মধ্যবিত্ত পরিবারের খুব সাধারণ মেয়ে প্রিয়তা। বাবা-মা আর ছোট ছোট ২ ভাই-বোন মিলে ৫ জনের সংসার তাদের। বাবা স্কুল শিক্ষক, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছোট ভাই ক্লাস সেভেন ও ছোট বোন ক্লাস ফাইভে পড়ে। প্রিয়তা সবার বড় এবার এইচ এস সি পরীক্ষা দেবে। প্রিয়তা দেখতে যেমন সুন্দর তেমন কাজে কর্মেও খুব পারদর্শী। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন হস্তশিল্পের কাজ করতে সে অনেক পছন্দ করে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, বাহিরে ঘুরে বেড়ানো, জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান একদম তার পছন্দ না।
প্রিয়তা খুবই সাদামাটা, সহজ-সরল ও ধার্মিক মেয়ে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করে খুব ভাল একটা মেয়ে। বাহিরে বের হলেও সবসময় শালীন পোশাক ও মাথায় ঘোমটা দিয়ে চুল ঢেকে রাস্তায় চলাফেরা করে। বাইরের অপরিচিত কারো সাথে দেখা করা এমন কি কথা পর্যন্ত বলে না। শুধুমাত্র কলেজ পর্যন্তই তার যাওয়া আসা। স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে গ্রামের ছোট বড় সবার কাছেই প্রিয়তা বেশ প্রসংশিত। সুন্দর হলেও মনে কোন অহংকার নেই, কারো সাথে কোন হিংসা নেই। সমসময় ভাল কাজ করে, বিপদে আপদে মানুষের উপকার করে, গ্রামের মানুষজনকে সৎ পথে চলার জন্য উৎসাহিত করে।
প্রিয়তা এমন একটা মেয়ে যাকে দেখলে যে কেউ পছন্দ করে ফেলে, ওর প্রেমে পরে যায়। ওর ঘন কালো চুল, কাজল টানা চোখ, মায়াবী হাঁসি যে কাউকে পাগল করে দিতে পারে। যেমন রূপ তেমন গুন যেন কোনটারই কোন অভাব নাই। বাড়িতে প্রায়ই বিয়ের জন্য ঘটক আসে কিন্তু প্রিয়তার বাবা রাজি নন, মেয়েকে শিক্ষিত না করে বিয়ে দিবেন না। মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে, মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান…
প্রিয়তার কাছেও কম প্রপোজাল আসে নি সেই ক্লাস টেন থেকেই প্রেমের অনেক চিঠি পেয়েছে। কলেজের ফ্রেন্ড, সিনিয়র ভাই এমনকি আশেপাশের এলাকার ছেলেরা ও প্রিয়তার প্রেমে পাগল প্রায়। প্রিয়তার বান্ধবীদের দিয়ে অনেকেই অনেকবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে, চিঠি লিখে পাঠিয়েছে কিন্তু প্রিয়তা গ্রহণ করে নি। প্রিয়তা নিজেও অনেকবার ইভটিসিং এর স্বীকার হয়েছে তবে কাউকে কখনো বকা দেয়া বা রাগ দেখিয়ে খারাপ ব্যবহার করে নি বরং সবাই কে বুঝিয়ে চুপচাপ নিজের মতো চলেছে। বাড়ি থেকে বের হলেই রাস্তায় নানা বাজে কথা শুনতে হয়েছে, প্রেম পত্র পেয়েছে সে কাউকে পাত্তা না দিয়ে বিষয় গুলো এড়িয়ে গেছে।
প্রিয়তা মনে করে বিয়ে জীবনে একবার ই হবে আর কার সাথে হবে তা মহান আল্লাহ আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন। কার ভবিষৎতে কি হবে তা কেউ বলতে পারবে না আল্লাহ যার কপালে যা লিখে রেখেছেন তাই ই হবে। প্রেম ভালোবাসা হল পবিত্র জিনিস যা যে কোন মানুষকে দেয়া যায় না। আর বিয়ের আগে এসব প্রেম ভালোবাসা সবই মূল্যহীন আর তাই এসব প্রেম বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই…
একদিন কলেজে যাওয়ার পথে পাশের গ্রামের এক বখাটে ছেলে সোহেল তার সাথে গুন্ডা মতন কিছু পোলাপান নিয়ে প্রিয়তাকে বাজে বাজে কথা বলে, টিস করতে থাকে। এই ছেলেগুলো কে প্রায়ই রাস্তায় মেয়েদের উত্যক্ত করতে দেখা যায়। এমনকি এর আগেও সোহেল প্রিয়তাকে ডিসটার্ব করেছে, প্রেমের চিঠি দিয়েছে। এসব জানার পরও প্রিয়তা কিছু বলে নি। সবটা সহ্য করছে।কিন্তু আজ অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। এদের প্রতিবাদ না করলে এরা অমানুষ ই থেকে যাবে। দিন দিন মেয়েদেরকে ইভটিসিং এর স্বীকার হতে হবে। তাই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে প্রিয়তা তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কটু কথা বলে, সোহেলকে অপমান করে তার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে তার প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। তাদেরকে মানুষ হতে বলে, মেয়েদেরকে যোগ্য সম্মান দিতে বলে সেখান থেকে চলে যায়। বন্ধুদের সামনে প্রিয়তার থাপ্পড় আর প্রেমের প্রত্যাখ্যান কিছুতেই মেনে নিতে পারে না সোহেল। বাসায় ফিরে রাগে-ক্ষোভে ফুলতে থাকে আর চরম প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। কিভাবে প্রিয়তার ক্ষতি করবে, কিভাবে ওকে শাস্তি দিবে এসব নিয়ে ভাবতে থাকে। সোহেল চেয়ারম্যানের ছেলে হলেও তার স্বভাব খারাপ।
মেয়েদের উত্যক্ত করা, মদ-গাজা খাওয়া সহ অনেক বাজে বাজে কাজ করে বেড়ায়। এলাকার প্রভাবশালী লোকের ছেলে বলে তাকে কেউ কিছু বলে না, তার সমস্ত অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় বলেই সে আজ মেয়েদের নিয়ে এত বাজে কথা বলার সাহস পেয়েছে। সবাই মিলে প্রতিবাদ করলে রাস্তাঘাটে চলার পথে আজকে মেয়েরা এভাবে ইভটিসিং এর স্বীকার হতো না, জীবন নাশের ভয় পেত না। বাড়ি ফিরে প্রিয়তা বার বার সেই ঘটনার কথা মনে করছে আর ভাবছে কাজটা ঠিক হল কি না। ছেলেটা তো ভালো না যদি ওর কোন ক্ষতি করে দেয়? তবে এই ঘটনার পর সোহেলের একটা উচিৎ শিক্ষার দরকার ছিল। যা হয়েছে ঠিক হয়েছে ভবিষৎতে আর এমন কাজ করার সাহস পাবে না। মেয়েদের কে টিস্ করার আগে ২ বার ভাববে, সারাজীবন মনে রাখবে এই অপমানের কথা। যাই হোক এই ঘটনার পর সে শুধরে যাবে এটাই আশা করে প্রিয়তা।
সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা, এই সব কথা না ভেবে পরীক্ষা নিয়ে প্রিয়তা বেশ চিন্তিত। পরীক্ষায় যেভাবেই হোক ভাল রেজাল্ট করতে হবে। বাবার অনেক ইচ্ছা প্রিয়তা কে ঘিরে, সেই ইচ্ছা তাকেই পূরণ করতে হবে। একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ও পরহেজগারী মানুষ হতে হবে। প্রিয়তার পড়ালেখা, নামাজ কালাম আর হাতের কাজ নিয়ে ব্যস্ততায় কাটে সারাদিন । বেশ কিছুদিন পর প্রিয়তা ও তার বান্ধবীরা মিলে কিছু নোট সংগ্রহ করবে বলে কলেজে গিয়েছে। সবাই একসাথে ক্যান্টিনে বসে পড়ালেখা নিয়ে আলোচনা করছে এমন সময় হঠাৎ একটা ছেলে এসে প্রিয়তাকে একগুচ্ছ লাল গোলাপ ফুলের তোড়া সহ একটা চিঠি হাতে দিয়ে চলে যায়। প্রিয়তা অবাক, চেনা নাই জানা নাই কোথা থেকে যে আসে এগুলা বলে বিষয় টি এড়িয়ে যায়। বুঝতে পারে আবারও কেউ তাকে প্রপোজাল পাঠিয়েছে কিন্তু তাতে তার কি সে চিঠিটা খুলেও দেখে না। টেবিলে রেখেই ওখান থেকে উঠে চলে যায়। এদিকে নিলয় আঁড়াল থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখে আর রাগে কষ্ট পেতে থাকে।
নিলয় এই গ্রামের ই ছেলে।অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র। ছেলে হিসেবে খারাপ না একই কলেজে পড়ার সুবিধার্থে প্রিয়তাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো। কিন্তু কখনও বলতে পারে নি। ভার্সিটিতে এসে সামনাসামনি প্রপোজ করবে এমনটাই ইচ্ছা ছিল কিন্তু প্রিয়তাকে অনেকেই ডিসটার্ব করে, প্রেমপত্র পাঠায় তাই আর দেরি না করে নিলয় তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেয়।কিন্তু নিলয় ব্যর্থ হয় প্রিয়তা জানতেও পারে না তার মনের কথা। নিলয় আসলেই খুব ভাল ছেলে। আর ৫-১০ টা ছেলের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
সহজ সরল আর বিনয়ী। রাস্তায় মাঝে মধ্যে প্রিয়তার সাথে দেখা হলেও মুখ ফুঁটে বলে নি কখনো। চুপচাপ মাথা নিচু করে চলে যেত। মেয়েদের কে একটু লজ্জা পায় বলতে গেলে। কিন্তু ভালোবাসা আর ধরে রাখতে পারে না শেষ পর্যন্ত প্রিয়তাকে জানিয়েই দেয়। আজকের এই ঘটনা নিলয়কে অনেক বেশি যন্ত্রনা দিচ্ছে। চিঠিটা অন্তত একবার পড়তে পারতো প্রিয়তা। হ্যাঁ অথবা না বলে দিতে পারতো। কিন্তু তা না করে চিঠিটা রেখে চলে গেলো। সে তার ভালোবাসার কথা জানতেও পারল না, নিলয়ের অনুভূতি বুঝলোই না। কিন্তু না আর এভাবে থাকা যায় না এবার সামনাসামনি গিয়ে প্রিয়তাকে সব কথা খুলে বলতেই হবে।
এরপর যখন দেখা হবে তখন ই সে প্রিয়তাকে প্রপোজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সেদিনের পর থেকে নিলয় প্রিয়তাকে তার মনের কথা বলার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। রাস্তায় প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকে একবার প্রিয়তার সাথে কথা বলবে বলে। কিন্তু না বেশ কিছুদিন কেটে গেলো প্রিয়তার দেখা পায় না নিলয়। খুব অস্থিরতায় এভাবে আরও কয়েকটা দিন চলে গেলো। একদিন ক্লাস থেকে ফেরার পথে রাস্তায় হঠাৎ প্রিয়তার সাথে দেখা হয়ে যায় নিলয়ের। সাহস করে প্রিয়তাকে ডেকে বলে…
নিলয় : প্রিয়তা একটু সময় দিতে পারবে ? তোমার সাথে কিছু কথা ছিল ?
প্রিয়তা : জ্বি বলেন তবে বেশি সময় দিতে পারব না বাসায় গিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে।
নিলয় : কেমন আছো প্রিয়তা ? তোমার কি শরীর খারাপ ?
প্রিয়তা : না তো আমি একদম সুস্থ , ভাল আছি। হঠাৎ এমন কেন মনে হলো ?
নিলয় : না আসলে অনেক দিন পর তোমাকে দেখলাম তাই আর কি। কোথায় ছিলে এতদিন ?
প্রিয়তা : আপনি কি এতদিন আমাকে ফলো করেছেন ? আমার জন্য এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন নাকি প্রতিদিন ?
নিলয় : প্রিয়তা অনেক দিন ধরেই ভাবছি তোমাকে একটা কথা বলব কিন্তু তুমি কি ভাবে নিবে, কি মনে করবে আমাকে তাই সাহস করে বলতে পারছি না। বেশ কয়েকদিন তোমাকে খুঁজেছি কোথাও পাই নি। তাই আজ আর তোমাকে না আটকিয়ে থাকতে পারলাম না।
প্রিয়তা : ঠিক আছে বলেন কি কথা !
নিলয় : ভালোবাসি তোমাকে প্রিয়তা। অনেক দিন আগে থেকেই পছন্দ করি কিন্তু বলতে পারি নাই। সেদিন তোমাকে ওই গোলাপ ফুল আর চিঠি আমি পাঠিয়েছিলাম যা তুমি পড়েও দেখ নি। আর এইজন্যই আমি আজ তোমার সামনে দাঁড়িয়ে বলছি বিয়ে করবে আমাকে ? খুব ভালোবাসি, বিয়ে করতে চাই তোমাকে।
প্রিয়তা : দেখেন আমি প্রেম ভালোবাসা বিশ্বাস করি না। আর কখনো এসব হবেও না। তবে কাউকে না কাউকে তো বিয়ে করতে হবে। আমাকে বিয়ে করতে চান ঠিক আছে আমার বাবাকে প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু তার আগে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন, কোরআন পাঠ করেন। আমি যতদূর জানি আপনি এখনো রোজা রাখতে পারেন না। নামাজ আদায় করেন না। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেন, ক্রিকেট খেলেন। আগে নিজেকে পরিবর্তন করেন, সময়মত ইবাদাত করেন , সৎ পথে উপার্জন করেন তারপর ভেবে দেখব জীবনসঙ্গী হিসেবে কেমন আপনি? আজ আসি অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
প্রিয়তার চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাসায় এসে রুমে গিয়েই শুয়ে পড়ল নিলয়। শুয়ে শুয়ে প্রিয়তার কথাগুলো ভাবছে।আসলেই তো ঠিকই বলেছে আগে নিজেকে সৎ হতে হবে, আল্লাহর ইবাদাত করে তার দেখানো পথে চলতে হবে। তবেই তো ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত হবে। প্রিয়তার পরিবার ছেলে হিসেবে মেনে নিবে। আজ থেকে প্রিয়তার মনের মতো হয়ে চলার চেষ্টা করব নিজেকে একজন পরিপূর্ন মানুষ করে তবেই প্রিয়তার সামনে গিয়ে দাঁড়াব তার আগে নয় এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল নিলয়।
১০-১৫ দিন কেটে গেছে নিলয়ের কোন খবর নাই। প্রিয়তা প্রায়ই ক্লাসে যাওয়ার পথে খেয়াল করে নিলয়ের বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে, মাঠে ক্রিকেট খেলছে কিন্তু নিলয় নাই। সবাই থাকলেও নিলয় কে কোথাও দেখতে পায় না প্রিয়তা মনে মনে ভাবে সেদিনের ব্যবহারে হয়তো নিলয় মনে কষ্ট পেয়েছে, লজ্জিত বোধ করেছে তাই ওর সামনে আসছে না। নিলয়ের প্রতি একটু দুর্বল হলেও মুহূর্তেই তা ভুলে যায়। প্রেম ভালোবাসা কিছুতেই স্পর্শ করতে পারে না প্রিয়তাকে। বেশ কয়েকটা দিন চলে গেছে এর মাঝে আর দুজনের দেখা হয় নাই । দিন যত যাচ্ছে পরীক্ষার সময় ততই এগিয়ে আসছে। প্রিয়তারও টেনশন বাড়ছে, ২ দিন বাদে পরীক্ষা শুরু বুকের ভেতর অস্থিরতা আর অজানা এক ভয় কাজ করছে। কিভাবে কি হবে পরীক্ষায় এসব হাজারো চিন্তা করতে করতে আরও ১ দিন কেটে গেলো। রাত পার হলেই যে কাল সকালে পরীক্ষা।
পরদিন সকালে নাস্তা খেয়ে বাবা মার্ দোয়া নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বের হয়ে গেলো প্রিয়তা, একা একা রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে এমন সময় সোহেল ও তার গুন্ডা বন্ধুগুলা এসে তার পথ আটকায়। প্রিয়তার পরীক্ষা আছে বলে তাদেরকে অনুরোধ করে তার রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সোহেল কর্কশ স্বরে তাকে অংহকারী, মুডি বলে বাজে ইঙ্গিত দিতে থাকে। তার ক্ষতি করার জন্য উপযুক্ত সময় পেয়েছে বলে আনন্দ করতে থাকে সবাই মিলে। প্রিয়তা অনেক রিকুয়েস্ট করে, ক্ষমা চেয়ে কিছু বলতে যাবে এমন সময় হঠাৎ সোহেল তার মুখে এসিড ছুড়ে দেয়। প্রিয়তার মুখ সাথে সাথে ঝলসে যায়, অসহ্য যন্ত্রনায় জ্বালা করতে থাকে। প্রিয়তার এমন করুন অবস্থা দেখে সোহেল আজ খুব খুশি কারণ তাকে শায়েস্তা করবে বলে এতদিন ধরে এত পরিকল্পনা করেছে।আর আজ সেই পরিকল্পনা পুরোপুরি স্বার্থক হয়েছে।
প্রিয়তা সারাদিন চুপচাপ মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকে।প্রিয়তা কেমন জানি নিঃস্তব্ধ হয়ে গেছে— কারো সাথে কোন কথা বলে না, দেখা করে না,বাহিরে বের হয় না।আগের মতো কাজ কর্ম করতে আর পছন্দ করে না।একা একা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে আর কান্না করে ঝলসানো বিকৃত চেহারার কথা ভেবে নিজেকেই সারাক্ষণ দোষী মনে করতে থাকে।
এভাবে ২-৩ মাস কেটে যাওয়ার পর পড়ন্ত এক বিকেলে প্রিয়তার বাড়িতে নিলয় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে প্রিয়তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।প্রিয়তার কথা মতো এখন সে নিয়মিত নামাজ আদায় করে,প্রতিদিন কোরআন পাঠ করে,ন্যায়ের পথে চলে।নিজেকে পরিবর্তন করে তবেই সে এতদিন পর তার সামনে এসেছে।এবার প্রিয়তার উত্তরের অপেক্ষায় নিলয়….
প্রিয়তা : আমাকে ক্ষমা করবেন আমি আপনাকে যে কথা দিয়েছিলাম তা রাখতে পারব না
নিলয় : কেন প্রিয়তা ? বিশ্বাস করো আমি যা বলছি সব সত্যি। আমি একদম বদলে গেছি আর তোমার জন্যই তা সম্ভব হয়েছে।
প্রিয়তা : আমি সেই জন্য বলছি না।আমি কারো দয়া বা অনুগ্রহ নিয়ে বাঁচতে পারব না।প্লিজ আপনি ফিরে যান।
নিলয় : কি বলছো এসব ? আমি কেন দয়া দেখাব তোমাকে ?
প্রিয়তা : আপনি জানেন না আমার মুখে এসিড ছুড়ে দেয়া হয়েছিল ?আমার মুখ ক্ষত বিক্ষত হয়ে ঝলসে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাকে বিয়ে করা মানে করুণা করা.. সেইটা আমি চাই না।
নিলয় : হ্যাঁ আমি সব জানি আর জেনে শুনেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তোমার সুন্দর মন কে ভালোবাসি, বাহিরের রুপকে নয়। কাজেই তোমার চেহারা যাই হোক তোমাকেই আমি বিয়ে করব।
প্রিয়তা : না তা হয় না।আপনি ভুল করছেন। আমার পক্ষে সম্ভব না।
নিলয় : আমি কোন ভুল করছি না। প্লিজ প্রিয়তা, আমাকে ফিরিয়ে দিও না আমি তোমাকে তোমার প্রাপ্য মর্যাদা দিয়েই আপন করে নিব। আমাকে একটা সুযোগ দাও…
প্রিয়তা খেয়াল করল নিলয়ের চোখের কোণে পানি। কখন যেন বাচ্চাদের মতো কেঁদে ফেলবে। নিলয় যে তাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে এটা সে আগে থেকেই উপলব্ধি করতে পারে কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার এসিড নিক্ষিপ্ত জীবন। প্রিয়তা কারো জীবনে বোঝা হতে চায় না। নিলয়ের জীবনে প্রবেশ করে তার সুন্দর সাজানো জীবন নষ্ট করতে চায় না। এখন সে দেখতে কুৎসিত, সবাই তাকে নিয়ে উপহাস করে,অনুগ্রহ করে তার এই এসিড দগ্দ্ধ জীবন সমাজের কেউ সহজ ভাবে মেনে নিবে না। আর তাই নিলয়ের ভালোবাসা পেয়েও তাকে গ্রহণ করার মতো সাহস পায় না প্রিয়তা।