাটা শেষ, রাতের খাবারটা সেরেই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে। ভেতরে সব বাচ্চারা হইচই করছে, বন্ধুরা মিলে নাচগান করছে যে যার মতো আর বেচারা ইফতি একা একা বসে রাগে ফুলছে।

অনেকক্ষণ বসে থাকার পর একটু বাইরে বের হবে ইফতি। বাইরে বেরিয়ে গেটের মুখে এসেই থমকে গেলো ইফতি। একটা মানুষ কিভাবে এতো সুন্দর হয়? মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তার মায়াবী চাহনি। এত মায়াবী মুখ আগে কখনো দেখেনি ইফতি। সে একবার দেখেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কত বয়স হবে,ইফতি থেকে বড়জোর ২/৩ বছর ছোট। এতোখানি দৃঢ় ব্যক্তিত্ব আগে কখনও কোন মেয়ের মধ্যে দেখেনি সে…যদিও মেয়েদের সামনে সে বরাবরই কাঁচা, এখন পর্যন্ত কোন মেয়ের সামনে মুখ ফোটাতে পারেনি। মেয়েটির এমন অদ্ভুত রূপ এবং ব্যক্তিত্ব আচ্ছন্ন করে রাখে অনেকক্ষণ। এক মনে মেয়েটির কথা ভেবেই চলেছে ইফতি। অনুষ্ঠান শেষ সবাই বাড়ি ফিরছে। ছোট ভাইয়ের সাথে অনেকটাই ফ্রী ইফতি। বাড়ি ফেরার পথে আর না থাকতে পেরে অনেক আগ্রহ নিয়ে ভাইকে জিজ্ঞেস করে বসে-

– নিলয় , ঐ মেয়েটা কে রে ?
– কোন মেয়েটা, ভাইয়া ?
– ঐ যে সাদা-কালো সালোয়ার কামিজ পরা লম্বা করে মেয়েটা ?
– ও…উনি ? উনি তো অনুশ্রী দি… আমার বন্ধুর খালতো বোন। আমাদের স্কুলেই পড়ে। খুব মেধাবী ও ভালো ছাত্রী।

ও আচ্ছা ! ইফতির মনে কেবল অনুশ্রীর মায়াবী মুখটা ভাসতে থাকে। ছোটবেলা থেকেই ইফতি একটু লাজুক। পরিচিত গণ্ডিতেই কেবল হৈ-চৈ করতে তার জুড়ি নেই কিন্তু অপরিচিত মানুষের সামনে আবার একবারে সহজ হতে পারে না সে। মেয়েদের বেলায় তো আরও শোচনীয়,চট করে কারো সাথে মিশতে পারে না। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপারটা একদম আলাদা কেন জানি অনুশ্রীর মুখটা খুব মনে পড়ছে , ইচ্ছে করছে ওকে ডেকে নামটা জিজ্ঞেস করি, যদিও ওর নামটা আগেই শুনেছে ইফতি। বেশ কিছুদিন পর নিলয়ের সাথে কথায় কথায় জানা গেলো অনুশ্রীদের বাসাটাও খুব বেশি দূরে নয়। ইফতি তখন থেকেই ভাবতে লাগলো কীভাবে যোগাযোগ করা যায় অনুশ্রীর সাথে ? সবার হাতে হাতে মোবাইল আসে নি তখনও। আর অনুশ্রী ও মোবাইল ব্যবহার করে না। কিভাবে কথা বলা যায় ,যোগাযোগ করা যায় এ নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পরে গেল।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল অনুশ্রীর বাবা সরকারি চাকুরিজিবী। সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের একমাত্র কন্যা অনুশ্রী। মা-বাবা ভাই মিলে ৩ জনের সংসার। তার নিজের ভাই নেই ভাবতেই ইফতির যেন সস্থি ফায়ার এলো যে ঝামেলা করার মতো কেউ নেয় । কৌশলে একদিন ওদের বাসার দারওয়ানের কাছ থেকে অনুশ্রীর বাবার মোবাইল নাম্বার টা যোগাড় করে ফেলল সে। কিন্তু ফোন করে কাকে চাইবে ? ফোন তো ওর বাবার কাছে থাকবে, কি বলবে ? এসব ভাবতে ভাবতে রাতে সাহস করে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলো ইফতি। কিন্তু নাহ, কোন উত্তর নেই। অনেক অপেক্ষার পরও উত্তর এল নাহ। এভাবে ১০/১৫ দিন অপেক্ষা করার পর ইফতি প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছে, ঠিক ২৭ দিন পর হঠাৎ মেসেজ এর উত্তর এলো।

– কে আপনি ? এতদিন পর মেসেজ এর উত্তর পেয়ে অবাক,খুশিতে আনন্দের স্রোত বয়ে গেলো ইফতির মনের ভেতর দিয়ে। নিজের পরিচয় গোপন করে উওর দিল….

– আমি সাইফ। নটরডেম কলেজে পড়ি।

কোন ফোন দেয়া নয়, কেবল মেসেজ আদান-প্রদান চলতে লাগল তাদের। নিজের মোবাইল নেই বলে সুযোগ সুবিধা মত বাবার মোবাইল থেকে মেসেজ দিত অনুশ্রী। ইফতির উত্তর দিতে দেরি হতো না। আস্তে আস্তে দুজন খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায়। ইফতি বুঝতে পারে,অনুশ্রীর কাছের বন্ধু বলতে তেমন কেউ নেই। ইফতির কাছে নিজের সবকিছু শেয়ার করতে ভালবাসে।ইফতিও তার যত কথা সব শেয়ার করতে লাগলো ,যতটা পারে ততটা সাপোর্ট করতে লাগল।

কেউ কাউকে না দেখে,ফোনে কথা না বলে অদ্ভুত এই যোগাযোগ চলতে লাগল তাদের মধ্যে। অবশেষে এক রাতে অনুশ্রী নিজেই ফোন করলো ইফতিকে। কথায় কথায় নিজের আসল পরিচয় দিলো ইফতি। ভেবেছিল অনেক রাগ করবে। কিন্তু না, অনুশ্রী একটু মন খারাপ করলেও মেনে নিয়েছিল,আসলে ও এমন ই শান্তশিষ্ট…কারো উপর রাগ করতে পারে না আর আগেই খোঁজ নিয়ে জেনেছিলো সাইফ আসলে ইফতি, তার খালাতো ভাইয়ের বন্ধুর বোরো ভাই । এভাবে প্রায় ৩ মাস কেটে গেল। এরপর একদিন অনুশ্রীর সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ হল ইফতির। স্কুলের সামনে গিয়ে অনুশ্রীর দেখা পেল ইফতি। ইফতির হাতে চট করে একটা উপহার কার্ড ধরিয়ে দিয়েই রিকশা করে চলে গেলো। রাতে ফোন দিল অনুশ্রী।

– কী ব্যাপার বলতো? ইফতির মনে আনন্দ মেশানো প্রশ্ন…

– কী আবার ? বন্ধু তো বন্ধুকে উপহার দিতেই পারে,আমিও দিলাম….এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে?
বন্ধুত্ব গড়ে উঠায় তাদের নিয়মিত যোগাযোগ একটু কমে যায়। হয়ত সপ্তাহে একবার বা মাসে ৩/৪ বার । কিন্তু এই মুহূর্তটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত দুজনেই। দুজনেই দুজনের সঙ্গ উপভোগ করে দারুনভাবে। ইফতি তখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সারা দিন কোচিং ক্লাস আর অনুশ্রীর চিন্তায় দিন কাটে তার। অনুশ্রী স্কুল ও কোচিং ছাড়া বাইরে বের হয় না। তাই একই শহরে থাকলেও তার সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। শুধু ফোনে কথা বলেই দিন কাটতে লাগল। বন্ধুত্ব থেকে ভালোলাগা, দুজনের প্রতি দুজনের দুর্বলতা ,দুজনেই দুজনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ভালমতই। কিন্তু লজ্জায় কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলে উঠতে পারছে না….

এক দিন রাতে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না অনুশ্রী। অসহায় ভাবে নিজের ভালবাসা প্রকাশ করে ইফতির কাছে। ইফতিও কম ভালবাসে না অনুশ্রীকে। কিন্তু অনুশ্রী তো হিন্দু ,আর ইফতি মুসলমান। ধর্ম বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে ভেবে নিজে মুখে প্রপোজ করে না ইফতি, যদি বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যায়। কিন্তু অনুশ্রী আজ নিজেই ভালোবাসা প্রকাশ করেছে তাই ধর্মের বাঁধার কথা একটা বারের জন্যও মনে আসে না কারোর।নিয়তির কাছে নিজেদের ভবিষ্যৎকে সঁপে দিলো দুজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ভালো হল না ইফতির। পরের বছর আবার পরীক্ষা দিলো। এবারে ঠিকই সুযোগ পেল কিন্তু ঢাকা থেকে অনেক দূরে চিটাগাং। বুকে অনেক কষ্ট নিয়ে পরিবারের সবাইকে,অনুশ্রীকে ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেলো ইফতি। যোগাযোগের জন্য কেবল মোবাইল টুকুই ভরসা। বাবার ভয়ে যখন তখন ফোন করতেও পারে না ইফতি। কেবল মাত্র যখন সে মিসকল দেবে তখনই কথা বলা সম্ভব। এরই মধ্যে দেখতে দেখতে অনেক গুলো বছর পার হয়ে গেছে। অনুশ্রীর উচ্চমাধ্যমিক শেষ। হাসি আনন্দ বেদনা সব মিলিয়ে বেশ চলতে লাগল ওদের জীবন।মাঝে মাঝে ঢাকায় এলেও অনুশ্রীর সাথে দেখা হওয়ার সৌভাগ্য হয় না ইফতির। এ নিয়ে মান অভিমান হলেও ওর সমস্যার কথা ভেবে সে মেনে নিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের পর অনুশ্রী ভর্তি হয়েছে রুয়েটে। দুজনের ঠিকানা হল বাংলাদেশের দুই প্রান্তে। এখন নিজের মোবাইল নিয়েছে অনুশ্রী। রাজশাহী চলে যাওয়ার আগের রাতে ফোন করলো ইফতিকে।

– আমি তোমার কাছ থেকে আরও দূরে সরে গেলাম, তাই না ? তুমি কি এতো দূরে কখনও আসবে আমাকে দেখতে ? কান্না ভেজা কণ্ঠে অনুশ্রী জিজ্ঞেস করে।

– আরে পাগলি, তুমি যে প্রান্তেই থাকো না কেন, দেখো আমি ঠিক চলে আসব ! কষ্ট চেপে রেখে হাসতে হাসতে বলে ইফতি। এইটা সেইটা নিয়ে অনেক খুনশুটি করে।

শুরু হল ওর নতুন হোস্টেল জীবন। ইফতি মুখে যতই বলুক কিন্তু এতোটা দূর আসবে ওর সাথে দেখা করতে সেটা একবারও ভাবে নি অনুশ্রী। হঠাৎ অনুশ্রীকে অবাক করে দুই সপ্তাহের মাথায় ঠিকই হাজির ইফতি। ইচ্ছে মতো রিকশায় ঘুরাঘুরি,অনেক জমানো কথা শেয়ার করা ও খাওয়াদাওয়া করলো দুজন মিলে। এতোটা বছর পর এই প্রথম ইফতিকে নিজের মতো করে কাছে পেয়েছে অনুশ্রী। যেন ছাড়তেই মন চায় না তার। কিন্তু যেতেই হবে ইফতিরও তো পড়াশোনা আছে। মোবাইল এর কল্যাণে দূরত্ব বাধা হয় না ওদের প্রেমের কাছে। সারা দিন রাত কথা হয় আর সুযোগ পেলেই ইফতি ছুটে যায় তার ভালবাসার কাছে।মাঝেমাঝে এটা ওটা গিফট কিনে পাঠাতে ভুল হয় না ইফতির। অনুশ্রীও যতটা পারে গিফট পাঠায়। দুজন দুজনকে অসম্ভব ভালবাসে। শত ব্যস্ততার মাঝেও একে অন্যের খেয়াল রাখতে ভুল হয় না কারোর।

মাঝে মাঝে অনুশ্রী ভবিষ্যতের কথা ভাবে। কী পরিনাম হবে এই সম্পর্কের ? ধর্মের বাঁধার কাছে অসহায় দুজনেই। বাবা-মাকে ছেড়ে আসার কথা ভাবতেও পারে না অনুশ্রী। আর ইফতি তো এগুলো নিয়ে ভাবতেই চায় না। তাকে বললে কেবল বলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কীভাবে, এভাবে আর কত দিন চলবে ? জানে না দুজনের কেউ ই। ইফতি অনুশ্রীর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। ও যদি ছেড়ে চলে যায়, তাহলে ইফতির কী হবে তা ভাবতেও বুক কাঁপে। কিন্তু এভাবে আর কতো দিন? ভেবে কূল পায় না অনুশ্রী। দিন যায়,বছর যায়। মাঝে মাঝে ছোট ছোট অভিমান যখন ঝগড়ায় রূপ নেয়,তখন অনুশ্রী বলে ওঠে আমি আর সম্পর্ক রাখব না তোমার সাথে। তবে রাগের ধাক্কা কেটে গেলে আবার সে নিজেই ঠিকঠাক করে নেয় সব। বেশিক্ষন রাগ করে থাকতেই পারে না পাগলিটা। পরম আদরে কাছে টেনে নেয় ইফতিকে।

প্রায় ছয় মাস কেটে গেছে অনুশ্রীর সাথে দেখা নেই…ল্যাব,টিউশন ও ফাইনাল পরীক্ষার কারণে রাজশাহী আসা হয় নাই, বিভিন্ন কাজের জন্য ফোনেও খুব বেশি কথা হয় নি। অনুশ্রীকে খুব একটা সময় দিতে পারে নি এই ক মাস….পরেরবার যখন রাজশাহী যায় ইফতি টের পায় যে সব কিছু আর আগের মতো নেই। কোথায় যেন সুর কেটে যেতে শুরু করেছে। রিকশায় ইফতির হাতে নিজের হাত রেখে দূর দিগন্তে তাকিয়ে আনমনা হয়ে বসে থাকে অনুশ্রী। আগের মতো প্রাণ খুলে হাসে না ,কোন কিছু আর শেয়ার করে না…ইফতি জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে ? চমকে উঠে অনুশ্রী বলে- কই, কিছু হয় নি তো ! চিন্তিত মনে ইফতি চিটাগাং এ ফিরে আসে। বার বার জিজ্ঞাসা করেও কোন সঠিক উত্তর পায় না সে। অনেক কথা লুকিয়ে যায় ইফতির কাছে। এভাবে আরো কিছুদিন চলতে লাগল আগের মতোই। একদিন আচমকাই সিদ্ধান্তটা এলো। অনুশ্রী ফোন করে ইফতিকে জানিয়ে দেয় যে তার পক্ষে আর এই সম্পর্কটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। সে এখন আর ইফতিকে ফিল করে না,তাকে মিস করে না,তার প্রতি একঘেয়েমি হয়ে গেছে…কথাগুলো শুনে হতবাক হয়ে যায় ইফতি।

– না এটা হতে পারে না,রাগের মাথায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে পার না অনুশ্রী, ইফতি বুঝিয়ে বলে। কিন্তু কোন কাজ হয় না, সে ইফতিকে স্পষ্ট জানিয় দেয় আর যেন তাকে কখনো ফোন না দেয়….সবকিছু ভুলে যেতে বলে ফোন রেখে দেয়। কোনভাবেই যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না ইফতি।কেবল ধর্মের বৈরিতা নয়, তাদের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তৃতীয় একজন। ঈশান অনুশ্রীর ক্লাসমেট, এর কথা আগেও জানত ইফতি। কিন্তু শুধুই বন্ধু বলে জানত। মাঝে মাঝে ওদের ফোনে কথা হতো। সেই ঈশান অনুশ্রীকে ক’দিন আগে প্রপোজ করেছিল। কিন্তু কেবল বন্ধু হিসেবে দেখত বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আর এই সব কথাই ইফতিকে বলেছিল অনুশ্রী। কিন্তু আজ অনুশ্রী-ই ইফতিকে জানিয়ে দেয় যে, সে এখন ঈশান কে খুব বেশি ফিল করছে,ঈশান ইফতির থেকেও বেশি কেয়ারিং,ওরা প্রায় ই দেখা করে,একসাথে ঘুরতে যায় এবং বেশ কিছুদিন হল তাদের মধ্যে নতুন সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। আজ রাতে সে অনুশ্রীকে আবার প্রপোজ করবে। অনুশ্রী খুব খুশি হবে যদি ইফতি ওকে আর ফোন না দেয়।

ইফতি পারেনি নিজেকে শক্ত রাখতে। অসহায় ভাবে ভেঙ্গে পড়ে অনুশ্রীর কাছে। নিজের ভালোবাসা ফিরানোর জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করেছে, প্রেম ভিক্ষা চেয়েছে। কিন্তু না, অনুশ্রী আর ফিরে আসেনি। একটু কথা বলো
অনুশ্রী চলে গেছে আজ অনেক দিন। প্রায় বছর খানেক হতে চলল। অনুশ্রী আর কোনোদিনই ফোন দেয়নি ইফতিকে। সে এখন জানতে পেরেছে কেন তাকে ছেড়ে ঈশান কে বেঁচে নিয়েছিল অনুশ্রী। ঈশান বাবার এক মাত্র সন্তান। টাকা পয়সা,বিষয় সম্পত্তি মিলিয়ে অনেক ধনী পরিবার তাদের। মাঝের ওই ছয় মাস পরীক্ষার জন্য ইফতি দেখা করতে আসতে পারে নি, সেভাবে সময় দিতে পারে নি আর ঠিক সেই সময় ঈশান অনুশ্রীকে সময় দেয়, একসাথে রিকশা করে ঘুরে বেড়ায় এবং প্রপোজ করে। ইফতির ভালোবাসা তুচ্ছ ভেবে ওকে ভুলে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে অনুশ্রী ইফতিকে লুকিয়েই নতুন সম্পর্ক শুরু করে।ঈশানকে শুধু বন্ধু বলে পরিচয় দেয়। এখন ঈশানের সাথে ভালমতই তার প্রেম চলছে সে খবরও পেয়েছে ইফতি।

যাওয়ার সময় অনুশ্রী বলে গিয়েছিলো ইফতি যেন ওকে ভুলে যায়। ইফতিকে আর মনেই পড়ে না অনুশ্রীর। কিন্তু ইফতি এখনো ভুলতে পারেনি তার অনুশ্রীকে। ঈশ্বর ইফতিকে ভালবাসার ক্ষমতা দিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু ভুলতে পারার ক্ষমতা দেন নি। সেদিনের পর থেকে আর কোনোদিন ঠিকমত রাতে ঘুমোতে পারেনি ইফতি। ও জানত অনুশ্রীর সাথে বিয়েতে ওদের ফ্যামিলি বাঁধা হয়ে দাঁড়াত তবে বিয়ে হওয়াটা অসম্ভব ছিল না…নিয়তির কাছে পরাজিত হলেও তা মেনে নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করত ইফতি। কিন্তু না ইফতি ধর্মের কাছে নয় , নিজের ভালোবাসার কাছে হেরে গেছে। এতগুলো বছরের ভালবাসা মাত্র কয়েকদিনের ভালোবাসার কাছে পরাজিত হয়েছে। চোখের আঁড়ালে থাকতে থাকতে কখন যে মনের আঁড়ালে চলে গিয়েছিলো বুঝতেই পারে নি ইফতি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত