এক কাপ কফি

এক কাপ কফি
এই যে আমি টুপ করেই প্রেমে পরে গেলাম অথচ লোক টা হয়ত জানেই না আমি সুযোগ পেলেই আড়াল থেকে তাকে দেখি, সুযোগ পেলেই ফাইল দেয়ার নাম করে তার আঙ্গুল ছুয়ে দেই। ইশ তার মারডালা টাইপ চাপ দাড়ি আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না । কত শত স্বপন বুনে বুনে ঘুমাতে যাই। সে তো এটা ও জানে না তার নামের সাথে মিল রেখে নিজের একটা নাম ও দিয়েছি। উফ কি যন্ত্রনা!
তাকে কফি বানিয়ে দেয়ার সময় যে আমি এক চুমুক খেয়ে নেই সে কি জানে! বিষাদ ভরা কন্ঠে গান গাইতে গাইতে তার সাথে ধাক্কা খাই সে কি বোঝে না এই গান টা ও তার জন্য! আমি ভুল করেছি, প্রেমে পড়া বারণ বলতে বলতে শুধু পড়েই নি পড়ে হাত পা ভেঙ্গেছি, কুনুই এ ছিলে একাকার ।এখন মেডিসিন এর জন্য তার পিছনে ঘুর ঘুর করি। আজ কাল তো তার বান্ধবী টা কে দেখলেই মনে হয়ে কাচা খেয়ে ফেলি। কত ভাবে ট্রাই করলাম শায়েস্তা করতে আহা তাদের প্রেম টা তো ফেবি কলের আঠা। আজীবনের জন্য জোরা লেগেছে। আর ছুটাতেই পারছি না। ওই জনাব! কি কারণে ডেকেছে আল্লাহ জানে।
–কি রে সারা দিন কি তোর মাথায় এই চিন্তা ই ঘুরে? কিভাবে স্যার কে পটাতে পারবি?
–তো আমার তো এক টাই চিন্তা। এই গাধা লোক টা কবে বুঝবে যে আমি কেন তার আগে পিছে ঘুরি! খেয়ে দেয়ে কাজ নাই স্যার তোর প্রেমে পড়বে?
–স্যারের পড়ার দরকার নাই। দুজন পরে গেলে কে কাকে তুলবে! আমি পড়লেই চলবে হন হন করে তুষ্টি হাটা ধরলো মিফতাহ এর রুমে।
–স্যার আসবো ? চোখ না তুলে ই,
–হ্যা আসুন মিস তুষ্টি । গতকাল যে ফাইল দিয়েছিলাম কম্পলিট করেছেন?
–হ্যা স্যার বলেই ফাইল দেয়ার বাহানায় তুষ্টি আংগুল বাড়িয়ে দিলো।
–উহু এসব ছোঁয়া ছুঁয়ি ভালো না জানেন তো। সো এর পরের বার অন্য টেকনিক ইউজ করুন। ইয়া আল্লাহ বলেই মুখ চেপে ধরে তুষ্টি।
–হুম আরেক টা কথা কাল থেকে আর আপনি কফি দিবেন না । ৪২০ ভোল্টের শক খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। এত্তো ক্ষন স্যার কি বললো। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ।মনে মনে ১০১ টা বকা ও দিয়েছে।
–আপনার বকা দেয়া শেষ হলে আসতে পারেন।
তুষ্টি পারলে হাত পা ছুড়ে কাঁদে। কিন্তু এখানে কিছুই করবে না। জিহান পাশের টেবিল থেকে এসে ঝুকে বলল কি রে মন খারাপ?
— উহু। অই বদ লোক আমার মন পড়তে পারে।
–কার কথা বলছিস?
–কিছু নারে কিছু না
–হুম। যাওয়ার সময় নক দিস ।বাসায় পৌঁছে দিবো।
অফিস আউয়ার শেষ। তুষ্টি বের হবে বলে জিহান কে ইশারা করে। নিচে তুষ্টি এসে দাড়ালেই মিফতাহ গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়ায়।
–মিস তুষ্টি চলে আসুন। বাসায় পৌঁছে দেই। তুষ্টি না বলে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকাতেই জিহান চলে আসে বাইক নিয়ে। তুষ্টি উঠার আগেই মিফতাহ বলে উঠে জিহান তুমি যাও মিস তুষ্টি আমার সাথে যাবে ।
–ইয়ে মানে স্যার। দেখো এক্টা মিটিং এটেন্ড করবো, উনার সেখানে প্রয়োজন আছে। না হলে তোমাদের রোমান্সের বারো টা বাজানোর টাইম নেই আমার। জিহান হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর মিফতাহ তুষ্টিকে টানতে টানতে গাড়িতে উঠে।
–এটা কি হলো। দেখুন এই বেলায় আমি কোন মিটিং ফিটিং এ যেতে পারবো না ।
–খুব পারবে । যখন বলবো তখন ই যাবে ।আর হ্যা জিহানের সাথে বাইকে উঠার সাহস কোথা থেকে হয়?
–মানে। এটা আমার ব্যাপার। আর আপনি যে আপনার বান্ধবী নিয়ে ক্যাবিনে বসে আড্ডা দেন।
–আমার পার্সোনাল লাইফে ইন্টার্ফেয়ার করবা না।
–বাহ বাহ। এসব বস গিরি আমাকে দেখাবেন না। মিফতাহ হুট করেই ব্রেক ধরলো।তুষ্টির দিকে খানিক ঝুকে,
–আমি কি করবো কি করবো না তা তোমাকে বলতে হবে না। আর শোন নিজের জিনিসের যতন নিতে আমি খুব ভালো করেই জানি। তুষ্টি উনার কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝলো না। বাসার সামনে নামিয়ে শাই শাই করে গাড়ি চলে গেলো। পরের দিন অফিসে এসেই কিছু ফাইল পত্র আনতে মিফতার কেবিনে ঢুকেই থ বনে যায়। আন্নি নামের মিফতার ডাইনি বান্ধবী কিছু একটা মোছার ট্রাই করছে খুব ক্লোজ হয়ে।
–সরি আমার নক দিয়ে ঢুকা প্রয়োজন ছিলো। মিফতাহ কিছু বলার আগেই দৌড়ে তুষ্টি বের হয়ে যায়। জিহানের সাথে ধাক্কা খেয়ে ই তুষ্টি র দিকে চোখ পড়তেই জিহান বোঝে কিছু এক টা হয়েছে। লাঞ্চ আউয়ারে ক্যান্টিনে জিহান আর সুমি তুষ্টি কে খুব ঘাটাচ্ছে। মিফতাহ হুট করে এসেই টেবিল চাপরে তুষ্টির লাঞ্চ বক্স ফেলে দেয়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে ।
–এখানে এসে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছেন কেন আর নিজে খুব লাঞ্চ করে যাচ্ছেন। আমার লাঞ্চ রেডি করবে কে শুনি? তুষ্টি কিছু না বলে চুপচাপ উঠে যেতে চাইলেই হাত ধরে টেনে কেবিনে নিয়ে আসে মিফতাহ। দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তুষ্টির কোমড়ে চেপে নিজের দিকে টেনে বলে,
–যা দেখেছো সব টাই ভুল। এখন পর্যন্ত এক কাপ কফি ও পেটে পড়েনি আর ওই দিকে লাঞ্চ খাওয়া হচ্ছে? তুষ্টি মোচড়া মূচড়ি করতে করতে বলে ওসব আপনাদের ব্যাপার। এভাবে সবার সামনে আমাকে টেনে আনলেন কেন? অসভ্যতা করার জন্য? আপনার ফ্রেন্ড আন্নির মতো হ্যাংলা মেয়ে মানুষ না আমি। মুহুর্তেই মিফতাহ তুষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে দেয়ালে সজোরে আঘাত করে।
–বেড়িয়ে যাও। আর যেন আমার সামনে না দেখি তোমায়। এক্ষুনি যাও।
সকাল থেকে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে তুষ্টি। না আর অফিসে যাবে না। এই লোকের সামনেই যাবে না। কি ভাবে নিজেকে!!! কাল কেই রিজাইন লেটার নিয়ে যাবে । দিন যায় কেউ কারো সামনে আসেনা। মিফতাহ কে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। রাতে খাবারের টেবিলে তুষ্টি ঘোষণা করলো এক সপ্তাহের মাঝে পাত্র ঠিক করো। আমি বিয়ে করবো। হা হয়ে হাসান সাহেব মেয়ের ভাব মুর্তি বোঝার চেষ্টা করলো। তুষ্টি অনড়। বিয়ে সে করবেই। মিফতাহ এর চেয়ে সুদর্শন আর ড্যাশিং কাউকে।তারপর অফিসে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিবে বর কে সাথে রিজাইন ও নিয়ে নিবে। হুহ। সত্যি সত্যি বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। তুষ্টির এই ব্যাপারে কোন আগ্রহ ই নেই। ওর গায়ে হলুদের দিন ও মনে হচ্ছিলো অই জল্লাদ টা আসবে আর বলবে তুষ্টি এক কাপ কফি করে আনো। অভিমানের পাহাড় জমিয়ে তুষ্টি নিজেই ফোন করলো মিফতাহ কে।
–হ্যালো কে বলছেন?
–আমি তুষ্টি।
–ও হ্যা মিস তুষ্টি। আপনাকে আর অফিসে আসতে হবে না। আমি ই জানিয়ে দিতাম জিহান কে দিয়ে।
চুপ থেকে তুষ্টি বলল আমি আর এমনিতে ও আসতাম না । কাল আমার বিয়ে। ওয়াও গ্রেট। অভিনন্দন। সুখে থাকুন আর আপনার যেকদিনের স্যালারী বাকি সেটা পাঠিয়ে দেয়া হবে। খট করেই লাইন কেটে দিলো মিফতাহ । থ হয়ে চোখের জল মুছে জোরে শ্বাস নিয়ে দৃঢ় গলায় তুষ্টি বলতে লাগলো, আমি ও দেখিয়ে দিবো আমি অনেক সুখী। বিয়ের পর্ব শেষ হউয়ার পর বিদায় পর্ব শুরু। সব ঠিক ঠাক ভাবেই শেষ হলো। গাড়িতে উঠে ও একবারের জন্য তুষ্টি বরের দিকে তাকায়নি। গাড়ি ছুটে চলছে শাঁই শাঁই করে। তুষ্টির কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। মনে হচ্ছে রাগের বসে জীবনের চরম ভুল করছে। হু হু করছে বুকের ভেতর। অচেনা হাতের স্পর্শ পেয়ে নিমিষেই জমে গেলো সে। গাড়ি ঢাকা ছেড়ে তখন কুমিল্লার পথে। ভয়ে আতংকে চিল্লায়ে তুষ্টি বলল
–আমরা কোথায় যাচ্ছি? অপর পাশ থেকে আন্সার না পেয়ে নড়েচড়ে বসলো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে তাকাতেই তুষ্টি ৪২০ ভোল্টের শক খেলো।
–আপনি? আপনি কেন? আর আমরা কোথায় যাচ্ছি উনি কোথায়?
–কাকে চাচ্ছো? আমাকে ভালো লাগছে না?
–মানে কি? গাড়ি থামান। প্লিজ গাড়ি থামান। আমার মাথা কাজ করছে না।
মিফতাহ দু হাতে তুষ্টির গালে ধরে বলতে লাগলো এতো জেদ কেন তোমার? শেষ মুহুর্তে সব ম্যানেজ না করলে এখন অন্য কারো বউ হতে। আর কখনো কোন দিন এমন জিদ করবে না। তুষ্টি মিফতাহর হাত স্পর্শ করে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। বিশ্বাস ই হচ্ছে না তুষ্টি এখন মিসেস মিফতাহ। চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। মিফতাহর ঠোঁট সেই জল স্পর্শ করে তুষ্টি কে জিজ্ঞাসা করলো
–সারা জীবন কফি খাওয়ানোর দায়িত্ব টা কি নিতে পারবে? মিফতার বুকে মাথা রেখে অভিমানের সুরে তুষ্টি বলে উঠে
–যদি কফির প্রথম চুমুক টা আমার হয় তবেই কেবল।
–বঊ! আত্মতৃপ্তি কি জানো?
–কি?
–আমার ধোঁয়া উঠা কফির মগে তোমার ঠোঁটের স্পর্শ।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত