শ্রেষ্ঠ পাওয়া

শ্রেষ্ঠ পাওয়া
শেষ কখন ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছিলি নীরু!?হঠাৎ বড় আপুর মুখে এই কথা শুনে ভাত টা আর মুখে দিতে পারলাম না আমি, কেমন যেনো স্তব্দ হয়ে রইলাম,
~কি রে নীরু চুপ করে আছিস যে?আর এইটা কি শাড়ি পড়ে আছিস এমন শাড়ি তো আমাদের বাসার কাজের মেয়েও পড়েনা,তোর বর কি উপার্জনে এতোটাই অক্ষম যে তোকে একটা ভালো শাড়ি দেওয়ার মুরোদ টুকু ও তার নেই!?এসব বলে একটার পর একটা বিষাক্ত প্রশ্ন বাণে বিদ্ধ করছে আমার বড় আপু,তার কারণ হচ্ছে আমি তাদের অমতে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম আবির কে,আবিরের ব্যক্তিত্ব,আচার আচরণ আমায় মুগ্ধ করেছিলো যদিও আমার বড় আপুর বরের মতো তার এতো আয় নেই,স্বল্প আয়ে সে জিবন যাপনে অভ্যস্ত,
আমিও অবশ্য এতো বিলাসীতা পছন্দ করিনা,আমার বড়লোক বাবার ধন সম্পদের বিলাসীতা আমাকে কখনওই অাকৃষ্ট করতে পারেনি,আমি ভালোবাসায় বিশ্বাসী,আমার মতে একটা সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য ভালোবাসা,বিশ্বাস,সমঝোতা প্রয়োজন,আর যে সংসারে এই বিষয় গুলো আছে সেই সংসার স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়,এই দিক দিয়ে আমি সবছেয়ে সুখী ব্যক্তিদের একজন,আর আবিরকে পেয়ে আমি গর্বিত!আমাদের সংসারে টানাপোড়ন থাকলেও কখনো ভালোবাসার অভাবে সে আমায় রাখেনি,আর আমি তাতেই সব ছেয়ে বেশি সুখী।
~আচ্ছা আপু শেষ কবে ভাইয়া তোকে খাইয়ে দিয়েছিলো?শেষ কখন তোর হাত ধরে বলেছিলো ভালোবাসি!?শেষ কখন তুই অসুস্থ হলে ভাইয়া সারারাত জেগে তোর সেবা যত্ন করে তোকে সুস্থ করেছিলো!?আমার এসব প্রশ্নে আপু কেমন মুখ কালো করে ফেললো আর বললো,
~তার এতো সময় কই বলতো!?কতো বড় ব্যবসা সামলায় সে,এই যে দেখছিস এই ডায়মন্ডের নেকলেসটা কিছুদিন আগে নিয়ে দিলো!দাম জানিস এটার!?এটা বলেই আপু কেমন আমার প্রশ্ন গুলো আড়াল করতে চাচ্ছে,
~শুন আপু এসব ডায়মন্ডের নেকলেস আর ভারি ভারি মেকাপ সামগ্রীর নিছে আসল ভালোবাসাটাই গুলিয়ে ফেলেছিস,তোর দামী নেকলেসের নিছে চাপা পড়ে আছে আসল ভালোবাসার স্পর্শ,জানিস আমার বর তোর বরের মতো এতো দামী নেকলেস হয়তো আমাকে দিতে পারেনা কিন্তু সারাদিন কাজ করে বাসায় ফেরার পথে আমার জন্য রোজ বেলী ফুলের মালা আনতে ভুলেনা,হাজার ব্যস্ততায় একবার ভালোবাসি বলে কোনো ম্যাসেজ পাঠাতে ভুলেনা,এটা ঠিক যে আমি শেষ কখন ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খেয়েছি আমার মনে নেই, কিন্তু বাজারের সবছেয়ে সস্তা মাছ টা যখন সে আনে আর আমার শাশুড়ি মা সেটা খুব যত্নে রান্না করে আর আমার বর যখন সেই মাছের পাতলা ঝোল দিয়েও আমাকে এক লোকমা ভাত খাইয়ে দেই আমার মনে হয় আমি অমৃত খাচ্ছি এইবার বল আপু এখানে সবছেয়ে সুখী কে তুই না আমি!?আমার এই প্রশ্নে আপু আর উত্তর দিলোনা,দেওয়ার ভাষা টুকু ও তার নেই,
~কিরে নীরু খাচ্ছিস না কেনো মা কি হয়েছে তোদের!?কি শুরু করেছিস তোরা এসব এটা বলেই আম্মু বকাবকি করছে,
~আম্মু আমি আজ উঠি,এই বাড়ির এক লোকমা ভাত ও আমার গলা দিয়ে নামবেনা,যে ঘরে আমার স্বামীর অপমান হয় সেই ঘরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নাহ,তোমাদের এই আভিজাত্য আমার চাইনা,এটা বলেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম অবশ্য তারাও খুব আটকাতে চেয়েছে আমাকে কিন্তু আমার পক্ষে এই খানে থাকা সম্ভব নাহ।
~কি রে মা চলে আসলি যে!?কি হয়েছে তোর!?কোনো সমস্যা হয়েছে!?প্রশ্ন করছে আম্মু মানে আমার শাশুড়ি মা,একটা মানুষ কতোটা সহজ সরল হতে পারে এই মানুষ টাকে না দেখলে বুঝতামই না,অবশ্য এই বাড়ির প্রত্যেক টা মানুষ এতো ভালো যে আমার মনে হয় কোনো এক বড় পূণ্যের গুণে আমি তাদের মতো একটা পরিবারে বউ হয়ে আসতে পেরেছি।
~নাহ আম্মু কিচ্ছু হয়নি তো!তোমাদের ছাড়া থাকতে ইচ্ছে করছিলো না তাই চলে এলাম!
~তুই ও না পাগলী একটা!দেখে তো মনে হচ্ছে ভাত ও খাসনি তুই না বললেও আমি বুঝেছি কিন্তু,আমি জানিরে তোর পরিবারের লোকজন আমাদের ঠিক এখনো মেনে নিতে পারেনি,আয় খাবি চল এটা বলেই আম্মু ভাত আনতে চলে গেলো,আমার চোখে অশ্রু বইছে নীরব ভাষায় আর স্রষ্টার কাছে অনেক টা শুকরিয়া জানাচ্ছি এমন স্বামী সংসার পেয়ে। কলিংবেল বাজছে মনে হয় আবির এসেছে!আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম
~আরেহ্ নীরু!কখন আসলে!?তোমাকে কতোবার কল দিয়েছি ধরলেনা কেনো!?অভিমানের সুরে বলছে আবির,
~সরি,মোবাইল টা সাইলেন্ট ছিলো তাই ধরতে পারিনি,আসো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও এটা বলেই রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালাম হঠাৎ আবির আমার হাত টা চেপে ধরলো,
~কি আড়াল করছো নীরু!?আমি সব শুনেছি তোমার মায়ের কাছ থেকে,সব তো সত্যিই নীরু এতোদিন হলো বিয়ের,কখনওই তোমাকে ভালো কিছু দিতে পারিনি এই নিয়ে কখনওই অভিযোগ করোনি তুমি,কোনোদিন কোনো কিছু চাওনি তুমি,আমার তো খুব ইচ্ছে করে আমার বউটাকে রাণীর মতো করে রাখতে কিন্তু সামর্থ্য যে খুব সীমিত,কিন্তু আমি তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি নীরু।আবিরের এই কথায় চোখের অশ্রু আর বাঁধ মানলো না,তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম,
~এসব কথা কখনওই বলবা না আর!আমি চাইনা দামী শাড়ি গয়না,আমি তোমার বুকের এই ছোট্ট রাজপ্রসাদে রাণী হয়ে থাকতে চাই!ব্যস এই অধিকার টুকু নিয়েই আমি মরতে চাই!আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই!অনেক ভালোবাসি আবির তোমায়! মাঝরাতে হঠাৎ জেগে দেখি আবির পাশে নেই!কোথায় গেলো আবির এতো রাতে!ভয়ে কেমন গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার!আম্মুকে কি ডাকবো!?ডাকাটা কি ঠিক হবে এতো রাতে!নাকি আরেকটু অপেক্ষা করবো!
~নীরু।হঠাৎ আবিরের ডাকে আমি চমকে উঠলাম!
~আরেহ্!কোথায় গিয়েছিলে তুমি!?জানো আমি কত্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!?এমন কেউ করে হ্যা!!?
~আচ্ছা সরি সরি!শান্ত হও,এই যে এদিকে আসো বসো এইখানে!পা টা দাও তো এটা বলেই আমার পা টা তার হাটুর উপর নিলো আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না,
~কি করছো আবির এইটা!আমিতো কিছুই বুঝলাম না!।
~ভুলে গেছো নীরু আজকে কয় তারিখ!?
~হিসেব মতে এখন ১২:১৩ বাজে তার মানে আজ ২ তারিখ,হুম তো তাতে কি হয়েছে!?
~ভুলে গেছো বুঝি!?আচ্ছা চোখ বন্ধ করো তারপর বলছি এটা বলে আমার চোখ সে বেধে দিলো!
চোখ খুলে দেখে তো আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো!আমার পায়ে ঘাস ফুলের একটা পায়েল আর তার হাতে একটা প্ল্যাকার্ড!আর তাতে লিখা, Happy Marriage anniversary My Love! I am Lucky To Have you in my life! আজ এতো বড় একটা দিনে সামান্য এই ঘাস ফুলের পায়েল আর আমার অফুরন্ত ভালোবাসা দেওয়া ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই আপাতত!আর এই ঘাস ফুলের পায়েল টা আনার জন্যই এতো রাতে আমার বাইরে যাওয়া মহারাণী তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী! আমার সত্যিই বলার মতো কোনো ভাষা নেই!আনন্দাশ্রু টপটপ করে বৃষ্টির ফোটার মতো ঝরছে!এই যেনো আমার সুখের রাজ্যের এক টুকরো সুখ!আর এই ঘাস ফুলের পায়েল টা আমার কাছে হীরা মুক্তার চেয়েও দামী কারণ এতে জড়িয়ে আছে আমার সহজ সরল ভালোবাসার মানুষটার ভালোবাসার স্পর্শ!আমি আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আর বললাম,
~তোমার এই ঘাস ফুলের পায়েল টাই আমার কাছে হীরে মুক্তোর মতোই দামী!আর তুমি আমার জিবনে শ্রেষ্ঠ পাওয়া!।
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত