পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছি। বিয়ের পাকাপাকি কথা প্রায় হয়েই যাচ্ছিল।কেননা পাত্রের মা আগেই দেখেশুনে খোঁজখবর নিয়ে আঁটসাট বেঁধেই এসেছে তার ছেলের বউ করবে বলে।এদিকে বড়মামা ও পাত্র সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জেনেছে দোষত্রুটি শূণ্যের কোটায়। সব কথা শেষে চা খাওয়ার পর্ব আসতেই আম্মার চক্ষু চড়কগাছ। আম্মা ভরা মজলিশে চিল্লায়ে বলে উঠছে,”আমার মেয়ে প্রেম করে আপনাদের ছেলেকে সে বিয়ে করতে রাজিনা।”
মজলিশের সবকটা চোখ আম্মার উপর আর আম্মার চোখ পাত্রের উপর। আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা হঠাৎ আম্মার এই ব্যবহারের কারণ কি!পাত্রপক্ষের সামনে নিজের মেয়ের ইজ্জতের ফালুদা বানায়ে আম্মা কি করতে চাচ্ছে!তবে আম্মার এই বিশেষ ধরনের উত্তেজনার কারন কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়।কারন যখন আম্মার কারো কোনো ব্যাপার পছন্দ হয়না বা কোনো বদঅভ্যাস তার দৃষ্টিগোচর সে তখন প্রচুর উল্টাপাল্টা কাজ করে বসে।তখন তার মাথা কাজ করেনা।কোন পরিস্থিতিতে কি করা উচিত তা আম্মার মাথার ত্রিসীমানায়ও থাকেনা। এক্ষেত্রে পাত্র তো পছন্দসই ছিল তাহলে কি এই মুহুর্তে কোনো বদঅভ্যাস চোখে পড়েছে? তা যা হোক আমি ক্ষেপে আছি আম্মার উপর অন্যকারনে।আম্মা বললোটা কি?
প্রেমের বিরদ্ধে যতরকম প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে সে সবই করে জীবনে একটা প্রেমও করতে দেয়নি তার মেয়েকে।এখন এই ভরা মজলিশে আমার মানসম্মান নিয়ে আম্মা ছিনিমিনি খেলে কটকটি বানিয়ে দিল!! তার মেয়ে প্রেম করে?! সেই প্রেমিক কোথায়?? আম্মা মজলিশে আমার নাক কান গলা সব কেটে সে সটকে পরেছে। এদিকে আমি পাত্রীসাজে তব্ধা খেয়ে বসে আছি। বড়মামা সব ব্যাপার সামলে পাত্রপক্ষ বিদেয় করে আম্মার নামে বিচারসভা বসানোর ব্যবস্থা করছে।আব্বা কেবল মাত্র দর্শক হয়ে বসে আছে। অভিযুক্ত আমি আর আম্মা নির্মম অভিযোগ তুলেছে আমার নামে। বড়মামা প্রথমে আমাকেই যে জেরা করা শুরু করবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
-কিরে কবে থেকে প্রেম চলছে?
-আম্মা জানে।
-ছেলে করে কি?
-আম্মা জানে।
-প্রেম করলি তুই আর সব জানে তোর আম্মা?
-জ্বি মামা।
-এই বিয়ের কথা তো অনেক আগে থেকেই চলছে তখন কেন জানাস নি ঐ ছেলেকেই বিয়ে করবি!
-আম্মা জানে। কি আম্মা জানে আম্মা জানে করতেছিস?
-প্রেম যে করছি সেটাই তো আমি জানিনা।আম্মা জানে। বড়মামার চোখ এবার আম্মার উপর।আম্মা বড়মামার ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে।
-কিরে শায়লা! তোর কাহিনি কি?এত ভালো সমন্ধ আসলো সেটা তো ভাঙ্গলিই।সাথে নিজের মেয়ের ইমেজ নষ্ট করলি, এর কারন কি?? আম্মা নির্বিকার ভঙ্গিতে বলছে,
-“ভাইজান ছেলে শব্দ করে চা খায়।ছেলের বাবাও শব্দ করে চা খায়।এই ছেলেরে আমি জামাই বলে মানতে পারবো না। বাসায় বেড়াইতে আসলেই বিড়ালের মত চুকচুক শব্দ করে চা খাবে! আমি বেঁচে থাকতে তা হতে পারেনা।”
“আর তাছাড়া অন্য যেকোনো কথা এই বিয়ে ভাঙ্গতে বাঁধা হিসেবে কাজ করতো না।তাই ছুড়ে দিয়েছি একেবারে মোক্ষম হাতিয়ার। হুউউম!” আম্মার কথা বলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে কোনো বিশাল রাজ্য জয় করে এসেছে।
গল্পের বিষয়:
গল্প