টান

টান
হাসপাতালের বেডে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন বাবা। ডাক্তার বাবার পালস দেখলেন,প্রেসার মাপলেন। পুরানো রিপোর্টগুলি ঘেটে আরেকবার দেখলেন। বিষন্ন মুখ করে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলেন। কী যেন ভাবলেন! তারপর বললেন, হায়াত-মৌত আল্লাহর হাতে। আমরা ডাক্তাররা উছিলা মাত্র। বলেই উনি বিদায় নিলেন। বাবার অবস্থা যে ভয়ানক খারাপ আমাদের বুঝতে বাকি রইল না। বাবা কখনো আমাদের চিনতে পারছেন। আবার পারছেন না। মিনিট দশেক পর বাবা একবার চোখ মেললেন।বাবা অপলক চোখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন। বোধহয় চেনার চেষ্টা করলেন।
মা বাবার পায়ের কাছে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। বাবা ভাঙ্গা গলায় বললেন, খোকন ভদ্র মহিলা কেন কান্না করছে–একবার জিজ্ঞেস করতো। মা কাছে এসে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। ‘যে লোকটার সাথে তেত্রিশ বছর সংসার করলাম সে আমাকে আজ চিনতে পারছে না ! আমি বললাম, বাবা মা’কে আপনি চিনতে পারছেন না? বাবা ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মা’র দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন,অযথা কেন কান্নাকাটি করছ খোকনের মা ? মা’কে কষ্টে সামলালাম। বড় ভাইয়া মাথার কাছে দাড়িয়ে ছিল। বাবা নীচু গলায় জড়তা নিয়ে বললেন, উনি কি ডাক্তার? বড় ভাই বলল, বাবা..বাবা আমি মোহন..মোহন বাবা অনেকক্ষন তাকিয়ে বললেন, অ.. মোহন? বড় ভাই বলল, বাবা তুমি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছ? বাবা একবার মৃদু মাথা ঝাঁকালেন।
বড় ভাই বলল, বাবা কবরের জায়গাটা নিয়ে আরেকবার কথা বলতে চাচ্ছিলাম । যেহেতু আমরা সবাই এখন ঢাকায় সেটেল্ড তাই কবরটা গ্রামে না হয়ে ঢাকায় হলে ভাল হতো। যিয়ারত করতেও সুবিধা হত। ‘না না আমি আমার মায়ের সাথে ঘুমাব। বাবার পাশে ঘুমাব। গ্রামের যে ধুলা বালিতে আমি বড় হয়েছি, আমি সেখানেই ঘুমাব।’ বলতে বলতে বাবা অবুঝ শিশুর মত কেঁদে ফেললেন। মনটা কেমন যেন খারাপ হয়ে গেল। সবাই বললাম, ঠিক আছে বাবা গ্রামে তোমার বাবা-মার পাশেই তোমার কবর হবে। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাবা ঘুমাতে গেলেন। আর জাগলেন না। বাবার মৃত্যর পর আমার কেবল ঘুরেফিরে বাবার সেই কথাটাই মনে পড়ছিল– না না আমি মায়ের সাথে ঘুমাব। বাবার পাশে ঘুমাব। গ্রামের যে ধুলো-মাটিতে বড় হয়েছি সেখানেই আমি ঘুমাব বুঝিনা এটাই কি নাড়ির টান?এটা কি শিকড়ের টান?
গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত