ছুরিটা মাহিনের বুক বরাবর ঢুকিয়ে দিলো বর্ণা। পাশে থাকা অর্ধউলঙ্গ মেয়েটি বর্ণার সাহসিকতা দেখে থরথর করে কাঁপছে। ইতঃমধ্যে মাহিন চিৎকার করার শক্তিটাও হারিয়ে ফেলেছে। মাহিন হয়তো ভাবতে পারেনি যে বর্ণা এরকম একটি কাজ করবে।
-কী ভেবেছিস? জীবনের প্রতিটা পদে পদে আমাকে ধোঁকা দিবি আর আমি তা সহ্য করবো? কখনোই না।
এই বলেই ছুরিটা বুকের মধ্য থেকে একটানে ছাড়িয়ে নিলো। সাদা বিছানাটা রক্তের সংমিশ্রণে পুরো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। ছুরিটা হাতে নিয়ে এক পা দুপা করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে এলো বর্ণা। মেয়েটি উপায়ন্তর না পেয়ে বর্ণার পায়ের উপর ঝাপিয়ে পরলো।
-প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দিন। আমার ভুল হয়েছে আর কোনোদিনও এরকম হবেনা।
মেয়েটির কথা শুনে বর্ণা এক অট্টহাসি দিয়ে বললো,
-আমার স্বামীর সাথে নষ্টামি করেছিস আর তোকে ছেড়ে দিবো? যেখানে ওর বুকে ছুরি বসাতে আমার একটুও কষ্ট হয়নি সেখানে তুইতো সামান্য কীট মাত্র।
মেয়েটি হয়তো বুঝতে পেরে গিয়েছে তার আর রেহাই নেই। তাই শেষ চেষ্টায় রুম থেকে দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু হায়! এ কী? দরজাতো লক! বর্ণা একমুহূর্ত দেরী না করে পেছন থেকে ছুরিটা মেয়েটির গলায় বসিয়ে দিতেই গরগর শব্দ করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পরলো মেয়েটি। প্রায় পাঁচ মিনিট পর হুস ফিরলো বর্ণার। বর্ণার হাতদুটো থরথর করে কাঁপছে। হায় আল্লাহ এ আমি কী করলাম? সামান্য পরকীয়ার জন্য নিজের স্বামীকে খুন করলাম? এসব ভাবতেই অধিক শোকে পাথর হয়ে গেল বর্ণা। ঘটনার শুরুটা তিন বছর আগে মাহিন আর বর্ণার দুমাস হলো বিয়ে হয়েছে। একদিন বর্ণা দেখতে পায় মাহিনের গলায় লিপস্টিক এর চিহ্ন খুব সুন্দর ভাবে লেগে আছে।
-তোমার গলায় লিপস্টিক আসলো কই থেকে?
-ধুর কী বলো? ওটা এমনি তেমন কিছুনা।
বর্ণা বিষয়টাকে বেশি পাত্তা না দিলেও মাহিনের প্রতি সন্দেহের মাত্রাটা বাড়তে থাকে। এর কিছুদিন পর রাতে মাহিনকে বিছানার পাশে না দেখতে পেয়ে কিছুটা অবাক হয় বর্ণা। নিজের সন্দেহকে দূর করতে ব্যালকনির পাশে যেতেই দেখে মাহিন কার সাথে যেনো কথা বলছে। একটু কাছে আসতেই মাহিনের কথাটি স্পষ্টরূপে শুনতে পায় বর্ণা। বুঝতে বাকী রইল না যে মাহিনের প্রতি সেদিনের সন্দেহটা ভুল ছিল না। এই বিষয়টি নিয়ে সেদিন অসংখ্য কথা কাটাকাটি হয় মাহিনের সাথে।
একপর্যায়ে মাহিন সংকল্প করে যে সে আর কখনোই এরকম কিছু করবেনা। বর্ণাও তাকে একটি সুযোগ দেয় কারণ মাহিনকে বর্ণা শুধু স্বামী নয় বরং একজন শ্রেষ্ঠ ভালোবাসার মানুষ হিসেবে মনে জায়গা দিয়েছিলো। তাই সে কখনোই মাহিনকে রেখে অন্যকিছু কল্পনাও করতে চায়না। কিন্তু দিনকে দিন যখন দেখতে পায় মাহিনের অবহেলার মাত্রাটা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন বর্ণা একপ্রকার মানসিক খেই হারিয়ে ফেলে পাগলপ্রায় হয়ে যায়। যেদিন বর্ণা শুনতে পায় যে তার বাবা মা রোড এক্সিডেন্টে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে সেদিন তার মনে হচ্ছিল যে হৃদয়ের অলিন্দ আর নিলয়গুলো ছিন্ন হয়ে নিজেদের মাত্রা হারিয়ে ফেলেছে। একদিকে মাহিনের অবহেলা অন্যদিকে বাবা মায়ের মৃত্যু সংবাদ একরকম খাঁড়ার উপর মরার ঘাঁ ই বলা যায়। এরপরের দিনগুলো ছিল বর্ণার নিকট নরকতুল্য। বর্ণার বাবা মা মারা যাবার পর মাহিনের একটা আলাদা শক্তির আবির্ভাব ঘটে। কারণ সে জানতো একটি মেয়ে যতই প্রভাবশালী হোক না কেন বাবা মা যদি না থাকে তবে তার কোন শক্তিই অবশিষ্ট থাকেনা।
মাহিন বর্ণার সামনেই অন্যান্য মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বলতো। বর্ণা এসব দেখেও চুপ থাকতো কারণ কিছু বললেই মাহিন বর্ণার উপর চড়াও হয়ে মারধোর করতো। দিন দিন এতো এতো অবহেলা সহ্য করতে না পেরে বর্ণা নিজের মনে এক হিংস্র মনোভাব পুষতে লাগলো। আজ সকালে যখন মাহিন একটি মেয়েকে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকছিল তখন বর্ণার মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায়ই ছিল না। একপর্যায়ে মনে হলো সবজি কাঁটার ছুরিটা দিয়ে নিজেকেই শেষ করে দিতে। কিন্তু তৎক্ষনাৎই মনে হলো আমিতো কোনো দোষ করিনি তবে আমি কেন নিজেকে শেষ করবো। এসব ভাবতেই রান্নাঘর থেকে সবজি কাঁটার ধাঁরালো ছুরিটা দৃঢ়তার সহিত মুষ্ঠিতে আবদ্ধ করেই রুমের দিকে এগিয়ে এলো। রুমে নক করতেই মাহিন কর্কশ কন্ঠে বললো,
-কী সমস্যা তোর? শান্তিমতো মাস্তিও করতে দিবি নাহ? যত্তসব ডেট ওভার মা।
-না মানে রুমে মোবাইলটা রেখেছিলাম। একটু দরজাটা খুলো। মাহিনের সাথে আসা মেয়েটি দরজাটি খুলতেই বর্ণা আস্তে আস্তে খাটের দিকে এগিয়ে এলো।
-কই তোর মোবাইল? আমার সাথে মজা নেস?
এই বলেই যখন মাহিন বর্ণাকে চড় মারতে আসবে ঠিক সেই সময়টাতেই লুকানো ছুরিটা মাহিনের উলঙ্গ বক্ষদেশ বরাবর ঢুকিয়ে দিলো। এতোক্ষণ যাবৎ বর্ণার নিকট পুরো ঘটনা শুনছিলেন এসআই মজিদ।
-তো খুন করার কী দরকার ছিল? আপনি আপনার হাসবেন্ডকে ডিভোর্স দিয়েওতো চলে আসতে পারতেন।
-শুনুন! আমরা মেয়ে জাতি। আমরা কখনোই নিজের স্বামীর ভাগ অন্যকে দিতে চাইনা।
আর ইসলামেতো বলাই আছে বিবাহিত কেউ পরকীয়া করলে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আমি ডিভোর্স দিলেতো ও বেঁচে যেতো কিন্তু শাস্তি পেতো না, তাই শাস্তিটা নিজ হাতেই দিলাম। এখন যদি আমাকে দশবারও ফাঁসির দড়িতে ঝুলান তবে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট হবে না। কারণ মৃত্যুর থেকেও বড় যে হৃদয়ের কষ্ট তা আমি অনেক আগেই সহ্য করে এসেছি। এখন শুধু আমার প্রাপ্তির হাসিটা দেওয়াই বাকী। এই বলেই বর্ণা এক অট্টহাসিতে মুখোরিত করে ফেললো জেলের প্রতিটা আনাচে কানাচে। এসআই মজিদ ভাবছেন কতটা কষ্ট পেলে একটি মেয়ে এরকমটা করতে পারে তা ভাবতেই অবাক লাগে। আমিও কী তবে এই পন্থা অবলম্বন করবো? কারণ তিথি ও তো আমার পুরুষত্বহীনতার উসীলায় দিনকে দিন আমার চোখের সামনেই অন্যান্য ছেলেদের সাথে ডেটে যাচ্ছে। নাহ আর সহ্য করা যাবেনা আজকে রাতেই কাজটা সেরে ফেলতে হবে।
জীবন থেকেতো অনেক কিছুই হারিয়েছি এখন না হয় বাকী জীবনটা পুলিশ থেকে কয়েদী হয়েই পার করবো উক্ত গল্পটায় হয়তো শিক্ষনীয় কিছুই নেই তবে আছে অজস্র অবহেলা এবং তার পরিণতিতে এক হিংস্র আক্রোশ। যেই আক্রোশের সান্নিধ্যে এসে দিনকে দিন দেশে বাড়ছে স্বামী স্ত্রীর বৈরীতা এবং একপর্যায়ে খুন। যার ফল ভোগ করছে হয়তো অসংখ্য নিষ্পাপ শিশু। এটাই কেয়ামতের আলামত যার দৃষ্টান্ত প্রতিটা সমাজের আনাচে কানাচে।
গল্পের বিষয়:
গল্প