তোমার স্বামী তোমাকে খুব ভালোবাসে তাইনা রুপা? পাশের সিটে বসে থাকা ছেলেটার কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে রুপা। একবার আবিদের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়। ভাবতে পারোনি যে আমি তোমাকে চিনতে পারবো তাই না?(আবিদ)
রুপা কিছুই বলছেনা, বাবার অসুস্থতার জন্য বাবার বাড়ি যাচ্ছে। স্বামি আকাশ অফিসের কাজের জন্য এখন আসতে পারে নি। বাসে উঠিয়ে দিয়ে গিয়েছে। রুপার পাশের সিটে যে আবির পড়বে তা কখনও ভাবতে পারেনি। তাও বোরখা পড়া ছিল বিধায় ভেবেছিলো আবিদ ওকে চিনতে পারবে না। কিন্তু ও ঠিকই চিনে নিল। ২ বছরের সম্পর্ক ছিলো রুপা আর আবিদের। রুপার যখন বিয়ে ঠিক হয় আবিদ তখনও পড়াশুনা শেষ করতে পারেনি। তাই বাসায় আবিদের কথা বলেও কোনো লাভ হয় নি। শেষ পর্যন্ত বাবার পছন্দ করা ছেলের সাথেই বিয়ে হয়েছিলো রুপার। রুপার নিরবতা দেখে আবিদ বললো, তোমার চোখ দেখেই মনে হয়েছিলো তুমি রুপা, তুমি যখন তোমার স্বামীর সাথে ফোনে কথা বলছিলে তোমার কণ্ঠ শুনে নিশ্চিত হয়েছি। একসময় তো এই কন্থস্বর না শুনলে ঘুম ভাংতো না, ঘন্টার পর ঘন্টা এই কন্ঠস্বর শুনে কাটিয়ে দিতাম।
-পুরনো কথা টেনে কি লাভ।( রুপা)
-আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না।
-আপনার কি মনে হয়?
– বাস ছাড়ার পড়ও যতক্ষন পেরেছে দৌড়ে তোমার সাথে কথা বলেছে, বাস ছেড়েছে বেশি সময় হয় নি এর মধ্যেই বেশ কয়েক বার ফোনও দিয়েছে, তার চোখে আমি কষ্ট দেখেছি হয়তো তুমি যাচ্ছ সেই কারনে। মনে হচ্ছে সে তোমায় খুব ভালোবাসে। রুপা ছোট করে বললো,
-হুম
-আর তুমি? তুমি কি তাকে ভালোবাসো?
-একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ভালোবাসবে সেটাই কি স্বাভাবিক নয়?
-আর আমাকে, আমাকে কি এখনও ভালোবাসো?
-একসাথে দুইজনকে কি ভালোবাসা যায়? তাই আমি সব অতীত ভুলে গিয়েছি, বলতে গেলে ভুলে যেতে বাধ্য হয়েছি আকাশের ভালোবাসার জন্য। আকাশের মত স্বামীকে ভালো না বেসে পারা যায় না। আমি খুব ভাগ্যবতী তাই এমন স্বামী পেয়েছি।
-তা তোমার স্বামী তোমাকে এতই ভালোবাসে, তাহলে তোমাকে একা ছাড়লো কেন? এই বুঝি ভালোবাসার নমুনা?
– আমার স্বামীকে নিয়ে একদম বাজে কথা বলবেন না। বাবা অসুস্থ তাই আমাকে আজই যেতে হচ্ছে। আকাশ ছুটি মেনেজ করতে পারে নি। তাও আমার সাথে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আমিই নিষেধ করেছি আসতে অফিসের সমস্যা হয় যদি।উনি ২/১ দিনের মধ্যেই চলে আসবেন। আর আমি কচি খুকি না যে একা যেতে পারবো না।
-সরি সরি, আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম তুমি সত্যিই তোমার স্বামীকে ভালোবাসো কিনা।
-আপনার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি। প্রথম অবস্থায় আমিও মেনে নিতে পারছিলাম না।
কিন্তু যতই দিন যেতে লাগলো ততই আমি আকাশের প্রতি দুর্বল হয়ে পরি। উনি সবসময় সব পরিস্থিতিতে আমার পাশে থাকেন। আমার অনেক কেয়ার করেন। আমাদের সম্পর্ক টা যেমন স্বামী স্ত্রির তেমন বন্ধুত্বেরও। আর জানেন আকাশ আপনার কথা জানে। আমি ওনাকে ঠকাতে চাইনি তাই সব বলে দিয়ে ছিলাম। উনি আমায় এটাই বলেছিলেন যে, “তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। আমি তোমাড় বর্তমান আর ভবিষ্যত হতে চাই।“ আর উনি আপনাকে চিনেনও। আমি ছবি দেখিয়েছিলাম সব ডিলিট করার আগে।
-তার মানে উনি আমাকে আজকেও চিনতে পেরেছে?
-হুম। আবিদ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রুপার দিকে। রুপা আবার বললো,
-আমি ওনাকে মেসেজ দিয়েছিলাম, বউকে প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে রেখে গেছেন ,ভয় নেই? যদি পালিয়ে যায়? উনি আমাকে কি উত্তর দিয়েছিলেন জানেন?
-কি?
-তার উত্তর ছিল,
“আমার বউয়ের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।“ এবার আপনিই বলুন এমন লোককে কি ভালো না বেসে পারা যায়? একসময় আপনাকে ভালোবাসতাম এটা যেমন সত্য, তেমনি এখন আমার স্বামীকে ভালোবাসি এটাও সত্য। আবিদ কিছুই বললো না আর। এর মধ্যেই আবার আকাশ ফোন দিল আর রুপা ওর সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। বাকি রাস্তা রুপা আর আবিদ কোনো কথা বলে নি। গাড়ি এসে স্টেশনে থামলো কিছুক্ষন আগে। রুপাকে নিতে ওর ছোট ভাইয়ের আসার কথা। তাই রুপা ওকে ফোন দিতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে আবিদ ডাক দিল,
-রুপা। রুপা পিছনে ঘুরে,
-জ্বি
-ভালো থেকো, তুমি সুখে আছো জেনে ভালো লাগলো।
আমিও চেষ্টা করবো নতুন কাউকে নিয়ে সুখে থাকার। দোয়া করি আর যেন কখনও যেন আমাদের দেখা না হয়। এটা বলে আবিদ চলে গেলো। রুপা দাঁড়িয়ে দেখছে আবিদের যাওয়াটা। এভাবেই চলে গিয়েছিলো শেষ দেখার দিন। পুরোনো স্মৃতি মনে পড়তেই রুপার চোখের কোনায় জল আসবে বলে। এমন সময় রুপার ফোনের রিংটোনের শব্দ পেয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আকাশের নামটা স্ক্রিনে ভাসছে। আকাশের নামটা দেখেই মুচকি হেসে উঠে রুপা। চোখের জলটাও আর আসেনি।
বাসর রাতের দিন যখন পরিবার আর ভালোবাসা ছেড়ে আসার কষ্টে রুপা কাদছিলো আকাশ তখন রুপাকে বুকে জরিয়ে বলেছিলো আজ যত পার কেদে নাও। পরিবার ছেড়ে এসেছো তাই তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি। কিন্তু আজই শেষ। আমি যতদিন তোমার জীবনে আছি ততদিন তোমার চোখে আর জল আসতে দেব না।
সত্যিই রুপার চোখে আকাশ আর কোনো দিন জল আসতে দেয়নি। ঠিক তেমনি আজ দূরে থেকেও আকাশ ওর কথা রেখেছে।রুপার মনটা ভালো করার জন্য যে আকাশ নামটাই যথেষ্ট। এটাই হয়তো বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের জোর।
গল্পের বিষয়:
গল্প