বাবার আদর্শ

বাবার আদর্শ
ভাইবা পরীক্ষায় নায়লাকে প্রশ্ন করা হলো,, “আপনি জীবনে কয়টা রিলেশন করেছেন?” প্রশ্নটির জবাবে নায়লা মুচকি হেসে বললো,,”এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমার বাবা দিতে পারবেন।তাই আমি আমার বাবাকে ফোন দিতে চাই।”
নায়লার এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।সবার মধ্যে থেকে একজন কৌতুহল নিয়ে বললো,,,”জ্বি,সমস্যা নেই আপনি আপনার বাবাকে ফোন দিতে পারেন।”নায়লা অতঃপর তার বাবাকে ফোন দিলো।নায়লার বাবা ফোন ধরতেই নায়লা প্রশ্ন করে বসলো,,”বাবা,আমি লাইফে কয়টা রিলেশন করেছি?” ফোনের ওপাশ থেকে বাবা বলে উঠলো,,”না,একটাও না।” নায়লার বাবার কথা শুনে একজন আরেকজনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো।তখন বড় স্যার নায়লার হাত থেকে ফোন নিয়ে তার বাবাকে প্রশ্ন করলো,,”আপনি কীভাবে শিউর যে আপনার মেয়ে কেনো রিলেশন করে নি?”
নায়লার বাবা স্মিত হেসে বললেন,,, “আমার এখনো মনে আছে আমার মেয়ে প্রথম যখন প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছিলো তখন আমার মেয়ে সবে মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে। আমার মেয়ে আমাকে এসে ঝাপটে মেরে ধরে বললো,,বাবা জানো আজ না আমাকে পাড়ার রবিন নামের ছেলেটি ফুলের তোড়া আর চকলেট দিয়ে বলেছে ও আমাকে ভালোবাসে আর তাই স্কুল থেকে আমি ওর সাথে ঘুরতে গিয়েছি।”আমি তখন হাসিমুখে বললাম,,”ভালো।”আমার এ উত্তরটি শুনে আমার মেয়ে ও হাসিমুখে বললো,,”আমি জানতাম বাবা তুমি আমাকে কিছু বলবে না।অথচ ফ্রেন্ডরা আমাকে বারবার বললো তোমাকে এ কথা না বলতে।তুমি শুনলে নাকি আমাকে অনেক মারবে।কিন্তুু আমি বলেছিলাম আমার বাবা এমন নয় আর উনি শুধু আমার বাবা নয় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।বাবা আমি ঠিক বলিনি? আমি বলেছিলাম,,”ঠিক বলেছিস মা।”
এ বলে আমি ওর হাত ধরে একটা আম গাছের নিচে নিয়ে এলাম।অতঃপর একটা বড় লাঠি দিয়ে আম গাছ থেকে আম পাড়তে চাইলে আমার মেয়েটি চিৎকার করে বললো,,”বাবা তুমি এটা কী করছো?আম গুলো এখনও ছোট,সবে মাত্র মুকুল থেকে বের হয়েছে।এগুলাে পাড়া বা খাওয়া কোনোটাই উচিত নয়।”আমার মেয়ের এ কথা শুনে আমি বললাম,,”মা,এ কথা যদি আমি তোকে বলি।তোকে বলি যে এখন এসব প্রেম ভালোবাসা করা উচিত নয়।কারন তুমি এখনও ছোট। এ আমগুলো যেমন এখন খাওয়া ক্ষতিকর ঠিক তেমনই এ বয়সে প্রেম-ভালোবাসা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর জন্য ক্ষতিকর।”
এ বলপ আমি চলে আসলাম,সেদিন থেকে আমার মেয়ে সবসময় আমার এ কথাটি মনে রেখেছে জীবনে চলার পথে।আমার এখনও মনে আছে, একদিন আমার মেয়ে খুব বায়না করেছিলো জিন্স পড়ার জন্য আমি তখন মেয়েকে বলেছিলাম,, “ঠিক আছে,এনে দিবো।”পরের দিন এনে দিয়েছিলাম,,মেয়ে ওটা পরে দিব্যি খুশিতে আমার সামনে হাটতে থাকে।আমি তখন মেয়েকে দেখিয়ে টিভির উপর দেওয়া পর্দা টা সরিয়ে দিলাম এবং বাহিরে ফেলে দিলাম।আমার মেয়ে তখন রেগে বললো,,”বাবা তুমি এটা কী করলে?”আমি তখন বললাম,,”টিভির উপর পর্দা দেওয়ার কী দরকার এমনিতে তো ভালো দেখা যাচ্ছে।”আমার মেয়ে তখন বললো,,”উফ,বাবা তুমি জানো না টিভির উপর পর্দা না দিলে ধুলাবালি পড়বে।তারপর টিভি নষ্ট হয়ে যাবে।”
আমি তখন মেয়েকে বললাম,,”ঠিক তেমনই অশালীন পোশাকে নারীর সৌন্দর্যে ধুলাবালি পড়ে যাবে।এ ধুলাবালি কী জানিস?পাড়ার অসংখ্য বখাটে ছেলের বাজে মন্তব্য আর হাজারো রবিন নামক ছেলের আবেগ টা কে প্রেম নামে প্রকাশ করে হাজরো মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করা।”সেদিন থেকে আমার মেয়ে আজ পর্যন্ত আমার মেয়ে কখনও অশালীন পোশাক পরে নি।এভাবে আমার মেয়ের ভুলগুলোকে একটু একটু করে শিখিয়ে দিয়েছি বলে আমার মেয়ে আজ উচ্চশিক্ষিত এবং আজ আমি বুক ফুলিয়ে রাস্তায় হাটতে পারি।
আসলে স্যার আমাদের বাবা-মা দের উচিত আমাদের সন্তানদের সাথে বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো আচরন করা।জীবনটা জটিল নয় স্যার,কিন্তুু অল্প বয়সী মেয়েরা জটিল করে ফেলে।একজন মা-বাবা নয় একজন বেস্ট ফ্রেন্ডের অভাবে প্রতিনিয়ত ছেলে-মেয়েগুলো ভার্চুয়ালে তাদের মনের কথাগুলো প্রকাশ করে।কেনো জানেন স্যার? কারন তাদের এ কথাগুলো শুনার মতো আমাদের যথেস্ট সময় নেই।তাই হাজারো ছেলেমেয়ে ভুল পথে গিয়ে সুইসাইড করে।আমার মেয়ে কেনো ভুল পথে যাই নি জানেন স্যার কারন আমি ওর বাবা নয় বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।
কথাগুলো শুনে বড় স্যার নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।হঠাৎ মোবাইল থেকে উনার মেয়ের একটা ছবি বেরর করে কাতর স্বরে বললো,,”সরি মা,আমাকে ক্ষমা করে দিস।আমি তোর বাবাই রয়ে গেলাম,বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারলাম না।তাই তো তুই জীবন টাকে জটিল করে ফেললি আর ক্রমশও নিজেকে আত্মহত্যার কাছে বিলিয়ে দিলি।সরি..!!
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত