ফোনের আলোটা জ্বালিয়ে দেখি রাত ১২ টা বাজে কিন্তু কেনো যানি ঘুম আসছে না। কাল সময় মতো কলেজ যেতে পারবো কিনা কে জানে, অনেক চেষ্টা করে ১ টার মধ্যে ঘুমিয়ে গেলাম। আম্মার ডাক শুনে সকালে ঘুম ভাঙ্গলো। সেদিন আর ফজরের নামাজ পড়া হলো না। আমি লাফ দিয়ে উঠে বিসানাটা ঠিক করে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করেনিলাম। সকাল ৮ঃ৩০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। কলেজ ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে সকালের এই আড্ডা টা আমি কখনোই মিস করতে চাইনা, আমাদের সময়টা অনেক ভালোই কাটে।
সবাই বসে অনেক ধরনের গল্প করতেছিলাম হঠাৎ আমার চোখটা কলেজ গেটে একটা মেয়ের দিকে আটকে গেলো। মেয়েটা আমাদের দিকেই আসছিলো, কাঁধে পাশ ব্যাগ আর পরনে কালো বোরখা। শুধু চোখ দুটো দেখতে পারছিলাম, এতো মায়াবী চোখ আমি আগে কখনো দেখিনি, জানিনা কেনো আমি এই মেয়েটার দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়েই ছিলাম। একটা মানুষকে ভালো লাগার জন্য যে কখনো কখনো শুধু চোখ দুটোই যথেষ্ট তা এখনি বুঝলাম। এক মিনিটের জন্য আমি ওচোখের মায়ায় পৃথিবী ভুলে গেলাম, স্বপ্নের জাল বুনছি এমন সময় রনির ধাক্কায় আমার চোখের পলক পরে, একটু আৎকে উঠে বললাম বিরক্ত করিসনা তো, মেয়েটাকে একটু ভালো করে দেখতেদে।
– কোন মেয়ে? কাকে দেখছিস?
– তোর দেখে কাজ নাই, তুই তোর কাজ কর।
রনির আর কোনো কথা কানে নানিয়ে মেয়েটার দিকে মনোযোগ দিলাম, ওর সাথে আরো কয়েকটা মেয়ে ছিলো, বান্ধবী হবে হয়তো। ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো কিন্তু আমার খারাপ লাগছে এই ভেবে যে আমি মেয়েটার কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছিনা, হাসলে কেমন লাগে তাও দেখতে পারছিনা কারণ মেয়েটার মুখ আটকানো ছিলো। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে মেয়েটার পিছু নিয়েছি বুঝতেই পারিনি। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই মেয়েটাকে চোখের সামনে থেকে হারিয়ে ফেল্লাম। কিছুতেই খুঁজে পেলামনা এদিক ওদিক অনেকটাই ছোটাছুটি করলাম কিন্তু মেয়েটাকে কোথাও পেলামনা।
কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা পর আবারো মাঠে ফিরে আসলাম বন্ধদের কাছে। কেনো জানি মনটা একটু খারাপ, মেয়েটা চোখের সামনে থাকে হারিয়ে গেলো আর আমি তাকে খুঁজেই পেলামনা। কলেজে প্রতিদিন অনেক মেয়েই তো দেখি কিন্তু এই মেয়েটার জন্য একটু অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে। বার বার শুধু ওই চোখ দুটো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে! তার চলার ভঙ্গি আমার মন ছুঁয়ে গেছে, মাথায় আর কিছুই আসছেনা। আমিতো সবার সাথেই আছি কিন্তু আমার মনটা এখনো তাকে খুঁজে চলেছে। ঘড়িতে তখন বেলা ১২টা বাজে, বন্ধুদের অনেকেই চলেগেছে যারা আছে তারাও একে একে বিদায় নিতচ্ছে, সেদিকে আমার তেমন খেয়াল নেই একটু পরে রনি উঠে দাঁড়িয়ে বললো
– কি রে, বাড়ি যাবিনা? বেলা তো অনেক হলো।
– হুম,,
– কি হয়েছে তোর, কি এতো ভাবছিস?
– কিছুনা, তোর কোনো কাজ নাথাকলে আর কিছুক্ষন থেকেযা।
আমি আর রনি আরো ২০মিনিট বসলাম, কি একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিলাম তবে আমার ভালো মনোযোগ ছিলোনা তাতে। একটু পরে কোথা থেকে জানি মেয়েটা বেরহলো, আমার চোখের সামনে মেয়েটাকে দেখে অবাক হলাম! এত খোঁজাখুঁজির পরও তাকে কোথাও পেলাম না এখনো কথা থেকে হঠাৎ বেরহলো? আবার হারিয়ে ফেলবো এই ভয়ে সময় নষ্ট নাকরে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যাবো কিন্তু রনির বাধায় দাঁড়ালাম।
– ঐদিকে কোথায় যাস?
– প্রশ্ন নাকরে আমার সাথে আয়, পরে বলছি।
বাদ্ধ ছেলের মতো আর কোনো কথা নাবলে রনি আমার সাথে চলে আসলো। এই কয় ঘন্টায় আমার কি হয়েছে, কেন আমি এতো পাগলামি করছি, মেয়েটাকে কেনই বা এত ভালো লাগছে, ওর সামনে গিয়েই বা কি বলবো কিছুই জানিনা। তবে কেনজানি আমার সবকিছু আপনাআপনি হয়ে যাচ্ছিলো। এইসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটার অনেকটাই পশে চলে আসছি, ওর এক বান্ধবী ওকে আফছানা বলে ডাকছিলো, নাম টা বেশ সুন্দর! ওদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম আফছানার কি এক জরুরি কাজ আছে তাই এখন বাড়ি চলে যাবে। আমিও তাই আর এগোলামনা, শুধু যত দূর ওকে দেখাযায় তাকিয়ে থাকলাম। আফছানার সাথে কথা বলার সময় ও সাহস কোনোটাই হলোনা তাই মনের অগোচরে একটু খারাপ লাগা কাজ করছে। আমার এইসমস্ত আচরণে রনি রীতিমতো হতবাগ! হঠাৎ একটা মেয়ের প্রতি আমি এই আগ্রহ দেখে রনির কৌতূহলের শেষ নেই, ওর হাজার টা প্রশ্ন আমাকে ঘিরে কিন্তু আমি উদাসীন! আমি আমার এই আবেগ আর অনুভূতির কথা গুলো সবটাই রনিকে খুলে বলি। প্রথমে ওর কাছে বেপারটা হাস্যকর মনে হলেও অনেক বোঝানোর পর গুরুত্ব দেয়। কলেজে রনি ই আমার একমাত্র কাছের বন্ধু তাই ওকে সব কথা বলতে পেরে ভালো লাগছে। আমাকে আশ্বস্ত করে বললো
– অনেক বেলা হয়ে গেছে এখন বাড়ি যা, আমি মেয়েটার পরিচয় জানার চেষ্টা করবো।
– হুম, তুই যাবিনা?
– হুম যাবো,
– ভালো থাক, কাল দেখা হবে।
সারাদিন এক অদ্ভুত অনুভূতি ছিল আমার মাঝে, সবই আছে কিন্তু তাও কি একটা নেই নেই। রাতে বিছানাতেও হাজারো প্রশ্ন আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে যার কোনো উত্তর ই নেই আমার কাছে। চোখ বুজলেই ওই দুটো চোখ ভেসে উঠছে। এতো মায়া মাখা চাহনি তার কিছুতেই আমাকে ভুলে থাকতে দিচ্ছেনা। চোখের পাতা বন্ধ করে মেয়েটার হাত ধোরে কল্পনার রাজ্যে হাটতে হাটতেই রাতটা পার করে দিলাম! পরের দিন খুব সকাল সকাল কলেজ চলে আসলাম, আমাদের আড্ডার জায়গাটা এখনো ফাঁকাই পরে আছে, এখনো কেউই আসেনি। রনিকে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বললাম, একটু পরে ও চলেও আসলো। কিন্তু আমার অপেক্ষার আরো বেড়েই চলেছে, অনেক সময় পারকরে ফেললাম এখনো মেয়েটার দেখা পেলামনা। আমার মাথায় ক্লাস পড়াশোনা কিছুই নেই শুধু পাগলের মতো মেয়েটাকে খুঁজেই চলেছি। এই ফাঁকে কিসব কাজ আছে বলে রনি চলে গেলো। আমি কলেজ গেট এর দিকে এগিয়ে গেলাম রাস্তা দিকে তাকাতেই আমার চোখের সামনে মেয়েটাকে আবিষ্কার করলাম।
আফছানা রিক্সা থেকে নামছে আজও ওই কালো বোরখাটাই পরে এসেছে, যথারীতি অনেক সুন্দর লাগছে! রিক্সা থেকে নেমে সোয়া হাটা শুরু করলো, একেবারে ওর ক্লাস রুম পর্যন্ত চলে এলাম। ও ওর বান্ধবী দেড় সাথে আড্ডা দিতে বেস্ত হলো আর আমি দূর থেকে তাকিয়ে শুধু ওকে দেখেই চলেছি। ভাবতেই অবাক লাগছে একটা মানুষের চোখ এতো পরিষ্কার কথা কিকরে বলে! আমার ধ্যান ভাঙ্গলো রনির ফোন পেয়ে, এখন ডিপার্টমেন্ট এর সামনে যেতে হবে। ভীষণ রাগ হচ্ছে কিন্তু তাও গেলাম। রনির সামনে যেতেই বললো ও আফছানা সম্পর্কে অনেক তথ্যই যেনেছে, সবটা শুনে বুঝতে পারলাম ও খুব ভালো আর মোটামোটি উচ্চ পরিবারে মেয়ে। আমার মত মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলে শুধু তাকে পছন্দই করতে পারবে তার বেশি কিছুনা।
আরো বেশ কিছুদিন কেটে যায়, মেয়েটার প্রতি আমার ভালোলাগা বেড়েই চলেছে সাথে পাগলামিও! আমি যেনো কিছুই বাঁধা দিয়ে রাখতে পারছিনা, একটু একটু করে হয়তো মেয়েটাকে ভালোও বেসে ফেলেছি। এর মাঝে একদিন ওর ওই অপরূপ সুন্দর চাঁদ মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে! ওসুন্দয্যের বর্ণনা দিয়ে আমি শেষ করতে পারবোনা। সারা দিন তার আমার শুধু স্বপ্ন ময় হয়ে গেছে কিন্তু কিছুতেই আমার এই অনুভূতি গুলো তাকে বলা হয়ে উঠছেনা। দিনের পর দিন কেটেই চলেছে কিন্তু আমি এখনো তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারিনি। তবে আর দেরি করাটা ঠিক হবেনা, তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার মনের কথা সবটাই বলদেব তাকে। ক্যাম্পাসে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম হঠাৎ রনি আসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে,
– এতো টানাটানি করছিস কেনো? কোথায় যাচ্ছি আমরা?
– কলেজের পশে একটা কফি হাউজে আফছানা একা একা বসে আছে, এর থেকে ভালো সুযোগ আর পাবিনা যা বলার আজকেই বলে দে।
– কিন্তু কি বলবো, আমি তো কিছুই ঠিক করে আসিনি।
– কিছুই ঠিক করতে হবে না, মনে যা আছে সেটাই বলে দিবি।
রনিকে দাঁড় করে আমি একটা লাল গোলাপ নিয়ে আসলাম, ভাবলাম কথা যখন বলবোই তখন একটু ভালো ভাবে গুছিয়েই বলবো। অনেক সাহস নিয়ে ফুল হাতে যখন ওর সামনে যাবো ঠিক তখনি ওর পাশের চেয়ারটাতে একটা ছেলে আসে বসে। আমি আর সামনের দিকে পা বাড়াইনি। রনি আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলো ঐটা ওর বন্ধু বা আত্মীয় হতেপারে, কিন্তু ওদের কথাবাত্রা আর আচরণ গুলো অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। আমি ওখানে আর এক মুহূর্ত দেরি নাকরে চলে আসি। ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো, আমি কিছুতেই এইটা মানতে পারছিলামনা! বার বার মনে হচ্ছিলো যা দেখলাম আর যা বুঝলাম তার সবটাই ভুল। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছেলো, সবকিছু ছেড়ে ছুতে পালতে ইচ্ছা করছেলো। জানিনা কেনো আমি এমন করছি, আমি কিছুতেই নিযেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলামনা।
মাঝখানে তিনটা বছর কেটে গেছে, ওই কদিনের ভালোলাগা আর ইচ্ছা গুলো এখন শুধুই স্মৃতি! সাদা ডাইরিতে লাল গোলাপটা ধূসর রং নিয়ে আজো পরে আছে সাদা ডাইরির পাতায়। ক্যাম্পাসে গেলে এখনো মাঝে মাঝে আফছানাকে মিস করি, চেহারাটা এখন আফছা হয়ে গেছে আর ভালো মনেই পড়েনা। এখনো হয়তো সে ভালোই আছে সারাজীবন ভালো থাকো তাই চাই।