আপনি দুপুরে গোসলের পর যখন ভেজা কাপড় গুলো ছাদে শুকাতে দিতে যান তখন প্রায় সময় দেখা যায় রশিতে আপনারি পরিবারের ছোট বোন কিংবা বড় বোন নয়তো আপনার মায়ের ব্যবহৃত ব্রা ঝুলছে তখন আপনি কি করেন?
চোখটা হয়তো সাথে সাথে অন্য দিকে সরিয়ে নেন নয়তো পাশে থাকা ওড়না দিয়ে চোখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে সেটা ঢেকে দেন। ভুলেও চোখটা আর এইদিকে ফিরান না সেইম একই জিনিসটা যখন পাশের বাসার ছাদে কিংবা বেলকনিতে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন তখন হা করে তাকিয়ে থাকেন আর পাশে থাকা বন্ধুকেও খুব আগ্রহসহকারে দেখান আমার কলেজ জীবনের একটা কাহিনী বলি আমরা যে মেসে থেকে পড়াশোনা করতাম সেই মেসের পাশের বিল্ডিংয়ে মারিয়া আর মৌরি নামের দুইজন যমজ বোন থাকতো। দুইজনেই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতো। আমাদের মেস আর উনাদের বাসা এতটাই কাছাকাছি ছিলো যে খুব সহজেই আমাদের মেসের ছাদ থেকে উনাদের বাসার ছাদে যাওয়া যেতো। আমরা যেহেতু সবাই ইন্টারে পড়াশোনা করতাম সেই হিসাবে উনারা আমাদের থেকে বড় ছিলো। প্রায় সময় উনারা দুইবোন আমাদের দিয়ে দোকান থেকে এটা ওটা আনাতেন। বিকালবেলা আমরা ছাদে গেলে আর আপুরাও ছাদে আসলে নানা বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতো। দুইজন আপুই খুব মিষ্টি করে আমাদের সাথে হেসে কথা বলতেন একদিন খেয়াল করি কয়েকজন বন্ধু রুমের ভিতর জড়োসড়ো হয়ে কি যেন করছে। আমি যখন প্রশ্ন করি,
— কিরে, কি করছিস তোরা? আর তোদের হাতে কি? রায়হান তখন হেসে বললো,
– ফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছি আমি অবাক হয়ে বললাম,
— মানে! তখন রায়হান তার হাতে রাখা ব্রাটা দেখিয়ে বললো,
– এটা মৌরি আপুর আর সজীব তার হাতেরটা দেখিয়ে বললো,
— এটা মারিয়া আপুর
মৌরি আর মারিয়া আপু গোসলের পর এইগুলো যখন শুকাতে দিয়ে যায় তখন নাকি ওরা নিয়ে আসে। আমি ওদের অনেক বুঝিয়েছিলাম যে, এই কাজগুলো করা উচিত না। অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বাদে সুস্থ মানুষ এইকাজ গুলো করতে পারে না। এমনকি ওদের ভয়ও দেখিয়েছিলাম এইসব করলে আপুদের বলে দিবো। কিন্তু রায়হান আর সজীব আমায় উল্টো ভয় দেখিয়ে বললো, আমি এইসব বললে ওরা সবাই বলবে আমিও ওদের সাথে ছিলাম। তারপরও আমি বারবার যখন ওদের বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম তখন রায়হান রেগে গিয়ে বলেছিলো,
– তোর এত জ্বলে কেন? ওরা তো আর তোর বোন না প্রথম প্রথম আপুরা বুঝতে না পারলেও পরে যখন দেখলো প্রায় সময় উনাদের ব্যবহৃত জিনিস নাই হয়ে যাচ্ছে তখন তারা ঠিকিই বুঝতে পেরেছিলেন। তারপর থেকে আপুরা কখনো আমাদের সাথে কথা বলে নি। এমন কি কাউকে কখনোই দোকান থেকে কিছু আনতে বলে নি। একদিন রিকশা দিয়ে কলেজ থেকে মেসে ফেরার পথে খেয়াল করি মৌরি আপু রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমি আপুকে বললাম,
— আপু, বাসায় যাবেন? চলেন একসাথে যাই আপু শুকনো হাসি হেসে বললো,
– না, যাও তুমি আমি তখন বললাম,
— আপু আসেন তো। ভাই বোন যাবো সমস্যা কি? আপু তখন হেসে বলেছিলো,
– ভাই বোন গেলে তো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যাটা হলো তোমরা তো আমাকে বোনের চোখে দেখো না
এই কথা বলে আপু অন্য একটা খালি রিকসা ডেকে চলে গেলো আর আমার ভিতর তখন বন্ধুদের সাবধান করতে পারি নি বলে অপরাধ বোধ কাজ করছিলো। এর ঠিক পরের দিন আমি এই মেস ছেড়ে অন্য মেসে চলে যায়। কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম, শুধু একা নিজে ভালো থাকলে হবে না। আমি যাদের সাথে বসবাস করবো তাদেরও ভালো হতে হবে। মানুষের ভিতর খারাপ অভ্যাস গুলো ছোঁয়াছে রোগের মত হয়। যা খুব সহজেই অন্য একটা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যায় মেস থেকে বের হবার সময় রায়হানকে একটা কথায় বলেছিলাম,
–তোর একটা বড় বোন আছে। তাই এই বিকৃত অভ্যাসটা পাল্টে ফেল। তা নাহলে এমন অবস্থা হবে যে কয়েকদিন পর নিজের বোনও তোর থেকে রেহাই পাবে না আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা চলছে। খাতা দেওয়ার ঠিক বিশ মিনিট পরেই একটা মেয়ে স্যারকে বললো, “স্যার, একটু ওয়াসরুমে যাবো” মেয়েটার কথা শুনে স্যার রেগে গিয়ে বললো,
-২০ মিনিট যেতে না যেতেই ওয়াসরুম পেয়ে গেছে? তা আগে থেকেই ওয়াসরুমের ভিতর বই রেখে এসেছো নাকি?
মেয়েটি মাথা নিচু করে বললো, ” স্যার প্লিজ, আমার এই মুহুর্তে যেতে হবে” স্যার তখন মেয়েটিকে জোরে ধমক দিয়ে বললো,
– ১ ঘন্টার আগে কোন ওয়াসরুমে যাওয়া যাবে না। চুপচাপ পরীক্ষা দাও স্যারের ধমক শুনে মেয়েটি চুপচাপ বসে ছিলো। আমি খেয়াল করছিলাম মেয়েটি খাতায় কিছু লিখছে না। বসে থেকে মেয়েটি যখন নিরবে চোখের জল ফেলছিলো। তখন স্যার চিৎকার করে বললো,
– সারাবছর লেখাপড়া না করে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরাঘুরি করবে আর পরীক্ষার হলে এসে কান্নাকাটি করবে ১ঘন্টা পার হবার পর স্যার যখন মেয়েটিকে বললো ওয়াসরুমে যেতে তখন মেয়েটি স্যারের কাছে জমাকৃত ভ্যানিটি ব্যাগটা সাথে নিয়ে ওয়াসরুমে যেতে চাইলো। স্যার তখন বললো,
-ব্যাগের ভিতর বই রেখেছো নাকি যে এটা নিয়ে ওয়াসরুমে যেতে হবে? মেয়েটা মাথা নিচু করে বললো, “স্যার আমার শারীরিক সমস্যা হচ্ছে” স্যার তখন বললো,
– কি এমন সমস্যা শুনি যে সাথে ব্যাগ নিয়ে যেতে হবে? আমি আর তখন সহ্য করতে পারছিলাম না। সোজা দাঁড়িয়ে বললাম,
— স্যার, আপনি কি সত্যিই বুঝতে পারছেন না মেয়েটার কি সমস্যা হচ্ছে? নাকি তার মুখ থেকে শুনার জন্য এমন করছেন?
আমার কথা শুনে আমার পিছন থেকে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে বললো, ” স্যার বুঝবে কি করে, স্যার তো কোন মেয়ের ঘরে জন্ম নেয় নি। স্যার আকাশ থেকে টপ করে পরেছে ” সাথে সাথে কয়েকটা মেয়ে দাঁড়িয়ে বললো, “ব্যাগটা খুলে স্যারকে একটু দেখিয়ে যে তো ব্যাগের ভিতর বই না আছে প্যাড। আর একটা প্যাড স্যারকেও দিবি স্যার যেন সেটা পরে বসে থাকে” মুহূর্তের মধ্যে ক্লাসের সবাই স্যারকে অপমান করতে লাগলো। আর স্যার কি বলবে না বলবে এটা ভেবে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছিলো। আমি তখন ভাবছিলাম সমাজে যেমন অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ আছে তেমনি কিছু সুস্থ মানুষও আছে।
শুরুটা সাহস করে আমি করেছিলাম আর শেষটা বাকিরা সবাই করছে সব শিক্ষকরাই বাবার মত হয় না। কিছু কিছু শিক্ষক পরিমলের মতও হয়। যারা ছাত্রীদের ভোগের বস্তু বানিয়ে ফেলে। আমাদের দেশে প্রায় ৩০ শতাংশ মেয়েরা অপদস্ত হয় স্কুল কলেজ ভার্সিটির শিক্ষক দ্বারা। কোন ছাত্রীই শিক্ষকের সামনে অশ্লীল পোশাক পরিধান করে যায় না। তবুও খবরের কাগজ খুললে দেখা যায় শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী ধর্ষিত আমি গ্রামের বাড়ি গেলে প্রায় সময় আমার সমবয়সী এক ফুপাতো ভাই মামুনের দোকানে বসে আড্ডা দেই। আমি যখন আড্ডা দিতাম তখন প্রায় সময় খেয়াল করতাম দোকানে একটা হিন্দু মহিলা আসতো। মহিলাটা দোকানে এসে সুন্দর করে মামুনকে দাদা দাদা বলে ডাকতো। একদিন মহিলাটা দোকানে এসে এক প্যাকেট বিস্কিট নিয়ে চলে গেলে মামুন আমায় বললো,
– দেখলি বৌদির কি সুন্দর ফিগার? দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। এটা যদি দোকান না হয়ে বাসা হতো তাহলে কবেই বৌদিকে সাইজ করে ফেলতাম আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম,
— মানে! তুই কি ধর্ষণ করতি নাকি? মামুন তখন বললো,
-সুযোগ পেলে অবশ্যই করতাম। বৌদির কাপড় পরার স্টাইল দেখেছিস? দেখলেই তো মাথা নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েরা এইভাবে কাপড় পরেই দেখেই তো সমাজে এত ধর্ষণ হয় আমি মুচকি হেসে মামুনকে বললাম,
— ধর্ষণ করতে বাকি কোথায় রেখেছিস? ধর্ষণ তো কবেই করে ফেলেছিস। শুধু মেয়ের অমতে জোরে করে শারীরিক সম্পর্ক করাকেই ধর্ষণ বলে না। একটা মেয়ে নানা ভাবে ধর্ষিত হয়। কারো কথাতে ধর্ষিত হয় আবার কারো নোংরা চাহনিতেও ধর্ষিত হয়।
আমাদের ইসলাম ধর্মে মেয়েদের পর্দা করা ফরজ। তাই আমাদের ধর্মের মেয়েদের পর্দা করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে মুসলিম বাদেও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সকল ধর্মের মেয়েরা আছে। এখন সেই ধর্মের মেয়ে গুলো পর্দা করবে না দেখে তোর ধর্ষণ করতে মন চাইবে এটা কেমন কথা? আমাদের ধর্মে কোথাও লেখা নেই বেপর্দা মেয়েদের দেখলে তাকে ধর্ষন করো। রবং আমাদের ধর্মে লেখা আছে, কোন বেপর্দা নারীকে দেখলে তুমি তোমার দৃষ্টি সংযত রাখো মামুন আমার কথা শুনে চুপচাপ রইলো। আমি তখন ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,
— মহিলা তোর দোকানে এসে তোকে সর্বপ্রথম দাদা বলে ডাক দেয় আর তুই তাকে নিয়ে কত নোংরা চিন্তা করিস।
হতে পারে মহিলাটার ব্লাউজের পিছন দিকটা একটু বেশি খোলা। কিংবা শাড়ি পড়ার সময় পেটের কিছুটা অংশ বের হয়ে যায় কিন্তু তাতে কি হয়েছে? তুই তোর দৃষ্টিটা সংযত রাখ। এটা ঐ মহিলা আর ওদের ধর্মের বিষয়। তুই শুধু শুধু পাপ জমাতে যাস কেন? আমার কথা কথা শুনে মামুন কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
– তোর লেকচার মারা শেষ হলে এখন তুই আসতে পারিস। মেয়েরা যদি দেখাতে পারে আর আমরা দেখলেই দোষ
আমি আর কিছু না বলে হাসতে হাসতে ওর দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম আর ভাবতে লাগলাম, দুনিয়াতে কিছু মানুষ আছে যারা কখনোই ঠিক হবে না তেমনি এই দুনিয়া থেকে ধর্ষণ মেয়েদের অপদস্ত করা অসম্মান করা এইগুলো কখনোই নির্মূল হবে না…
গল্পের বিষয়:
গল্প