গ্রামের নাম বাঁশপুকুর। ঐ গ্রামে অনেক মাঝি-মাল্লার বসবাস। গরিব-দুঃখী ধনী-দরিদ্র সকলকে নিয়েই বাঁশপুকুর গ্রাম। প্রতিবছর পৌষ মাসে নবান্ন উৎসবে সেখানে একটি স্থানীয় বটতলার নীচের কালী মন্দির প্রাঙ্গণে বহু মানুষ মেলা করতে আসে। এত লোকের মিলনে ঐ মেলা আরও বেশি জম-জমাট হয়ে ওঠে। গ্রামের পাশেই মুহুরী নদী। বিকেল বেলা যখন ক্লান্ত সূর্য ঘরে ফিরে তখন মাঝি আর জেলেরা সকলে মিলে মাছ ধরতে যায়। তাদের সমাগমে নদীতে হই হই রব উঠে। কিন্তু নদী পারাপারের জন্য সেখানে নির্দিষ্ট কোন নৌকা-ঘাট নাই। ফলে বাঁশপুকুর ও তিতাস নগরের মানুষের সাথে এমন বেশি দেখা সাক্ষাৎ হয় না।
একদিন দুই গ্রামের লোকজন পঞ্চায়েতের কাছে সুপারিশ করল পারাপারের সুবিধার্থে একটি নৌকা-ঘাট তৈরি করার। প্রস্তাবটি যুক্তি সঙ্গত বলে শীঘ্রই মঞ্জুর হয়ে গেল। ষোল হাজার টাকার বায়না দেওয়া হল নরেশ মিস্ত্রির কাছে, যেন ভালো কাঠে একটি নৌকা বানিয়ে দেয়। প্রায় আড়াই মাসের মধ্যে তৈরি হয়ে গেল নৌকা।
আষাঢ় মাসের ভরা নদীতে নৌকাটির শুভ উদ্বোধন হল। সেদিন নদীর ঘাটে উপস্থিত ছিলেন দুই গ্রামের গ্রাম-প্রধান সহ বহু মানুষ। নৌকাটিকে দেখে মানুষের মধ্যে কতটা উৎসাহ বেড়েছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আনন্দঘন ঐ সমারোহে রান্না করা হল খিচুড়ি, সকলেই খেয়ে-দেয়ে বাড়িতে গেল। আষাঢ় মাসের তিন তারিখে / জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি বাঁশপুকুর থেকে তিতাস নগরের দিকে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করল।
কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে গেল নৌকার মাঝি। বাঁশপুকুর গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের নিখিল মাঝি বৈঠা সামলানোর দায়িত্ব পেল। নিখিলের স্ত্রী ইরাবতী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার অবস্থা একেবারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’। এখন নতুন করে নৌকা চালানোর দায়িত্ব পেয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সে। প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় নৌকায় গিয়ে বাড়িতে ফিরে রাত দশটায়। এখন পরিবারের আগের মতো আর অভাব নেই। এখন এই গ্রাম থেকে পারাপার হয়ে অপর গ্রামে যেতে মানুষের কোন অসুবিধা হয় না। ধীরে-ধীরে নিখিল মাঝির সাথে কাঠের নৌকাটির ভালো বন্ধুত্ব হয়ে উঠে। ভালবাসে নিখিল নৌকাটির নাম দেয় সুজন।
সুজন আর নিখিল মাঝির সময় ভরা নদীর জলের স্রোতের সাথে সাথে চলতে থাকল। নিখিল মাঝি তার জীবনের সকল ক্লান্তি দূর করে যখন নৌকায় বসে গান ধরত তখন আশেপাশের পরিবেশটা এক মনোহর ছন্দের প্লাবনে ভেসে যেত। কেউ-কেউ শখ করে নৌকা চলতে আসত, শুধুমাত্র নিখিল মাঝির গান শোনার জন্য। কিছুদিনের মধ্যেই নিখিল মাঝির বেশ সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। একদিন গ্রামের প্রধান নিখিল মাঝিকে ডেকে তার এরকম জনসভার জন্য উপহার স্বরূপ কিছু অর্থ আর কয়েকদিন ভরণপোষণ দিলেন। প্রধান বললেন, ঠিক এমন করেই সে যেন সকলকে সব সময় পারাপার করতে থাকে। নিখিল মাঝির উৎসাহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
নিখিল মাঝির ছেলের নাম সুজয় মাঝি। পড়াশোনায় তার খুব ভালো মনোযোগ। পরিবারের অবস্থা খারাপ দেখে ঠিক ভাবে লেখাপড়া চালাতে পারেনি। তবে এখন যেহেতু বাবার টাকা উপার্জনের রাস্তা হয়েছে তখন একদিন সুজয় বাবাকে বলল, “বাবা আমি লেখাপড়া করতে চাই।” নিখিল মাঝি এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। গ্রামের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠে ছেলেকে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে দিল। তখন তার বয়স সাড়ে আট বছর। বাড়িতে গৃহশিক্ষক উৎপল মহাশয়কেও ঠিক করা হল; মাসিক বেতন 300 টাকা। ছেলেকে নতুন করে বিদ্যালয়ে যেতে দেখে মা-বাবার শুঁকনো চোখে অশ্রু বেরিয়ে এল। সুজয়ের বিদ্যালয় যাওয়ার কথা শুনে নরেশ মামা কালো জুতা আর সাদা মোজা কিনে দিলেন।
নিখিল মাঝির বড় মেয়ের নাম ঋতু। দরিদ্রতার চাপে তার আর লেখাপড়া হয়নি। মায়ের সাথে রান্না-বান্নার কাজ করে ছোট থেকে বড় হয়েছে। তার বয়স এখন আঠারো। রোজ শনিবার স্নানের শেষে কাউকে কিছু না জানিয়ে সে কল্কি ঠাকুরের কাছে সৌমেনের জন্য প্রার্থনা করত। একদিন মা তার মনের কথা বুঝে ফেলে। মা ঋতুকে প্রশ্ন করলে সে বলে যে সে সৌমেনকে ভালবাসে। সৌমেনের বাড়ি পাশের গ্রামের তিতাস নগরে। নৌকা উদ্বোধনের দিন তাদের প্রথম দেখা হয়, সেদিন থেকেই তাদের মধ্যে ভালোবাসার সূত্রপাত। রাতে নিখিল মাঝি যখন বাড়ি ফিরল তখন মা, মেয়ের ভালবাসার কথা সব খুলে বলল। দেখতে দেখতে মেয়েটা চোখের সামনে বড় হয়ে গেল। মেয়েরা যে এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়, এই ভেবে নিখিল মাঝির চোখে জল এসে পড়ে। নিখিল মাঝি মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে প্রথমদিকে একটু ইতস্তত বোধ করলেও পরে মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে রাজি হয়ে যায়। পরেরদিন গ্রামের পুরোহিতকে ডেকে তিতাস নগরে সৌমেনের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠায় নিখিল মাঝি।
সৌমেনের বাবা সোনার ব্যবসা করে। ঐ গ্রামে তার বড় সম্মান আছে। পুরোহিত যখন বিয়ের প্রস্তাব তার সামনে রাখে, তখন তিনি সোজাসুজি একটা কথা বলে দেন, “বামুন হয়ে চাঁদে হাত না দেয়। মেয়ের লেখাপড়া কিছু নেই। বাবা একটা মাঝি। আমার ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দেবার স্বপ্ন দেখে, বেটার সাহস কত! যান, গিয়ে বলে দেন নিখিলের আমি প্রস্তাবে আমি ধিক্কার দিলাম।”
পুরোহিত বলল, “আসলে আপনি হয়তো জানেন না যে ওরা একে অপরকে খুব খুব ভালোবাসে। ওরা একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হতে চায়। দয়া করে আপনি এ প্রস্তাব ফিরিয়ে দেবেন না।”
সৌমেনের বাবা বলল, “সৌমেন আমার একমাত্র সন্তান। আমি জেনে শুনে তার এমন সর্বনাশ করতে পারি না। মেয়ের এক ক্লাস পড়াও নেই, তার উপর বাবা মাঝি। আমার সম্মান তো সব যাবে। আমি বেঁচে থাকতে বিয়ে হতে দেবো না।”
ভগ্ন মনোরথে পুরোহিত মশাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
নৌকা ঘাটে এসে পুরোহিত চেঁচিয়ে ডাকতে লাগল, “বলি ও নিখিল, আমায় পার করে দে!”
নিখিল মাঝি পুরোহিতের কাছে এসে হাসিমুখে মুখে অতি আগ্রহের সাথে জানতে চাইল তার প্রস্তাবের কথা। পুরোহিত নীরব রইল। পুরোহিতের এরকম নীরব থাকার ভাব দেখে মাঝি বুঝে গেল সৌমেনের বাবা প্রস্তাবটি নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দিয়েছে। পুরোহিত বলল, “আমি পারলাম না নিখিল মাঝি, তোমার কথা রাখতে পারলাম না। তুমি গরিব বলে, ঋতু নিরক্ষর বলে ওরা তাকে পুত্রবধূ করতে চায় নি।” একথা বলে পুরোহিত মশাই মাঝির কাঁধে হাত রেখে চলে গেল।
সেদিন নিখিল মাঝি আর বৈঠা বাইল না। তার চোখের জল ভেসে গেল নদীর অববাহিকা। সুজনকে সে বলল, “আজকে আর না বন্ধু, বেঁচে থাকলে কালকে আবার নৌকার ঘাটে আসব। আজ চললাম।”
এদিকে বাড়িতে তখন ঋতু তার বাবার পথ চেয়ে বসে আছে। বাড়িতে একটা খুশির জোয়ার পড়ে আছে। ঋতু জানতো সৌমেন কখনো না করবে না। সুজয় সেদিন বিদ্যালয় থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এল। ঋতু’র ছোটবোনটি, দিদির বিয়ে দেখবে বলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে আজ আর পুতুল খেলছে না। পাশের বাড়ির দিদিমার আশাটুকু পূরণ হবে এবার। তার বহুদিনের শখ ছিল নাতনির বিয়ে দেখবে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। পাখিরা গান গাইতে-গাইতে ফিরছে। এদিকে আবার ইরাবতী রান্না চাপিয়ে দিল, আজকে তাড়াতাড়ি খেয়ে-দেয়ে মেয়ের বিয়ের হিসেব নিয়ে বসতে হবে। এমন সময় বাবা এল, হাতে-পায়ে জল ঢেলে পরিষ্কার করে ঘরে গেল। তবে আজ বাবার মুখে হাসি দেখল না ঋতু। ইরাবতী স্বামীর মুখ থেকে জানতে চাইল বিয়ের প্রস্তাবের খবর। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিখিল মাঝি জবাব দিল, “এই জীবনে কি এমন ভুল করেছি যার জন্য ঋতু আজ কষ্ট পাবে? সারাজীবন খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়েছিলাম, সেই পাখাগুলি কেউ যেন কেটে দিল। আমরা হচ্ছি অন্ধকার। এই অন্ধকারে ইচ্ছে করে কেউ নামতে চায় না। আমাদের মত সাধারণ এর সাথে কেউ সম্পর্ক করতে চায় না।”
ঋতু কিছুতেই বাবার কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। পরের দিন সে আবার ছোট ভাইকে সৌমেনের বাড়িতে পাঠাল। সে গিয়ে দেখল সৌমেন তার বাবার সাথে দোকানে বসে আছে। সুজয় তাদের দেখে এগিয়ে গেল। নিজস্ব পরিচয় দিল। তার পরিচয় জানার পর ওরা তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। খুব অপমান করে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এক ধনীর বাড়িতে গরীবের সম্মান খুব কম খুঁজে পাওয়া যায়। মনে খুব কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে এল সুজয়। সেদিন সে মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করল, সম্মানের সাথে বাঁচতে তাকে এই দরিদ্রতার বন্ধন ছিন্ন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে। বাড়িতে ফিরে দিদিকে দেখে সে কেঁদে উঠল। দিদির বুঝতে আর বাকি রইল না কিছু। ঋতু বলল, “থাক ভাই, তুই আর কাঁদিস না। আমারা আবার নতুন করে বাঁচতে শিখব।” বাবাকেও সে বুঝিয়ে বলতে লাগল, “বাবা, আমাদের আবার নতুন করে বাঁচতে হবে। সুজনকে (নৌকা) নিয়ে আমাদের যে সখ্যতা হয়েছে তা যেন আরও গভীর হয়। দেখবে আমরাও একদিন বড় হব। ঐ যে একটা গান আছে না,’চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।'”
নতুন স্বপ্ন নিয়ে পরের দিন নিখিল মাঝি পুনরায় নৌকা ঘাটে ফিরে গেলে এবং নৌকা বাইতে থাকল। প্রতিদিনের মত লোকজন নদী পার হয়। মাঝিও মনের সুখে শত আবেগ ভরা গান ধরে। এমন করেই দিন চলতে থাকে। পরিবারটা আবার ঠিক ঠাক চলতে থাকে। নৌকা নিয়ে নিখিলের ভাল দিন কাটতে শুরু করে। ঋতুর মনে যে বেদনা লুকিয়ে আছে তা আবার দেখা যায় না এখন। সুজয় এখন রোজ স্কুলে যায়। কারণ তাকে বড় হতেই হবে; দিদির প্রতি অবিচারের বিচার তখনেই হবে যখন সে প্রতিষ্ঠিত মানুষ হয়ে উঠবো।
এখন নিখিল মাঝি রোজ নৌকা থেকে ভাল মুনফা অর্জন করেতে থাকে। এমন করে কিছু দিন চলে গেলে হঠাৎ একদিন শুনতে পাওয়া গেল নৌকা ঘটে সরকারি ভাবে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে হবে। তার জন্য কলকাতা থেকে ইঞ্জিনিয়ারও চলে এসেছে। বাঁশপুকুর ও তিতাস গ্রামের গ্রাম-প্রধানদের স্বাক্ষরে বিলটি ফাইনাল হয়ে গেল। এবার উপর মহল থকে আদেশ এলেই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে। গ্রাম-প্রধান একদিন হঠাৎ নিখিল মাঝিকে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে বলল ঘাট থেকে যেন শীঘ্রই নৌকা সরিয়ে নেওয়া হয়। কয়েকদিনের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তাই নৌকা ঘাটের জায়গাটা ফাকা করতে হবে। এই সংবাদ শুনে নিখিল মাঝির পায়ের তলায় আর মাটি থাকল না। সে চিৎকার করা কাঁদতে লাগল কিন্তু তার কথা আর কেউ শুনল না। যারা একদিন তাকে বাহবা দিতে আজ তরা কেউ এগিয়ে এসে অসহায় মাঝির দিকে তাকাল না। কেবল শুধু নদীর পারের অসহায় বালি, বাতাস তার জন্য দুঃখ করতে লাগল।
নিখিল মাঝির মনে হল, তার নৌকাটি যেন তাকে বলছে, “তুই কেমন করে বাঁচবি রে? এতদিন তো আমি তোর সব / দূর করার চেষ্টা করেছিলাম। বৈঠা ছেড়ে দিলে তোর কি হবে?”
নিখিল মাঝির কোনও ভাষা রইল না। সে ধীরে-ধীরে বৈঠাটা নৌকার মাঝে অতি সযত্নে রেখে বাড়ীর দিকে রওনা দিল। নীরব নদীর বালুচরে নিখিল মাঝির বুক ফাটা কান্না শোনার মত আর কেউ রইল না। কিন্তু নদীর হাওয়ায়, নদীর চরে পরে থাকে তপ্ত বালুতে যেন ঝর উঠল। বেদনার এই আবছা ছায়া দেখে পাষাণ ভয় পায়।
কিছুদিনের মধ্যেই তৈরি হয়ে গেল নৌকা ঘাটের উপর মস্ত সেতু। তিতাস গ্রামের মানুষ আর বাঁশ পুকুর গ্রামের মানুষ এখন অতি সহজেই যাতায়াত করতে পারে, দেখা সাক্ষাত করতে পারে। ঐ পথে এখন হাজার অজানা-অচেনা মানুষ চলা ফেরা করে; সবাই ব্যস্ত যে যার কাজে। কিন্তু নিখিল মাঝির খবর কেউ রাখে না। বাঁশপুকুর গ্রাম আর তিতাস নগরও আগের মত আর নেই। শুধু আগের মত রয়ে গেল নিখিল মাঝির পরিবারটা। তবে নিখিল মাঝি নিয়মিত তার নৌকাটির খুঁজ নেয়। বৈঠা নিয়ে নির্জনে গিয়ে বসে থাকে তার পাসে। কিন্তু কোনও যাত্রী আর আসে না। কোনোদিন নিখিল মাঝি তার কাছে না এলে, যারা ঐ পথে দিয়ে বাঁজারে যায় তাদের কাছে সে নিখিল মাঝির খুঁজ নেয়। কিন্তু কেউ বোঝে না তার ভাষা। কেহ কথা কয় না। নৌকাটি যে চিৎকার করে তার বন্ধুর জন্য কান্না করে, সেই কান্না কারোর বোধগম্য হয় না।
বৃদ্ধ নিখিল মাঝি এখন আর বাড়ি থেকে বের হতে পারে না, তার নৌকাটির কাছেও যেতে পারে না। সকলে নিখিল মাঝির কথা ভুলে গেলেও সুজন তার বন্ধুর কথা এখনো ভুলে নি। তার বিশ্বাস নিখিল মাঝি যেখানেই থাকুক একদিন নিশ্চয়ই ফিরে আসবে। আর সেদিন ভরা নদীতে আবার বৈঠা বাইবে, গান গাইবে পাখিদের সাথে। তাই নৌকা-ঘাটের সেতুর তলায় পরে থেকেও নৌকাটি ভগ্ন হৃদয়ে আশা নিয়ে এখনো নিখিল মাঝির জন্য পথ চেয়ে অপেক্ষা করে।